ঐতিহাসিক বৈঠকের পর সমঝোতার বার্তা দিলেন বাইডেন এবং পুটিন। গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির ঘোষণা করলেন।
বিজ্ঞাপন
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করলেন জো বাইডেন এবং ভ্লাদিমির পুটিন। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে এই প্রথম দুই বিশ্বনেতার দেখা হলো। বৈঠকের পর বাইডেন থামস আপ দেখিয়ে জানিয়েছেন, বৈঠক কার্যকরী হয়েছে। পুটিন জানিয়েছেন, বাইডেন বিচক্ষণ রাজনীতিক এবং প্রশাসক। বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর রাশিয়া এবং অ্যামেরিকা দুই পক্ষই জানিয়েছে, পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুই নেতা। তারা জানিয়েছেন, পরমাণু যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়, ফলে সেই যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়াই ভালো। একই সঙ্গে অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও দুই পক্ষের কথা হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে দুই দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী বৈঠক করবেন এবং চুক্তি করবেন। পুটিন জানিয়েছেন, অন্তত ২০২৪ পর্যন্ত যাতে সেই চুক্তি স্থায়ী হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা হবে।
বাইডেনের প্রথম একশ দিন, সাফল্য ও ব্যর্থতা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে জো বাইডেনের প্রথম একশ দিন। কী করতে পেরেছেন এই একশ দিনে। কী পারেননি। তারই খতিয়ান এই ছবিঘরে।
ছবি: Tasos Katopodis/Getty Images/AFP
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই
বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিলেন, তখন অ্যামেরিকার করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। প্রচুর আক্রান্ত। মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। বাইডেন প্রথমেই করেনা নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করেন। সব ফেডারেল অফিসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেন। টিকা দেয়ার গতি অনেকটাই বাড়িয়ে দেন। করোনা-বিধি পালন করার জন্য জোর দেন।
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
বাইডেনের দাবি
প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম ১০০ দিন উপলক্ষে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন বাইডেন। তার দাবি, ''করোনাকে ঠেকিয়ে অ্যামেরিকা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা আবার কাজ করছি, স্বপ্ন দেখছি, বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমরা নিজেদের ও বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পেরেছি, অ্যামেরিকা কখনো হাল ছাড়ে না।''
ছবি: Chip Somodevillaat/PREUTERS
পরিকাঠামো উন্নতির জন্য
বাইডেন পরিকাঠামো উন্নতির জন্য চার ট্রিলিয়ান ডলারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এতে রাস্তা, পাইপলাইন, ব্রিজ সহ সব পরিকাঠামো উন্নত করা হবে, সারানো হবে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অর্থ খরচ করার মানে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। দেশের পরিকাঠামোর ভোলবদল হবে। তাতে আরো বিনিয়োগ আসবে।
ছবি: Justin Sullivan/Getty Images/AFP
বড়লোকদের উপর কর বসিয়ে
পরিকাঠামোতে খরচ করার জন্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি জোগাড় করবেন বড়লোকদের উপর, কর্পোরেটের উপর কর বসিয়ে। তিনি বড় কর্পোরেটের কর সাত শতাংশ বাড়াবার কথা বলেছেন। ট্রাম্পের আমলে কর্পোরেটের কর কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি তা বাড়িয়েছেন।
ছবি: Tasos Katapodis/Getty Images/AFP
ন্যূনতম মজুরি
বাইডেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্তরে ন্যূনতম মজুরি হবে, ঘণ্টায় ১৫ ডলার। তিনি এই মজুরি ৩৭ শতাংশ বাড়িয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগনের মতো বাইডেনও বলছেন, আর্থিক সুবিধা একেবারে নীচ পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।
ছবি: TransCanada/G. Waddell
সকলকে নিয়ে চলা
প্রচারের সময় বাইডেন বলেছিলেন, তিনি সকলকে নিয়ে চলবেন। তিনি অতীতে কৃষ্ণাঙ্গদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি কমলা হ্যারিসকে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করেছিলেন। জেতার পরে বাইডেন প্রশাসনে প্রচুর কৃষ্ণাঙ্গ গুরু দায়িত্ব পেয়েছেন। এমন অনেক মানুষকে প্রশাসনে নিয়েছেন, যাদের শিকড় ভারত, বাংলাদেশ সহ এই উপমহাদেশে আছে। উপরের ছবিটি কমলা হ্যারিসের।
ছবি: Drew Angerer/Getty Images/AFP
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বাইডেন আসার পর চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে চাইছেন। চীন ও অ্যামেরিকার মধ্যে একদফা আলোচনা হয়েছে। তাতে অবশ্য দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি করেছে। তবে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাইডেন বলেছেন, তিনি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যাবেন না। তবে অ্যামেরিকার স্বার্থরক্ষা করবেন।
ছবি: Frederic J. Brown/REUTERS
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি
ইসরায়েলের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও বাইডেন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইউরোপের কিছু দেশের সঙ্গে এখন ইরানের আলোচনা চলছে। উপরের ছবিটি ভিয়েনায় গত ১৫ এপ্রিল ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন ইইউ প্রতিনিধিরা।
ছবি: EU Delegation in Vienna/Handout/AA/picture alliance
বাইডেনের সমালোচনা
অভিযোগ উঠেছে, অ্যামেরিকার স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে বাইডেন গরিব দেশগুলির দিকে তাকাচ্ছেন না। তাদের ভ্যাকসিন দেয়া, সাহায্য করার ক্ষেত্রে বাইডেন দরাজ হতে পারেননি। করোনার প্রকোপ বাড়ার পর ভারত বারবার সাহায্য চেয়েছে। কিন্তু তিনি তা দিতে দেরি করেছেন।
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
9 ছবি1 | 9
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় লেকের ধারে বৈঠকে বসেছিলেন বাইডেন এবং পুটিন। গোটা পৃথিবীর লক্ষ্য ছিল এই বৈঠকের দিকে। কারণ গত কয়েক বছরে অ্যামেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার দূরত্ব ক্রমশ বেড়েছে। ডনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক ঘটনায় রাশিয়াকে দায়ী করেছেন। বাইডেন প্রশাসনও রাশিয়াকে ছেড়ে কথা বলেনি। সাম্প্রতিক ন্যাটো এবং জি সেভেন সামিটেও রাশিয়াকে আক্রমণ করেছে অ্যামেরিকা। ফলে বুধবার তাদের বৈঠক আদৌ কার্যকরী হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকের পরে দুই নেতাই জানিয়েছেন আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।
বৈঠকের পর রাশিয়া এবং অ্যামেরিকা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মাঝে মাঝে উত্তেজনার বাতাবরণ তৈরি হলেও দুই দেশ একাধিক বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখবে। সেই স্টেটমেন্টেই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত চুক্তির ঘোষণাও করা হয়। দুই দেশের কর্মকর্তারা বৈঠকের মাধ্যমে যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই একে অপরের প্রতি যথেষ্ট সম্মানও দেখিয়েছেন।
বৈঠকের পরে পুটিন এবং বাইডেন দুইজনেই আলাদা আলাদা সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে পুটিন সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। মানবাধিকার, নাভালনি নিয়ে সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়। নাভালনির নাম না করে তাকে একজন রাশিয়ার নাগরিক বলে সম্বোধন করেছেন পুটিন। জানিয়েছেন, নাভালনি একাধিক অন্যায় করেছেন। রাশিয়ায় মানবাধিকার রক্ষিত হচ্ছে না, এই প্রশ্নে পুটিন জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের তৈরি করে দেওয়া মানবাধিকার মানতে তিনি বাধ্য নন। তার দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে অ্যামেরিকা মাথা গলাক তাও তিনি চান না। ক্যাপিটল হামলা থেকে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার অ্যামেরিকার একাধিক ঘটনা নিয়েও নিজের মতামত জানিয়েছেন পুটিন।
বাইডেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বৈঠকে কোনো পক্ষই আক্রমণাত্মক ছিল না। তবে দুইজনেই নিজেদের আপত্তির বিষয়গুলি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন। বিশ্বের কথা ভেবে এবং দুই দেশের নাগরিকদের কথা ভেবে বেশ কিছু বিষয়ে তাদের যে সমঝোতা করে চলতে হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাইডেন। পুটিনও যে বিষয়টিকে ভালো ভাবেই নিয়েছেন, তাও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভবিষ্যতে একাধিক কূটনৈতিক এবং স্ট্র্যাটেজিক বৈঠকের বিষয়েও আশাপ্রকাশ করেছেন বাইডেন। তবে চীন নিয়ে তাদের মধ্যে আদৌ কোনো কথা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করেননি কোনো নেতাই।