পরমাণু সাবেমেরিন: যুক্তরাজ্যের বরাদ্দ ৪৬০ কোটি ইউরো
২ অক্টোবর ২০২৩
পরমাণু সাবমেরিনের জন্য ৪৬০ কোটি ইউরো খরচ করবে যুক্তরাজ্য। এইইউকেইউএস প্রকল্পে এই টাকা ঢালছে তারা।
যুক্তরাজ্য নতুন পরমাণু সাবমেরিন তৈরি করছেছবি: Royal Australian Navy/ZUMA Wire/picture alliance
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং অ্যামেরিকা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এইউকেইউএস জোট তারই অন্যতম ফসল। ২০২১ সালে এই জোট তৈরি হয়েছিল। সেই জোট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে টক্কর দিতে তারা পরমাণু অস্ত্র মজুত সাবমেরিন মোতায়েন করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই কাজ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সেই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য। পরমাণু সাবমেরিন তৈরির জন্য তারা চার দশমিক ছয় বিলিয়ন ইউরো খরচের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাবমেরিন তৈরি করবে যুক্তরাজ্যের সংস্থা বিএই সিস্টেমস।
পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কি আসন্ন!
ভূরাজনীতি কি আবার ঠান্ডাযুদ্ধের সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে? বাড়ছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা?
ছবি: KCNA via KNS/AP Photo/picture alliance
সময়ের চাকা
ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। পরমাণু অস্ত্র প্রদর্শনের আস্ফালনও ছিল চরম। সোভিয়েতের পতনের পর তা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। বর্তমান সময়ে ফের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা বেড়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
ছবি: Pavel Golovkin/AP/picture alliance
রাশিয়ার অবস্থান
ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ফোর্সের জন্য বিশেষ অ্যালার্ট জারি করেছেন। আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ।
ছবি: Mark Schiefelbein/AP/picture alliance
রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ক্ষমতা
রাশিয়ার হাতে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র আছে। সবমিলিয়ে তাদের পরমাণু ওয়ারহেড ছয় হাজার ৩০০।
ছবি: Oleg Kuleshov/TASS/dpa/picture alliance
অ্যামেরিকার পারমাণবিক শক্তি
ন্যাটোর সঙ্গে যৌথভাবে অ্যামেরিকার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮০০। যদিও এই সংখ্যা আরো বেশ বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যামেরিকা সব অস্ত্রের খতিয়ান দেয়নি বলেই মনে করা হয়।
ছবি: picture-alliance/AP/US Navy/R. Rebarich
ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য
ফ্রান্সের হাতে আছে ৩০০ এবং যুক্তরাজ্যের হাতে ২১৫টি পরমাণু অস্ত্র আছে।
ছবি: Ludovic Marin/AFP/Getty Images
চীনের শক্তি
বেজিংয়ের কাছে ৩২০টি পরমাণু অস্ত্র আছে। তবে চীনও গোপনে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার বাড়িয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা।
ছবি: Stephen Shaver/UPI Photo/Newscom/picture alliance
পরমাণু শক্তি ব্যবহারের মানসিকতা
পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মানসিকতা আলাদা। ফ্রান্স এবং ব্রিটেন পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পক্ষপাতী নয়। তাদের বক্তব্য, পরমাণু শক্তিকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা যাবে না।
ছবি: Takuya Yoshino/AP/picture alliance
মার্কিন অভিমত
অ্যামেরিকা মনে করে, প্রয়োজনে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তার মাত্রা হবে কম। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তা পৌঁছে যাবে। এ কারণে, কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে জোর দিয়েছে অ্যামেরিকা। মার্কিন প্রশাসন মনে করে, কোনো না কোনো সময়ে কম শক্তির পরমাণু যুদ্ধ হবে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জার্মানির কুচকাওয়াজ
জার্মানির টর্নেডো যুদ্ধবিমানের ফাইটার পাইলটদের পরমাণু বোমা ফেলার ট্রেনিং দেওয়া হয়। জার্মানিতে সঞ্চিত মার্কিন পরমাণু বোমা যে কোনো সময় টর্নেডো বিমানের সাহায্যে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ফেলতে পারেন এই পাইলটরা। বছরে একবার নকল বোমা নিয়ে তারা কুচকাওয়াজ করে।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Gallup
নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইটালি
এই তিন দেশও ন্যাটোর পরমাণু প্রকল্পের অংশ। এখানেও অ্যামেরিকার ১০০ থেকে ১৫০টি পরমাণু পরমাণু বোমা রাখা আছে। টর্নেডো বিমানে যা বহন করা যায়।
ছবি: Michael Varaklas/AP Photo/picture alliance
পরমাণু অস্ত্র এবং আন্তর্জাতিক আইন
কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক আইনে নিষেধ আছে। এর শাস্তি চরম হতে পারে। তবে কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র সমুদ্রে ব্যবহার করার সুযোগ এখনো আছে। এমনকী, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করতেও তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছবি: Zaporizhzhya NPP/REUTERS
11 ছবি1 | 11
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রোববার ম্যানচেস্টারে কনসারভেটিভ পার্টির একটি কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস বলেছেন, ''২০২৮ সাল পর্যন্ত এই অর্থ দেওয়া হবে। তার মধ্যেই বিএই তাদের সাবমেরিন তৈরি করবে।''
বিএই জানিয়েছে, অর্থ ঢুকতে শুরু করলেই তারা সাবমেরিনের ডিজাইনের দিকে মন দেবে। ২০২৮ সাল পর্যন্ত সাবমেরিন তৈরির কাজ চলবে। ২০৩০ সালের মধ্যে তা সম্পূর্ণ তৈরি করে এইউএসইউ-এর হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রকল্পটি যুক্তরাজ্যে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে তা অস্ট্রেলিয়াও তৈরি করবে। এই সাবমেরিন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পশ্চিমা দেশগুলির ক্ষমতা অনেকটাই বাড়াবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
বস্তুত, এই কারণেই চীন এই জোটের তীব্র বিরোধিতা করেছে। চীন জানিয়েছে, এই জোট ঠান্ডা যুদ্ধের পর ফের এই অঞ্চলে অশান্তি তৈরির পরিকল্পনা করছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলির বক্তব্য, ওই অঞ্চলে চীন ক্রমশ নিজের আধিপত্য তৈরির চেষ্টা করছে। গত কয়েকবছরে চীন নিজের নৌশক্তিকে ঢেলে সাজিয়েছে। দক্ষিম চীন সাগরে তারা যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন মোতায়েন করেছে। তারই জবাব দেওয়ার জন্য এই নতুন সাবমেরিন তৈরি হচ্ছে বলে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন।