প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে তার সফরসঙ্গীদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন৷ বাদ পড়ার কারণ হিসেবে অসুস্থতার কথা বলা হলেও এ নিয়ে চলছে নানান আলোচনা৷
বিজ্ঞাপন
চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার সকালে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে গেছেন শেখ হাসিনা৷ পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, অসুস্থতার কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সফরে যাননি৷ কিন্তু তারপরও অনেকে মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যে দুই দেশের সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার বিষয়টি নেপথ্যে কাজ করে থাকতে পারে৷
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, " (প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাদ পড়ার)সঠিক কারণ তো আমাদের পক্ষে জানা কঠিন৷ তবে আমরা ধারণা করতে পারি, স্ট্র্যাটেজিক কারণে হয়ত তিনি বাদ পড়েছেন৷ এটার প্রয়োজন ছিল, দুরদর্শী চিন্তা থেকেই হয়ত প্রধানমন্ত্রী এটা করেছেন৷ তারপরও বলবো, কেন প্রধানমন্ত্রী তাকে রেখে গেছেন- সেটা প্রধানমন্ত্রীই জানেন৷ কিন্তু আমরা ধারণা করি, উনার সাম্প্রতিক সময়ের বক্তব্যে দুই দেশের সরকারই বিব্রতর অবস্থায় পড়েছে৷ উনি যা বলেছেন তা পররাষ্ট্র নীতির মধ্যে একেবারেই পড়ে না৷ ফলে উনাকে রেখে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক বলেই আমি মনে করি৷”
স্ট্র্যাটেজিক কারণে হয়ত তিনি বাদ পড়েছেন: ড. রুহুল আমিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার বিকেলেও সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি এই সফরে থাকছেন৷ সোমবার সকালে হঠাৎ করেই দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীর সফরে নেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রীও ছিলেন৷ তিনিও যাননি৷ সকাল থেকে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়৷ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রবিবার রাতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার খবরটি পৌঁছানো হয়৷ তবে সকাল থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা তার দফতরের কেউ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ ডয়চে ভেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে থেকেযোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে৷
হঠাৎ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদ পড়ায় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা? জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "একটুও প্রভাব পড়বে না৷ কারণ, এখানে বৈঠক করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ ফলে ছবি তোলা ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো কাজ নেই৷ আর ফাইলপত্রের কাজ করার জন্য কর্মকর্তার অভাব নেই৷ এছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তো আছেনই৷ কেন উনাকে সফর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটা তো বাইরে থেকে বলা মুশকিল৷ তবে আমরা ধারণা করতে পারি, সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া উনার মন্তব্যগুলো দুই দেশের জন্যই অস্বস্তিকর ছিল৷ সরকারের তরফ থেকে যেটা বলা হচ্ছে, অসুস্থতার কারণে তিনি এই সফরে যেতে পারেননি৷ আপাতত আমরা এটাই বিশ্বাস করি৷”
এই ধরনের ঘটনা কি আগে কখনও ঘটেছে? সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "একেবারে যে ঘটেনি, তা নয়৷ দেশ স্বাধীনের পরপর আমি জেনেভায় ছিলাম৷ একবার বঙ্গবন্ধু জেনেভা সফর করেছিলেন৷ তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সঙ্গে ছিলেন না৷ কিছুদিন পর আবার যখন সফরে যান তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ তবে হ্যাঁ, গত ৩০-৪০ বছরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশ সফরে গেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সব সময় তার সঙ্গেই ছিলেন৷ এবারই ব্যতিক্রম হলো৷ অন্য দেশগুলোতে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা খুব বেশি থাকেন না৷ আমরা যখন পররাষ্ট্র দফতরে দায়িত্ব পালন করেছি, তখন মন্ত্রীদের আমরা ১৯৬২ সালের জেনেভা কনভেনশনগুলো, কূটনৈতিক বিষয়ে আগেই বুঝিয়ে দিতাম৷ তাতে তাদের অনেক উপকারও হতো৷ এখন হয়ত মন্ত্রীদের এগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার লোকের অভাব দেখা দিয়েছে৷ ফলে তারা যা বলছেন, সেটা কূটনীতিক হচ্ছে না৷”
একটুও প্রভাব পড়বে না: তৌহিদ হোসেন
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও পররাষ্ট্র বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম জমির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কেন ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী নেননি সেটা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই বলতে পারবেন৷ আমাদের পক্ষে সেটা জানাও সম্ভব না৷ ফলে যেটা আমরা জানি না, তা নিয়ে মন্তব্য না করাই ভালো৷”
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার যে ঘটনাটি ঘটেছে এমনটি আর আগে দেখা যায়নি৷ সবগুলো সফরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন৷ আর ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশে প্রধানমন্ত্রীর সফরে তো পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকেনই৷ এবার শেষ মুহুর্তে তার নাম বাদ যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে খুবই আলোচনা হচ্ছে৷ এখন কেন তাকে বাদ রাখা হলো, সেটা ধারণা করা ছাড়া সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না৷ আমরা অপেক্ষা করি, দেখি কী জানা যায়?’’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সোমবার সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে৷ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং একান্ত বৈঠক করার কথা রয়েছে৷ ৮ সেপ্টেম্বর, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার৷
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিবৃত্ত
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন? এক কথায় তার মূল্যায়ন কঠিন৷ বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী দেশটির সম্পর্ক মধুর যেমন বলা চলে, তেমনি আবার কিছু তিক্ততাও আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
বিপদের বন্ধু
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অকৃত্রিম বন্ধুর ভূমিকায় ছিল ভারত৷ ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি তাঁর সরকারের পূর্ণ সমর্থন দেন৷ পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতে বাঙ্গালীদের জন্য খুলে দেয়া হয় দেশটির সীমান্ত৷ নভেম্বরে গঠন হয় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ড, যার পথ ধরে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা৷
ছবি: Getty Images/AFP/
মৈত্রী চুক্তি
দুই দেশের শান্তি ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী৷ আঞ্চলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার মোট ১২ টি ধারা ছিল এতে৷ ১৯৯৭ সালের ১৯ মার্চ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চুক্তিটি আর নবায়ন হয়নি৷
ছবি: Getty Images/G. Crouch
বন্ধনে সংস্কৃতি
ভারতের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য এক সাংস্কৃতিক সম্পর্ক৷ এক সময় পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ ছিল একই অঞ্চল৷ দুই বাংলার মানুষের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিতেও আছে মিল৷ আছে পারস্পরিক যোগাযোগ৷ দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তিও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
যোগাযোগে মৈত্রী
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে বহুদিন থেকে৷ কলকাতা-ঢাকা, শিলং-ঢাকা এবং ঢাকা হয়ে আগরতলা-কলকাতা নিয়মিত বাস যাতায়াত করে৷ ৬টি রেল লাইন ছাড়াও দু’টি ব্রডগেজ রেল সংযোগ আছে দুই দেশের মধ্যে৷ কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে 'মৈত্রী এক্সপ্রেস' চলে সপ্তাহে চারদিন৷ ২০১৭ সালে চালু হয়েছে খুলনা-কলকাতা ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’৷ এছাড়া বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি রেলযোগাযোগ চালুর কাজও চলছে৷
ছবি: DW/P. Mani
ভারসাম্যহীন বাণিজ্য
দুই দেশের বাণিজ্যের আকার ৯১৪ কোটি ডলার৷ ২০১৭-১৮ অথর্বছরে ভারত থেকে ৮৪৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ আর রপ্তানি করেছে মাত্র ৬৮ কোটি ডলারের পণ্য৷ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশিরভাগ পণ্যে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পেলেও ভারতের বিরুদ্ধে অশুল্ক বা শুল্কবহির্ভূত বাধা তৈরির অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ
২০১৭ সালে বাংলাদেশে ভারতের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫১ কোটি ডলার৷ টেলিযোগাযোগ, ঔষধ, অটোমোবাইলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা আছে৷ এছাড়া ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় ভারতের সঙ্গে ১০ বিলিয়ন ডলারের ১৩টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. U. Ekpei
বিদ্যুৎ আমদানি
বর্তমানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ৷ ভারতের জাতীয় তাপবিদ্যুৎ কর্পোরেশন (এনটিপিসি) ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)-র অংশীদারিত্বে রামপালে নির্মিত হচ্ছে বিতর্কিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র৷ এছাড়াও ২০১৭ সালের এপ্রিলে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও অর্থায়ন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Malukas
জ্বালানি সহযোগিতা
বাংলাদেশে যেসব দেশের প্রতিষ্ঠান পরিশোধিত তেল সরবরাহ করে তার একটি ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড৷ সেখান থেকে ডিজেল আমদানির জন্য শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশের সরকার৷ ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সে এর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
সমুদ্র বিরোধের নিষ্পত্তি
বঙ্গোপসাগরে ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরোধ ছিল৷ তার মধ্যে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশি আদালতের রায়ে ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পেয়েছে বাংলাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Str
ছিটমহল বিনিময়
২০১৫ সালের জুলাইতে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন হয়৷ ভারতের ১১১টি ছিটমহল যুক্ত হয় বাংলাদেশের সাথে আর সেখানকার বাসিন্দারা পায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব৷ একইভাবে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও লীন হয়ে যায় দেশটির সাথে৷
ছবি: AFP/Getty Images
প্রাণঘাতী সীমান্ত
দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও সীমান্তে দেশটির আচরণে তার প্রতিফলন নেই৷ গত ১০ বছরে ২৯৪ বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ৷ সীমান্ত পারাপারে অস্ত্র ব্যবহার করবে না দুই দেশ, ২০১১ সালে বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়ে এমন চুক্তি হলেও বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা৷
ছবি: AP
ফারাক্কা বাঁধ
গঙ্গা নদীতে বাংলাদেশ সীমান্তের ১৮ মাইল উজানে ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করে ভারত৷ ১৯৬১ সালে শুরু হয়ে কাজ শেষ হয় ১৯৭৫ সালে৷ শুস্ক মৌসুমে বাঁধের গেট বন্ধ রেখে বাংলাদেশে পানি প্রবাহে বাধা তৈরি করে ভারত৷ অন্যদিকে বর্ষায় খুলে দেয়া হয় সবগুলো গেট, যার ফলে উত্তরাঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা৷
তিস্তা চুক্তি
১৯৮৭ সালের পর থেকে তিস্তার পানি নিয়ে ভারতের সাথে কোনো চুক্তি নেই বাংলাদেশের৷ একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে দেশটি৷ ফলে বাংলাদেশ অববাহিকায় পানিসংকট চলছে৷ ২০১১ সালের ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরে এই বিষয়ে চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
রোহিঙ্গায় পাশে নেই
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে নেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি৷ শুরু থেকেই এ বিষয়ে মিয়ানমারের অবস্থানকেই বরং সমর্থন জানিয়ে আসছে দিল্লি৷ এমনকি সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের (ইউএনএইচআরসি) অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক ভোটাভুটিতেও বাংলাদেশের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে দেশটি৷
ছবি: Getty Images/P. Bronstein
নতুন জটিলতা এনআরসি
সম্প্রতি হালনাগাদ নাগরিকঞ্জি প্রকাশ করে ভারতের আসাম রাজ্য৷ তাতে রাতারাতি নাগরিকত্ব হারিয়েছেন ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগ মুসলিম৷ বাদ পড়াদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলে আসছে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
ক্রিকেটের উত্তেজনা
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটের সম্পর্কটাও রাজনীতির মতোই ঐতিহাসিক৷ টাইগাররা ঢাকায় প্রথম টেস্ট খেলেছিল ভারতের বিপক্ষেই, ২০০০ সালে৷ তবে ভারতে টেস্ট খেলার সুযোগের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে৷ দুই দলের মধ্যে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্ট অবশ্য হয়েছে অনেক৷ সেখানে বেশ কিছু টানটান উত্তেজনার ম্যাচও হয়েছে৷ আগামী নভেম্বরে এই প্রথম দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে ভারত সফরে যাবে বাংলাদেশ দল৷