ডোনাল্ড ট্রাম্প সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেব যাকে বেছে নিলেন, তিনি এক্সন কেম্পানির প্রধান হলেও, তাঁর কোনো রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই৷ কিন্তু বিদেশনীতি আর ব্যবসার মধ্যে ফারাক আছে, বলে মনে করেন মিওদ্রাগ জরিচ৷
বিজ্ঞাপন
নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগেই টিলারসনকে নিয়ে বিপুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে৷ এক্সন মোবিল করপোরেশনের ৬৪ বছর বয়সি সিইও-র সরকারি কাজকর্মের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, যদিও স্বৈরশাসকরা তাঁকে সহস্তে মেডেল পরিয়ে দিয়েছেন৷ ফ্লরিডার রিপাবলিকান সেনেটর মার্কো রুবিও টুইট করেছেন যে, তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুটিনের এক বন্ধুকে দেখতে চান না৷ অ্যারিজোনার রিপাবলিকান সেনেটর জন ম্যাককেইন-ও টিলারসনের ক্রেমলিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সমালোচনা করেছেন৷ নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাট সেনেটর বব মেনেন্ডেজ এই সিদ্ধান্তকে বলেছেন ‘‘উদ্ভট’’৷ অন্যান্যরাও এই সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন৷ সব মিলিয়ে সেনেটে কনফার্মেশন হিয়ারিং-এ ভবিষ্যৎ সেক্রেটারি অফ স্টেটকে বেগ পেতে হতে পারে৷ অনুমোদন নিশ্চিত বলে মনে করার কোনো কারণ নেই৷
ডনাল্ড ট্রাম্প: ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট
রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় বইয়ের লেখক এবং রিয়েলিটি টিভি স্টার হিসেবে পরিচিত ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট৷ হোয়াইট হাউজে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিবার, সাম্রাজ্য
তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদের নিয়ে তোলা ছবি৷ এখানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভানকা এবং টিফানি, ছেলে এরিক এবং ডোনাল্ড জুনিয়র এবং নাতি কাই ও ডোনাল্ড জন থ্রি৷ তাঁর তিন বড় সন্তান ট্রাম্প অরর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিলিয়নিয়ার থেকে বিলিয়নিয়ার
১৯৮৪ সালে তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিউ জার্সির ট্রাম্প প্লাজায় হারাহ’স ক্যাসিনো উদ্বোধন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এটা অন্যতম এক খাত যেখানে বিনিয়োগ করে বাপের টাকায় মিলিয়নিয়ার হওয়া ট্রাম্প নিজেকে বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Lederhandler
বাপের টাকায় ব্যবসা শুরু
রিয়েল স্টেট সাম্রাজ্যের শুরুটা ট্রাম্প করেছিলেন তাঁর বাবা ফ্রিডরিকের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে৷ তিনি তাঁর ছেলেকে শুরুতে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন৷ এবং তাঁর মৃত্যুর পর ট্রাম্প এবং তাঁর তিন ভাইবোন উত্তরাধিকার সূত্রে চার’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক হন৷
ছবি: imago/ZUMA Press
একটি নামের মধ্যে কী আছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এবং মার্কেটের উত্থান পতনের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন৷ নিউ ইয়র্ক সিটির ট্রাম্প টাওয়ার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য এনে দিয়েছে৷ ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর সম্পদের পরিমাণ দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তবে কখনো তিনি তাঁর এই দাবির পক্ষে কোনো আর্থিক কাগজপত্র প্রকাশ করেননি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাঁর সম্পদের পরিমাণ তিনি যা বলেন তাঁর এক-তৃতীয়াংশ মাত্র৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
‘খুব ভালো, খুব স্মার্ট’
ট্রাম্প নিজের সম্পর্কে নিজেই বলেন একথা৷ তিনি সুপরিচিত সুপরিচিত ‘ওয়ার্টন স্কুল অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেলভেনিয়ায়’ লেখাপড়া করেছেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.J. Harpaz
ক্যাপ্টেন ট্রাম্প
কলেজে পাঠানোর আগে ১৩ বছর বয়সে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে পাঠানো হয়েছিল ট্রাম্পকে৷ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের আগেই একাডেমি থেকে একটি অফিসার’স ব়্যাংক অর্জন করেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারাভিযানকালে তিনি জানান যে, তিনি স্কুলে কাঠামো এবং সামরিক সংস্কৃতি উপভোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/
ভিয়েতনাম যাওয়ার বদলে গোড়ালির চিকিৎসা
মিলিটারি শিক্ষা সত্ত্বেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাননি ট্রাম্প৷ পড়াশোনা করার সময় তিনি চারবার কালহরণ করেছিলেন এবং গোড়ালির চিকিৎসার জন্য একবার বিরতি নিয়েছিলেন৷ ট্রাম্প হবেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগ অবধি কোনো সরকারি কার্যালয় বা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেননি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম স্ত্রী: ইভানা জেলনিউকোভা
১৯৭৭ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার ইভানা জেলনিউকোভাকে বিয়ে করেন ট্রাম্প৷ তাঁদের তিন সন্তান হয়৷ ডোনাল্ড জন জুনিয়র, ইভানকা মারি এবং এরিক ফ্রেডরিক৷ তবে বিবাহবহিভূর্ত সম্পর্কসহ নানা জটিলতায় ১৯৯০ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ ইভানা হচ্ছেন সেই নারী, যিনি ট্রাম্পের ডাক নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য ডোনাল্ড৷’
ছবি: Getty Images/AFP/Swerzey
দ্বিতীয় পরিবার
ট্রাম্প পরবর্তীতে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসকে বিয়ে করেন৷ ১৯৯৩ সালে তাঁদের মেয়ে টিফানির জন্ম দেন ম্যাপেলস৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Minchillo
অন্য নারীদের সঙ্গে ট্রাম্প
ট্রাম্প সম্ভবত নিজের স্ত্রীর বদলে অন্য নারীদের সঙ্গে ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ তিনি প্রায়ই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যেতেন এবং তরুণী মডেলদের সঙ্গে ছবি তুলতেন৷ ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ অবধি আয়োজিত সব ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার একজন অংশীদার ছিলেন তিনি৷ নির্বাচনের আগে আগে এক অডিও প্রকাশ হয় যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর খ্যাতি তাঁকে কোনোরকম পরিণতির ভয় ছাড়াই মেয়েদের ‘গায়ে হাত দেয়ার’ সুযোগ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Lemm
বাণিজ্য এবং বিনোদনের মিশ্রণ
ট্রাম্প জানতেন কীভাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়৷ এই ছবিতে তাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের’ একটি শোতে দেখা যাচ্ছে৷ রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য এপ্রেন্টিস’, যেখানে প্রার্থীদের নিয়োগ অথবা বাতিল করা হতো, ট্রাম্পকে খ্যাতি অর্জনে সহায়তা করেছে৷ শোতে ট্রাম্পের প্রিয় লাইন ছিলে, ‘ইউ আর ফায়ার্ড!’
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
রাজনীতিতে ট্রাম্প
যদিও অতীতে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর খুব কম যোগাযোগ ছিল, তারপরও ২০১৫ সালে সালের ১৬ জুলাই তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন৷ রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন৷’ নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় তিনি অভিবাসী, মুসলমান, নারী এবং তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রত্যেককে অপমান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
ওয়াশিংটনের পথে
প্রেসিডেন্ট হিসেবেও হোয়াইট হাউসে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প৷ ৷ সবশেষ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করল সে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ। অ্যামেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পই তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনা হয়েছে।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan
13 ছবি1 | 13
ডোনাল্ড ট্রাম্প দলের সঙ্গে আরেকটি কাজিয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও টিলারসনকে বেছে নিয়েছেন৷ কিন্তু কেন?
চারজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সুপারিশ
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দু'জনে দু'জনকে চিনতেন কিনা সন্দেহ৷ টেক্সাসের মানুষ টিলারসন রক্ষণশীল এবং রিপাবলিকান, তা সত্ত্বেও তিনি প্রাইমারি পর্যায়ে ট্রাম্প ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদেরই সমর্থন করেছেন, এমনকি আর্থিক অনুদানও দিয়েছেন৷ ট্রাম্প যে টিলারসনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন, এ পরামর্শ আসে বাইরে থেকে৷ জেমস বেকার ও কন্ডোলিসা রাইসের মতো সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা টিলারসনের জোরদার সমর্থক ছিলেন ও আছেন৷ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা বলেন যে, প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট আর বহুজাতিক তেলের কোম্পানির সিইও-র মধ্যে রসায়ন গোড়া থেকেই ইতিবাচক ছিল৷
উভয়েই বিদেশনীতিকে একটি ব্যবসায়িক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেন৷ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেটা অংশত সত্যও বটে৷ কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির সবটাই কিছু ব্যবসা নয়৷ যে সব ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আর্থিক লাভালাভ নেই – যেমন মানবাধিকার – সেখানে কি হবে? বিশ্বব্যাপী মানবমর্যাদা রক্ষার জন্য যারা সক্রিয়, তাদের ভাগ্যে বিশেষ বন্ধু জোটে – একনায়কদের মধ্যে তো নয়ই৷ দশকের পর দশক ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাঁদের পশ্চিম ইউরোপীয় সতীর্থদের সঙ্গে ঠিক তাই করেছেন৷ এবং তারা যে সফলও হয়েছেন, সেটা বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশগুলির ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়৷
রেক্স টিলারসনের নিয়োগের ফলে কি সেটা বদলে যাবে? প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি কি মানবাধিকারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে? ন্যাটোর প্রতি মার্কিন প্রতিশ্রুতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সমুদ্রপথগুলির সুরক্ষা কি শুধু ব্যয়হ্রাসের খাতিরে বাতিল করা হবে? অ্যামেরিকা কি পশ্চাদপসারণ করবে? বিশ্বের বর্তমান ব্যবস্থাপনার কি অন্ত ঘটবে?
পশ্চিমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অবসান?
পশ্চিমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলতে আমরা যা বুঝি, তার অন্তের সূচনা ঘটবে: রাষ্ট্রসমাজের এমন একটি সুবিন্যস্ত ব্যবস্থা যা শুধু আন্তঃ-অতলান্তিক দেশগুলিকেই নয়, আরো অনেক মহাদেশের অনেক দেশকে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে৷ কিন্তু সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে৷
ভবিষ্যতের দৃশ্যপট নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু করার সময় এখনও আসেনি, যদিও ইউরোপীয়রা তা করতে ভালোবাসেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের মুখ্য বাণিজ্যিক সহযোগী হিসেবে ইউরোপকে আস্থা বজায় রেখে চলতে হবে৷ অ্যামেরিকা তখনই বাস্তবিক একটি পরাশক্তি, যখন যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে৷
জাঁদরেল আর কোটিপতিতে ভরা ট্রাম্প মন্ত্রীসভা দেখে ইউরোপীয়রা যতই কণ্টকিত হোন না কেন, মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকেও অন্তত একটা সুযোগ দেওয়া উচিত৷
মিওদ্রাগ জরিচ/এসি
প্রিয় পাঠক, আপনার কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷