পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বাইডেনের
২৫ নভেম্বর ২০২০
ক্ষমতায এসে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পারেন বাইডেন। মঙ্গলবার তাঁর প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাম জানা গিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার মার্কিন জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ) চিঠি দিয়ে তাঁকে জানিয়েছিল ক্ষমতা হস্তান্তর দ্রুত শুরু হবে। মঙ্গলবারই নিজের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তির নাম জানিয়ে দিলেন অ্যামেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যে নাম গুলি সামনে এসেছে, তার মধ্যে বেশ কিছু চমক আছে। পাশাপাশি বাইডেন এ দিন জানিয়েছেন, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগর-- পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে তাঁর প্রশাসন।
সব কিছু ঠিক থাকলে বাইডেন প্রশাসনে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স মন্ত্রকের ডিরেক্টর হতে পারেন আভরিল হেইনস। এই প্রথম ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের দায়িত্ব পেতে পারেন কোনো নারী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে পাবেন আলেজান্দ্রো মেয়োরকাস। আলেজান্দ্রো দায়িত্ব গ্রহণ করলে তিনি হবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম ল্যাটিনো প্রধান।
জো বাইডেনের জীবনের গল্প
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জীবনের গল্প দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Kevin Lamarque/Reuters
জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর স্ক্র্যানটন পেনসিলভ্যানিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র বা আজকের ‘জো বাইডেন’৷ জীবনের প্রথমভাগ বাইডেন কাটান দাদা-দাদির সাথে৷ পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাইডেন স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ জানা যায়, ছোটবেলায় বাইডেন কথা বলতে গেলে তোতলাতেন, যা কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে পরে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি৷
ছবি: Handout Joseph Biden/AFP
তারুণ্য
প্রথমে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে বাইডেন পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কের সাইরাক্যুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই তাঁর পরিচয় নেলিয়া হান্টারের সাথে৷ ১৯৬৬ সালে নেলিয়া ও বাইডেন বিয়ে করেন৷
ছবি: Keystone/dpa/picture-alliance
রাজনীতিতে পদার্পণ
১৯৭২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়েসে ডেলাওয়ারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সেনেটর কেলেব বগসের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন বাইডেন৷ অর্থাভাব, রাজনীতির ময়দানে অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পারিবারিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে প্রচার চালিয়ে গবসকে পরাজিত করেন বাইডেন৷ সেখান থেকেই ডেমোক্র্যাট হিসাবে তাঁর উত্থানের সূত্রপাত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone
পারিবারিক বিপর্যয়
সেনেটর নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়৷ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়৷ মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁর দুই পুত্রও৷ এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সেনেটর পদে শপথগ্রহণ করেন বাইডেন৷ পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন৷ তাঁদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি৷
ছবি: Kevin Larkin/AFP/Getty Images
রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য
বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালে৷ ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তাঁর পুত্র জোসেফকে হারান৷ পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে সরে আসেন বাইডেন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
তবুও উত্তরণ
এর আগে ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও প্রাইমারি নির্বাচনের আগেই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ কিন্তু সেনেটর হিসাবে কাজ করে যান তিনি৷ ২০০৮ সালেও প্রথমে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসাবে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন৷ ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশান অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর দলের নীতির সাথে পুরোপুরি খাপ খায়নি৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
বাইডেনকে ঘিরে বিতর্ক
১৯৮৮ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এছাড়া অ্যামেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সাথে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন বাইডেন৷ ২০১২ সালেও সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন শিরোনামে উঠে আসেন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP/picture alliance
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
২০২০ সালের মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন যে ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন৷ সেনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন রিড৷ ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হবার পর নতুন করে এবছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেটি আলোচনায় উঠে আসে৷ এই অভিযোগ বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরো কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
বাইডেনের যত নাম
গণমাধ্যমে বাইডেনের নামের সাথে জুড়েছে নানা ধরনের বিশেষণ৷ জীবনের গোড়ার দিকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কখনো তাঁর নাম হয়েছে ‘মিডল ক্লাস জো’৷ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় বয়সের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘স্লো জো’ ও ‘স্লিপি জো’৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জো বাইডেন৷ তার পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টুইটার-ইন্সটাগ্রামে পাশে দাঁড়ান সেলেব্রেটিরাও৷ নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হন তিনি৷ বাইডেনের নির্বাচনসঙ্গী কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP Photo/picture alliance
11 ছবি1 | 11
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে যে তিনি গুরুত্ব দেবেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই তা বলে আসছিলেন বাইডেন। বস্তুত, এ বিষয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প খানিক উদাসীন ছিলেন। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। বাইডেন ট্রাম্পের সেই পদক্ষেপের নিন্দা করেছিলেন। বাইডেনের প্রশাসনে ফের গুরুত্ব পাবে জলবায়ু পরিবর্তন। এ বিষয়ে যাবতীয় কাজকর্মের জন্য তিনি দায়িত্ব দিতে পারেন জন কেরিকে। কেরি আগেই বলেছিলেন, জলবায়ু প্রসঙ্গে গোটা বিশ্বের এক মঞ্চে আসা উচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ড হতে পারেন জাতিসংঘে অ্যামেরিকার প্রতিনিধি বা অ্যাম্বাসডার। কূটনৈতিক বুদ্ধির জন্য লিন্ডা অ্যামেরিকায় বিখ্যাত। লুসিয়ানার মানুষ লিন্ডা বাইডেনের অত্যন্ত ঘনিষ্ট বলে পরিচিত।
মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যমগুলোতে৷ ইরানের গণমাধ্যম এই পরাজয়কে উৎসবের কারণ মনে করছে৷ অন্যদিকে, ইসরায়েলি গণমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে ফিলিস্তিন ইস্যু৷
ছবি: tehrantimes.com
‘‘ট্রাম্পের পতন উদযাপন করছে ইরান’’
ইরানের দ্য তেহরান টাইমস মার্কিন নির্বাচন নিয়ে ‘‘ট্রাম্পের পতন উদযাপন করছে ইরান’’ শিরোনামে সংবাদ করেছে৷ পত্রিকাটি লিখেছে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার বিষয়টি ইরানের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও নতুন প্রেসিডেন্ট তেহরানের প্রতি মার্কিন নীতিতে কতটা পরিবর্তন আনবেন তা নিশ্চিত হতে পারছেন না তারা৷ ফলে বাইডেনের জয়ের চেয়ে ট্রাম্পের প্রস্থানেই সন্তুষ্ট বেশি তারা৷
ছবি: tehrantimes.com
‘‘বাইডেনের জয় থেকে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্ত দাবি’’
ইসরায়েলের প্রভাবশালী পত্রিকা হারেৎস-এ ‘‘বাইডেনের জয় থেকে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্ত দাবি’’ শিরোনামে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে, গত চারবছর ধরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্বাসকে ব্যাপক চাপে রেখেছিল ট্রাম্প প্রশাসন৷ এখন সেই চাপে পরিবর্তন আসতে পারে৷
ছবি: haaretz.com
‘‘বাইডেনের জয় নেতানিয়াহুর জন্য ধাক্কা, ফিলিস্তিনিদের জন্য আশা’’
লেবাননের ইংরেজি পত্রিকা নাহানেটের শিরোনাম, ‘‘বাইডেনের জয় নেতানিয়াহুর জন্য ধাক্কা, ফিলিস্তিনিতের জন্য আশা৷’’ বিশেষজ্ঞদের বরাতে পত্রিকাটি লিখেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের একজন কট্টর মিত্র ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷ বাইডেনের জয়ের ফলে এখন আবার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হতে পারে৷
ছবি: naharnet.com
‘‘বিভক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শাসনের কঠিন কাজের পরিকল্পনা করছেন বাইডেন, মিত্ররা’’
কাতারের দৈনিক সংবাদপত্র গাল্ফ টাইমসের শিরোনাম, ‘‘বিভক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শাসনের কঠিন কাজের পরিকল্পনা করছেন বাইডেন, মিত্ররা৷’’ পত্রিকাটি লিখেছে নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর শুরুতেই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন জো বাইডেন৷ বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করার বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি৷
ছবি: gulf-times.com
‘‘মার্কিন নির্বাচন ২০২০ - আরবরা কী চায়?’’
আরব নিউজ মার্কিন নির্বাচন নিয়ে আরবদের ভাবনা তুলে ধরতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে৷ পত্রিকাটিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সংবাদ, বিশ্লেষণ, সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হচ্ছে৷
ছবি: arabnews.com
‘‘মার্কিন নির্বাচনে জেতায় বাইডেনকে সৌদি নেতাদের অভিনন্দন বার্তা’’
সৌদি পত্রিকা সৌদিগেজেটের শিরোনাম, ‘‘মার্কিন নির্বাচনে জেতায় বাইডেনকে সৌদি নেতাদের অভিনন্দন বার্তা৷’’ পত্রিকাটিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রবিবার রাতেই এক বিবৃতিতে সৌদি নেতারা জো বাইডেনকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷
ছবি: saudigazette.com.sa
6 ছবি1 | 6
ট্রাম্প প্রশাসনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মাইক পম্পেও। গত চার বছর বার বার তাঁর মন্তব্য এবং কার্যকলাপ খবরের শিরোনামে এসেছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। বাইডেনের প্রশাসনে সেই দায়িত্ব সামলাতে পারেন অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
মঙ্গলবার বাইডেন জানিয়ে দিয়েছেন, ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে তাঁর নীতির কোনো মিল থাকবে না। বাইডেনের বক্তব্য, বিশ্বের দরবারে অ্যামেরিকা আবার আগের অবস্থানে ফিরবে। তাঁর মতে, ট্রাম্পের নীতি ছিল অ্যামেরিকা ফার্স্ট। অর্থাৎ, আগে অ্যামেরিকার কথা ভাবো, তারপর বিশ্বের। কিন্তু অ্যামেরিকার দীর্ঘ ইতিহাস তেমন নয়। অ্যামেরিকার গুরুত্বপূর্ণ প্রধানরা বরাবরই বিশ্বের নেতা হয়ে উঠেছেন। বাইডেনও সে পথেই হাঁটতে চান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অ্যামেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে তৈরির প্রসঙ্গেও আলোচনা করেছেন বাইডেন। এবং সে কাজে ব্লিনকেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন নির্বাচন: যে বিশ্বনেতারা এখনো বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানাননি
ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের অনেকেই দ্রুত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ তবে, এখনো কিছু রাষ্ট্রনেতা আছেন যারা এই বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন৷
ছবি: Alexei Druzhinin/dpa/picture-alliance
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
বেইজিং জানিয়েছে যে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া অবধি কাউকে অভিনন্দন জানাবে না দেশটি৷ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি বাইডেন নির্বাচনে বিজয় ঘোষণা করেছেন৷ আমরা যেটা বুঝতে পারছি তাহচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল দেশটির আইন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণের পর ঘোষণা করা হবে৷’’
ছবি: Ju Peng/Xinhua/picture-alliance
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন
পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্রি প্যাস্কভ জানিয়েছেন যে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতার নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বাইডেনের জয় নিয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে ক্রিমলিন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেখানে নির্দিষ্ট কিছু আইনি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে যার কথা বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে জানিয়েছেন৷ ফলে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন, তাই আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগ অবধি অপেক্ষা করাটা যৌক্তিক মনে করছি আমরা৷’’
ছবি: Alexei Druzhinin/dpa/picture-alliance
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো
ডানপন্থি এই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বের প্রথম নেতা হবেন যে ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাবে৷ তবে, বাইডেনের বিষয়ে চুপ রয়েছেন বলসোনারো৷ দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যামিল্টন ম্যুরাও এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি মনে করি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হওয়া অবধি অপেক্ষা করছেন প্রেসিডেন্ট৷’’ ‘‘সময়মত’’ বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Marcos Corrêa/Presidência da República do Brasil
লোপেজ ওব্রাডোর জানিয়েছেন যে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতার নিরসন না হওয়া অবধি বিজয়ীকে অভিনন্দন না জানাতে তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ তিনি উল্টো প্রশ্ন করেছেন, ‘‘কীভাবে একজন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ঠিক করবে (মার্কিন নির্বাচনে) কোন প্রার্থী জয়লাভ করেছে?’’ তবে, তিনি তার বক্তব্যে বাইডেনকে ‘‘সম্ভাব্য বিজয়ী’’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
ছবি: Reuters/H. Romero
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন
মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি কিম৷ উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও এই বিষয়ে চুপ রয়েছে৷ ২০১৬ সালে ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার দু’দিন পর অবধিও চুপ ছিল পিয়ংইয়ং৷ অতীতে অবশ্য বাইডেনকে কিম ‘স্বল্প বুদ্ধির বোকা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন৷ জবাবে বাইডেন তাকে ‘গুণ্ডা’ বলেছিলেন৷
ছবি: Reuters/KCNA
স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানিয়া
উগ্র ডানপন্থী ও অভিবাসনের বিরোধী হিসেবে পরিচিত স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানিয়া মার্কিন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর দ্রুতই ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন৷ তবে ভোট গণনা প্রায় শেষ হওয়ার পর যখন বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তখন চুপ হয়ে গেছেন তিনি৷ জানিয়া শুধু এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আশা করছে তার দেশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Leskovsek
6 ছবি1 | 6
বস্তুত, সোমবারই জার্মানিতে বৈঠকে বসেছিলেন যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বাইডেনের আমলে অ্যামেরিকার ইরান নীতি কী হবে এবং কী ভাবে পরমাণু ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা। বোঝাই যাচ্ছে, ক্ষমতায় এসে এই বিষয়গুলি নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবেন বাইডেন।
তবে মঙ্গলবার এনবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন জানিয়েছেন, আপাতত তাঁর প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য করোনা সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করা। সে জন্য প্রথমেই টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে, জিএসএ সম্মতি দেওয়ার পর মঙ্গলবার থেকেই নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোপন তথ্য তাঁর কাছে আসতে শুরু করেছে। আর্থিক বিষয়েও রিপোর্ট পেতে তিনি শুরু করেছেন। বাইডেনের অফিসের সূত্র জানাচ্ছে, সব ঠিক থাকলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন জানেট ইয়েলেন। যদিও এখনো তাঁর যোগদানের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।