1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আদর্শের লড়াইয়ে গোপালকৃষ্ণ গান্ধী

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৬ জুলাই ২০১৭

তাঁর নাম বিবেচিত হয়েছিল রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে৷ কিন্তু দলিত প্রার্থীর সন্ধানে মীরা কুমারকে বেছে নেন বিরোধীরা৷ এবার উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য ‌লড়বেন মহত্মা গান্ধীর নাতি৷

Indien Neu Delhi Gopalkrishna Gandhi
ছবি: Imago/Hindustan Times/M. Zakir

হার নিশ্চিত জেনেও লড়তে চান গোপালকৃষ্ণ৷ তার জন্য সব রাজনৈতিক দলের, সব সাংসদকে হলুদ রঙের পোস্টকার্ডে চিঠি লিখবেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী৷ সেই সঙ্গে ই-মেল করে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানাবেন৷

কেন প্রার্থী গোপালকৃষ্ণ গান্ধী? বিরোধীরা বলছে, বিজেপির সঙ্গে তাদের লড়াইটা যেহেতু মতাদর্শের, সেখানে গোপালকৃষ্ণই হবেন যোগ্য প্রার্থী৷ তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ, গান্ধীজির উত্তরসূরি হিসেবে আরএসএস-এর বিরোধী৷ রাষ্ট্রপতি পদে ১৭টি দল মীরা কুমারকে প্রার্থী করেছিল৷ এক্ষেত্রে ১৮টি দলের সমর্থন৷ গোপালকৃষ্ণের ক্ষেত্রে সমর্থন একটি দলের বেশি৷ নীতীশ কুমারের জনতা দল (‌ইউনাইটেড)‌৷ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শেষ কথা বলেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী৷ উপরাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা ছিল তৃণমূলনেত্রী মমতা ব্যানার্জির৷ ১৮ দলের জোটে তৃণমূল লোকসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দল৷ কংগ্রেসের ৪৫ জন সাংসদের পরেই বিরোধীদের মধ্যে ৩৪ জন সাংসদ নিয়ে তৃণমূল দু'নম্বর দল হিসাবে রয়েছে৷ এডিএমকের ৩৭ জন সাংসদ আছে ঠিক, কিন্তু তারা এনডিএ সহযোগীতে পরিণত হয়েছে৷ গোপালকৃষ্ণ চেন্নাইতে থাকেন৷ তার থেকেও বড় কথা, তিনি চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারিরও নাতি৷ চেন্নাইয়ে থাকার থেকেও বড় দক্ষিণ ভারতীয় যোগ তো এটাই৷ সে জন্যই তো ডিএমকের পক্ষেও তাঁকে সমর্থন জানাতে কোনো অসুবিধা হয়নি৷

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শুধাময় বাগ মনে করছেন, ‘‌‘‌উপরাষ্ট্রপতির পদ নিতান্তই একটি আলঙ্কারিক৷ গোপালকৃষ্ণের গান্ধী পদবিটি একটি এতিহাসিক ট্র্যাডিশন বহন করছে৷ কিন্তু গত ৭০ বছরে গান্ধীবাদ স্বাভাবিক ভাবে জনমাসেন প্রবেশ করেনি৷ ভারতীয় রাজনীতিতে নীতিনির্ভর মানুষের জায়গা তেমন নেই৷ যে ১৮টি দল গান্ধীকে সমর্থন করছে, তারা পরস্পর-‌বিরোধী৷ ফলে সংসদে ভোটের সময় দেখা যেতে পারে গোপন ব্যালটে এঁদেরই কেউ গান্ধীর প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন৷ আসলে যাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছেন, তাঁদের বক্তব্য এবং কাজের মধ্যে বাস্তিক মিল খুঁজে পাওয়া যায় না৷ ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের দেশের মানুষের নিম্নবর্গের মানু্ষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি৷''

অন্যদিকে দল ছাড়ার দুঃখ আর নরেন্দ্র মোদীকে ফের প্রধানমন্ত্রী করার কাজে সক্রিয় না থাকতে পারার আক্ষেপ সঙ্গে নিয়েই বিজেপির উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী হয়েছেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু৷ গোপালকৃষ্ণ ও তিনি দু'জনেই ইতিমধ্যে মনোনয়ন পেশ করেছেন৷ নির্বাচন ৫ আগস্ট৷ এরই মধ্যে নীতীশ কুমার আর নবীন পট্টনায়ক বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে চলে গিয়েছেন গোপালকৃষ্ণের দিকে৷ রাষ্ট্রপতি ভোটেও যাঁরা বিজেপি প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের পক্ষে ছিলেন৷ যদিও জয়ের জন্য সংখ্যা মোটেও অনুকূল নয়৷ তবে শক্তি বাড়তে দেখে অভিনব পথ নিলেন গোপালকৃষ্ণ৷ হাজারখানেক পোস্টকার্ড আনিয়েছেন৷ নরেন্দ্র মোদীসহ সব দলের সব সাংসদকে আবেদন জানাবেন৷

‘ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের দেশের মানুষের নিম্নবর্গের মানু্ষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি’

This browser does not support the audio element.

পরাজয় প্রায় নিশ্চিত জেনেও কেন ভোটে দাঁড়ালেন? নিজেই ব্যাখ্যা করলেন বিরোধী জোটের প্রার্থী৷ বললেন, ‘‘আমি সাধারণ নাগরিক৷ কোনো দলের নই৷ তাই সাধারণের ভাবনা, ভয় জানি৷ আজ নাগরিক সমাজ ও রাজনীতির মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে৷ রাজনীতি ভেঙে পড়েছে৷ দেশে বিভাজন শুরু হয়েছে৷ ভবিষ্যতের বিপদ সেটা৷'' সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘হারজিত নিয়ে ভাবছি না৷ চাইছি, নাগরিকের কণ্ঠ জোরালো হোক৷'' তাঁর প্রশ্ন, ‘‘জিতলেই বা কোন ‘তিস মার খান' হবো!''

টেলিকম আধিকারিক সলিল পোদ্দার বলছেন, ‘‌‘‌উপরাষ্ট্রপতি পদে গোপালকৃষ্ণের মনোনয়ন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ৷ মমতা ব্যানার্জি ওঁর নাম প্রস্তাব করেছেন৷ সব দল সমর্থন করেছে৷ ভারতের আগামীদিনের উচ্চসভায় যে আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন হবে, সেক্ষেত্রে প্রাক্ষ মানুষ হিসেবে গোপালকৃষ্ণের কোনো জুড়ি নেই৷ সেই হিসেবে আমরা সাধারণ ভাবে আশা করতে পারি, উনি যদি নির্বাচিত হন তাহলে সভা পরিচালনায় কোনো ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থাকবে না৷ ধর্মনিরপেক্ষ দেশের জন্য ওঁর জয়ী হওয়া জরুরি৷''

এদিকে গোপালকৃষ্ণ উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হতেই শিবসেনা তাঁর জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷

ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি কেন রদ করতে চেয়েছিলেন তিনি? তার জবাবও দিলেন উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী৷ বললেন, ‘‘গাঁধীও মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে ছিলেন৷ আমিও মনে করি মৃত্যুদণ্ড ভুল৷''

একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে বড় সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার জন্য নিজেকে প্রস্তত করছেন, অন্যজন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিকল্প মতাদর্শের কথা জনসমক্ষে আনবেন বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷ বেঙ্কাইয়া তাঁর এতদিনের জীবনযাপনের ধারা পরিবর্তন করে, রাজনীতির আঙিনা ছেড়ে সাংবিধানিক দায়িত্বের ঘেরাটোপে বন্দি হওয়ার অপেক্ষায়৷ গোপালকৃষ্ণর সেই দায় নেই৷ কারণ তিনি তো জেতার জন্য লড়ছেন না৷ লড়ছেন, নিজের ভাবনাকে তুলে ধরতে৷ তাই মনোনয়নপত্র পেশ করে নিজের ভাবনাকে তুলে ধরার তাগিদে ছোটখাট সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেললেন৷ বেঙ্কাইয়াও সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করলেন ঠিকই, কিন্তু নিজের কথা বললেন৷ আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনো সওয়াল-জবাব হবে না৷ গোপালকৃষ্ণ বলেছেন, ‘‌‘আমরা একটা বিভাজনের সময়ে চলছি৷ বিভাজনের প্রয়াস চলছে৷'‌' তারই প্রতিবাদ করতে চান তিনি৷

‘ধর্মনিরপেক্ষ দেশের জন্য ওঁর জয়ী হওয়া জরুরি’

This browser does not support the audio element.

বেঙ্কাইয়া বলছেন, ‘‌‘একটা কথা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, আমি সাধারণ মানুষ৷ কৃষক পরিবার থেকে এসেছি৷ সাধারণ জায়গা থেকে এখানে আসার পিছনে দল ও লোকের ভূমিকা রয়েছে৷ আমি মাকে হারিয়েছি দেড় বছরে৷ দলকে মায়ের মতো দেখেছি৷ দলই আমায় বড় করেছে৷ দল ছাড়াটা দুঃখের৷ তাই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম৷ আমি চেয়েছিলাম , মোদী ২০১৯ সালে আবার আসুন৷ তারপর সমাজসেবা করবো৷ কিন্তু ভাগ্যে অন্য কথা লেখা থাকে৷ এখন আমি দলের ওপরে৷ আর বিজেপির সদস্য নই৷ সাংসদ থাকছি৷ ভোট রয়েছে৷ তারপর সেই দায়িত্বও ছাড়ব৷ এনডিএ ও অন্য দলের নেতাদের সঙ্গ ছাড়ছি৷ আমি দলের অফিসে যাব না৷'‌'

সংসদ ভবনে সামান্য সময়ের ব্যবধানে মনোনয়ন পত্র পেশ করেছেন দুই প্রার্থী বেঙ্কাইয়া নাইডু এবং গোপালকৃষ্ণ গান্ধী৷ অঙ্কের হিসেবে গোপালকৃষ্ণ জয়ী হে পারবেন না৷ কিন্তু নীতিগত ভাবে যাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন, তাঁদের সমর্থন গোপালকৃ্শষ্ণের সঙ্গে থাকবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ