মার্টিন শ্যোলার ছবি তোলেন৷ পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষদের ছবি৷ তবে তাঁর ছবিগুলো গতানুগতিক ধারার নয়৷ বরং সমসাময়িক ফটোগ্রাফির জগতে এক মাইলফলক রচনা করেছেন শ্যোলার৷
বিজ্ঞাপন
বাথরোব পরা ইগি পপকে দেখার কথা ভেবেছেন কখনো? কিংবা কেমন হবে যদি সাবওয়েতে দেখা যায় অস্কারজয়ী রবার্ট ডেনিরোকে৷ আর স্ট্রেইট জ্যাকেটে অভিনেতা ক্রিস্টোফ ভালৎসের কথা ভাবাই যায় না৷
আলোকচিত্রী মার্টিন শ্যোলার পরিচিত মানুষদের অপরিচিত ছবি তুলে ধরেন৷ কাজটা সহজ নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে আইডিয়া তৈরি করা৷ আর আমার আইডিয়াগুলো বাস্তবায়ন প্রায়ই কঠিন হয়ে যায়৷ মাঝেমাঝে তা অনেকটাই বিষয়ের উপর নির্ভর করে৷ সুতরাং আইডিয়াগুলো এমন হতে যা তাদের সঙ্গে মানানসই৷ কেননা তাঁরা তাঁদের প্রতিচ্ছবি এগুলোর মধ্যে দেখতে চান৷''
‘স্টেরিওটাইপ' নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন মার্টিন শ্যোলার৷ যেমন ভয়ংকর সব ছবির পরিচালক কোয়েনটিন টারানটিনোকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন শান্তির পায়রার মাঝে৷ আর বিশ্বখ্যাত স্কেটবোর্ডার টনি হককে নিয়ে গেছেন তাঁর রান্নাঘরে৷
গত ১৫ বছর ধরে মার্টিন শ্যোলারের তোলা ছবি এখন বার্লিনের সিডাব্লিউসি গ্যালারিতে প্রদর্শন হচ্ছে৷ সেখানের ৬০টির মতো ছবি রয়েছে, যার কয়েকটিতে শিল্পীর ভোগবাদী মনোভাবও ফুটে উঠেছে৷
২০০৫ সালে তাঁর ছবি সিরিজ ‘ক্লোজ আপ'-এর মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসেন মার্টিন শ্যোলার৷ বিশ্বখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিনগুলোও তাকে দিয়ে ছবি তুলিয়েছে৷ তিনি ছবি তোলার ক্ষেত্রে নিয়ন লাইট ব্যবহার করেন যা তাঁর ট্রেডমার্কে পরিণত হয়েছে৷
শ্যোলার বলেন, ‘‘ক্লোজ আপ ছবির ক্ষেত্রে আমি এমন এক সময় ছবিটি তোলার চেষ্টা করি যখন আমার বিষয় বা ‘সাবজেক্ট' পুরোপুরি সচেতন নন৷ ছবি তোলার সময় গান বাজতে থাকে, আমি সারাক্ষণ কথা বলতে থাকি৷ মাঝে মাঝে তারা আমার প্রশ্নের উত্তর দেন৷ আমি তাঁদের হাসানোর চেষ্টা করি৷ আর এ সবের মধ্যেই ছবি তুলতে থাকি৷ আমার লক্ষ্য থাকে সেই সময়ের ছবি তোলা যখন তারা হাসি থামিয়ে আবারো ‘সিরিয়াস' হওয়ার চেষ্টা করেন৷''
দুই বছর আগে জমজদের নিয়ে একটি পোট্রেট সিরিজ তৈরি শুরু করেন শ্যোলার৷ তিনি এবং তাঁর দর্শক, সকলের জন্যই এগুলো মজার৷ তিনি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ইউরোপেও জনপ্রিয়৷
শিশুর ক্যামেরায় নিজের জগত
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের কাইয়েলিচা এলাকার শিশুরা তাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেসবের ছবি তোলে৷ ক্যামেরা হাতে আশেপাশের ছবি তুলে বেড়ায় ওরা৷ কাইয়েলিচায় প্রায় ১২ লাখ মানুষের বাস, তাঁদের প্রায় সবাই খুব গরিব৷
ছবি: Elethu/Karin Banduhn
একদিনের রিপোর্টার
‘‘জীবনে সত্যি যা ভালোবাসো তা দেখাও’’ – ঠিক এই কথাটাই বলে দেয়া হয়েছে স্থানীয় একটি স্কুলের ছয় বছর বয়সি এই শিশুদের৷ এই প্রথম ক্যামেরা হাতে নিয়েছে ওরা৷ কয়েক ঘণ্টা ক্যামেরা চালানো শেখার পর নেমে পড়েছে সেরা ছবি তোলার কাজে৷
ছবি: Karin Banduhn
‘নতুন বাড়ি’
কোসা ভাষায় কাইয়েলিচা মানে ‘নতুন বাড়ি’৷ সরকার চায় এলাকায় নতুন ঘর-বাড়ি হোক৷ কিন্তু লিখতার পরিবারের মতো অনেকেরই কাঠের বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে ওঠার সাধ্য নেই৷
ছবি: Liktha/Karin Banduhn
ভরপুর বাড়ি
সিফোকাজির পরিবারে এক ছাদের নীচে বাস করে তিন প্রজন্ম৷ কাইয়েলিচার বেশির ভাগ পরিবারের মতো এ পরিবারেরও মূল উপার্জনকারী বাবা, পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে অন্য বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে মা৷ মা-বাবা যখন কাজে ব্যস্ত, তখন বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন দাদা-দাদি৷
ছবি: Siphokazi/Karin Banduhn
অমূল্য সম্পদ
খেলনা খুব প্রিয় মাহলের৷ বেশিরভাগ খেলনাই তার স্কুলে আসে জার্মানির হামবুর্গ শহরের শুলকাম্প প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে৷ কাইয়েলিচা সংস্থা ওদের স্কুলের পাশে আছে সবসময়৷
ছবি: Mahle/Karin Banduhn
ছেলেদের খেলনা
মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি একটা গাড়ি থাকলে কার না ভালো লাগে! জায়গা নেই বলে কাইয়েলিচার বাচ্চারা বাড়িতে খুব একটা খেলতে পারে না৷ খুদে ফটোগ্রাফার ইভিভসে তাই খালি ক্যান দিয়েই বানিয়ে নিয়েছে রেস ট্র্যাক৷
ছবি: Ivivse/Karin Banduhn
ক্ষুধা নিবারণ
লুলুথো স্কুল থেকে ফেরে ভীষণ ক্ষুধা নিয়ে৷ ঘরে সবসময় খাওয়ার মতো কিছু না কিছু থাকে বলে রক্ষা৷ কাইয়েলিচার অধিকাংশ পরিবার খাবারের পেছনে প্রতিদিন খরচ করে ২২ রান্ড, অর্থাৎ ১.৭০ ইউরোর মতো৷
ছবি: Lulutho/Karin Banduhn
ঐতিহ্য আর দৈনন্দিন জীবন
স্থানীয়দের অধিকাংশই কোসা জনগোষ্ঠীর৷ নেলসন ম্যান্ডেলা আর তাঁদের ভাষা এক৷ তাঁদের কাছে ঐতিহ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সাধারণত মেয়েরা রান্না করে আর ছেলেরা কাজ করতে যায় বাইরে৷
ছবি: Yandise/Karin Banduhn
কাইয়েলিচার শিশুরা
ফটোসাংবাদিক এলেথুর জন্য বন্ধুরা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এখানে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী এবং সুখি মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে৷ এটা দরকারও, কেননা শিশুদের হাতেই তো দেশের ভবিষ্যৎ!