ইসলাম নয়, আফগান সংস্কৃতিরই শেকড়ে ঢুকে গেছে নারীর নাম মুছে ফেলার প্রথা৷ সমাজের দ্বিতীয় শ্রেণিতে নারীর অবস্থানের পরিচয় এই প্রথা৷ এমনকি পড়াশোনা ও বিয়ের মতো বিষয়েও নারীদের নেই কোনো বক্তব্য৷
বিজ্ঞাপন
২০০১ সালে অতি-রক্ষণশীল তালিবান উৎখাত হওয়ার পর আফগান নারীরা স্কুলে যাওয়ার, ভোট দেয়ার এবং কাজ করার অধিকার ফিরে পেয়েছেন৷ কিন্তু নারীর ওপর সহিংসতা তাই বলে থেমে থাকেনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে৷ বেশিরভাগ সময়ই এই সহিংসতার কোনো বিচারও হয় না৷
এই অবস্থা পরিবর্তনে #হোয়্যারইজমাইনেম নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন কিছু আফগান নারী৷ সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পুরুষদেরই, নারীদের থাকতে হবে প্রায় অদৃশ্য হয়ে – এমন ধারণার পরিবর্তন ঘটাতে কাজ করছে এই ক্যাম্পেইন৷
‘‘কাজের খাতিরে যখনই বাইরে গেছি, অনেক নারীর সাথে আমার কথা হয়েছে চিন্তাভাবনায় যারা অসাধারণ৷ কিন্তু যখনই তাঁদের সাক্ষাৎকার বা ছবি নেয়ার কথা বলেছি, তাঁরা বলতেন, ‘‘আমার স্বামীকে, বাবাকে, বা ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে'', বলছিলেন কাবুলের নারী ফটোজার্নালিস্ট ফারজানা ওয়াহিদি৷
বাহার সোহাইলি এবং তার বন্ধুরা আছেন এই ক্যাম্পেইনে৷ এমন এক দিনের জন্য তাঁরা কাজ করছেন, যখন নারীকে তাঁর নাম বা পরিচয়ের জন্য লজ্জিত হতে হবে না৷
সোহাইলি বলেন, ‘‘নারীর অধিকার রক্ষায় আইন প্রয়োগে আমরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই৷ যখনই আমরা আদালত বা পার্লামেন্টে আমাদের দাবি তুলে ধরতে চাই, তারা ধর্মের কথা বলে আমাদের চুপ করিয়ে দিতে চায়৷''
আফগান আইন অনুসারে শিশুর জন্মসনদে মায়ের নাম থাকে না৷ কাবুল হাইকোর্টের মুখপাত্র আবদুল্লাহ আতাহি থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে জানান, ‘‘আফগান সমাজ এ বিষয়ে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়৷''
‘‘শিশুর জন্মসনদে বা অন্যান্য কাগজে মায়ের নাম উল্লেখে আমাদের কোনো সমস্যা নেই৷ কিন্তু এই আধুনিক পদক্ষেপের জন্য আফগানিস্তানের সংস্কৃতি ও জনগণ প্রস্তুত নয়৷'' তিনি মনে করেন এই পদক্ষেপ সৃষ্টি করতে পারে ‘অপ্রয়োজনীয় বিশৃংখলার'৷
আইনজীবী ও নারী অধিকার কর্মী শাহগুল রেজায়ই বলছেন, অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া উচিত৷
তিনি বলেন, ‘‘পার্লামেন্টে কিছু মৌলবাদী শক্তি আছে, যারা চায় না নারীরা এই অধিকার পাক৷ কিন্তু আমরা নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে আইনের সংস্কার ও নতুন আইন প্রণয়নের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷''
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
তালেবান শাসনামলে মেয়েদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয় আফগানিস্তানে৷ অথচ আফগানিস্তানে এমন একটা সময়ও ছিল, যখন সে দেশের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উচ্চাকাঙ্খী চিকিৎসকরা
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জন নারী মেডিসিন শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে এক অধ্যাপকের সঙ্গে মানবদেহের একটি অংশ পরীক্ষা করতে৷ ছবিটি ১৯৬২ সালে তোলা৷ সে’সময় আফগান সমাজে নারীদের একটি সক্রিয় ভূমিকা ছিল৷ তখন তাঁদের শিক্ষার সুযোগ যেমন ছিল, তেমনই বাড়ির বাইরেও ছিল অবাধ বিচরণ৷
ছবি: Getty Images/AFP
পাশ্চাত্যের পোশাক কাবুলের রাস্তায়
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি রেডিও স্টেশনের বাইরে হাঁটছেন পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরা দুই নারী৷ ১৯৬২ সালে তোলা ছবি এটি৷ কিন্তু উগ্র ইসলামপন্থি তালেবান গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতা গ্রহণের পর, সব কিছু বদলে যায়৷ আর সব কিছু ঢাকা যায়, এমন বোরকা পরে জনসমক্ষে যেতে বাধ্য করা হয় নারীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার জন্য সম অধিকার - সবসময় নয়
গত শতকের সত্তরের দশকে আফগান শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে মেয়েদের বিচরণ স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল৷ কিন্তু তার মাত্র ২০ বছর পর শিক্ষাকেন্দ্রে মেয়েদের যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর পরিস্থিতি আবার কিছুটা বদলেছে৷ ২০০৩ সালে আফগান সংবিধানে নারী ও পুরুষ উভয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archive/Zh. Angelov
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
কাবুল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে আফগান শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন একজন সোভিয়েত প্রশিক্ষক৷ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত – অর্থাৎ এই দশ বছর আফগানিস্তান সোভিয়েতদের দখলে ছিল৷ তাই সেই সময়টায় আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বহু অধ্যাপক অধ্যাপনা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
শিক্ষার্থীদের ঘোরাফেরা
১৯৮১ সালে তোলা এই ছবিটিতে আফগান ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৭৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তানে হামলা চালালে যুদ্ধ শুরু হয় এবং তা দশ বছর ধরে চলে৷ পরবর্তীতে, ১৯৮৯ সালে, সোভিয়েতরা দেশটি ছেড়ে গেলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় আফগানিস্তানে৷ এই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৬ সালে, তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP
সবার জন্য স্কুল
সোভিয়েতদের অধিকৃত আফগানিস্তানের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছবি এটি৷ তবে তালেবানের শাসনামল শুরু হওয়ার পর আফগান মেয়েদের স্কুলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়৷ এমনকি বাড়ির বাইরে কাজ করাও নিষিদ্ধ ছিল তাঁদের৷
ছবি: Getty Images/AFP
তেমন কিছু বদলায়নি
এই ছবিটি ১৯৮১ সালে তোলা৷ হিজাব, বোরকা ছাড়া এক মা তাঁর সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় হাঁটছেন৷ এমন দৃশ্য এখন আর আফগানিস্তানে দেখা যায় না৷ এমনকি তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৫ বছর পরেও না!