1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কতটা প্রস্তুত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ জুন ২০২২

আগামী বছর থেকেই পরীক্ষাসহ শিক্ষা ও পাঠক্রমে ব্যপক পরিবর্তন আসছে। আর এটা কার্যকর করতে প্রয়োজন ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ। শিক্ষকদের যেমন প্রয়োজন তেমনি ছাত্রদেরও মানসিক প্রস্তুতি দরকার। সেটা কত দূর?

SSC Examen Bangladesch
ছবি: bdnews24.com

নতুন শিক্ষাক্রমে এখনকার মত আর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুসারে এসএসসি পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডের অধীনে দুইটি পবালিক পরীক্ষা হবে। দুইটি পরীক্ষার ফলাফল সমন্বয় করে চূড়ান্তভাবে এইচএসসির ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বেন। একাদশ শ্রেণিতে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য এই তিন বিভাগে ভাগ হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমত বিভাগ বেছে নিতে পারবেন।
প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাস ঠিক করা হয়েছে। তাদের শেখার ১০টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রাক-প্রাথমিকে কোনো বই থাকবে না। তারা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের কাছ থেকে  শিখবে। ক্ষেত্রগুলো হলো: ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি,  জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্বনাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি,  শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।
প্রাথমিকে থাকবে ছয়টি আর মাধ্যমিকে ১০টি বই।  সপ্তাহে ছুটি হবে দুই দিন।
প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির চেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। তবে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রচলিত কোনো পরীক্ষাই হবে না। এরপর থেকে পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন থাকবে। দুইটি মিলিয়ে ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। শেণি অনুযায়ি মূল্যায়ন শতকরা ৩০ থেকে ৬০ ভাগ হবে ক্লাসে শিক্ষার সময়ে। বাকিটা পরীক্ষার মাধ্যমে।
আগামী বছর  প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম  শ্রেণিতে পর্যন্ত এই পদ্ধতি চালু হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে নতুন এই পদ্ধতি চালু হবে।
এই পুরো প্রক্রিয়াকে শিক্ষা গবেষকেরা দেখছেন আমূল পরিবর্তন হিসেবে। তারা বলছেন, উন্নত বিশ্বে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সব সময়ই পরিবর্তন আনা হয়। তারা যেটা অনেক আগে করেছে সেটা আমরা এখন করতে যাচ্ছি। কিন্তু এই পরবর্তনের সুফল পেতে হলে  যা করতে হবে তা করা হচ্ছে কী না সেই সংশয় রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমানের মতে সামনে চার ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে-
১.এই পদ্ধতি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করতে পারবে কী না। সেই প্রশিক্ষণ আছে কী না। পর্যাপ্ত শিক্ষক আছে কী না।
২. শিক্ষক থাকলেই হবে না, যোগ্য শিক্ষক আছে কী না।
৩. ছাত্র ও অভিভাবকদের প্রস্তুত করা হচ্ছে কী না।
৪. অবকাঠামো আছে কী না।
৫. যে পাইলটিং হচ্ছে তা ফলফল বিশ্লেষণ করা হয়েছে কি না।
তার কথা,"যেহেতু প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। তাই শিক্ষককে হতে হবে অনেক বেশি যোগ্য ও স্বাধীন। তারা ক্ষমতায়ন দরকার। নয়তো স্থানীয় পর্যায়ে তিনি চাপের মুখে পড়তে পারেন। আর তাদের যা বেতন কাঠামো তাতে ওই পর্যায়ের যোগ্য শিক্ষক পাওয় যাবে কী না। শিক্ষক আগের চেয়ে প্রায় দুই গুণ বেশি লাগবে। কারণ শিক্ষককে আলাদা আলাদাভাবে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করতে হবে। এই নিবিড় পদ্ধতির জন্য শিক্ষকের সংখ্যা এবং যোগ্যতা দুইটিই বেশি লাগবে। প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের কোনো বই থাকবে না। শিক্ষকদের কাছ থেকেই তারা শিখবেন। এর জন্য শিক্ষকদের উচু মাপের দক্ষতা প্রয়োজন।”

অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান

This browser does not support the audio element.

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। কোনো প্রশিক্ষণও শুরু হয়নি। তারাও ঠিক জানেন না নতুন পদ্ধতিতে ঠিক কী রকমভাবে তারা পাঠদান ও মূল্যায়ন করবেন। সংবাদমাধ্যমেই শুধু জেনেছেন। অভিভাবকেরা তাদের কাছে জানতে চাইছেন। তাদের জানার আগ্রহ প্রধাানত সমাপনী পরীক্ষা হবে কী না সে বিষয়ে।
নতুন এই শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে দেশের ৬৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলট প্রকল্প চলছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান জানান, তারা এই প্রকল্পে ভালো ফল পাচ্ছেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাই অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন এবং তারা নতুন ধারায় শিক্ষা এবং মূল্যায়নকে ভালোভাবেই গ্রহণ করছেন।
তিনি বলেন," ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা স্কুলের শিক্ষকদের মাধ্যমেই ধারণা পাবেন। তাদের জন্য কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তবে জেলা এবং উপজেলা পার্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণে রাখা হচ্ছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"ক্লাসে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকের পক্ষপাতিত্ব বা স্থানীয় পর্যায়ের চাপ এড়াতে আমরা মনিটরিং ব্যবস্থা রেখেছি। আর ছাত্ররাও  মূল্যায়ন করবে। পাঁচজন ছাত্র মিলে যদি একটি প্রজেক্ট তৈরি করে তাহলে শিক্ষক মূল্যায়ন করবেন ৫০ নাম্বারের মধ্যে। তিনি তো সবাইকে সমান নাম্বার দেবেন। কিন্তু ওই প্রকল্পের পাঁচজন সদস্য প্রত্যেকে প্রত্যেকে নাম্বার দেবে।”
তবে নতুন এই পদ্ধতিতে শিক্ষকদের ছাত্রদের মাধ্যমে মূল্যায়নের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ