পরিবারকে তালাবন্ধ রেখে ধর্ষিতার দেহ সৎকার করল পুলিশ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
পরিবারকে ঘরে তালাবন্ধ করে ধর্ষিতার দেহ দাহ করল পুলিশ। উত্তর প্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে চরম অমানবিকতার অভিযোগ উঠল।
বিজ্ঞাপন
ফের উত্তর প্রদেশ পুলিশের কদর্য চেহারা বাইরে বেরিয়ে পড়ল। ১৫ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর মঙ্গলবার মৃত্যু হয়েছে হাথরসে ১৯ বছরের ধর্ষিতা নারীর। অভিযোগ, তাঁর দেহ বাড়িতেই নিয়ে যেতে দেয়নি পুলিশ। পরিবারের সকলকে ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে রাত আড়াইটের সময় তাঁর দেহ সৎকার করেছে পুলিশ। যা নিয়ে নতুন করে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
অপরাধের জন্য কুখ্যাত যেসব ভারতীয় শহর
ভারতের বেশ কিছু অংশে কিছু বিশেষ বিশেষ অপরাধের বাড়বাড়ন্ত রয়েছে৷ সেই শহরগুলি কোনটি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Photo
গাড়ি চুরি
উত্তর প্রদেশের মীরাট ও মুজফফরনগরের সাথে জড়িত হয়েছে বহু গাড়ি চুরির ঘটনা৷ শুধু তাই নয়, উত্তর ভারতের অন্যান্য শহরে গাড়ি চুরির ঘটনার তদন্ত থেকে উঠে এসেছে এই দুই শহরের দাগী আসামীদের নাম৷
ছবি: Colourbox/Andrey Armyagov
খুন
মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে খুনের ঘটনা রমরমিয়ে চলে উত্তর প্রদেশের ইটাওয়া ও বুলন্দশহর অঞ্চলে৷ গত কয়েক বছরে এই দুই শহরের সাথে বিহারের বেগুসারাই শহরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খুনের ঘটনা, জানাচ্ছে ভারতের জাতীয় অপরাধ ব্যুরো৷
ছবি: Fotolia
পরিচয়পত্র জালিয়াতি
ভোটার কার্ড বা ‘আধার’ জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির ঘটনা কয়েক বছরে মারাত্মক হারে বেড়েছে৷ অপরাধ ব্যুরোর সাইবার ক্রাইম বিভাগ জানাচ্ছে, এমন অপরাধের হারে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণের শহর হায়দরাবাদ৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam
লুট ও ডাকাতি
মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানের বিভিন্ন অঞ্চল লুটপাটের জন্য কুখ্যাত৷ হাইওয়ে সংলগ্ন বসতিহীন অঞ্চলগুলিই অপরাধীদের নজরে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
‘আইটি ফ্রড’
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নতুন ধরেন অপরাধ৷ বেঙ্গালুরু, যেখানে রয়েছে বিশ্বের তাবড় তাবড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার দপ্তর, বর্তমানে ভারতের আইট ফ্রড বা তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধের রাজধানী৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
ধর্ষণ
একের পর এক ভয়াবহ ধর্ষণের খবর সামনে আসার পর থেকে বলা হচ্ছে যে রাজধানী দিল্লিই ভারতের ‘ধর্ষণ রাজধানী’৷ যদিও এই দাবির সত্যতা যাচাই করার মতো কোনো তথ্য নেই, তাও দিল্লির গায়ে রয়েই গেছে এই তকমা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saurabh Das
গুম বা অপহরণ
বেশ কয়েক দশক ধরে চলে আসা গুমের প্রবণতা এখনও ভারতের রাজ্য বিহারের পিছু ছাড়েনি৷ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাজনিত কারণেই সেখানে বেশির ভাগ গুমের ঘটনা হয় বলে মনে করেন অনেকে৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
কয়লা মাফিয়া
কয়লা খনির জন্য বিখ্যাত ঝাড়খণ্ডে সক্রিয় আছে বহু মাফিয়া চক্র৷
ছবি: Ravi Mishra/Global Witness
বন্যপ্রাণীর চোরাশিকার ও পাচার
ভারতের উত্তরাখণ্ড, যেখানে রয়েছে বন্যপ্রাণীদের জন্য অভয়ারণ্য, বর্তমানে বন্যপ্রাণীদের চোরাশিকার ও পাচারের একাধিক চক্র৷ বাঘ, চিতাবাঘ ছাড়াও নানা রকমের পাখির চোরাপাচার হয় সেখান থেকে৷
ছবি: AP
মাদক বাজার
হিমাচল প্রদেশের কুলু ও মানালি অঞ্চলে রয়েছে মাদক-পর্যটনের ব্যাপক প্রচলন৷ বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে রয়েছে এই অঞ্চলে আসার ঝোঁক৷ যার কারণ এই অঞ্চলে ব্যাপকহারে গাঁজা, আফিম ও চরসের উৎপাদন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. R. Jain
নকল
পরীক্ষায় নকল করার জন্য বিহারের বদনাম রয়েছে কয়েক দশক ধরে৷ এতটাই গভীরে এই নকলের ধারা যে বেশ কয়েক বার সারা রাজ্যে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগ ওঠে ও শিক্ষার্থীরা দোষীও সাব্যস্ত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
11 ছবি1 | 11
১৫ দিন আগে মা এবং ভাই বোনদের সঙ্গে ক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন হাথরসের ওই দলিত কন্যা। সেখানেই চারজন উচ্চবর্ণের যুবক তাঁকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পাশাপাশি তাঁর উপর তীব্র অত্যাচারও চালানো হয়। কেটে দেওয়া হয় জিভ। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর প্রথমে এফআইআর নিতে চায়নি পুলিশ। পরে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক শুরু হলে পুলিশ এফআইআর গ্রহণ করে। চার অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়।
উত্তর প্রদেশে চিকিৎসায় সাড়া না দেওয়ায় ওই নারীকে দিল্লির এইমস-এ নিয়ে আসা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যায়নি। মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু তার পরেও বিতর্ক থামেনি। ধর্ষিতার পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুর পরে দেহ বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। পরিবারের হাতে তা তুলে দেওয়া হচ্ছিল না। এর প্রতিবাদে থানার সামনে ধর্নায় বসে পড়েন ধর্ষিতার আত্মীয় এবং গ্রামের মানুষেরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দেহ পরিবারের হাতে দিতে পুলিশ রাজি হয়। পরিবার জানিয়ে দেয়, বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ধর্ষিতার দেহ সৎকার করা হবে না। এ নিয়ে ফের পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হয়।
এক সময় পরিবার দেহ সৎকারে সম্মত হয়। তবে তারা পুলিশকে জানায়, রাতে নয়, সকালে দেহ সৎকার করা হবে নিয়মরীতি মেনে। প্রাথমিক ভাবে সে কথা শুনে পুলিশ গ্রাম থেকে চলেও যায়। কিন্তু মাঝ রাতে ফের এলাকায় ফিরে আসে পুলিশ। গ্রামবাসী এবং পরিবারের সঙ্গে পুলিশের তীব্র বাদানুবাদ হয়। অভিযোগ, এর পরেই পরিবারের সকলকে বাড়িতে তালা বন্ধ করে ধর্ষিতার বাবাকে গাড়িতে তুলে শ্মশানে পৌঁছে যায় পুলিশ। সেখানে পুলিশই তাঁর দেহ সৎকার করে দেয়।
সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের কাছে ধর্ষিতার ভাই বলেছেন, ''পুলিশ ঠিক ভাবে দিদির দেহ সৎকার পর্যন্ত করতে দিল না।'' পুলিশ অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই এই অভিযোগ মানছে না। তাদের বক্তব্য, পরিবারের অনুমতিতেই তারা দেহ সৎকার করেছে। কিন্তু রাতের যে ফুটেজ মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশকে সৎকারের অনুমতি দেয়নি পরিবার।
উত্তর প্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে। যোগী আদিত্যনাথের আমলে তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া এনকাউন্টারের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দলিতের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগও পুলিশের বিরুদ্ধে আছে। তবে মঙ্গলবারের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।