পরিবারপ্রতি তিন সন্তান চান এর্দোয়ান, অধিকারকর্মীদের সমালোচনা
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
জন্মহার অনেক কমে যাওয়ায় এবং পারিবারিক মূল্যবোধ ধরে রাখতে ২০২৫ সালকে ‘পরিবারবর্ষ' ঘোষণা করেছে তুরস্ক৷ প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান বলেন, বর্তমান জন্মহারের কারণে তুরস্কের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে৷
তুরস্কে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নিয়মিতই রাজপথে বিক্ষোভ হয়ছবি: YASIN AKGUL/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
পরিবারবর্ষকে ঘিরে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে৷
২০২৩ সালে দেশটিতে জন্মহার ছিল ১.৫১৷ অথচ তুরস্কের জনসংখ্যা যেন না কমে সেজন্য হারটি অন্তত ২.১ থাকা উচিত৷ ২০১৬ সাল থেকে দেশটিতে জন্মহার নিয়মিত কমছে৷
পরিবারবর্ষকে ঘিরে তুরস্কের সরকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে৷ বিয়ে করতে ইচ্ছুক দম্পতিদের বিনা সুদে সর্বোচ্চ চার হাজার ইউরো ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া প্রথমবার যারা মা হবেন তাদেরও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে৷ শিশুসেবার মান বাড়ানো ও ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারির পর জন্মগ্রহণ করা শিশুদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে৷
‘‘প্রথম নজরে এই ধারণাগুলি বর্তমান নীতির চেয়ে ভালো বলে মনে হচ্ছে,'' বলেন আঙ্কারার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেমোগ্রাফির বিশেষজ্ঞ ইসমেত কোচ৷ ‘‘কিন্তু এইসব কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি,'' বলেন তিনি৷ কোচ আরও বলেন, ‘‘শুধুমাত্র আর্থিক প্রণোদনার উপর ভিত্তি করে একটি নীতি কেবল সাময়িকভাবে সফল হতে পারে৷'' সুবিধা দেওয়ার কারণে জন্মহার বাড়লেও সেটি স্থায়ী হবে না বলেও মনে করেন তিনি৷
এদিকে, নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা তুরস্কের কর্মীরা সরকারের উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন৷ তারা সরকারের বিরুদ্ধে ‘সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ' তৈরির অভিযোগ এনেছেন৷
নারী অধিকারকর্মী ও আইনজীবী সেলিন নাকিপোলু বলছেন, নতুন উদ্যোগটির লক্ষ্য হচ্ছে তুরস্কের পারিবারিক আইনকে- যা বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষ- শরিয়া ও ইসলামি আইনের ভিত্তির উপর দাঁড় করানো৷ তিনি বলেন, এর ফলে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হবে, এবং এটি ‘‘নারী ও শিশুর প্রতি পুরুষের সহিংসতাকে কার্পেটের নীচে চাপা দিবে৷''
নাকিপোলু আরও বলেন, ‘‘তথাকথিত পরিবারবর্ষ সমাজে নারীর অধস্তন ভূমিকাকে সুসংহত করতে সাহায্য করবে এবং বেতনভোগী ও অবৈতনিক কর্মজীবী নারীদের উপর শোষণ আরও বাড়াবে৷''
তুরস্কে নারী হত্যা বাড়ছে উল্লেখ করে ফেডারেশন অফ উইমেনস এসোসিয়েশন্স অফ টার্কির প্রেসিডেন্ট চানান গুলু বলেন, ‘‘২০২৫ সালকে পরিবারবর্ষ ঘোষণা না করে নারীহত্যা প্রতিরোধের বছর হিসেবে ঘোষণা করা উচিত ছিল৷'' তিনি বলেন, ‘‘কেবলমাত্র এই ধরনের সিদ্ধান্তই নারীদের আত্মবিশ্বাসকে অনুপ্রাণিত করত৷''
মানুষ কমলে কী উপকার?
এল পাসিনো আর ক্রাইস্টচার্চের দুই সন্ত্রাসী হত্যাযজ্ঞ শুরুর আগে বলেছিল, বিশ্বে মানুষ কম থাকাই ভালো৷ এক গবেষণা বলছে, মানুষ সত্যিই কমবে, একসময় অর্ধেক হয়ে যাবে জাপান আর স্পেনের জনসংখ্যা৷ কিন্তু মানুষ কমলে আসলে কী উপকার?
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
জন্মদানের ক্ষমতা কমছে
বিশ্বে বয়স্ক মানুষ বাড়ছে আর কমে যাচ্ছে উর্বরতা শক্তি, অর্থাৎ সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা৷ বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ল্যান্সেটে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে, একুশ শতকের শেষ দিকে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জনসংখ্যা কমবে৷তখন জনসংখ্যাবিস্ফোরণ নিয়ে আতঙ্কের স্থান নেবে একটি প্রশ্ন- নতুন প্রজন্ম আসবে কিভাবে?
ছবি: Imago/photothek/U. Grabowsky
৯৭০ কোটি থেকে কমার শুরু
ইন্সটিটিউট ফর হেল্থ মেট্রিস অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)-র গবেষণা অনুযায়ী, আগামী চার দশকের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাবে৷ তাই বিশ্বের জনসংখ্যা ৯৭০ কোটিতে পৌঁছে যাবে৷ তারপরই কমতে শুরু করবে মানুষ, এক পর্যায়ে জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৮৮০ কোটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Koch
স্পেন আর জাপান অর্ধেক
গবেষণাটি আরো বলছে, ৮০ বছরের মধ্যে স্পেন আর জাপানের জনসংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে যাবে৷ চীনের জনসংখ্যাও এত কমবে যে, ভারত আর নাইজেরিয়া হয়ে যাবে সবচেয়ে জনবহুল দেশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Barrientos
স্বাভাবিক ধারায় মাত্র ১২টি দেশ
সোমালিয়া, সাউথ সুদানসহ মাত্র ১২টি দেশে তখন শিশুজন্মের হার স্বাভাবিক থাকবে৷ বাকি সব দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে আশঙ্কাজনক হারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abdiwahab
সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কা
সারা বিশ্বে শিক্ষার হার বর্তমান ধারায় বাড়তে থাকলে এবং জন্মনিরোধক ঘরে ঘরে পৌঁছে গেলে ২১০০ সালে সারা বিশ্বে জনসংখ্যা ১৫০ কোটি কমে যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Lage
কমলেই লাভ?
মানুষের সংখ্যা কমলে কার্বন নিঃসরণ কমবে, কমবে সারা বিশ্বের খাদ্যের ওপর চাপ ৷ তবে সব মানুষ সমান হারে কার্বন নিঃসরণ করে না৷ তাই হ্যারিসবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক অরবিন্দ রবিকুমার মনে করেন, মানুষ কমলে জলবায়ুর কল্যাণ হবে এমন ধারণা একেবারেই কাল্পনিক৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
জনসংখ্যা কমার অন্ধকার অতীত
জনসংখ্যা কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ অনেক সময় অনেক দেশেই নেয়া হয়েছে৷ বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডায় আদিবাসী নারীদের স্টেরিলাইজ করা হয়৷৷ ১৯৭৬ সালে দাতা গোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী, একইভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছিল ভারত৷ তখন ৬২ লাখ মানুষকে স্টেরিলাইজ করেছিল ইন্দিরা গান্ধী সরকার৷ চীনেও এই প্রক্রিয়া অবলম্বনের অভিযোগ রয়েছে৷