কয়েকদিন পরই অবসর নেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম৷ শিক্ষক হিসেবে সম্মান প্রাপ্য সব সময়ই পেয়েছেন, সমাজে অবমাননা শুরুর কারণ নিয়েও তিনি ভেবেছেন৷ এ সাক্ষাৎকারে তাঁরই ভাবনার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকের মর্যাদাহানির বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে৷ এর কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: আমাদের দেশে এখন সব কিছু ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে – এটাই এর প্রধান কারণ৷ আমাদের রাজনীতি এখন ক্ষমতায় যাওয়া অথব ক্ষমতায় থাকার রাজনীতি৷ অর্থবিত্ত যারা করছে তাদেরও ক্ষমতার প্রতি দুর্বলতা৷ শিক্ষকরা হচ্ছে সেই শ্রেণির মানুষ যাদের কোনো ক্ষমতা নেই৷ এক সময় ছিল৷ একটা সময় তাদের এমন ক্ষমতা ছিল যে মানুষকে তারা শিক্ষিত করবেন, জ্ঞানী করবেন এবং শিক্ষকদের হাত ধরে শিক্ষার্থীরা জগতে প্রবেশ করবে৷ তাতে একটা অধিকার তাদের ছিল৷ একটা সামাজিক চুক্তি ছিল, যেখানে শিক্ষকদের একটা বড় ভূমিকা দেয়া হতো৷ ভাবা হতো, তারা মানুষ গড়ার কারিগর এবং সমাজ তাদেরকে সেভাবে সম্মান করত৷ কিন্তু পুঁজিবাদী শাসনের ফলেই হোক, অথবা আমাদের রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের ফলেই হোক, এখন ঐ সামাজিক চুক্তিটা নষ্ট হয়ে গেছে৷ এখন মুখস্থ করে পড়াশোনা করে, পরীক্ষা পাশ করে, একটা সনদ হাতে নিয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে৷ কাজেই শিক্ষা বা জ্ঞানের যে একটা বিষয় ছিল, সেটি এখন অনেক দূরবর্তী হয়ে গেছে৷ ফলে যে অবস্থানে আগে দেখা হতো, সেখানে সমাজ আর শিক্ষকদের দেখছে না৷
শিক্ষার্থীদের চোখে শিক্ষকদের মর্যাদা
শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কেমন চোখে দেখেন? ঢাকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে সেটিই জানতে চেয়েছিলেন আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্ত সাদ
ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী অনন্ত সাদ একজন শিক্ষকের ছেলে৷ তাঁর মতে, ‘‘মাতা-পিতার পরেই যাঁদের স্থান তাঁরাই হলেন শিক্ষক৷ আর এটা আমরা শিখেছি পরিবার থেকেই৷ শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে যতই রাগারাগি করেন না কেন সেটা আমাদের ভালোর জন্যই করে থাকেন৷ আমার বাবাও একজন শিক্ষক এবং তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে শিক্ষকদের সম্মান করতে হয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
কাজী ফয়সাল আরেফিন
তিনিও ঢাকার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী৷ তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের সম্মান সবার উপরে৷ তাই শুধু ছাত্রদের নয়, সবারই উচিত শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোহাম্মদ নাঈম
ঢাকার নটরডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম৷ তাঁর মতে, ‘‘শিক্ষক হলেন আমাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার কারিগর৷ সেই শিক্ষকদের যদি সম্মান করা না হয় তাহলে আমাদের উন্নতি সম্ভব নয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
সুজানা জাহিদ
ঢাকার আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সুজানা জাহিদ মনে করেন, শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মতোই৷ সুজানা জানালেন, বাবা মা-কে যতটা সম্মান করেন, ঠিক ততটাই সম্মান করেন তিনি শিক্ষকদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুনিয়া
ঢাকার মতিঝিল মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনিয়া শিক্ষকদের পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবেই দেখেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সারজিমা হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষার্থী সারজিমা হোসেন তৃমার বাবা-মা দুজনই শিক্ষক৷ তাঁর মতে, ‘‘আমাদের সমাজে বর্তমানে শিক্ষকদের সম্মান অনেক কমে গেছে৷ তবে আমরা সবসময়ই শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দিয়ে থাকি৷ আরেকটা বিষয় হলো, রাজনৈতিকভাবে শিক্ষদের অনেক হেয়, অসম্মান করা হয় যেটা বন্ধ হওয়া উচিত৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মেহনাজ জাহান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের আরেক শিক্ষার্থী মেহনাজ জাহান বলেন, ‘‘শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন৷’’ তাঁর মতে, শিক্ষকরা একেকজন পিতা-মাতা৷ সুতরাং তাঁরা যদি কোনো ভুলও করে থাকেন সেজন্য তাঁদের কোনোভাবেই অসম্মান করা যাবে না৷ ‘‘আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সামান্য কিছু হলেও আমরা তাঁদের কাছে শিখেছি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ইফতেখার ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের হাত ধরে এতদূর এসেছি, তাঁরাই হলেন আমাদের শিক্ষক৷ তাই তাঁদের সম্মান সবার আগে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মাহবুবুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান৷ তাঁর মতে, বাবা-মা কোনো ভুল করলে যেমন আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা, তেমনি শিক্ষকরাও ভুল করলে তাঁদের অসম্মান করতে পারিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
তাহমিদ ইবনে আলম
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্যের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, শিক্ষকরা হাতে ধরে সবকিছু শিক্ষা দেন, সুতরাং তাঁদের সম্মান সবার আগে৷ কোনো শিক্ষার্থীরই উচিত হবে না শিক্ষকদের অসম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের ফলে যারা সমাজের পরিচালকমণ্ডলি, অর্থাৎ যাদেরকে আমরা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাই, তাদের কাছে শিক্ষকদের আর তেমন মর্যাদা নেই৷ সেই অমর্যাদা প্রতিফলিত হচ্ছে তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের আচরণে৷ এখন গ্রামে একজন শিক্ষককে একজন রাজনীতিবিদ ‘মাস্টার' বলে ডাকে৷
আমাদের শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে বটে, কিন্তু শিক্ষা হয়ে গেছে কোচিং-বাণিজ্যকেন্দ্রিক অথবা মুখস্থনির্ভর এবং সনদমুখী ও বাজারমুখী৷ এর ফলে শিক্ষকরাও অনেক সময় সেই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন৷ কোচিং-বাণিজ্য হচ্ছে, সেখানে শিক্ষকরা জড়িত হচ্ছেন৷ এর একটা ফল হচ্ছে এই যে, সমাজের চোখে অনেক শিক্ষকের ভূমিকা এখন অনেকটা কোচিং সেন্টারের শিক্ষকের মতো৷ প্রকারান্তরে শিক্ষকদের প্রতি একটা দূরবর্তী চিন্তা এসে গেছে যে, ‘‘তারা বোধহয় তাদের প্রধান ভূমিকাটা পালন করছেন না৷ তারা অর্থের বিনিময়ে কোচিং সেন্টারে গিয়ে পড়াচ্ছেন৷'' তো ওই সম্মানটুকু আর কিছু শিক্ষকও ধরে রাখতে পারেননি৷
আরেকটা ব্যাপার হলো, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে রাজনীতি চলে এসেছে৷ স্থানীয় পর্যায়ে এখন অনেক শিক্ষক ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আছেন৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তো বহুদিন ধরেই বিরোধী দল এবং সরকারি দলে বিভাজিত৷ এর ফলে সামাজিক চুক্তি, যেখানে শিক্ষকদের অনেক মর্যাদার আসনে বসানো হতো, সেখানে এখন দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকদের ভিতরেই অনেক সমস্যা তৈরি হওয়ার কারণে এই বিষয়টি সামনে চলে আসছে৷
তার মানে আপনি প্রকারান্তরে স্বীকার করছেন যে, শিক্ষকদেরও দায় আছে৷ আপনি বলছেন, শিক্ষকরা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য বাড়তি রোজগারে মন দিচ্ছেন, সেটা একটা কারণ আর একটা কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন শিক্ষকদের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কথা....
অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম
This browser does not support the audio element.
হ্যাঁ৷ তবে আমি এটাও বলছি, হয়ত দশ ভাগ শিক্ষকের রাজনৈতিক সক্রিয়তা আছে৷ আর হয়ত ৩০ ভাগ শিক্ষক কোচিং করছেন৷ কিন্তু যে পেশাটি সম্মানের ছিল, যেখানে একজনকেই আমরা ব্যতিক্রম ধরতাম এবং সে ব্যতিক্রম স্বীকার করতে রাজি ছিলাম না, সেখানে ৩০ শতাংশই ব্যতিক্রম হয়ে গেলে তো বাকি সত্তর শতাংশও প্রকারান্তরে দোষীদের হিসেবে পড়ে যায়৷ সমস্যাটা ওইখানে৷
আমাদের সামনে নতুন কোনো ‘ইস্যু' এলে, এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা বক্তব্যও উঠে আসে৷ তো এমন একটা কথাও কেউ কেউ বলছেন যে, এখন শিক্ষকতায় ‘যোগ্য' লোক খুব কম আসে, ফলে শিক্ষাদানে অপরাগতা বা অক্ষমতাটাও অনেক সময় খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ফলে.....
হ্যাঁ, সেটা তো আছেই৷ আর তার কারণটা হলো, আমাদের সামাজিক বিনিয়োগটা আছে, অর্থাৎ সমাজ সম্মান করতে চায়, কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগটা শিক্ষার ক্ষেত্রে নেই৷ এবার আমরা দেখলাম বাজেটে আমাদের প্রত্যাশার কিছুটা প্রতিফলন হয়েছে, হয়ত বাজেটে ১৪ শতাংশের উপর শিক্ষাখাতে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা যে পরিমাণ বিস্তৃত হয়েছে, তার সমান্তরাল হয়নি বিষয়টা৷
আমি মনে করি, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ানো যেত, যদি তাদের সামাজিক সম্মানটা বাড়ত, তাহলে কিন্তু এমন প্রশ্ন উঠত না৷ আসলে সমাজ আর শিক্ষকদের সেই অর্থে যথেষ্ট লালন-পালন করছে না৷ ফলে শিক্ষকতা এখন কিন্তু আর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আসার জায়গা নেই৷ মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন আর শিক্ষকতায় আগ্রহী হচ্ছে না, কারণ, বেতন-ভাতা অপ্রতুল এবং বেশির ভাগ স্কুলের পরিচালনা বোর্ডে রাজনীতিবিদরা থাকেন৷ তারা যে শিক্ষকদের খুব সম্মান করেন, তা কিন্তু না৷ আপনি কাগজে মাঝে মাঝে দেখবেন, সরকারি কর্মকর্তারা শিক্ষকদের অপমান করছেন৷ শিক্ষকদের মাথার উপর সবাই চড়ে বসছে, কারণ, শিক্ষকতা পেশার যে একটা আকর্ষণ ছিল তা অনেক কমে গেছে৷ পণ্যায়নের ফলে আমরা ভালো থাকতে গিয়ে সবাই ‘ভালো চাকরি' চাই, ফলে শিক্ষকতায় বেতন-ভাতা কম হওয়ায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতায় আসছে না৷ আপনি ঠিকই বলেছেন, যারা ভালো পড়াতে পারছেন না, সমাজ তাদেরও সম্মান করতে চাচ্ছে না৷
দেশে দেশে, ক্লাসে ক্লাসে
স্কুলের ক্লাসরুম বলতে সব কিছু বোঝায়৷ এক কথায়, ছাত্রছাত্রীরা যেখানে বসে পড়াশুনো করে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের দেখাশুনো করেন, সেটাই হলো ক্লাসরুম৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
আফগানিস্তান: প্রগতি
মহাজেরা আর্মানি উত্তর আফগানিস্তানের জালালবাদের কাছে একটি মেয়েদের ক্লাসের শিক্ষিকা৷ ২০০১ সালে তালেবান জঙ্গিরা বিতাড়িত হওয়ার আগে এই অঞ্চলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়াই বারণ ছিল৷ আজ মেয়েদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়মিতভাবে স্কুলে যায়৷
ছবি: Reuters/Parwiz
জাপান: ডিসিপ্লিন
টোকিও-র তাকিনাগাওয়া প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়ারা দুপুরে খেতে বসেছে৷ জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বসেরাদের মধ্যে গণ্য৷ পিসা-র জরিপে জাপান নিয়মিতভাবে প্রথম দশটি দেশের মধ্যে পড়ে৷ অবশ্য বলা হয় যে, স্কুলে ভালো করার জন্য ছেলে-মেয়েদের ওপর বড় বেশি চাপ দেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
ব্রাজিল: ভাসন্ত স্কুল
মানাউস-এর ‘দ্বিতীয় সাও জোসে’ স্কুলটি বস্তুত নদীবক্ষে৷ তা-ও আবার যে কোনো নদী নয়: খোদ অ্যামাজোন! অবশ্য ব্রাজিলেও সরকারি স্কুলগুলোর বিশেষ সুনাম নেই৷ ওদিকে বেসরকারি স্কুলগুলোর মান ভালো হলেও, তাদের ফি বেশি৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
যুক্তরাষ্ট্র: সমৃদ্ধির দেশে অসাম্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে৷ অথচ এখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় ধনি-দরিদ্রের ফারাক আছে, বলে অভিযোগ৷ শ্বেতাঙ্গ ছেলে-মেয়েরা কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা ল্যাটিন অ্যামেরিকান ছেলে-মেয়েদের চেয়ে ভালো ফলাফল করে থাকে৷ চিকাগোর এই প্রাইমারি স্কুলটিতে অবশ্য এখনও ফলাফল নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই৷
ছবি: Reuters/J. Young
ভিয়েতনাম: অন্ধকারে দেহ আলো
আলো নেই, বই নেই, তা সত্ত্বেও ভিয়েতনামে এই তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা পড়া করে চলেছে৷ মনে রাখতে হবে: বিশ্বব্যাপী পিসা জরিপে কিন্তু ভিয়েতনাম জার্মানির চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে৷
ছবি: Reuters/Kham
ব্রিটেন: পরিপাটি
ইংল্যান্ডে স্কুলের ইউনিফর্ম চালু হয়েছে বহু যুগ আগে৷ মিডলসেক্স-এর ‘হ্যারো’ স্কুলে হ্যাট পর্যন্ত পরতে হয়৷ মজার কথা, সুদীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটিতে কিন্তু ইউনিফর্ম সংক্রান্ত কোনো লিখিত নিয়মাবলী নেই৷
ছবি: Reuters/S. Plunkett
পাকিস্তান: পথে বসে
অথবা পার্কে বসে পড়াশোনা৷ লক্ষণীয় যে, মেয়েরা আর ছেলেরা একসঙ্গে বসেই পড়াশোনা করছে, পাকিস্তানের সর্বত্র যেটা সম্ভব নয়৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
মরক্কো: বেগুনি রঙের ক্লাসরুম
রাবাত-এর উদাইয়া প্রাইমারি স্কুলের ক্লাসরুমটি সুন্দর করে রং করা৷ মুশকিল এই যে, গোড়ায় ৯২ শতাংশ ছেলে-মেয়ে স্কুলে গেলেও, পনেরোয় পা দেবার আগেই তাদের অর্ধেক স্কুল ছেড়ে দেয়৷ ১৫ বছরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ লিখতে-পড়তে জানে না৷
ছবি: Reuters/Y. Boudlal
কেনিয়া: বস্তির স্কুল
কেনিয়ায় ২০০৩ সাল থেকে প্রাইমারি স্কুলে যেতে ফি লাগে না৷ তবে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বিশেষ বাড়ানো হয়নি৷ ক্লাসে ছাত্রসংখ্যা বেশি৷ নাইরোবির দক্ষিণে কিবেরা বস্তি এলাকার এই স্কুলটিতে বেঞ্চের চেয়ে পড়ুয়া বেশি৷
ছবি: Reuters/N. Khamis
মালয়েশিয়া: সুখি ছাত্রছাত্রী
পিসা জরিপে মালয়েশিয়ার ছাত্রছাত্রীরা বলেছে, তারা সুখি৷ নুরুল ইমান মাদ্রাসার পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters/O. Harris
ইউক্রেন: নানা ভাষা
ইউক্রেনে ছেলে-মেয়েরা ক্লাস ওয়ান থেকেই যে কোনো একটা বিদেশি ভাষা শিখতে শুরু করে৷ কিয়েভ-এর এই লাইসিয়াম বা হাই স্কুলটিতে পঞ্চম শ্রেণি থেকে একটি দ্বিতীয় বিদেশি ভাষা শিখতে হয়৷ ছাত্রছাত্রীদের অনেকে ইউক্রেনীয় ও রুশ ভাষা ছাড়া ইংরেজি, ফরাসি অথবা জার্মান বলতে পারে৷
ছবি: Reuters/G. Garanich
চিলি: পড়ার কি কোনো শেষ আছে?
সান্তিয়াগোর ‘লাউরা ভিকুনা’ সান্ধ্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বয়স হয়েছে বটে, তবুও তারা এককালে যে স্কুলের পড়া শেষ করতে পারেননি – সম্ভবত আর্থিক সামর্থ্য ছিল না বলে – আজ সেটাই সমাপ্ত করতে বদ্ধপরিকর৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
12 ছবি1 | 12
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কম – এটা ঠিক৷ তবে এ কথা পুলিশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ পুলিশে দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠলে অনেকেই বলেন, ‘‘বেতন-ভাতা কম, তাই সেখানে দুর্নীতি বেশি৷'' দুর্নীতিগ্রস্ত সাংবাদিকের পক্ষেও একই যুক্তি দেখানো হয়৷ তো এর শেষ কোথায়?
এটার শেষ নেই, কারণ, পুঁজিবাদী সমাজে লোভের সংস্কৃতির কোনো শেষ নেই৷ লোভটাকে সবসময় জাগিয়ে না রাখলে আমার পণ্য বিক্রি হবে না৷ আর দৃশ্যমাধ্যমের কারণে কিন্তু ভোগ্যপণ্যের দিকে আমাদের আকর্ষণটা অনেক তীব্র হয়েছে৷ তো জাঁকজমকের যে সমাজ আমরা তৈরি করেছি, সেখানে পণ্যায়নটা প্রধান এবং ভোগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা মনে হয় ক্রমাগত বাড়তে থাকবে৷ এটাকে আটকাতে পারত সত্যিকারের শিক্ষা, মানসম্পন্ন শিক্ষা৷ সেটা আমাদের দেশে পাচ্ছি না বলে সমাজে ভোগবাদের সংস্কৃতির প্রসার হচ্ছে৷
সমাধানের কোনো পথ কি দেখতে পাচ্ছেন না?
দেখুন, এখন তো পরিবারগুলোতেই আর সুনীতির চর্চা হচ্ছে না৷ যে পরিমাণ দুর্নীতি সারা সমাজে, সুনীতির চর্চা না হলে এ সব থামানো মুশকিল৷ তবে একটা সময় হয়ত মানুষ বিরক্ত হয়ে যাবে, যেমন পশ্চিমের অনেক দেশেই তো এখন টেলিভিশনটা আর খুব গুরুত্বপূর্ণ না৷ আজকাল সেখানে অনেক বাড়িতেই আর টেলিভিশন থাকেনা৷ একসময় তো এটা কল্পনাই করা যেত না৷ আমাদের দেশেও হয়ত একটা জায়গায় এসব থামবে, তবে সেই সম্ভাবনা আমি আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না৷
আজকাল ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে শিক্ষকদেরও ‘টার্গেট' করা হচ্ছে৷এটাই বা কেন হচ্ছে? কেন শিক্ষকদেরও এভাবে...
যেটা বলছিলাম, ভোগবাদী এবং পণ্যনির্ভর সমাজে ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই, অর্থাৎ চাহিদা এবং সরবরাহ বলে কথা আছে না? শিক্ষকদের তো এখন সরবরাহকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ যেমন আপনার গাড়ি যিনি মেরামত করেন, তাকে দিয়ে আপনি কাজ করাচ্ছেন, কাজ শেষে টাকা দিয়ে একটু গল্প করছেন, তারপরই ভাবছেন তাকে নিয়ে আমার আর কোনো চিন্তা নেই৷ আজকাল শিক্ষকদেরও এমন দৃষ্টিতেই দেখা হচ্ছে যে, শিক্ষকরা আমাকে শিক্ষা সরবরাহ করবে৷
শিশুদের নানা রকমের ক্লাসরুম
বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষাজীবন৷ সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য শিশুদের শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই৷ চলুন দেখা যাক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রেণিকক্ষে শিশুদের কীভাবে লেখাপড়া শেখানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/landov
বেশির ভাগ দেশের শ্রেণিকক্ষে যা থাকে...
বিশ্বের প্রায় সব দেশের শ্রেণিকক্ষেই চক আর ব্ল্যাক বোর্ড থাকে৷ শিক্ষক বা শিক্ষিকা সেই ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে শিক্ষার্থীদের বোঝান৷ শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে বসে বসে শোনে৷ তবে অনেক দেশই এই সাবেকি ব্ল্যাকবোর্ড এবং চক ছেড়ে দিয়েছে৷ আবার এমন দেশও আছে, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের মাথার ওপরে কোনো ছাদ নেই৷ মাটিতে বসেই লেখাপড়া করতে হয় তাদের৷
ছবি: AP
দক্ষিণ কোরিয়ায় ডিজিটাল বই...
দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুলে এসে গেছে কম্পিউটার৷ ইন্টারনেট সংযোগও দেয়া হয়েছে প্রতিটি ক্লাসরুমে৷ অর্থাৎ ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের হাতে কোনো বই-খাতা থাকবে না৷ বইয়ের পরিবর্তে ‘ই-বুক’ দেয়া হবে তাদের৷ সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার৷ সবাইকে ডিজিটাল শিক্ষাদান পদ্ধতির আওতায় নিতে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে ‘ট্যাবলেট পিসি’ দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: AP
ঘানার শিশুদের অবস্থা
অনেক দেশের স্কুলে আবার কম্পিউটার তো দূরের কথা, ক্লাসরুমই নেই৷ আফ্রিকার দেশ ঘানার এই স্কুলটি দেখুন৷ ভবনই নেই! তাই গাছের ছায়াতেই নেয়া হচ্ছে ক্লাস৷ শিক্ষিকা পড়াচ্ছেন আর ছোটমনিরা বেঞ্চে বসে মন দিয়ে শুনছে তাঁর কথা৷
ছবি: Fotolia/Living Legend
জার্মানির অত্যাধুনিক ক্লাসরুম
জার্মানিতে কিন্তু ছোট ছোট বাচ্চারাও ক্লাসে পেন্সিল ব্যবহার করে না৷ নোট লেখার বইও নয়৷ টাচ প্যাড, স্মার্টবোর্ড, নেটবুক – এই সমস্ত আধুনিক জিনিসপত্র এ বয়সেই এসে গেছে তাদের হাতে৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শিশুদের শিক্ষা যেন বাড়তি চাপ৷ ছবির এই চার বছর বয়সি শিশুগুলোর মতো সব শিশুকেই বলতে গেলে মায়ের কোল থেকে নেমে ঢুকে পড়তে হয় স্কুলে৷ চাপ যে তখন থেকেই শুরু!
ছবি: AP
কেনিয়ার স্কুল এবং ক্লাসরুম
কেনিয়ায় শিক্ষাজীবনের প্রথম আট বছর শিক্ষার্থীদের কোনো বেতন দিতে হয় না৷ তারপরও লেখাপড়া করা সবার জন্য খুব সহজসাধ্য নয়৷ দরিদ্র পরিবারের বাবা-মায়েরা বই-খাতা, পেন্সিল, পোশাক, জুতো ইত্যাদির খরচ জোগাতে পারেন না বলে অনেক শিশুকেই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়৷
ছবি: DW/J.Bruck
ব্রিটেনের স্কুলে ‘ইউনিফর্ম’ বাধ্যতামূলক
ইংল্যান্ডের প্রায় সব স্কুলেই শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত পোশাক পরতে হয়৷ সবাই এক রকম পোশাক পরলে শিক্ষার্থীদের চিনতে সুবিধা হয় এবং তাদের পড়াশোনাতেও মন বসে – এমন কিছু যুক্তিতেই শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পোশাক পরার নিয়ম মানছে স্কুলগুলো৷ তবে ব্রিটেনে একটা সুবিধা আছে৷ দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ হিসেবে অনুদান দেয়া হয়৷ ফলে দরিদ্ররা চাইলেই ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পাকিস্তিনে অবহেলিত শিক্ষাখাত
পাকিস্তানে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমিয়ে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে শিক্ষার হার আরো কমছে, কমছে স্কুলও৷ ওপরের ছবিতে একটি পার্কে লেখাপড়া করতে দেখা যাচ্ছে শিশুদের৷ পাকিস্তানে এমন দৃশ্য অপরিচিত নয়৷
ছবি: AP
দক্ষিণ সুদানে মেয়েরা বিপদে...
দক্ষিণ সুদানেও প্রায় একই অবস্থা৷ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রীতিমতো সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে৷ সে দেশের মাত্র ১৬ ভাগ নারী এখন কোনো রকমে পড়তে এবং লিখতে পারে৷ যুদ্ধের ধ্বংসলীলা থেকে হাতে গোনা যে কয়েকটি স্কুল রক্ষা পেয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোতে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ নেই৷ বই-পত্রও নেই কিছু স্কুলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উন্নতিশীল ব্রাজিলেরও করুণ অবস্থা
দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ব্রাজিলে৷ কিন্তু তাতে দরিদ্রদের ভাগ্যের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না৷ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয় শিশুদের৷
ছবি: dapd
উন্নতিশীল ব্রাজিলেরও করুণ অবস্থা
দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ব্রাজিলে৷ কিন্তু তাতে দরিদ্রদের ভাগ্যের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না৷ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয় শিশুদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবং বাংলাদেশ...
২০১৩ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের সময় অসংখ্য স্কুলের ক্ষতি সাধন করা হয় বাংলাদেশ৷ এ বছর দীর্ঘদিন হরতাল, অবরোধ চলায় স্কুলগুলোও অনেক দিন বন্ধ ছিল৷ এক পর্যায়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস নিতে শুরু করে কিছু স্কুল৷ হরতাল-অবরোধের কারণে সপ্তাহের ৫-৬ দিন গৃহবন্দী, তারপর ছুটির দিনে স্কুলবন্দী৷ বাংলাদেশের শিশুদের অসহায়ত্ব ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/landov
12 ছবি1 | 12
টাকা নেবে, সেবা দেবে – এইরকম, তাই না?
হ্যাঁ, সেবাদানকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে তাঁকে৷ তিনি যে একটা আত্মার খোরাক দিচ্ছেন, আমার আত্মা না থাকলে আমি কী করে আত্মার খোরাকটা পাবো৷ আর ওই যে ধর্মের অবমাননার অভিযোগ তুলে মর্যাদাহানি করা হচ্ছে, তার পেছনে কিন্তু সাম্প্রদায়িক একটা কারণও আছে৷ শিক্ষার অভাবের জন্য আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে বলে আমার মনে হয়৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে জমি দখলের জন্যও এ ধরণের ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে৷ আমার মনে হয়, এটা আরো বাড়বে৷ পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জমি অনেক দামি হয়ে গেছে৷ সেখানে এ ধরণের ঘটনাগুলো খুঁজে খুঁজে দেখবেন, যত উচ্ছেদের ঘটনা, পরিবারকে হুমকি দেয়ার ঘটনা – সেগুলোতে জমির সমস্যাটাও একটা বড় সমস্যা৷
এবার আপনার অভিজ্ঞতার কথা বলুন৷ আপনি তো অনেকদিন ধরে শিক্ষকতায় আছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে, সমাজের কাছ থেকে আগে যেমন সম্মান পেতেন, এখনো কি তা পাচ্ছেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে একটা সুবিধা আছে৷ এখানে তো আর আমাকে ওই সরবরাহকারী হিসেবে দেখা হবেনা৷ তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এখনো মর্যাদা আছে, যা প্রাইমারি বা হাইস্কুলের শিক্ষকদের নেই৷ অথচ প্রাইমারি এবং হাইস্কুলের শিক্ষকদেরই সবার আগে মর্যদাটা দেয়া উচিত৷ আরেকটা বিষয় হলো, আমি সম্ভবত সম্মান পেয়েছি এ কারণে যে, শিক্ষকতাকে আমি কখনো পেশা হিসেবে নিইনি৷ আমি এক ধরণের ব্রত হিসেবেই শিক্ষকতাকে নিয়েছি৷ আমার ভালো লেগেছে তাই এই পেশায় এসেছি৷ শিক্ষকতা করে এখনো আমি আনন্দ পাই৷
আমি যেহেতু পদ বা অন্য কিছুর দিকে কখনো যাইনি, সেজন্যও আমার অভিজ্ঞতাটা একটু বিচিত্র৷ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সব সময়ই ভালো৷ বাইরের কেউ এখানে ছায়া ফেলতে পারছে না৷ তবে আমি এখনো মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি পদের লোভে না পড়েন, রাজনীতি না করেন, তাহলে সমাজ তাদের মাথায় তুলে রাখবে৷ সমাজের সম্মানটা আমরা হারিয়ে ফেলি যখন আমরা দলাদলি করি আর খুব নগ্নভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের ধ্বজা তুলে ধরি৷
তবে সব কিছুর পরও আমি বলবো, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এখনো মর্যাদা আছে৷ আমার শিক্ষকতার জীবন তো শেষ হয়ে এলো৷ জুন মাসের ৩০ তারিখে আমি অবসরে যাবো৷ আমি অন্তত বলতে পারবো, আমার অভিজ্ঞতায় আমি একটা সুখদ স্মৃতি নিয়েই আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ছি৷ অবশ্য এই কথাটা দেশের সব শিক্ষক বলতে পারছেন দেখলে অনেক বেশি ভালো লাগতো৷
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বন্ধু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার আপনার কেমন লেগেছে? জানান আমাদের৷