মাদক পাচার ও ভুয়া পণ্যের ব্যবসার পর বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে লাভজনক অবৈধ ব্যবসা পরিবেশগত অপরাধ৷ লাভের পরিমাণ বছরে ১১০ বিলিয়ন থেকে ২৮০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সংগঠন ইউরোপোল৷
বিজ্ঞাপন
পরিবেশগত অপরাধের মধ্যে আছে বন্যপ্রাণীর অবৈধ বেচাকেনা, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বন ও বিভিন্ন সংরক্ষিত এলাকা থেকে গাছ কেটে কাঠ ব্যবসা, অবৈধ পন্থা ব্যবহার করে ময়লা অপসারণ এবং পরিবেশ, পানি কিংবা মাটিতে দূষিত উপাদান ছড়িয়ে দেয়া৷
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাসা ব্রাউন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘পরিবেশগত অপরাধের নিষ্ঠুরতা ও লাভের পরিমাণ অচিন্ত্যনীয়৷'' কিন্তু এটাকে এখনও ছোট অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান তিনি৷ অথচ এটা ‘আমাদের ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে অপরাধ' বলে মনে করেন তিনি৷
ব্রাউন বলেন, বড় অপরাধ তদন্তের যেসব কৌশল আছে সেগুলো ব্যবহার করে পরিবেশগত অপরাধের তদন্ত হওয়া উচিত৷ যেমন ছদ্মবেশ ধরে তদন্ত করা, ফোনে আড়িপাতা, জিপিএস ট্র্যাকিং ইত্যাদি৷
ইইউর পরিবেশ কমিশনার ভিরজিনিয়ুস সিঙ্কেভিচুস গতবছর বলেছিলেন, ‘‘ইউরোপে পরিবেশগত অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের প্রায়সময়ই শাস্তি পেতে হয় না৷ এ সম্পর্কিত আইন প্রয়োগের জন্য প্রণোদনাও খুব কম৷''
৪৪ বছরে ৬০ শতাংশ বন্যপ্রাণী কমে গেছে
ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর নতুন প্রতিবেদন বলছে, গত ৪৪ বছরে ৬০ শতাংশ বন্যপ্রাণী কমে গেছে৷ এর জন্য তারা মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও মানব আচরণকে দায়ী করেছে৷
ছবি: DW/Bettina Thoma
লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্ট
এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৬০ শতাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণী মানুষের আচরণ ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ বিশ্বের ১৬ হাজার ৭০০ প্রাণীর ৪০০০ হাজার প্রজাতির উপর গবেষণা করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা৷
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর আন্তর্জাতিক মহাসচিব মার্কো ল্যাবার্টিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ এবং তার আরও খারাপ হচ্ছে৷ তবে ভালো খবর হল, আমরা জানি যে সত্যিই কী ঘটছে৷’’
ছবি: WWF/Adriano Gambarini
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশগুলোর৷ গত ৪৪ বছরে তাদের ৯০ শতাংশ বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/F. Neukirchen
কয়েক দশকের চেয়ে খারাপ অবস্থা
মাত্র কয়েকশ’ বছরে যে হারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে, বর্তমান হার তার চেয়ে একশ থেকে হাজার গুণ বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpaWWF/Warwick Sloss
১০ হাজার বছর আগে ছিল ভিন্ন পরিস্থিতি
পরিসংখ্যানটা ভীতিকর বলে জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার এক গবেষক, যিনি এই প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক৷ ১০ হাজার বছর আগে বন্যপ্রাণী বৃদ্ধির হার ছিল পুরো উলটো৷
ছবি: Imago/StockTrek Images
প্রবাল হারিয়ে যাচ্ছে
সমুদ্রের তলদেশে প্রবাল ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং তা ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলে জানালেন গবেষকরা৷ তাদের মতে, গত ৪০ বছরে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ প্রবাল বিনষ্ট হয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
ভালো খবর
ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর পদক্ষেপের কারণে বাঘ, গ্রিজলি ভাল্লুক, নীল পাখনার টুনা এবং ঈগলদের সংখ্যায় উন্নতি হয়েছে৷ ল্যামবার্টিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি এ সব উদ্যোগ না নিতাম, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Azubel
7 ছবি1 | 7
এমন পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে একটি আইনের প্রস্তাব করেন তিনি৷ আগামী বছরের মাঝামাঝি সেটি কার্যকর হতে পারে৷
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর জার্মান শাখার কর্মকর্তা ক্যাথেরিনা লাঙ জানান, ক্রেতাদের পক্ষে তাদের কেনা পণ্যে ব্যবহত কাঠ অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা, জানা সম্ভব নয়৷ কারণ কাঠের গায়ে যে দেশের নাম লেখা থাকে সেটি অনেক ক্ষেত্রেই ভুয়া বলে অতীতে পরীক্ষা করে দেখিয়েছে ডাব্লিউডাব্লিউএফ জার্মানি৷
জেনেটিক ও আইসোটপিক ফিঙ্গারপ্রিন্টিং পরীক্ষা করে ডাব্লিউডাব্লিউএফ জার্মানি দেখিয়েছে যে, কোনো কাঠ ভিয়েতনাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলা হলেও আসলে সেটি ছিল নিম্নমানের কাঠ৷