পরিবেশবান্ধব সবুজ জ্বালানি বড় জাহাজে ব্যবহারের উদ্যোগ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিশ্বের ৯০ শতাংশ বাণিজ্য জাহাজের মাধ্যমে হয়ে থাকে৷ এদিকে ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু নিরপেক্ষ হতে চায় শিপিং খাত৷ এজন্য এই খাতের ই-মিথানলের মতো অপেক্ষাকৃত সবুজ জ্বালানি প্রয়োজন৷
ডেনিশ বন্দর আপেনরাদে-এ একটি কন্টেইনার জাহাজে জ্বালানি ভরা হয়েছে৷ তবে ডিজেল নয়, সবুজ মিথানল৷ দ্য লাওরা ম্যেরস্ক নামের জাহাজটি হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম কন্টেইনার শিপ যেটি সবুজ জ্বালানিতে চলতে পারে৷
লাওরা ম্যেরস্ক-এর ক্যাপ্টেন ব্রায়ান সোরেনসেন বলেন, ‘‘অবশেষে ই-মিথানল ব্যবহার করতে পারাটা আমাদের জন্য দারুণ উত্তেজনার ব্যাপার৷''
বায়ো-ডিজেল নাকি সবুজ মিথানল ব্যবহার করবেন তা ক্যাপ্টেন ব্রায়ান সোরেনসেন নির্ধারণ করতে পারেন৷
জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে সবুজ মিথানল পরিবেশবান্ধব৷ ডিএলআর ইন্সটিটিউট অব মেরিটাইম এনার্জি সিস্টেমস-এর পরিচালক স্যোরেন এহেলার্স বলেন, ‘‘এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷ আমরা এটি কমবেশি অন্য জ্বালানির মতো একইভাবে ব্যবহার করতে পারি৷ আর কার্বন-ডাই-অক্সাইডেরক্ষেত্রে এটি শূন্য নির্গমনের নিশ্চিয়তা দেয়৷''
বিশ্বব্যাপী কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের তিন শতাংশ ঘটে শিপিং খাতে৷ এই শিল্প ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু নিরপেক্ষ হতে চায়৷বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিপিং কোম্পানি ম্যেরস্ক আশা করছে, সবুজ জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে আরো আগেই এই লক্ষ্য পূরণ হতে পারে৷
ম্যুলার-ম্যেরস্ক-এর মর্টেন বো ক্রিস্টিয়ানসেন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কোনো জাহাজও ছিল না, জ্বালানিও ছিল না এবং আমরা অনুধাবন করেছি যে, সম্ভবত কোনো জ্বালানি নেই৷ কারণ সেটার উপযুক্ত কোনো জাহাজ নেই৷ বা উপযুক্ত জাহাজ নেই কারণ জ্বালানি নেই৷ মানে সেই মুরগি আগে নাকি ডিম আগে সমস্যা৷ তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, আমরা একটি জাহাজ অর্ডার করার মাধ্যমে শুরু করবো এবং মার্কেটে এই বার্তা দেবো যে, আমরা সবুজ জ্বালানি খুঁজছি৷''
এবং এর প্রভাব দেখা গেছে৷ জার্মান-ডেনিশ সীমান্তের কাছের ক্যেসোতে সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সবুজ মিথানল প্ল্যান্ট চালু হয়েছে৷
সবুজ মিথানল তৈরিতে প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়৷ উত্তর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সোলার পার্ক থেকে কম খরচে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পায় প্ল্যান্টটি৷
এটা তৈরির প্রক্রিয়া হচ্ছে: নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত ইলেকট্রিক কারেন্ট পানির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা পানির উপাদান হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনকে বিভাজিত করে৷ কাছের একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে হাইড্রোজেন অংশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত করা হয়৷ এর ফলে উৎপাদিত মিথানল জাহাজ এবং শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হয়৷
তবে এই প্রক্রিয়া এখন ব্যয়বহুল৷ ইউরোপিয়ান এনার্জি-র ইয়েন্স-পেটার সিংক বলেন, ‘‘এটা প্রথম প্ল্যান্ট৷ এবং সোলার প্যানেলের মতো এটিও শুরুতে ব্যয়বহুল হবে তবে পাঁচ, ১০, ১৫ বছর পর এটি জীবাশ্ম জ্বালানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে৷''
সবুজ মিথানল ব্যবহার করতে চাইলে কন্টেইনার শিপগুলোকে সাধারণ ফুয়েলের ট্যাংকের দ্বিগুণ আকৃতির ট্যাংক ব্যবহার করতে হবে৷ এর কারণ হলো, মিথানলের কম এনার্জি ডেনসিটি৷
সহজ করে বললে: প্রতি কিলোগ্রাম পেট্রোলে ১২, প্রাকৃতিক গ্যাসে ১০ থেকে ১৩, অশোধিত তেলে ১১.৬ কিলোওয়াট আওয়ারস এনার্জি রয়েছে৷
মিথানলের এনার্জি ডেনসিটি সেসবের অর্ধেক: প্রতি কেজিতে ৫.৫ কিলোওয়াট আওয়ার্স৷
অর্থাৎ লাওরা ম্যেরস্ককে জীবাশ্ম জ্বালানির দ্বিগুণ মিথানল ব্যবহার করতে হবে৷ তবে প্রয়োজনীয় এই সংস্কার কোনো সমস্যা নয়৷
লাওরা ম্যেরস্ক-এর প্রধান প্রকৌশলী হাইনো নিলসেন বলেন, ‘‘আমরা যদি এখন একটি ভালো উদাহরণ তৈরি করি, তাহলে অন্যরাও হয়ত সেটা অনুসরণ করবে৷ এবং আমি মনে করি উন্নয়ন বা পরিবর্তন প্রয়োজন এমন সব শিল্পেই বিষয়টি এরকম৷ কাউকে না কাউকে প্রথম পদক্ষেপটি নিতে হবে৷''
ক্যেসো থেকে শুধু ম্যেরস্কই মিথানল নিচ্ছে না৷
খেলনা উৎপাদক লেগো এবং ঔষধ কোম্পানি নভো নরডিস্কও সবুজ মিথানল ব্যবহার করতে চাচ্ছে৷
ডিএলআর ইন্সটিটিউট অব মেরিটাইম এনার্জি সিস্টেমস-এর প্রফেসর সোরেন এহলার্স বলেন, ‘‘এই প্ল্যান্টে যে পরিমাণ উৎপাদন সম্ভব তা এখনো আমাদের চাহিদার তুলনায় কম৷ আমাদের কয়েক মিলিয়ন টন দরকার - ক্যেসোতে মাত্র কয়েক লাখ টন উৎপাদন হয়৷''
প্রথমবার জ্বালানি হিসেবে সবুজ মিথানল নিয়ে ১০ হাজার ৮০০ কিলোমিটারের মতো অতিক্রম করতে পারবে দ্য লাওরা ম্যেরস্ক৷ জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় এটি বেশ কম৷ টেকসই এবং প্রতিযোগিমূলক অবস্থানে যেতে সবুজ মিথানলকে আরো অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে৷
উইনি হিশচেয়ার/এআই