প্লাস্টিক যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক, এ বিষয়ে আজ আর কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু দৃশ্যমান প্লাস্টিক এড়িয়ে চলা সম্ভব হলেও প্রায় অদৃশ্য, ক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশের মধ্যে মিশে কতটা ক্ষতি করছে, তা আজও স্পষ্ট নয়৷
বিজ্ঞাপন
‘গণ্ডার' নামের নৌকা জার্মানির রাইন নদীর উপর গবেষণার কাজ চালাচ্ছে৷ জার্মান ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজিরগবেষকরা নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন৷ প্লাস্টিকের এই কণা জার্মানির নদী ও হ্রদগুলির কতটা ক্ষতি করছে, সে বিষয়ে এখনো গবেষকদের ধারণা কম৷
অতীতকালে দূষণের মাত্রা
পানির অন্য নাম জীবন, তাই ‘জীবন’ বাঁচান
বেশ কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক পানি সপ্তাহ’ উদযাপন করা হয়৷ এখন চলছে ‘আন্তর্জাতিক পানি সপ্তাহ’৷ ছবিঘরের ছবিগুলো দেখেই বুঝতে পারবেন, দূষণমুক্ত সুপেয় পানির অভাব কী কী কারণে বাড়ছে ও কীভাবে অবস্থার উন্নতি সম্ভব৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
পানি ছাড়া জীবনধারণ অসম্ভব
পানি না থাকলে শুধু যে তৃষ্ণা মেটানো যাবে না, তা নয়, ক্ষুধা নিবারণও অসম্ভব হয়ে পড়বে৷ পানি ছাড়া তো চাষবাসও সম্ভব নয়৷ তাছাড়া মুখ ধোয়া থেকে শুরু করে শৌচকর্ম – সব কিছুতেই পানি দরকার৷ পানি ছাড়া আসলে টেকসই কোনো উন্নয়নও অসম্ভব৷
ছবি: Hugues Tsannang
পানির মূল্য বোঝে ক’জন!
খাদ্যের অপচয় হলে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ কিন্তু সমাজের প্রায় প্রতি স্তরে প্রতিদিনই যে নানাভাবে পানির অপচয় হচ্ছে সে বিষয়ে কারোই যেন খুব একটা মাথা ব্যথা নেই৷ অথচ খাদ্যের অপচয় মানেও কিন্তু পানির অপচয়৷ মানুষ যে পরিমাণ পানি ব্যবহার করে তার প্রায় ৭০ ভাগই খরচ হয় খাদ্য উৎপাদনে৷ বিশ্বে প্রতি বছর প্রচুর খাদ্যের অপচয় হয়৷ দেখা গেছে, ওই অপচয়িত খাদ্য উৎপাদনের জন্যই ব্যয় হয় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি৷
ছবি: Issouf Sanogo/AFP/GettyImages
জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আজকাল বৃষ্টিপাত ঠিক সময়ে, ঠিক মতো হচ্ছে না৷ কোথাও অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা শুরু হয়, কোথাও আবার অনাবৃষ্টির কারণে দেখা দেয় ভয়াবহ খরা৷ পানি রক্ষায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা তাই জরুরি হয়ে পড়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
দুধ-মাংসের চাহিদা বাড়ছে
গরু-মহিষ-ছাগল প্রতিপালন এবং এদের মাংসের জন্যও প্রচুর পানির দরকার হয়৷ গবাদি পশু লালন-পালন থেকে শুরু করে মাংস খাওয়া পর্যন্ত হিসেব করে দেখা গেছে এক কিলোগ্রাম মাংস উৎপাদনেসব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার লিটার পানি খরচ হয়৷ বিশ্বব্যাপী গবাদি পশুর মাংস, দুধ এবং দুগ্ধজাত পন্যের চাহিদা বাড়ছে৷ অর্থাৎ সেই চাহিদা মেটাতে গিয়ে পানি কিন্তু কমছে!
ছবি: imago/UIG
পানির ক্ষতি কারা বেশি করে?
পানি সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় শিল্প কারখানায়৷ শিল্প কারখানাগুলোর মধ্যে আবার পোশাক শিল্প কারখানায় অপচয় এবং দূষণ হয় সবচেয়ে বেশি৷ পোশাক কারখানা থেকে হাজার হাজার গ্যালন রাসায়নিক বর্জ্য চলে যায় পাশের নদীর পানিতে৷ এভাবে পানির দূষণ হয় ব্যাপক হারে৷ লন্ড্রিতে কাপড় ধোয়ার কাজেও প্রচুর পানির ব্যবহার ও অপচয় হয়৷
ছবি: Supermarche/Gab Kiess
পানির সদ্ব্যবহার
ভারত, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানি জমিয়ে কাজে লাগানো হয়৷ পানির সদ্ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও বৃষ্টির পানির ব্যবহার বাড়ানো দরকার৷
ছবি: imago/Indiapicture
পানির জগত থেকে প্লাস্টিকের জগতে
বলা হতো, ভূপৃষ্ঠের তিন চতুর্থাংশই পানি৷ কিন্তু জলাভূমিতে গড়ে উঠছে বসতি, কলকারখানা৷ ফলে পানির উৎস ধীরে ধীরে কমছে৷ অন্যদিকে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার৷ উন্নত দেশের একজন মানুষ প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১০০ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক ব্যবহার করে৷ অথচ প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর৷ প্লাস্টিক পচে মাটির সঙ্গে মিশতে ৫০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত লাগে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Directo
7 ছবি1 | 7
গবেষকদল আরও জানতে চান, বিগত কয়েক বছরে মাইক্রোপ্লাস্টিক-দূষণ কতটা ও কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে৷ গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের পর থেকেই বড় আকারে প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল৷ নদীর তলদেশের পলিমাটির মধ্যেও তার চিহ্ন পাওয়া উচিত৷ জিওগ্রাফার হিসেবে ড. ফ্রিডেরিকে স্টক বলেন, ‘‘আমরা আসলে এমন একটি জায়গা খুঁজছি, যেখানে স্বাভাবিক সেডিমেন্টেশন হয়ে চলেছে৷ এখনো পর্যন্ত আমরা দুটি স্পট খুঁজে পেয়েছি, যেখানে খনন করলে বিবর্তনের নমুনা পাবো বলে আশা করছি৷ তখন জানতে পারবো, ঠিক কবে থেকে সেডিমেন্টের মধ্যে প্লাস্টিক জমা হচ্ছে৷''
রাইন নদীর পলিমাটির মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক সন্ধানের মাধ্যমে গবেষকরা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করছেন৷ রাইনের উপর একটি দ্বীপের উত্তর প্রান্তে পানি ধীরে বয়ে চলে৷ ফলে সেখানে মিহি সেডিমেন্ট জমা হয়৷ গবেষকদের ভাগ্য ভালো বটে৷ দুই গবেষক রাইনের সেডিমেন্টে ২ মিটার গভীর পর্যন্ত পাইপ পুঁতে দিয়েছেন৷
তারপর সেই আধার তোলা হলো৷ পলিমাটির প্রায় পুরোটাই বালু৷ তার মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক আছে কিনা, বিজ্ঞানীরা খালি চোখে তা দেখতে পারছেন না৷ ড. স্টক বলেন, ‘‘নীতিগতভাবে তা ধরে নেওয়া যায়৷ আমার ধারণা, উপরের স্তরে প্লাস্টিক পাওয়া যাবে৷ সেটাই হলো আশা৷''
গবেষকদল সেডিমেন্টের সময়কাল ও প্লাস্টিক কণা পাবার আশাও করছে৷ কিন্তু বিশ্লেষণের পর ফলাফল জানা যাবে৷
পানির নানা নমুনা
বায়রয়েট শহরের পাশে মাইন নদীর উৎসের কাছে দ্বিতীয় একটি স্পট বাছাই করা হয়েছে৷ সেটি একটি পরিশোধন প্লান্টের নীচে অবস্থিত৷ সেখানেও গবেষকদল ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার সন্ধান করছেন৷
ইটালির গার্ডা হ্রদের তীরেও গবেষকরা এমন পরিমাণ প্লাস্টিকের কণা খুঁজে পেয়েছেন, যেমনটা সমুদ্রতটে দেখা যায়৷ এমনটা তাঁরা আশা করেন নি৷ মাইন নদীতেও এমন কণা পাওয়া গেছে৷ পরিবেশ ইঞ্জিনিয়ার ড. মার্টিন ল্যোডার বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পলিপ্রোপিলেন পাওয়া যায়৷ তারপর পলিস্টিরল, তৃতীয় স্থানে পলিএথিলেন৷ অর্থাৎ ফাইবার ও পলিএথিলেন, যে পলিমার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷''
প্লাস্টিকের বিকল্প পাটের পণ্য কেন ব্যবহার করবেন?
প্লাস্টিকের বিকল্প পাটের পণ্য – এই শিরোনামে জার্মানির কোলনে হয়ে গেলো একটি কর্মশালা৷ বাংলাদেশের তৈরি পরিবেশ বান্ধব পাটের পণ্য ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরতে এই আয়োজন করে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা বাসুগ৷
ছবি: DW/N. Sattar
উদ্যোক্তা বাসুগ (বিএএসইউজি)
জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের সঙ্গে পরিবেশের ইউরোপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাসুগ (বিএএসইউজি) ও জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের একটি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে গত ২৩ জুন কোলনে একটি কর্মশালা আয়োজন করা হয়৷ এতে অংশ নেন জার্মান ও অভিবাসী গবেষক, পরিবেশ কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ৷
ছবি: DW/N. Sattar
পাটের তৈরি পণ্য বেছে নিন
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘দায়িত্বশীল নাগরিকদের উচিত সরকারকে সহায়তা করা৷পাটের ব্যবহার পরিবেশ রক্ষায় রাতারাতি কোনো সমাধান না-ও আনতে পারে৷ তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে সহায়তা করবে৷ শুধুমাত্র নিয়মিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ আশা করতে পারি৷ এখন থেকে পাটের তৈরি পণ্য বেছে নিন এবং পরিবেশ পরিবর্তনের অংশ হোন৷’’
ছবি: DW/N. Sattar
প্লাস্টিকের বিষাক্ত উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক
নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের সংসদ সদস্য বেরিভান আয়মাজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ ধ্বংস করছে৷ প্লাস্টিকের বিষাক্ত উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক৷ তাছাড়া সমস্যাটি এখন রাজনীতিতে এসেছে৷ আমরা আশা করছি, এ দেশের জনগণকে প্লাস্টিক বর্জ্যের ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম্পর্কে বাসুগের মাধ্যমে পরিচালিত প্রচারাভিযান সফল হবে৷’’
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
বিশেষ অতিথি হিসেবে কোলনের মেয়র ড.রাল্ফ হাইনেন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সাথে জার্মানির ব্যবসায়িক সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন,‘‘ জার্মানির অনেক পণ্য বাংলাদেশে তৈরি করা হয়, বিশেষ করে পোশাক৷ আমাদের বিশ্বাস, জার্মানির সাথে ফেয়ার ট্রেড বাংলাদেশে ইতিবাচক কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করতে পারে৷’’
ছবি: DW/S. Burman
প্লাস্টিক, নাকি পাটের ব্যবহার?
কর্মশালায় জার্মানির সাধারণ জনগণের প্লাস্টিক ব্যবহার এবং পাটজাত পণ্যের ব্যবহার সম্পর্কে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়৷
ছবি: DW/N. Sattar
প্রায় ৫০০ বিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০০ বিলিয়ন প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর৷ কারণ, ব্যবহৃত প্লাস্টিক শেষ পর্যন্ত নদী, সাগর ও কৃষি জমিতে স্থান পায় এবং সেসব গলতে বা টুকরো হতে বহু বছর সময় লেগে যায়৷ এর ফলে মাটি ও পানির দূষণ অব্যাহত থাকবে৷
ছবি: picture alliance/PIXSELL/G. Jelavic
সোনালি আঁশের তৈরি ব্যাগ কেন ব্যবহার করবেন?
ব্যাগ এবং প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন হতে পারে পাটের মতো পরিবেশবান্ধব পণ্য দিয়ে৷ পাট যেমন স্বাস্থ্যকর সবজি, তেমনি পাট থেকে তৈরি হয় মজবুত সুতা৷ তাছাড়া পাট প্রাকৃতিক আঁশ এবং দামেও সস্তা৷ ব্যবহারের দিক থেকে তূলার পরেই পাটের স্থান৷ তাছাড়া পাট মজবুত ও টেকসই হলেও তা রিসাইকেল করাও সম্ভব৷
ছবি: DW/N. Sattar
চটের ব্যাগ
পাটের তৈরি ব্যাগ দেখতে সুন্দর, আধুনিক ও মজবুত ৷ এই ব্যাগ ব্যবহারে যেমন পকেটের পয়সা বাঁচবে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষা হবে৷
ছবি: DW/N. Sattar
পাটের তৈরি নানা পণ্য
কর্মশালায় ছিল বাংলাদেশের পাটের তৈরি আকর্ষণীয় নানা পণ্যের সমাহার৷
ছবি: DW/N. Sattar
প্রামাণ্যচিত্র
কর্মশালায় দেখানো হয় বাংলাদেশের ‘সোনালি আঁশ’ পাট বিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র৷
ছবি: DW/N. Sattar
বাসুগ
কর্মশালায় অংশ নেন অভিবাসী গবেষক, পরিবেশ কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ৷‘প্লাস্টিকের বিকল্প পাটের পণ্য’ শিরোনামে কর্মশালাটির আয়োজনে ছিলেন বাসুগ সংস্থার সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া এবং প্রকল্প সমন্বয়কারী এএইচএম আবদুল হাই৷
ছবি: DW/N. Sattar
11 ছবি1 | 11
জীবজগতের উপর সম্ভাব্য প্রভাব
এই সব প্লাস্টিকের মধ্যে ক্ষতিকারক পদার্থ থাকতে পারে৷ সেই কণা একবার পানিতে মিশে গেলে কোনো পরিশোধন প্লান্টে তা আলাদা করা যায় না৷ ড. ল্যোডার বলেন, ‘‘এমন পরিশোধনের প্লান্টের মাইক্রোপ্লাস্টিক আলাদা করার ক্ষমতা নেই৷ বর্জ্য পানি থেকে জৈব আবর্জনা বা ডিটারজেন্ট ছেঁকে নেওয়াই তার কাজ৷''
মাছেদের পুষ্টির অন্যতম উৎস হলো জলের পোকা৷ সেই মাছি সাধারণত অ্যালজি খেয়ে বাঁচে৷ অ্যানিমাল ইকোলজিস্ট ক্রিস্টিয়ান লাফর্শ তাদের সেই সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকও খাওয়াচ্ছেন৷ পোকারা অ্যালজি ও মাইক্রোপ্লাস্টিকের মধ্যে কোনো পার্থক্য না করে দুটিই খেয়ে ফেলছে৷ লাফর্শ নানা ধরনের পোকা ও শামুকের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন৷
মাইক্রোস্কোপের নীচে একটি পোকা রেখে অতি-বেগুনি রশ্মি নিক্ষেপ করেছেন৷ তার শরীরে প্লাস্টিক কমলা রংয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো৷ অ্যানিমাল ইকোলজিস্ট প্রো. ক্রিস্টিয়ান লাফর্শ বলেন, ‘‘বিভিন্ন জিবের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করলে বর্তমানে অনেক ঝুঁকির কথা শোনা যাচ্ছে৷ যেমন ধারালো টুকরো পাচনতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে৷ তাছাড়া প্লাস্টিকের মধ্যে অ্যাডিটিভ পাচনতন্ত্র হয়ে শরীরে প্রবেশ করে নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে৷''
এর অর্থ, প্লাস্টিকের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ পোকার মাধ্যমে মাছের শরীরেও প্রবেশ করতে পারে৷ তারপর মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলেও তা স্থান পেতে পারে৷ প্রো. লাফর্শ বলেন, ‘‘আমরা যেটুকু জানি, সেটা হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক এর মধ্যে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পৌঁছে গেছে৷ সেখানে তার সন্ধানও চালানো হয়েছে৷ পরিবেশের মধ্যে তার কতটা ক্ষয় হয়, এই মুহূর্তে তা জানা নেই৷ মাইক্রোপ্লাস্টিক ছাড়াও পরিবেশে সম্ভবত ন্যানোপ্লাস্টিকও রয়েছে৷ কণা যত ছোট হয়, সেগুলি পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে টিস্যু বা তন্তুর মধ্যে চলে যাবার আশঙ্কা থেকে যায়৷''
জার্মান ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজির গবেষকরাও তেমনটাই অনুমান করছেন৷ গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক-দূষিত নদীগুলির মধ্যে রাইন অন্যতম৷ বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় তা জানা গেছে৷
মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে বিপদের আশঙ্কা ভবিষ্যৎ গবেষণায় তা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ প্লাস্টিক কণা পরিবেশের ক্ষতি করলেও এমন ধরনের ঝুঁকিকে প্রায়ই আমল দেওয়া হয় না৷
প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব
গত ১ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে৷ প্লাস্টিক বিক্রি, ব্যবহার এবং তৈরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে৷ আগামী বছর আরও দেশ এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবে বলেই বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
প্লাস্টিকহীন সুপারমার্কেট
২০১৮ সালের গোড়াতেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে জানিয়েছেন, ২০৪২ সালের মধ্যে ব্রিটেনকে সম্পূর্ণ প্লাস্টিকমুক্ত করাই তাঁর লক্ষ্য৷ একটি স্লোগানও দিয়েছেন তিনি, ‘‘ক্লিনার, গ্রিনার ব্রিটেন৷’’ সুপারমার্কেটগুলির কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করুন৷’’
ছবি: picture-alliance/Photoshot
প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ কমছে৷ লুক্সেমবুর্গ, ডেনমার্কের মতো বহু দেশ প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিপুল পরিমাণ কর বসিয়েছে৷ জার্মানির সুপারমার্কেটগুলি প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে বার বার ব্যবহার করা যায় এমন অন্য ব্যাগের ব্যবহার চালু করেছে৷
ছবি: Getty Images
কেনিয়ার অবদান
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সুদূরপ্রসারী এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেনিয়া৷ দেশের কোথাও প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদন করা যাবে না৷ ব্যবহারও করা যাবে না৷ পরিসংখ্যান বলছে, মাসে কেনিয়ায় প্রায় ২৪ মিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহৃত হতো৷ সরকার জানিয়েছে, কেউ নতুন নিয়ম না মানলে তার চার বছর পর্যন্ত জেল এবং ৩৮হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷
ছবি: Reuters/T. Mukoya
জিম্বাবোয়ের পদক্ষেপ
জিম্বাবোয়েও তাদের প্যাকেজিং নীতি বদলে দিচ্ছে৷ প্লাস্টিকের তৈরি স্টাইরোফোম বাক্স বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সাধারণত, যে ধরনের বাক্সে খাবার প্যাক করে দেওয়া হয়৷ কাগজের তৈরি নতুন বাক্স তৈরি করার চেষ্টা করছে তারা৷ বিভিন্ন ফাস্টফুড সেন্টারে প্যাক করে খাবার না দিয়ে ক্রেতাদের রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়াদাওয়া করতে উৎসাহ দেওয়া আহ্বান জানানো হয়েছে৷
ছবি: Environment Management Agency of Zimbabwe
প্লাস্টিকের ইয়ারবাড নয়
স্কটিশ সরকার জানিয়েছে, প্লাস্টিকের তৈরি ইয়ারবাড বা কানখোঁচানি আর সে দেশে ব্যবহার করা যাবে না৷ সাধারণত এগুলি ব্যবহার করে কমোডে ফেলে দেওয়াই অভ্যাস স্কটিশদের৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমোড থেকে পিটে গিয়ে সেই বাডগুলি চলে যাচ্ছে সমুদ্রে৷ সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত৷ বায়োডিগ্রেডেবল বাড অবশ্য ব্যবহার করা যাবে৷