1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশের ওপর মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব

১১ জুলাই ২০১৮

প্লাস্টিক যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক, এ বিষয়ে আজ আর কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু দৃশ্যমান প্লাস্টিক এড়িয়ে চলা সম্ভব হলেও প্রায় অদৃশ্য, ক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশের মধ্যে মিশে কতটা ক্ষতি করছে, তা আজও স্পষ্ট নয়৷

Plastik Müll im Meer
ছবি: Getty Images/M.Clarke

‘গণ্ডার' নামের নৌকা জার্মানির রাইন নদীর উপর গবেষণার কাজ চালাচ্ছে৷ জার্মান ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজিরগবেষকরা নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন৷ প্লাস্টিকের এই কণা জার্মানির নদী ও হ্রদগুলির কতটা ক্ষতি করছে, সে বিষয়ে এখনো গবেষকদের ধারণা কম৷

অতীতকালে দূষণের মাত্রা

গবেষকদল আরও জানতে চান, বিগত কয়েক বছরে মাইক্রোপ্লাস্টিক-দূষণ কতটা ও কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে৷ গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের পর থেকেই বড় আকারে প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল৷ নদীর তলদেশের পলিমাটির মধ্যেও তার চিহ্ন পাওয়া উচিত৷ জিওগ্রাফার হিসেবে ড. ফ্রিডেরিকে স্টক বলেন, ‘‘আমরা আসলে এমন একটি জায়গা খুঁজছি, যেখানে স্বাভাবিক সেডিমেন্টেশন হয়ে চলেছে৷ এখনো পর্যন্ত আমরা দুটি স্পট খুঁজে পেয়েছি, যেখানে খনন করলে বিবর্তনের নমুনা পাবো বলে আশা করছি৷ তখন জানতে পারবো, ঠিক কবে থেকে সেডিমেন্টের মধ্যে প্লাস্টিক জমা হচ্ছে৷'' 

রাইন নদীর পলিমাটির মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক সন্ধানের মাধ্যমে গবেষকরা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করছেন৷ রাইনের উপর একটি দ্বীপের উত্তর প্রান্তে পানি ধীরে বয়ে চলে৷ ফলে সেখানে মিহি সেডিমেন্ট জমা হয়৷ গবেষকদের ভাগ্য ভালো বটে৷ দুই গবেষক রাইনের সেডিমেন্টে ২ মিটার গভীর পর্যন্ত পাইপ পুঁতে দিয়েছেন৷

তারপর সেই আধার তোলা হলো৷ পলিমাটির প্রায় পুরোটাই বালু৷ তার মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক আছে কিনা, বিজ্ঞানীরা খালি চোখে তা দেখতে পারছেন না৷ ড. স্টক বলেন, ‘‘নীতিগতভাবে তা ধরে নেওয়া যায়৷ আমার ধারণা, উপরের স্তরে প্লাস্টিক পাওয়া যাবে৷ সেটাই হলো আশা৷''

গবেষকদল সেডিমেন্টের সময়কাল ও প্লাস্টিক কণা পাবার আশাও করছে৷ কিন্তু বিশ্লেষণের পর ফলাফল জানা যাবে৷

পানির নানা নমুনা

বায়রয়েট শহরের পাশে মাইন নদীর উৎসের কাছে দ্বিতীয় একটি স্পট বাছাই করা হয়েছে৷ সেটি একটি পরিশোধন প্লান্টের নীচে অবস্থিত৷ সেখানেও গবেষকদল ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার সন্ধান করছেন৷

ইটালির গার্ডা হ্রদের তীরেও গবেষকরা এমন পরিমাণ প্লাস্টিকের কণা খুঁজে পেয়েছেন, যেমনটা সমুদ্রতটে দেখা যায়৷ এমনটা তাঁরা আশা করেন নি৷ মাইন নদীতেও এমন কণা পাওয়া গেছে৷ পরিবেশ ইঞ্জিনিয়ার ড. মার্টিন ল্যোডার বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পলিপ্রোপিলেন পাওয়া যায়৷ তারপর পলিস্টিরল, তৃতীয় স্থানে পলিএথিলেন৷ অর্থাৎ ফাইবার ও পলিএথিলেন, যে পলিমার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷'' 

জীবজগতের উপর সম্ভাব্য প্রভাব

এই সব প্লাস্টিকের মধ্যে ক্ষতিকারক পদার্থ থাকতে পারে৷ সেই কণা একবার পানিতে মিশে গেলে কোনো পরিশোধন প্লান্টে তা আলাদা করা যায় না৷ ড. ল্যোডার বলেন, ‘‘এমন পরিশোধনের প্লান্টের মাইক্রোপ্লাস্টিক আলাদা করার ক্ষমতা নেই৷ বর্জ্য পানি থেকে জৈব আবর্জনা বা ডিটারজেন্ট ছেঁকে নেওয়াই তার কাজ৷''

মাছেদের পুষ্টির অন্যতম উৎস হলো জলের পোকা৷ সেই মাছি সাধারণত অ্যালজি খেয়ে বাঁচে৷ অ্যানিমাল ইকোলজিস্ট ক্রিস্টিয়ান লাফর্শ তাদের সেই সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকও খাওয়াচ্ছেন৷ পোকারা অ্যালজি ও মাইক্রোপ্লাস্টিকের মধ্যে কোনো পার্থক্য না করে দুটিই খেয়ে ফেলছে৷ লাফর্শ নানা ধরনের পোকা ও শামুকের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন৷

মাইক্রোস্কোপের নীচে একটি পোকা রেখে অতি-বেগুনি রশ্মি নিক্ষেপ করেছেন৷ তার শরীরে প্লাস্টিক কমলা রংয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো৷ অ্যানিমাল ইকোলজিস্ট প্রো. ক্রিস্টিয়ান লাফর্শ বলেন, ‘‘বিভিন্ন জিবের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করলে বর্তমানে অনেক ঝুঁকির কথা শোনা যাচ্ছে৷ যেমন ধারালো টুকরো পাচনতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে৷ তাছাড়া প্লাস্টিকের মধ্যে অ্যাডিটিভ পাচনতন্ত্র হয়ে শরীরে প্রবেশ করে নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে৷''

এর অর্থ, প্লাস্টিকের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ পোকার মাধ্যমে মাছের শরীরেও প্রবেশ করতে পারে৷ তারপর মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলেও তা স্থান পেতে পারে৷ প্রো. লাফর্শ বলেন, ‘‘আমরা যেটুকু জানি, সেটা হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক এর মধ্যে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পৌঁছে গেছে৷ সেখানে তার সন্ধানও চালানো হয়েছে৷ পরিবেশের মধ্যে তার কতটা ক্ষয় হয়, এই মুহূর্তে তা জানা নেই৷ মাইক্রোপ্লাস্টিক ছাড়াও পরিবেশে সম্ভবত ন্যানোপ্লাস্টিকও রয়েছে৷ কণা যত ছোট হয়, সেগুলি পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে টিস্যু বা তন্তুর মধ্যে চলে যাবার আশঙ্কা থেকে যায়৷''

জার্মান ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজির গবেষকরাও তেমনটাই অনুমান করছেন৷ গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক-দূষিত নদীগুলির মধ্যে রাইন অন্যতম৷ বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় তা জানা গেছে৷

মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে বিপদের আশঙ্কা ভবিষ্যৎ গবেষণায় তা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ প্লাস্টিক কণা পরিবেশের ক্ষতি করলেও এমন ধরনের ঝুঁকিকে প্রায়ই আমল দেওয়া হয় না৷

হিলমার লিব্শ/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ