গরু দুধ দেয়৷ অনেকে এর মাংসও খেতে ভালোবাসেন৷ তাছাড়া গৃহপালিত পশু হিসেবে গরুর বেশ কদর রয়েছে৷ কিন্তু এই গরুও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা অবশ্য চেষ্টা করছেন জলবায়ু পরিবর্তনে গরুর অবদান কমানোর৷
বিজ্ঞাপন
গরু ঢেকুর এবং বায়ু ছাড়ার মাধ্যমে প্রচুর গ্রিনহাউস গ্যাস, বিশেষ করে মিথেন বাতাসে ছেড়ে দেয়৷ আর এই মিথেন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ জার্মানির রাইনল্যান্ড কৃষি সংঘের ড. সেবোস্টিয়ান হপে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘গরু একটি জাবর কাটা প্রাণী৷ আর তাদের শুধু একটি পেটই নয়, পূর্ণাঙ্গ পরিপাক প্রণালি রয়েছে৷ তারা যা খাচ্ছে, সেগুলো প্রাথমিকভাবে পেটের মধ্যে সরল খাদ্য উপাদানে রূপান্তর হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে ব্যাকটেরিয়া৷ আর সেসময় ‘বাই-প্রোডাক্ট' হিসেবে মিথেন উৎপন্ন হয়৷''
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষম ধান
বাংলাদেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে নানাভাবে৷ কৃষিও রয়েছে এর মধ্যে৷ তবে আশার কথা, এই প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
বাংলাদেশেই উদ্ভব
বাংলাদেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে নানাভাবে৷ কৃষিক্ষেত্রও এর মধ্যে রয়েছে৷ তবে আশার কথা, এই প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, ব্রি-র মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস৷
ছবি: N.Nanu/AFP/Getty Images
লবণাক্ততা
উপকূলীয় অঞ্চলে যেখানে জমিতে লবণের পরিমাণ বেশি সেখানে রোপা আমন মৌসুমে ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩ ও ব্রি ধান৫৪ – এই চারটি জাত বেশ কার্যকর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোরো ধান
লবণাক্ত পরিবেশে জন্মানোর জন্য বোরো ধানের জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান৪৭ এবং ব্রি ধান৬১৷
ছবি: CC/Rishwanth Jayaraj
খরা
খরা মোকাবিলায় সক্ষম দুটো উন্নত জাত হলো ব্রি ধান৫৬ এবং ব্রি ধান৫৭ – দুটোই রোপা আমন ধানের জাত৷ ‘‘আরও কিছু নতুন জাত আমাদের হাতে আছে যেগুলো খরায় আরও ভালো করবে,’’ জানিয়েছেন ব্রি মহাপরিচালক৷
ছবি: AP
হঠাৎ বন্যা
ড. বিশ্বাস বলেন, রোপা আমন মৌসুমে আরেকটি পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন ধান লাগানোর পরে দেখা যায় যে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে হঠাৎ করেই পানির নীচে ডুবে যায়৷ ‘‘এই অবস্থা প্রায় সপ্তাহখানেক বা তারও বেশি সময় ধরে থাকে৷ এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রয়েছে ব্রি ধান৫১ ও ব্রি ধান৫২৷’’
ছবি: N.Nanu/AFP/Getty Images
অতি ঠান্ডা, অতি গরম
এই পরিস্থিতির জন্য এখনো কোনো ভালো জাত নেই৷ তবে ব্রি মহাপরিচালক বলেছেন, ‘‘গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে এবং আমরা আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে এমন ধানের জাত আমরা হাতে পেয়ে যাব৷’’
ছবি: DW/P. Mani Tewari
প্রচারণা
সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে কৃষকদের ব্রি উদ্ভাবিত এসব জাত সম্পর্কে জানানো হয়৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
গোটা বিশ্বে উৎপন্ন হওয়া গ্রিন হাউসের এক তৃতীয়াংশই আসে জাবর কাটা প্রাণীদের কাছ থেকে৷ আর বিশ্বের উষ্ণতা বাড়াতে মিথেন গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভূমিকা রাখছে৷ ফলে গরুর মিথেন উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখা সম্ভব৷
জার্মানির বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে কাজ করছেন৷ এ জন্য পরীক্ষামূলকভাবে তারা একটি গরু ঠিক কতটা খাবার খায়, তার হিসেব রাখেন৷ গরুগুলো কী পরিমাণ গ্যাস নিঃসরণ করছে, তা আটটি পয়েন্টের মাধ্যমে দেখা হয়৷ বিজ্ঞানীরা বুঝতে চাচ্ছেন, গরুর খাবারে পরিবর্তন আনলে সেটি মিথেন নিঃসরণের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনবে কিনা৷ গোখাদ্যের এই পরীক্ষায় পশুগুলোকে প্রাথমিকভাবে ভুট্টা সাইলেজ এবং মূলত ঘাস সাইলেজ দেয়া হয়৷
জলবায়ু পরিবর্তনের সুফল!
ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, বিশ্বে এখনো যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস আছে তার প্রায় এক চতুর্থাংশ রয়েছে আর্কটিকের বরফের নীচে৷ তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে যাওয়ায় খুশি আর্কটিকের দেশগুলো৷
ছবি: Gazprom
বাকি বিশ্ব থেকে দ্বিগুণ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বে তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে, আর্কটিক বা সুমেরু অঞ্চলে সেই মাত্রাটা প্রায় দ্বিগুণ৷ এভাবে বরফ গলার কারণে আর্কটিকে যাওয়ার পথ সহজ ও সংক্ষিপ্ত হচ্ছে৷ ফলে সেখানে থাকা সম্পদ আহরণের কাজে সুবিধা হবে৷ তাই খুশি এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী৷
ছবি: imago
খুশি আর্কটিকের দেশগুলোও
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পাঁচটি আর্কটিক দেশ – ক্যানাডা, ডেনমার্ক, নরওয়ে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র – বিভিন্নভাবে সেখানে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ উল্লেখ্য, আর্কটিকের কতটুকু অংশ কার নিয়ন্ত্রণে সেটা নিয়ে এখনো দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Gazprom
প্রায় এক চতুর্থাংশ
ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, বিশ্বে এখনো যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস আছে তার প্রায় এক চতুর্থাংশ রয়েছে আর্কটিকের বরফের নীচে৷
ছবি: Crew of -Peter I-
সামরিক উপস্থিতি
সীমানা নিয়ে বিরোধ থাকার কারণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর্থিক লাভের বিষয়টি সামনে আসায় ডেনমার্ক, ক্যানাডা, রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে৷ ছবিতে মার্কিন একটি সাবমেরিনকে বরফের নীচ থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রিনপিসের বিরোধিতা
আর্কটিকে তেলের ড্রিলিং এর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রিনপিসের৷ কারণ ড্রিলিং করতে গিয়ে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে উত্তর মেরুর পরিবেশের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ কেননা দুর্গম ঐ পরিবেশে উদ্ধার তৎপরতা চালানোও বেশ কঠিন হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উত্তর মেরুতে বিমানযাত্রা
ছবিতে বিমান থেকে বরফ সরাতে দেখা যাচ্ছে৷ আর্কটিক সার্কেলে ওড়াওড়ি করা বিমানের জন্য এটা একটা নিয়মিত ব্যাপার৷ তবে গবেষণায় দেখা গেছে, আর্কটিকের উপর বিমান চলাচলের কারণে সেখানকার পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে৷ এই কালো কার্বনের পার্টিকেল সূর্যের আলো শোষণ করে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: DW/I.Quaile
চীনের আগমন
আর্কটিকের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া সেখান থেকে লাভবান হতে চায় চীনও৷ তাইতো ‘স্নো ড্রাগন’ নামের এই জাহাজটি ২০১২ সালে আর্কটিকের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে ইউরোপে পৌঁছেছে৷ এ বছর মে মাসে চীনকে আর্কটিক কাউন্সিলের অবজারভার স্ট্যাটাস দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভারতের গবেষণা
২০০৮ সালে আর্কটিকের নরওয়ের অংশে এই গবেষণা কেন্দ্রটি চালু করে ভারত৷ এর বাইরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও আর্কটিক নিয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে৷
ছবি: DW/I. Quaile
8 ছবি1 | 8
বন শহরের এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের আলেক্সান্ডার স্মিটহাউসেন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের পরীক্ষায় দেখেছি, পশুকে ভুট্টা সাইলেজ খাবার হিসেবে দিলে মিথেন নিঃসরণ কম হয়৷ এগুলোর মসৃণ কাঠামো দেখতে পাচ্ছি৷ এ ধরনের খাদ্য পেটে প্রক্রিয়াজাতের সময় কম মিথেন গ্যাস তৈরি হয়৷ আর ঘাস সাইলেজের কাঠামোতে অশোধিত আঁশের পরিমাণ বেশি৷ ফলে এটি পেটে গিয়ে সরল খাদ্য উপাদানে রূপান্তরে সময় বেশি লাগে৷ আর মিথেন গ্যাসের উৎপাদনও বেশি হয়৷''
শুধু যে গরু মিথেন উৎপাদন করে এমন নয়৷ বিশ শতাংশ মিথেন আসে গোবর থেকে৷ তাই কীভাবে এবং কোথায় গোবর সংরক্ষণ করা হচ্ছে, সেটা মেঝে পরিষ্কারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ মূল কথা হচ্ছে, মিথেন নিঃসরণ কমানো৷