1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশঅস্ট্রেলিয়া

পরিবেশ আন্দোলনকারীরা কেন অপরাধী?

২০ মে ২০২৫

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্দোলন করছেন পরিবেশকর্মীরা৷ কিন্তু বিভিন্ন দেশে সমাবেশ থেকে পরিবেশকর্মীদের আটক করে জেলে পাঠানো হচ্ছে৷

দুই পুলিশ অফিসার এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে
যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে বিক্ষোভকারীরা একটি জ্বালানি টার্মিনাল অবরোধ করার পর তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়ছবি: Joe Giddens/empics/picture alliance

২০২৪ সালের শেষের দিককার ঘটনা৷ অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে অবস্থিত শিল্প শহর নিউক্যাসেলের বন্দরে, একদল কায়াক আরোহী একটি বিশাল কয়লা জাহাজকে বন্দরে ভিড়তে বাধা দেওয়ার জন্য শিপিং লেনে প্রবেশ করে। অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ 'রাইজিং টাইড'-এর আয়োজনে জড়ো হওয়া ‘জলবায়ু রক্ষাকারীরা' চেয়েছিলেন বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা বন্দর সাময়িকভাবে অবরোধ করতে৷ এর মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে সৃষ্ট জলবায়ু সংকটের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কয়লা, তেল ও গ্যাস প্রকল্পগুলো বন্ধের ডাক দেন তারা৷

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার ও পুলিশ আদালতের মাধ্যমে এই অবরোধ বন্ধের চেষ্টা করে৷ কিন্তু একজন বিচারক বন্দরে একটি অঞ্চলকে এই আদেশের বাইরে রাখেন৷ বিক্ষোভকারীরা ৩০ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে সেখানে একটি কয়লা ট্যাঙ্কার অবরোধ করে রাখেন৷ পরে বন্দরের কার্যক্রমে বাধা দেয়ার অভিযোগে প্রায় ১৭০ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷

২০২২ সালের একটি আন্দোলন বিরোধী আইনের অধীনে তাদের বেশিরভাগের ২২,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (€১২,৩৫০) পর্যন্ত জরিমানা বা দুই বছরের জেল হতে পারে। এই আইনে সড়ক, সুড়ঙ্গ এবং বন্দরের মতো প্রধান সরকারি অবকাঠামোগুলোর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে এমন জনসমাবেশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ এর আগে জলবায়ু বিক্ষোভকারীদের একটি অবরোধের প্রেক্ষিতেই এই আইনটি করা হয়েছিল৷

রাইজিং টাইডের গ্রেপ্তার হওয়া একজন মুখপাত্র জ্যাক স্কোফিল্ড বলেন, নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের আইনটি ‘‘প্রায় একচেটিয়াভাবে জলবায়ু বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ব্যবহৃত হচ্ছে''৷

অস্ট্রেলিয়া সরকারের অবস্থান

২০২২ সালে সিডনি হারবার ব্রিজের একটি লেন অবরোধকারী একজন তরুণ জলবায়ু আন্দোলনকারী নিউ সাউথ ওয়েলস আইনের অধীনে প্রথম অভিযুক্ত হন৷ প্রাথমিকভাবে তাকে ১৫ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যটির গ্রিনস পার্টির সদস্য সু হিগিনসন অহিংস পন্থায় প্রতিবাদ জানানো এই তরুণের কারাবাসকে ‘গণতন্ত্রবিরোধী' বলে অভিহিত করেছেন৷ তার মতে ‘‘বৈধ ভিন্নমত এবং নাগরিক অবাধ্যতার কাজে জড়িত থাকার জন্য'' মানুষকে শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টলের ২০২৪ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ায় জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতি পাঁচজন একজনই গ্রেপ্তারের শিকার হন, যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বোচ্চ৷ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশটি কঠোর প্রতিবাদ বিরোধী আইন পাস করেছে। এর মধ্যে অন্যতম তাসমানিয়া দ্বীপ রাজ্য, যেখানে পুরোনো বন কাটার স্থানে প্রতিবাদ করলে ১৩,০০০ ডলার জরিমানা বা দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

জলবায়ু আন্দোলনের বিক্ষোভকারীরা বিশ্বের বৃহত্তম নিউক্যাসল কয়লা বন্দর অবরোধ করার জন্য জলে নেমেছিলেনছবি: Roni Bintang/Getty Images

জলবায়ু নিয়ে আন্দোলন দমন

আন্দোলনবিরোধী শাস্তিমূলক এমন আইন প্রণীত হয়েছে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও৷ যুক্তরাজ্যে, পাবলিক অর্ডার অ্যাক্টের সাম্প্রতিক সংশোধনীতে গণপ্রতিবাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে সড়ক অবরোধের বিরুদ্ধে সংশোধিত আইনের অধীনে পাঁচজন ‘জাস্ট স্টপ অয়েল' কর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

‘জন উপদ্রবের' ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিক্ষোভকারীদের ২০২৪ সালে চার থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল৷ পরে অবশ্য তাদের সাজা কিছুটা কমানো হয়। ব্রিটিশ আইনি ইতিহাসে অহিংস প্রতিবাদের জন্য এটি দীর্ঘতম সাজা বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল উইটনেস৷

ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টলের আন্তর্জাতিক নাগরিক ও সামাজিক নীতির সিনিয়র লেকচারার অস্কার বার্গলুন্ড বলেন, ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আইনটি জলবায়ু ও পরিবেশ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে৷

বার্গলুন্ড জানান, অহিংস উপায়ে জলবায়ু আন্দোলন চালানো গোষ্ঠী ‘লেৎসটে গেনারাৎসিওন' বা শেষ প্রজন্ম-এর সদস্যদের ‘অপরাধী সংগঠন গঠনের' দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। গবেষক বলেন, এই আইনটি সাধারণত মাফিয়া সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয় এবং এটি কখনও অহিংস আন্দোলনকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়নি। এদিকে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং সামরিক পদক্ষেপ জলবায়ু কর্মকাণ্ড দমনে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মধ্যে ২০২৩ সালে হেগের একটি মহাসড়ক অবরোধও রয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি গবেষণা অনুসারে এটি ছিল বিধিবদ্ধ আইনের লঙ্ঘন৷

প্রতিবাদকারীরা মামলার মুখে

প্রতিবাদ-বিরোধী আইন ছাড়াও জলবায়ু কর্মীরা তাদের কার্যক্রমের সময় সৃষ্ট বিঘ্নের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থাগুলির কাছ থেকেও ব্যাপক ক্ষতিপূরণের দাবির মুখোমুখি হচ্ছে। যেমন, ২০২৫ সালের মার্চে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসকে একটি তেলের পাইপলাইন অবরোধে ৬৬ কোটি ডলার ক্ষতির জন্য দায়ী করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা রাজ্যের একজন জুরি৷ দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদীদের বিক্ষোভে থাকা জ্বালানি কোম্পানি এনার্জি ট্রান্সফার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি দায়ের করেছিল৷

গ্রিনপিস ইউএসএ-এর অন্তর্বর্তী নির্বাহী পরিচালক সুষমা রমণ বলেন, এই ক্ষতিপূরণ "কর্পোরেশনগুলির দ্বারা আমাদের আদালতকে ভিন্নমত দমন করার জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার একটি নতুন প্রচেষ্টার অংশ৷ এর ফলে গ্রিনপিস যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি৷ ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রেপ্তার ও মামলার হুমকি ছাড়াও, ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় দুই হাজার পরিবেশকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে৷ ব্রাজিলে ৪০১টি এবং ফিলিপাইনে ২৯৮টি ঘটনা ঘটেছে।

জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রদানের প্রতিবাদে হেগে একটি মহাসড়ক অবরোধকারী প্রায় ৭০০ জলবায়ু কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ডাচ পুলিশছবি: James Petermeier/ZUMA/picture alliance

আইন কি জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের একটি হাতিয়ার?

বার্গলুন্ড বলেন, ‘‘প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে কারণ তারা জীবাশ্ম জ্বালানির মুনাফার জন্য হুমকি৷'' তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে প্রতিবাদ-বিরোধী আইনগুলি মূলত ‘পলিসি এক্সচেঞ্জ' নামের একটি ডানপন্থি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের পরামর্শে তৈরি করা হয়েছিল, যারা প্রকাশ্যে তেল ও গ্যাস লবির পক্ষে প্রচার চালায়৷

নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার অনুষদের অধ্যাপক লুক ম্যাকনামারার মতে, এই ধরনের কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করা পরিবেশকর্মীদের প্রতি ‘ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার' প্রতিফলন৷ বিভিন্ন দেশের এ ধরনের আইনের সমালোচনা করতে গিয়ে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, "অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিবিদরা নিয়মিতভাবে প্রতিবাদের অধিকারের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেন।'' কিন্তু ‘উদ্ভাবনী কোনো জলবায়ু প্রতিবাদ' মনোযোগ আকর্ষণ করলেই তাদের সেই নীতি বদলে যায়৷

ফিরে আসা যাক নিউ ক্যাসেলে৷ প্রায় ১৩০ জন 'রাইজিং টাইড' বিক্ষোভকারী নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন৷ এই মাসের শেষের দিকে তাদের বিচারকাজ শুরু হবে৷ তাদের জরিমানা বা কারাদণ্ডের শাস্তির কতটা কঠোর হবে তা এখনও অনিশ্চিত৷

তাদের মুখপাত্র জ্যাক শোফিল্ড জানান, জরিমানা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তারা আপিল করবেন৷ এটি অস্ট্রেলিয়া এবং তার বাইরেও পরিবেশগত ভিন্নমতকে অপরাধী করার জন্য বিচারিক ইচ্ছার একটি পরীক্ষামূলক মামলা হতে পারে।

গবেষক বার্গলুন্ডের মতে, এই ধরনের বিচারগুলি জলবায়ু আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতিফলন৷ তিনি বলেন, "বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয় যখন তারা সফল হয়।"

স্টুয়ার্ট ব্রাউন/এএনএস

ফেলে দেয়া প্লাস্টিক দিয়ে দ্বীপ নির্মাণ

04:13

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ