পরিবেশ-খরচ কমবে, জার্মানিতে বাজেট নিয়ে একমত তিন শরিক
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩
জার্মানিতে ২০২৪ সালের বাজেট নিয়ে ক্ষমতাসীন তিন শরিক দলের মতৈক্য হলো। ফলে বাজেটকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংশয় দূর হলো।
জার্মানিতে বাজেট নিয়ে তিন শরিক দলের নেতাদের মতৈক্য হলো। ছবি: TOBIAS SCHWARZ/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
জার্মানির সাংবিধানিক আদালতের একটি রায়ের পর এই সংশয় তৈরি হয়েছিল। আদালত জানিয়েছিল, কোভিড ১৯-এর সময়ের ছয় হাজার কোটি ডলারের অব্যবহৃত ঋণ পরিবেশ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা যাবে না। করলে সেটা অসাংবিধানিক হবে।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকার অসুবিধার মুখে পড়ে ও শরিকদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। প্রধান অসুবিধা হলো, এবার বাড়তি অর্থ কোথা থেকে পাওয়া যাবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকারকে অতিরিক্ত এক হাজার সাতশ কোটি ইউরো জোগাড় করতে হতো।
ক্ষমতাসীন জোটের অবস্থা
জার্মানির ক্ষমতাসীন জোটে তিন শরিক আছে। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট(এসপিডি), গ্রিন পার্টি এবং ফ্রি ডেমোক্র্যাট(এফপিডি)।
এই তিন দলের অগ্রাধিকারের তালিকা আলাদা। তারা বাজেট সংকট থেকে বেরোবার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে।
এসপিডি ও গ্রিনরা কর বাড়াবার পক্ষে ছিল, কিন্তু এফপিডি জানিয়ে দেয়, কর বাড়ানো যাবে না। তার থেকে কল্যাণমূলক প্রকল্পের ক্ষেত্রে খরচ কমানো হোক। কিন্তু এই ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে এসপিডি ও গ্রিনদের তীব্র আপত্তি ছিল। তারা চাইছিল, সরকারের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ আছে, তা শিথিল করা হোক।
জার্মানিতে করদাতাদের অর্থ কীভাবে অপচয় করা হয়
ঝকমকে শূকরের ভাস্কর্য; সোনালি রং করা ইটের বাড়ি; যেখানে দেখার কিছু নেই সেখানে ভিউয়িং প্ল্যাটফর্ম – জার্মান করদাতা সমিতির বাৎসরিক ‘কালো খাতায়’ সরকারি আমলাদের অপচয়ের নানা দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
উড়ন্ত শূকর
‘গ্লিৎসারশোয়াইন’ বা ‘ঝকমকে শূকর’ নামধারী এই ভাস্কর্যটি প্রতিষ্ঠিত হবে দক্ষিণ জার্মানির হালে শহরে৷ এক লাখ ইউরো মূল্যের ও আধ টন ওজনের মূর্তিটি নির্বাচন করা হয় এই কারণে যে, শূকর নাকি হালে শহরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত৷ অতীতে এক দঙ্গল শূকর এই শহরে লবণের খনি আবিষ্কার করে, বলে কথিত আছে৷ ঝোলানো শূকরের গায়ের ঝকমকে দানাগুলি নাকি যেই লবণের দানার প্রতীক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
খাঁচা নাকি?
না, খাঁচা নয়৷ পাড্যারবর্নের কাছে ব্রাকেল শহরের ছোট নদীটিতে মাছেদের যাওয়া-আসার সুবিধার জন্য একটি ‘সিঁড়ি’ তৈরি করা হয়েছে – আর সেই সিঁড়ি দিয়ে মাছেদের ওঠানামা দেখার দর্শকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম, যার তৈরির খরচ ৬,২০০ ইউরো৷ প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে দর্শকরা অদৃশ্য মাছেদের দিকে আরো হাত খানেক এগিয়ে যেতে পারবেন!
ছবি: Bund der Steuerzahler NRW/Bärbel Hildebrandt
সৌরশক্তি চালিত ময়লা ফেলার টিন
সুইজারল্যান্ডে তৈরি এই সোলার পাওয়ার্ড ট্র্যাশ ক্যানগুলির এক একটির দাম ১০,৫০০ ইউরো৷ পট্সডাম শহরে এগুলো বসানো শুরু হয়েছে৷ এই ময়লা ফেলার টিনের বিশেষত্ব হল, ভেতরে কতোটা ময়লা জমা হল, তা মনিটরে দেখতে পাওয়া যায়; সেই ময়লা চাপ দিয়ে ছোট করে ফেলে আরো ময়লা ফেলার জায়গা করা হয়৷ মনে রাখা দরকার, একটি সাধারণ ময়লা ফেলার টিন-এর দাম ৩০০ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Hirschberger
গিলটি করা দেয়াল
হামবুর্গের একটি পড়ন্ত এলাকায় ভাঙাচোরা দেয়ালটির প্রতিটি ইটে সত্যিকারের সোনার তবক বসিয়ে গিলটি করেছেন এক স্থানীয় শিল্পী – প্রায় ৩০০ বর্গমিটার দেয়াল জুড়ে সোনার তবক! প্রকল্পটিতে হামবুর্গের সংস্কৃতি বিভাগের অনুদান ছিল ৮৫,৬০০ ইউরো৷
ছবি: picture alliance/dpa/B. Marks
গ্যারেজ আছে, গাড়ি নেই
হামবুর্গের কাছে ভিনসেনে এই পাবলিক গ্যারেজটি খোলা হয় বেশ কয়েক মাস আগে৷ কয়েক তলা জুড়ে প্রায় ৫৩৪টি গাড়ি রাখার জায়গা৷ মুশকিল এই যে, একতলার পার্কিং-এর জায়গাগুলোই কখনো ভরে না, বাকিগুলো তো পুরোপুরি খালি থাকে৷ শহর কর্তৃপক্ষ এই গ্যারেজ বানানোর জন্য দশ লাখ ইউরো দিয়েছেন; যে সংস্থা গ্যারেজ চালানোর ভার নিয়েছে, বছরের পর বছর তাদের লোকসান মেটানোর দায়িত্বও শহর কর্তৃপক্ষের৷
ছবি: Bund der Steuerzahler
লেবুগাছের সমাধি
ফ্রাংকফুর্টের কাছে ওবারউর্জেলে এই ৪০০ বছরের পুরনো লেবুগাছটি মরতে বসেছে৷ তাই স্থানীয় আমলারা মরণাপন্ন লেবুগাছটিকে সম্মান জানাচ্ছেন গাছের গুঁড়িটিকে একটি শিল্প প্রকল্পের অঙ্গ করে: গাছটির চারপাশে একটি লোহার কাঠামো বসানো হচ্ছে, কিন্তু কোনো কাচ ছাড়া, বোধহয় এই কারণে যে, কাঠামোটিরই খরচ পড়েছে ৭৭,০০০ ইউরো৷
ছবি: Bund der Steuerzahler
সাতশ’ সাংসদ
জার্মান নির্বাচন বিধির কারণে সেপ্টেম্বরের ভোটের ফলশ্রুতি হিসেবে এবার বুন্ডেস্টাগে আসন নেবেন ৭০০ জনের বেশি সাংসদ – যা কিনা গতবারের চেয়ে প্রায় ১০০ জন বেশি৷ এর ফলে শুধুমাত্র ২০১৮ সালেই সরকারের খরচ বাড়বে প্রায় সাড়ে সাত কোটি ইউরো, বলছে জার্মান করদাতা সমিতি৷
ছবি: picture-alliance/Global Travel Images
7 ছবি1 | 7
কী সিদ্ধান্ত হলো?
চ্যান্সেলর শলৎস, জাতীয় অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট হাবেক এবং অর্থমন্ত্রী লিন্ডনার বুধবার জোটের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
শলৎস বলেছেন, সরকার ২০২৪ সালের জন্য ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ মেনে চলবে। সরকার খরচ ছাঁটাই করবে। অর্থ বাঁচাবে। কারণ, সাংবিধানিক কোর্টের রুলিংয়ের পর সরকারের হাতে এবার অর্থের পরিমাণ কম থাকবে।
শলৎস জানিয়েছেন, ''সরকার পরিবেশ-বান্ধব ব্যবস্থা নিতে দায়বদ্ধ। কিন্তু ২০২৪ সালে পরিবেশ তহবিলে এক হাজার দুইশ কোটি ইউরো কম দেয়া হবে। আমরা সামাজিক সুরক্ষায় হাত দেব না। কিন্তু আমরা খরচ নিয়ে একটা অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করব। অর্থমন্ত্রণালয় দ্রুত বাজেট তৈরি করে ফেলবে।''
শলৎস জানিয়েছে, ''শরিকদের মধ্যে আলোচনা কঠিন ছিল, কিন্তু আমরা একটা ভালো ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমঝোতায় আসতে পেরেছি।''
হাবেক জানিয়েছেন, ''ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে যে ছাড় সরকার দিচ্ছে, তা ঘোষিত সময়ের আগেই বন্ধ করে দেয়া হবে। সৌর প্যানেল ব্যবস্থা সম্প্রসারণের খরচও ছাঁটাই করা হবে। দেশের রেল ব্যবস্থায় অর্থ দেয়ার বিষয়টিরও সংস্কার হবে।''
লিন্ডনার জানিয়েছেন, ''জার্মানির সরকারি রেল অপারেটরের হাতে থাকা একটি সহয়োগী সংস্থা বিক্রি করে দেয়া হবে। তাছাড়া পরিবেশ নষ্ট না করার জন্য যে ভর্তুকি দেয়া হয়, সেটাও তিনশ কোটি ইউরো কম করা হবে।''
ইউক্রেনকে সাহায্য
তিন শরিক দলই ইউক্রেনকে সাহায্য করে যাওয়া নিয়ে একমত হয়েছে। লিন্ডনার জানিয়েছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য আটশ কোটি ইউরোর দ্বিপাক্ষিক সাহায্য করা হবে। যদি ইউক্রেনের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়, তাহলে তখন তারা উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
তবে এই বছরের শেষে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করা সম্ভব হবে নাকি একটা অন্তর্বর্তী বাজেট পাস করাতে হবে তা এখনো স্পষ্ট হয়নি।