পরিবেশ বাঁচাতে গিয়ে ২০১৮ সালে ১৬০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, গ্লোবাল উইটনেস নামের একটি এনজিও জানিয়েছে এই তথ্য৷ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফিলিপাইন্স যেখানে ৩০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ গুয়েতামালাতেও এধরনের মৃত্যু বেড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
কৃষি, কাঠ এবং খনি খাতে গতবছর সহিংসতায় অন্তত ১৬৪ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন বলে গ্লোবাল উইটনেসের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে৷ মঙ্গলবার এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এনজিওটি৷
আমাদের নিত্যদিনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি এবং অন্যান্য কাঁচামালের জোগান নিশ্চিত করতে গিয়ে সৃষ্ট জটিলতাকে অনেক পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট নিপীড়নের শিকার হওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে গ্লোবাল উইটনেস৷ গবেষণা প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে বিবাদ সৃষ্টি করতে পারে এমন প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বিনিয়োগকারীরাও সংঘাতে ঘি ঢেলেছে৷
খাবারের অপচয় ঠেকিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা
বিশ্বের মোট খাবারের এক-তৃতীয়াংশ খাওয়া হয় না৷ এর একটি বড় অংশের জায়গা হয় আবর্জনার স্তূপে, যেখান থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Tittel
এত খাবার নষ্ট!
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ফাও-এর ‘ফুড লস অ্যান্ড ফুড ওয়েস্ট প্রোজেক্ট’-এর প্রধান রোসা রোলে জানিয়েছেন, ২০১১ সালের এক হিসেব বলছে, বিশ্বে যত খাবার উৎপাদিত হয় তার এক-তৃতীয়াংশের স্থান হয় আবর্জনার স্তূপ৷’’ ওজন করলে এটি প্রায় ১৩০ কোটি টন খাবার৷
ছবি: DW/K. Palme
পরিবেশের ক্ষতি
জাতিসংঘের হিসেবে নষ্ট হওয়া খাবার প্রায় ৩ দশমিক ৬ গিগাটনের সমপরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসে ছাড়ে৷ এর সঙ্গে খাবার উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত বিষয়াদি, যেমন পশুপালন কিংবা সয়াবিন ও পাম তেল চাষের জন্য বনজঙ্গল কাটা ইত্যাদি ধরলে, খাদ্য উৎপাদন শিল্প কর্তৃক কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ অনেক বেশি হবে৷ হিসেব করলে তা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরেই হবে৷
ছবি: Getty Images
কারা বেশি অপচয় করে?
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে, একেকজন ইউরোপীয় বছরে গড়ে ৯৫ কেজির সমপরিমাণ খাবার নষ্ট করে৷ নিম্ন আয়ের দেশ, যেমন সাহারার দক্ষিণের দেশগুলোর নাগরিকদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি মাত্র ছয় কেজি৷
ছবি: San Diego Union Tribune/K. C. Alfred
মাংস বেশি দূষণকারী
গ্রিনপিস বলছে, এক কেজি গরুর মাংসের কারণে পরিবেশে ১৩ কেজির সমপরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড ছড়িয়ে পড়ে৷ কারণ, একটি গরু দিনে গড়ে কয়েকশ’ লিটার মিথেন গ্যাস ছাড়ে৷ মিথেন হচ্ছে একটি গ্রিনহাউস গ্যাস, যা পরিবেশের জন্য কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে ২৫ গুন বেশি ক্ষতিকারক৷ জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বে উৎপাদিত মোট মাংসের প্রায় ২০ ভাগই অপচয় হয়৷
ছবি: AP
আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ
আবর্জনার স্তূপ থেকে নির্গত গ্যাস পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ বিজ্ঞানীরা আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ তৈরির কৌশল বের করেছেন৷ অনেক কোম্পানি সেটি ব্যবহারও করছে৷ যেমন, ‘ইউরোপিয়ান কম্পোস্ট নেটওয়ার্ক’-এর সদস্য প্রায় ৭০টি সংস্থা আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করছে৷ চাইলে সেই বিদ্যুৎ গ্রিডেও সরবরাহ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংস্থার এক কর্মকর্তা স্টেফানি সিবার্ট৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. C. Hin
কম্পোস্ট তৈরি
শুধু বিদ্যুৎই নয়, আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর বেঁচে যাওয়া তরলের সঙ্গে কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে উন্নতমানের কম্পোস্ট সার তৈরি করাও সম্ভব বলে জানিয়েছেন স্টেফানি সিবার্ট৷
ছবি: DW
খাবার অপচয় রোধ
জার্মানির ‘ফুডশেয়ারিং’ নামে একটি সংস্থা জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন সুপারমার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেলে দেয়া খাবার সংগ্রহ করে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে৷ খাবার অপচয় রোধ করাই তাদের মূল লক্ষ্য বলে সংস্থাটি জানিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Robert B. Fishman, ecomedia
7 ছবি1 | 7
‘‘ভূমি অধিগ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কিত বিদেশি বহুজাতিকদের শুধুমাত্র অজ্ঞতার দোহাই দিলে হবে না৷ যেসব জমি অধিগ্রহণের ফলে তারা লাভবান হচ্ছে সেসব জমি যাতে বৈধভাবে অধিগ্রহণ করা হয় তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব৷ সেসব জমিতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাসরত মানুষদের অনুমতি নিয়ে সেটা করতে হবে,'' গবেষণা প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে৷
গতবছর যেসব দেশে পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট নিহত হয়েছেন তার মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ফিলিপাইন্স৷ দেশটিতে ২০১৮ সালে অন্তত ৩০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন৷ অন্যদিকে, গুয়েতেমালায় আগের বছরের তুলনায় এধরনের মৃত্যুর হার বেড়েছে চার শতাংশ৷ ভারতেও এমন মৃত্যু বাড়ছে৷
জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক বিশেষ দূত ভিকি টউলি-করপুজ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এমন সংঘাত এক মানবাধিকার সংকট৷ আর এটা যারা স্থির পরিবেশের উপর নির্ভরশীল তাদের প্রত্যেকের উপরই এক হুমকি৷''
গবেষণায় অবশ্য আগের বছরের তুলনায় পরিবেশকেন্দ্রিক সহিংসতায় প্রাণহানি কম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ তবে, এই কমার পেছনে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে গণমাধ্যমের উপর সৃষ্ট চাপকে দায়ী করেছে এনজিওটি৷ গ্লোবাল উইটনেস মনে করে, অনেক প্রাণহানির ঘটনা এখন গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে না বলেই সংখ্যাটি কমেছে মনে হচ্ছে৷