লিমা থেকে প্যারিস: যে প্রচেষ্টা চলেছে, তা যে পর্যাপ্ত নয়, তা ইতিমধ্যেই আমাদের জ্ঞাত৷ এক হিসেবে এ সব অতিকায় জলবায়ু সম্মেলন যেন শরৎচন্দ্রের পল্লীসমাজ; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের অচলায়তন৷
বিজ্ঞাপন
আবার বলছি: পরিবেশ কিংবা জলবায়ু সংরক্ষণ নাম ভাঁড়িয়ে মানবজাতি তার অস্তিত্ব বজায় রাখার শেষ (?) সংগ্রামে লিপ্ত৷ সলতেয় আগুন ধরানো হয়ে গেছে; এখন বোমাটা যাতে একটু দেরিতে ফাটে, সেটা দেখার প্রচেষ্টা৷ পৃথিবীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি বাড়ার পরিবর্তে যদি শুধু দু'ডিগ্রি বাড়ে – তাহলে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ সাগরের পানিতে ডুবে গেলেও, ম্যানহ্যাটান তো ঠিকই থাকবে...
পল্লীসমাজ যোগ অচলায়তন৷ আবার খানিকটা মাছের বাজারও বটে৷ চুরি-ছিঁচকেমি-পকেটমারি, সরকারি খরচে বিদেশভ্রমণ, টিএ-ডিএ, অল্লস্বল্প কেনাকাটা – সবই চলেছে৷ আবার খানিকটা পরিসংখ্যান এ দিক-ও দিক থেকে গুগল এবং কপি-পেস্ট করে যা হোক একটা পেপার খাড়া করে, আবেগে গলা কাঁপিয়ে সেই পেপার-কে প্লেনামে পড়া; অন্যান্য ডেলিগেটদের হাততালি, পিঠ চাপড়ানো; দেশের কাগজওলা-দের ইন্টারভিউ; ফেসবুক আর ইউটিউবে পোস্টিং...
ধেড়ে ধেড়ে, বুড়ো বুড়ো দেশগুলো প্রকৃতি এবং (সাবেক) উপনিবেশগুলোর গলা কেটে দশ পয়সা কামিয়ে নিয়েছে – এবার তারা মৎস্যভক্ষণ ছেড়ে বৈরিগি হবে৷ ওদিকে চীন-ভারত-ব্রাজিল-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো যে সব নালায়েক দেশ হঠাৎ লায়েক হয়ে উঠেছে, যারা নাকি পৃথিবী নামক পাড়ার হবু মাস্তান, তারাই বা চাট্টি ভোগ না করে নিয়ে হঠাৎ প্লাস্টিকের ব্যাগের বদলে আবার চটের থলি হাতে করে কী করে?
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে দ্বীপগুলো
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতকেই বিশ্বের অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে পড়বে, বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষে মানুষে হানাহানি৷ আইপিসিসি-র রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পৃথিবীর স্বর্গ হারানোর পথে
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ মালদ্বীপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এটি পুরোপুরি তলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের৷
ছবি: picture alliance/chromorange
বন্যার প্রকট আকার
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ৷ নিম্ন ভৌগলিক অবস্থান এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে দেশটি৷ সাগরের পানির উচ্চতা মাত্র তিন ফুট বেড়ে গেলেই দেশের অর্ধেক পানির নীচে তলিয়ে যাবে৷
ছবি: Tareq Onu
পানিতে নিমজ্জিত সম্পদ
সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে এরই মধ্যে দ্বীপগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেছে অনেকেই৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিরিবাটি দ্বীপপুঞ্জের কিছু গ্রাম এরই মধ্যেপানিতে তলিয়ে গেছে৷ ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় বেশ চিন্তিত সেখানকার চাষীরা৷
ছবি: AFP/Getty Images
তাপমাত্রা বৃদ্ধি
আইপিসিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই শতকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ০.৩ থেকে ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এমনকি শিল্পকারখানা যেখানে বেশি সেখানে গড়ে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে৷ ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়বে ২৬ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার৷
ছবি: picture-alliance/AP
সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে বসবাস
সমুদ্রের পানি থেকে বাঁচার উত্তম পন্থা জানা আছে ডাচদের৷ প্রায় ১০০০ বছর আগে বন্যার হাত থেকে বাঁচতে তারা প্রথম পরিখা নির্মাণ করেছিল৷ এ কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছে সেখানে৷ তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও ভাবছে ডাচরা৷
ছবি: picture-alliance/Ton Koene
ডুবছে বিশ্ব ঐতিহ্য
ইটালির ভেনিস পুরোটাই পানি বেষ্টিত৷ তাই সেখানে বন্যা কোনো আকস্মিত ঘটনা নয়৷ কিন্তু চিন্তা বিষয় হল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরটি ক্রমেই পানির তলায় তলিয়ে যাচ্ছে৷ ইটালির সরকার ভেনিস রক্ষায় ৯.৬ বিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার এই প্রকল্প ২০১৬ সাল নাগাদ শেষ হবে৷
ছবি: AP
প্রাকৃতিক বিপর্যয়
আইপিসিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এশিয়া ও ইউরোপে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে পানি সংকট এবং খরা দেখা দেবে বলেও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এর ফলে ফসল ভালোমত হবে না, দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি৷
ছবি: dapd
কোনো মানুষ রেহাই পাবে না
আইপিসিসি-র সভাপতি রাজেন্দ্র পাচৌরি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা যদি ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় তবে ঝুঁকির পরিমাণও সেই অনুপাতে বাড়বে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব থেকে বিশ্বের কোনো মানুষই রেহাই পাবেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
এক ব্যাচ খেয়ে গেছে৷ আরেক ব্যাচ খেতে বসেছে৷ বাইরে রবাহূত-অনাহূতদের ভিড়, অর্থাৎ কিনা বাদবাকি দেশ৷ জীবজন্তু, পশুপাখিরা যেখানে এঁটো কলাপাত ফেলা হয়, সেই আস্তাকুড় ঘেঁটে বিবর্তনের ইতিহাসে তাদের অবলুপ্তি আরো কিছুদিন ঠেকানোর চেষ্টা করছে৷ তাদের সকলের – এবং বলতে কি, আমাদের – মাতৃস্বরূপ প্রকৃতি দেবীকে জিগ্যেস করলে তিনি বলেন, ‘‘কেঁদে কী হবে? বড়গুলো না হয় লোপ পাচ্ছে৷ কিন্তু তার বদলে ধরো কতো রকমের হেমরহেজিক ফিভার – এই যেমন ইবোলা – কিংবা পাখির জ্বরের মতো মহামারির ভাইরাস তৈরি করে দিচ্ছি না? অনেক ভেবে দেখলুম: জীব বলতে জীবই, তা সে মানুষই হোক আর জীবাণুই হোক৷ তা বাছা জীবাণু পোষা তোমাদের মতো মানুষ পোষা থেকে অনেক সহজ কাজ৷ তারা নিজের মনে বংশবৃদ্ধি করে, খিদে পেলে পরস্পরকে খায় – তোমাদের মতো গোটা দুনিয়াটাকে খেয়ে শেষ করে না...''
প্রকৃতি দেবী শোনালেন তাঁর মনুষ্য নামক বুদ্ধিমান এবং লায়েক সন্তানের বোকামির আরেক কাহিনি: ‘‘সেবার হিমালয়ের কোন একটা ঢাল থেকে ধস নেমে সে এক কাণ্ড! লোকজন কান্নাকাটি করে এয়েছে আমার কাছে৷ কী করতে হবে? না, যদি পাহাড়টাকে আবার মাটি দিয়ে ঢেকে দিই; আমার কাছে ছোট একটা রিপেয়ার বৈ তো কিছু নয়... আমি বললুম: দোবো৷ ‘তা আমরা কবে আসব?' ‘কবে আসব মানে?' ‘মানে কাজটা কবে শেষ হবে৷ মানুষজনদের সেখানে বাস করতে হবে তো...' ‘তা বেশ তো৷ দশ হাজার বছর পরে এসো৷' ‘সে কি!!! এই ছোট্ট একটা মেরামতিতে দশ হাজার বছর? আমরা বাঁচিই তো মোটে সত্তর-আশি বছর...' ‘তাও কপাল থাকলে৷ তা বাছা, আমার বয়সটাও তো ভেবে দেখবে: পাঁচশো কোটি বছর পার করেছি; আরো পাঁচশো কোটি বছর বাকি৷ সে হিসেবে দশ হাজার বছর আর কি বেশি বললাম গো? তোমরাই বলো...'''
জলবায়ু পরিবর্তনের সুফল!
ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, বিশ্বে এখনো যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস আছে তার প্রায় এক চতুর্থাংশ রয়েছে আর্কটিকের বরফের নীচে৷ তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে যাওয়ায় খুশি আর্কটিকের দেশগুলো৷
ছবি: Gazprom
বাকি বিশ্ব থেকে দ্বিগুণ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বে তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে, আর্কটিক বা সুমেরু অঞ্চলে সেই মাত্রাটা প্রায় দ্বিগুণ৷ এভাবে বরফ গলার কারণে আর্কটিকে যাওয়ার পথ সহজ ও সংক্ষিপ্ত হচ্ছে৷ ফলে সেখানে থাকা সম্পদ আহরণের কাজে সুবিধা হবে৷ তাই খুশি এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী৷
ছবি: imago
খুশি আর্কটিকের দেশগুলোও
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পাঁচটি আর্কটিক দেশ – ক্যানাডা, ডেনমার্ক, নরওয়ে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র – বিভিন্নভাবে সেখানে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ উল্লেখ্য, আর্কটিকের কতটুকু অংশ কার নিয়ন্ত্রণে সেটা নিয়ে এখনো দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Gazprom
প্রায় এক চতুর্থাংশ
ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, বিশ্বে এখনো যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস আছে তার প্রায় এক চতুর্থাংশ রয়েছে আর্কটিকের বরফের নীচে৷
ছবি: Crew of -Peter I-
সামরিক উপস্থিতি
সীমানা নিয়ে বিরোধ থাকার কারণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর্থিক লাভের বিষয়টি সামনে আসায় ডেনমার্ক, ক্যানাডা, রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে৷ ছবিতে মার্কিন একটি সাবমেরিনকে বরফের নীচ থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রিনপিসের বিরোধিতা
আর্কটিকে তেলের ড্রিলিং এর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রিনপিসের৷ কারণ ড্রিলিং করতে গিয়ে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে উত্তর মেরুর পরিবেশের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ কেননা দুর্গম ঐ পরিবেশে উদ্ধার তৎপরতা চালানোও বেশ কঠিন হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উত্তর মেরুতে বিমানযাত্রা
ছবিতে বিমান থেকে বরফ সরাতে দেখা যাচ্ছে৷ আর্কটিক সার্কেলে ওড়াওড়ি করা বিমানের জন্য এটা একটা নিয়মিত ব্যাপার৷ তবে গবেষণায় দেখা গেছে, আর্কটিকের উপর বিমান চলাচলের কারণে সেখানকার পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে৷ এই কালো কার্বনের পার্টিকেল সূর্যের আলো শোষণ করে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: DW/I.Quaile
চীনের আগমন
আর্কটিকের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া সেখান থেকে লাভবান হতে চায় চীনও৷ তাইতো ‘স্নো ড্রাগন’ নামের এই জাহাজটি ২০১২ সালে আর্কটিকের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে ইউরোপে পৌঁছেছে৷ এ বছর মে মাসে চীনকে আর্কটিক কাউন্সিলের অবজারভার স্ট্যাটাস দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভারতের গবেষণা
২০০৮ সালে আর্কটিকের নরওয়ের অংশে এই গবেষণা কেন্দ্রটি চালু করে ভারত৷ এর বাইরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও আর্কটিক নিয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে৷
ছবি: DW/I. Quaile
8 ছবি1 | 8
প্রকৃতি দেবী যে শেষ কাহিনিটি শোনালেন, সেটা লিমা-য় শোনালে বোধহয় মন্দ হতো না৷ সাবেক বর্মায় নাকি বাঁদর ধরার এক অভিনব পদ্ধতি ছিল: একটা চামড়ার থলিতে খানিকটা চাল পুরে সেটাকে কোনো গাছের ডালে বেঁধে রাখা হতো৷ জঙ্গলের মধ্যে বাঁদর এসে সেই থলিতে হাত ঢুকিয়ে মুঠো ভরে চাল নিতো, কিন্তু চালসুদ্ধ মুঠো আর থলির সরু গলা দিয়ে বার করতে পারত না৷ চাল ছেড়ে দিলেই মুঠো আবার সরু হয়ে যায়, বাঁদরও মুক্তি পায়৷ কিন্তু তা না করে বাঁদর সারা রাত থলির মধ্যে হাত আটকে ছটফট, ধস্তাধস্তি করে, কিন্তু পালাতে পারে না৷ ভোরবেলা শিকারিরা এসে তাকে ধরে কিংবা মারে৷