আমরা জানি, বাঙালি মাছ খেতে ভালোবাসে৷ কিন্তু গোটা বিশ্বেই মাছের চাহিদা বেড়ে চলেছে৷ একদিকে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও স্বাদের উন্নতি, অন্যদিকে চাষের প্রক্রিয়াকে আরো পরিবেশবান্ধব করে তোলার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
বাজারে অনেক মাছ এখন মৎস খামার থেকেই আসে৷ কিন্তু স্বাস্থ্যবান ও সুস্বাদু মাছ চাষ করা কত কঠিন? পরিবেশের উপরেই বা মাছ চাষের প্রভাব কী?
ফ্রান্সের ব্রেস্ট শহরের কাছে এক পরীক্ষামূলক মাছ চাষের কেন্দ্র এক ইউরোপীয় প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে৷ গোটা ইইউ জুড়ে মৎসশিল্পের গবেষকদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করছে সেই প্রকল্প৷ মাছের জিন গবেষক মার্ক ভঁদেপুট এ বিষয়ে বলেন, ‘‘মাছ চাষের ক্ষেত্রে বিপুল প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে৷ গত ২০ বছরে বিশ্বজুড়ে বছরে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে৷ গত ১২ মাসে এমনকি গরুর মাংস উৎপাদনকেও ছাড়িয়ে গেছে৷''
গোটা বিশ্বে মাছের চাহিদাও বেড়ে চলেছে, যদিও সামুদ্রিক সম্পদ কমে চলেছে৷ অতএব আরো মাছ উৎপাদন করতে টেকসই পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ছে৷ মার্ক বলেন, ‘‘যে কোনো অন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার মতো মাছ চাষের জন্যও সম্পদের প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে মাছের তেল ও ময়দা লাগে৷ সে কারণে কড়া সমালোচনা হচ্ছে৷ এই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট বর্জ্য পদার্থও সৃষ্টি হয়৷''
মাছ পুষ্টিবিদ ও জিন বিশেষজ্ঞরা মাছদের খাদ্যে মাছের তেল ও ময়দার বিকল্পহিসেবে উদ্ভিদ দিতে পেরেছেন৷ ট্রাউট গোত্রীয় একদল মাছকে সম্পূর্ণ নিরামিষ খোরাক দেওয়া হচ্ছে৷ মাছের জিন বিশেষজ্ঞ এডভিশ কিয়ে বলেন, ‘‘আমরা আইসোজিনিক লাইনেজ সৃষ্টি করেছি৷ প্রত্যেক বংশের মধ্যে সব প্রাণী আসলে যমজ৷ জিনগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে তারা হুবহু এক৷ ফলে আরো দক্ষতার সঙ্গে আমরা গবেষণা করতে পারছি৷''
মাছেরা কীভাবে পুষ্টি গ্রহণ করে, চর্বির পরিমাণ ও গঠনের উপরেও তার কী প্রভাব পড়ে, তাদের বিভিন্ন রকমের খোরাক দিয়ে গবেষকরা তা জানতে পারছেন৷ এডভিকে বলেন, ‘‘আমরা সুস্বাদু মাছ উৎপাদন করতে চাই এবং সম্পদের ব্যবহার কমাতে চাই৷ এমন চাষের প্রণালীতে মাছেরা বেড়ে উঠবে, যা পরিবেশের যতটা কম সম্ভব ক্ষতি করবে৷''
মাছ আমাদের আর যা উপকার করে
‘মাছে ভাতে বাঙালি’৷ বাঙালির খাবারে তাই অন্তত মাছের একটা আয়োজন থাকবে না, এ প্রায় অকল্পনীয়৷ কিন্তু রসনাবিলাসের উপাদান হওয়া ছাড়াও মাছ যে আরো নানাভাবে আমাদের উপকার করে থাকে, তা কি জানতেন?
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
পোড়া ক্ষত সারাতে তেলাপিয়ার চামড়া
রোগীর শরীরের পুড়ে যাওয়া ক্ষত সারাতে চিকিৎসকরা তেলাপিয়া মাছের ত্বকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা৷ এখন পর্যন্ত সাফল্য পাওয়ার কথাই জানাচ্ছেন তাঁরা৷ তেলাপিয়ার ত্বকে মানুষের ত্বকের প্রায় সমপরিমাণ আর্দ্রতা আর কোলাজেন প্রোটিন আছে৷ এছাড়া তেলাপিয়ার ত্বক মানুষের ত্বকের মতোই রোগপ্রতিরোধী বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা৷
ছবি: Reuters/P.Whitaker
মাছ দিয়ে পেডিকিওর
সৌখিন অনেকেই এখন নিয়মিত পার্লারে গিয়ে পেডিকিওর, মেনিকিওর করান৷ এক ধরনের মাছ যে পেডিকিওরে ব্যবহার হয়, তা কি জানতেন? এই মাছের নাম ‘গারা রুফা’ হলেও একে সাধারণভাবে ‘ডাক্তার মাছ’ বলে ডাকা হয়৷ ছোট ছোট এই মাছে ভর্তি অ্যাকুরিয়ামে পা চুবিয়ে রাখলে, মাছগুলি পায়ের মরা চামড়া খেয়ে নেয়৷
ছবি: Colourbox
মাছের চামড়ায় ফ্যাশন
মাছের চামড়া এখন ব্যবহার হচ্ছে গরু বা ছাগলের চামড়ার বিকলপ হিসেবে৷ ব্যাগ, ব্লট এমনকি জুতাও তৈরি করা হচ্ছে মাছের চামড়া ব্যবহার করে৷ মাছের চামড়ার এ বাজার টেকসই করতে অবশ্য এখনও বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
সৌন্দর্য বর্ধন
বসার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে এখন অনেকের বাড়িতেই দেখা যায় বৈচিত্র্যময় অ্যাকুরিয়াম৷ আর তাতে শোভা পায় নানা রঙের মাছ৷ এই অ্যাকুরিয়ামে মাছ পোষাকে কেন্দ্র করে সব দেশেই গড়ে উঠেছে বড় বড় সব শিল্প৷ উৎপাদিত হচ্ছে মাছের খাবার, মাছের খেলনা থেকে শুরুর করে আরো নানা জিনিস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina
মাছের তেল
মাছ থেকে তৈরি হয় নানা রকমের তেল৷ এ সব তেল বিভিন্ন রোগে ওষুধের সহায়ক হিসেবে ডাক্তাররা রোগীদের খেতে বলেন৷ রোগ ছাড়াও শরীর সুস্থ রাখার জন্যও এসব তেল অনেকে নিয়মিত খান৷ মাছের তেলে শরীরের জন্য পুষ্টিকর ওমেগা-থ্রি নামের উপাদানের উপস্থিতি থাকে৷ হেরিং, টুনা, স্যামনসহ নানা মাছের শরীর থেকে এ তেল প্রস্তুত হয়৷ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মাছের তেলের নাম কড লিভার তেল৷ এটি তৈরি হয় কড মাছের লিভার থেকে৷
ছবি: Colourbox
5 ছবি1 | 5
নেদারল্যান্ডসের ভাখেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকরা ফ্রান্সের আইসোজেনিক মাছ ব্যবহার করে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার গবেষণা করছেন৷ মাছের পুষ্টিবিদ ইয়োহান শ্রামা বলেন, এই গবেষণায় শুধু মাছকে খাওয়ানোর পদ্ধতি নয়, পরিবেশবান্ধব উপায়ে তা করার চেষ্টা চলছে৷ পারিপার্শ্বিক ও মাছের জন্যও তা জরুরি৷ উৎপাদন বাড়ানোই মূল লক্ষ্য নয়, মাছ কীভাবে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে, তা জানা জরুরি৷''
ওলন্দাজ গবেষকরা সারাদিন পানির মধ্যে রাসায়নিক পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রাখেন৷ তারপর ব্যাকটেরিয়ার ফিল্টারের মধ্য দিয়ে গলিয়ে বর্জ্য দূর করে তাতে অক্সিজেন যোগ করা হয়৷ মৎস গবেষক এপ এডিংস বলেন, ‘‘আমরা এই তথ্য ব্যবহার করে পানি শোধনাগার ডিজাইন করতে পারি৷ কারণ, মাছ ঠিক কত পরিমাণ পুষ্টি কাজে লাগাচ্ছে না, তা আমরা জানি৷ সেই পুষ্টির কতটা অংশ শুদ্ধিকরণ প্রণালীর সাহায্যে সরিয়ে ফেলে পানি বার বার ব্যবহার করা যায়, সেটাও আমরা জানি৷ এই ধরনের পানি শোধনাগার পানির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে পারে৷ প্রচলিত প্রণালীর তুলনায় অনেক পানি সাশ্রয় ঘটে৷''
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাঁদের গবেষণা মাছের চাষকে আরো পরিবেশবান্ধব করে তুলবে৷ সেইসঙ্গে মাছও আরো সুস্বাদু ও সস্তা হয়ে উঠবে৷
জার্মানির বাজারে বাংলাদেশের মাছ
মাছে-ভাতে বাঙালি বলে কথা৷ হ্যাঁ, বাঙালির সেই রসনা মেটাতেই রুই, কাতলা, ইলিশসহ বাংলাদেশের প্রায় সব মাছই আজকাল পাওয়া যায় জার্মানিতে৷ সে গল্পই থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/N. Sattar
বাংলাদেশি মাছের বাজার
বাঙালি যে দেশেই বসবাস করুক না কেন, তাদের মাছ চাই৷ আর দেশীয় মাছ হলে তো কথাই নেই৷ জার্মানির বেশ কিছু শহরে তাই বাংলাদেশি পণ্যের দোকান রয়েছে, যেখানে মাছ ছাড়াও পাওয়া যায় অন্যান্য অনেকরকম খাবার৷
ছবি: DW/N. Sattar
বন শহরে বাংলাদেশি মাছের বাজার
এ দোকানে ইলিশ, রুই, কাতলা, চিংড়ি, পাবদা, কাজলি, পুটি, কেচকি, রূপচাঁদা ছাড়াও নানারকমের ছোট ও বড় মাছ পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/N. Sattar
বিশাল আকারের হিমায়িত রুই
কোলন শহরে রয়েছে বাংলাদেশি খাবারের দোকান৷ বড় বড় আস্ত রুই মাছগুলো এভাবেই বাংলাদেশ থেকে আসে৷ ক্রেতারা যে যেভাবে যতটুকু চান, তাঁকে সেভাবে দোকান থেকেই ইলেকট্রনিক ছুড়ি দিয়ে মাছ কেটে দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/N. Sattar
স্বাদ করে সাধের ইলিশ খাওয়া
সারা বছরই অনেক বাঙালি নানাভাবে ইলিশ খান৷ তবে ১লা বৈশাখে ইলিশ চাই-ই চাই৷ যে কারণে অনেকে আগে থেকেই যথেষ্ট পরিমাণে ইলিশ কিনে ফ্রিজে রেখে দেন তাঁরা, পাছে ফুরিয়ে যায়৷ ইলিশ ছাড়া কি বাঙালির ১লা বৈশাখ জমে!
ছবি: Eesha Kheny
সবচেয়ে বড় বাংলাদেশি মাছের দোকান ফ্রাংকফু্র্টে
জার্মানির বাণিজ্য নগরী ফ্রাংকফুর্ট৷ সেখানে সরাসরি বাংলাদেশ বা লন্ডন থেকে মাছা আনা হয়৷ আর কোলন, বন বা অন্যান্য শহরের ব্যবসায়ীরা মাসে এক বা দু’বার মাছসহ অন্যান্য বাংলাদেশি পণ্য আনতে ফ্রাংকফুর্টে যান৷ মাঝে মাঝে অবশ্য তাঁরা লন্ডন থেকেও এ সব পণ্য নিয়ে আসেন৷ জানালেন বনের বাংলা শপের মালিক রিপন সাহেব৷
ছবি: DW/N. Sattar
বাঙালির আবেগ
জার্মানিতে এমন বাঙালিও আছেন, যাঁরা নিজের দেশের ফ্রোজেন মাছ ছাড়া তৃপ্তি করে ভাতই খেতে পারেন না৷ জার্মানির স্বাস্থ্যকর তাজা মাছে তাঁদের পেট ভরলেও মন যে ভরে না!
ছবি: DW/N. Sattar
ছোট মাছ
ছোট মাছের চচ্চরি! আহারে কি দারুণ স্বাদ! তা হোক না ফ্রোজেন, তাতে কি?
ছবি: DW/N. Sattar
শুটকি মাছ
শুধু ফ্রোজেন মাছ নয়, জার্মানির বাজারে ভোজন রসিক বাঙালির প্রিয় শুটকি মাছও রয়েছে৷
ছবি: DW/N. Sattar
মাছের মূল্য
রুই মাছ প্রতি কেজি পাঁচ ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ’শ টাকা৷ আর এক কেজি ইলিশ মাছের দাম এক হাজার তিন’শো টাকা৷ অনেকেরই প্রিয় দেশি চিংড়ি মাছ৷ যার মূল্যও ইলিশের মতোই৷ বাংলাদেশি ৮০০ টাকা প্রতি কেজি পাবদা মাছের দাম৷