বাঙ্কসির মতো আঁকিয়ে, হিপ্পি ভাইব বা নাগরিক খামারের মতো নানা কিছু নিয়ে খ্যাতি জুটিয়েছে যুক্তরাজ্যের শহর ব্রিস্টল৷ তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে, শহরটির নিজস্ব মুদ্রা৷ ব্রিটিশ পাউন্ডের বদলে তারা ব্যবহার করছে ‘ব্রিস্টল পাউন্ড৷'
বিজ্ঞাপন
গোটা বিশ্বের বেশিরভাগ জনপদই এখন পরিবেশ সচেতন৷ সেই ধারাবাহিকতায় ব্রিস্টল শহরে স্থানীয় মুদ্রা চালু করেছে গ্রিন পার্টি৷ অর্গানিক শাকসবজি নির্ভর শহরটিতে মুদ্রাটির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ এক কফি বিক্রেতা বললেন, ‘‘আপনি যদি অর্থনীতির কথা বলেন, তবে কোথাও যদি অর্থ রাখেন সেই অর্থ চারপাশ ঘুরে আসে৷''
শহরটির একটি খামারের প্রশিক্ষক সারাহ ফ্লিন্ট বলেন, ‘‘দিনে দিনে এর পরিসর বাড়ছে৷ মানুষও ভাবছে তাঁরা একটি মুদ্রা পেয়েছে, যা স্থানীয় পরিসরে ব্যবহার করতে পারে৷''
বিতণ্ডা থেকে অনুপ্রেরণা
পরিসর এখনো অনেক ছোটো৷ হাজার দুয়েক মানুষ মিলে ব্যবহার করছে এই মুদ্রা৷ ব্রিস্টল পাউন্ড তৈরির একজন কারিগর হলেন সিরিয়ান মান্ডি৷ তিনি বলেন, একটি সবুজ আচ্ছাদিত সমাজের স্বপ্ন পূরণে অবকাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হয়, কিছু বদল দরকার মানুষের আচরণেও৷
খাদ্য ও অন্য পণ্যের স্থানীয়করণ এবং বিশ্বজুড়ে পণ্য পরিবহনের বদলে এনার্জি সাশ্রয় এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷ এসব চিন্তা থেকেই ব্রিস্টল পাউন্ডের জন্ম, বললেন মান্ডি৷ ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় সুপারমার্কেট চেইন ‘টেসকো'-এর একটি শাখা খোলাকে কেন্দ্র করে স্টোকস ক্রফটের বাসিন্দাদের সঙ্গে বিতণ্ডা শুরু হয়৷ সেই বিতণ্ডার মধ্যেই এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মুদ্রাটি চালু করা হয়৷
চলমান প্রক্রিয়া
দোকানের সংখ্যার হিসেবে গ্লুচেস্টারকে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘ সড়ক বলা হয়৷ বেশিরভাগ দোকানি স্থানীয় মুদ্রা ‘ব্রিস্টল পাউন্ড' দিয়ে বিকিকিনির কাজটি সারেন৷ তবে সব বাসিন্দারা এই মুদ্রা ব্যবহারে এখনো অভ্যস্ত নন৷ শহরটিতে সদ্য আসা ক্যারলোটা জানালেন, ‘‘ভেবেছি বিষয়টি নিয়ে৷ কিন্তু নিত্যদিনের নানা ঝুট ঝামেলায় এখনও স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহারটা হয়ে উঠেনি৷''
তাঁর বন্ধু ফাতিমা জানালেন, মুদ্রাটি নিতে হলে আগে জানতে হবে কোথায় পাওয়া যায়? আবার অনেকে এই মুদ্রা সম্পর্কে বেশ সচেতন৷ লরা জানালেন, ‘‘যেভাবেই হোক আমি আমাদের নিজস্ব মুদ্রায় পণ্য কিনি৷''
শহরের অনেক দোকানি আর ব্যবসায়ীরা মুদ্রাটি ব্যবহার শুরু করেছে৷ পাশাপাশি ব্রিটিশ সিটি কাউন্সিলের কর্মীরাও যাতে এই মুদ্রা ব্যবহার শুরু করে তার পক্ষে জনমত বাড়ছে৷ ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল মেয়াদে তৎকালিন মেয়র জর্জ ফার্গুসন নিজের পারিশ্রমিকটা ব্রিটিশ পাউন্ডের পরিবর্তে ব্রিস্টল পাউন্ডে নিতেন৷
প্রতিষ্ঠাতারা বলছেন, ২০১৫ সালে মুদ্রাটির কারণে ‘ইউরোপীয় গ্রিন ক্যাপিটাল' খেতাব জিতেছে ব্রিস্টল৷ স্থানীয় মুদ্রা গবেষক কোকো কান্টার্স বলেন, ব্রিস্টল পাউন্ড ইউরোপের সবচেয়ে বড় এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্থানীয় মুদ্রা৷
যুক্তরাজ্যের লুইস ও টটনেস, যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেটার ও বাল্টিমোর এবং গ্রিসের কয়েকটি স্থানে স্থানীয় মুদ্রার প্রচলন রয়েছে৷
ইউরোপের সাইকেল-বান্ধব শহর
পরিবেশ-বান্ধব, স্বাস্থ্যকর আর সাশ্রয়ী- সব দিক দিয়েই বাহন হিসাবে এগিয়ে বাইসাইকেল৷ সেই চিন্তা মাথায় রেখে নিজেদের এলাকাকে সাইকেল-বান্ধব করেছে ইউরোপের বিভিন্ন শহর৷ সাইকেল-বান্ধব এমন কয়েকটি শহর সম্পর্কে জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
কোপেনহেগেন
ডেনমার্কের রাজধানী শহরে রয়েছে ৩৫০ কিলোমিটারের সাইকেল নেটওয়ার্ক৷ সাইকেলকে মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাও ৷ সিগন্যালে সাইকেল নিয়ে অপেক্ষার জন্য আছে সুন্দর ব্যবস্থা৷ কোপেনহেগেনে ৬২ শতাংশ মানুষ সাইকেল চড়ে কাজে যান৷ সাইকেল-বান্ধব নগর গড়ার উদাহরণ হিসাবে ‘কোপেনহেগেনাইজ’ শব্দটি তাই জায়গা করে নিয়েছে ইংরেজি অভিধানে৷
সাইকেল-বান্ধব শহরগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম৷ এখানকার সাইকেল-চালকেরা প্রতিদিন প্রায় দুই মিলিয়ন কিলোমিটার পথ চলেন৷ উটরেস্ট এলাকায় রয়েছে সবচেয়ে বড় সাইকেল পার্কিং, যেখানে সাড়ে ১২ হাজার সাইকেল রাখা যায়৷ ২০২০ সালের মধ্যে এটাকে ৩৩ হাজারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আন্টভের্প
বেলজিয়ামের আন্টভের্প শহরের সাইকেল পার্কিং অগণিত আর সেগুলোর অবকাঠামো অভিভূত করে সবাইকে৷ সাইকেলের পথ বাড়ানোর পাশাপাশি কেবল সাইকেল আর পথচারীদের জন্য তিনটি সেতু তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/P. Schickert
প্যারিস
কয়েক বছর ধরে সাইকেল নেটওয়ার্ক বাড়াচ্ছে প্যারিসের নগর কর্তৃপক্ষ৷ শহরের নানা জায়গায় রয়েছে বাইসাইকেল স্টেশন৷ পর্যটকেরাও সাইকেল নিয়ে ঘুরতে পারেন পুরো শহর৷ অন্যদিকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাইকেল ভাড়া নেওয়া সেখানে বেশ জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/S. Dee
মালমো
সাইকেলের জন্য অবকাঠামো বাড়াতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে সুইডেনের মালমো শহর৷ এখানে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সাইকেলের রাস্তা রয়েছে৷ মালমো আর কোপেনহেগেনের মধ্যে ফেরি পারাপার সেখানকার বাইসাইকেল পর্যটনকে বেশ জনপ্রিয়তা দিয়েছে৷ কোথাও কোথাও হোটেলের সামনেই মিলবে সাইকেল স্টেশন আর ওয়ার্কশপ৷
ছবি: Ohboy
ট্রন্ডহেইম
নরওয়ের শহর ট্রন্ডহেইম৷ পাহাড়ি এই নগরে চালু আছে ‘ট্রাম্পে’ নামে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাইসাইকেল উঠানামার ব্যবস্থা৷ প্রতি ঘন্টায় সেখানে ৩০০ সাইক্লিস্টকে ১৩০ মিটার উচ্চতায় আনা-নেওয়া করা হয়৷ পাহাড়ি পথেও সাইকেল নিয়ে চিন্তা নেই, এর চেয়ে স্বস্তির আর কি হতে পারে!
ছবি: public domain
ম্যুনস্টার
জার্মানির ওয়েস্টফালিয়ার ম্যুনস্টার এলাকায় মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি৷ সাইকেলের জন্য চওড়া রাস্তা, পর্যাপ্ত পার্কিং আর সমতল ভূমির কারণে সেখানে এই দ্বিচক্রযান এতো জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
বার্সেলোনা
২০০২ সালেও ভাড়ায় বাইসাইকেল পাওয়া যেত স্পেনের বার্সেলোনা শহরে৷ কেবল সাইকেলের জন্য রয়েছে ১৫৮ কিলোমিটার রাস্তা৷ অনেক জায়গায় গাড়ির গতি ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখায় সাইক্লিস্টদের জন্য এলাকাটি বেশ নিরাপদ৷ পর্যটকেরা যাতে বাইসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারেন, আছে সেই ব্যবস্থাও৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/G. Guarino
বাসেল
সুইজারল্যান্ডের বাসেল অনেকটা সমতল এবং দর্শনীয় স্থানগুলোও কাছাকাছি৷ গ্রীষ্মে ‘স্লো আপ’ নামে গাড়িমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয় সেটিকে৷ প্রচুর লোকের সমাগম হওয়ায় তখন ৩০ কিলোমিটার এলাকা নির্ধারিত রাখা হয় কেবল সাইক্লিস্টদের জন্য৷ একইসঙ্গে সাইক্লিস্টদের আনন্দ দিতে থাকে বহু আয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/M. Dr. Schulte-Kellinghaus