মিশিগানের এক পরিবেশ কর্মীসহ সাতজন এ বছরের পরিবেশ পুরস্কার পাচ্ছেন৷ তৃণমুল পর্যায়ে পরিবেশ নিয়ে কাজ করার জন্য এই সাত পরিবেশ কর্মী পেতে যাচ্ছেন গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কার৷
বিজ্ঞাপন
অন্যান্যদের চেয়ে মিশিগানের ফ্লিন্টের অধিবাসী লি অ্যানে ওয়াল্টারের ভূমিকা এক্ষেত্রে অনন্য৷ ২০১৫ সালে তিনি যখন রান্নাঘরে ট্যাপেরপানিবোতলে ভরছিলেন, তখন সেটার রং ছিল বাদামি, যা তার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি৷ তিনি বার বার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছিলেন না৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানান তিনি৷ অবশেষে ভার্জিনিয়ার একটি প্রযুক্তি গবেষক দল এবং স্থানীয় এক চিকিৎসক তাঁর ডাকে সাড়া দেন৷ তাঁরা ঐ পানি পরীক্ষা করে দেখতে পান যে পানিতে বিষাক্ত সীসা রয়েছে৷
এ বছরের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে সোমবার গোল্ডম্যান এনভার্নমেন্টাল ফাউন্ডেশন জানায়, ‘‘ওয়াল্টার সেখানকার পানিতে কী সমস্যা হয়েছে, সেটা জানতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, সেটা কেবল তাঁর নিজের পরিবারের জন্য নয়৷ ফ্লিন্টের সব অধিবাসীদের জন্য লড়াই করে গেছেন তিনি৷''
১৯৮৯ সালে সান ফ্রান্সিস্কোর ফিল্যান্থ্রোপিস্টস রিচার্ড এবং রোডা গোল্ডম্যান এই পুরস্কার চালু করেন৷ বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠনের মনোনয়ন থেকে বিজয়ীদের বেছে নেয়া হয়৷ পুরস্কারের মূল্য ২ লাখ মার্কিন ডলার৷
পরিবেশ রক্ষায় নারী
পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছেন বিশ্বের অনেক নারী৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে কয়েকজন নেতৃস্থানীয় নারী পরিবেশবাদী সম্পর্কে জানুন এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
বাংলাদেশের পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ রক্ষায় অবদানের জন্য প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘‘গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ’’ পান৷ এছাড়া ২০০৯ সালে টাইম সাময়িকী তাঁকে ‘‘হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট’’ খেতাব দেয়৷ এরপর ২০১২ সালে ‘রামন ম্যাগসেসে’ পুরস্কারও পান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বন্দনা শিবা
দিল্লির এই পরিবেশকর্মী জিএম খাবারের বিরোধী৷ এমনকি বিশ্বের যেসব কোম্পানি জিএম খাবারের প্রচারণা চালায় তাদেরও বিপক্ষে বন্দনা শিবা - যিনি একজন পদার্থবিদ ও ‘নবদন্য’ নামে একটি এনজিও’র প্রধান৷ জীববৈচিত্র্য রক্ষা, অর্গানিক খাবার এবং কৃষক অধিকার নিয়ে কাজ করে বেসরকারি এই সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাবিবা সরাবি
আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশের গভর্নর হাবিবা সরাবি যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটির প্রথম ন্যাশনাল পার্ক গড়ে তুলেছেন৷ ব্যান্ড-ই-আমির নামের এই পার্কে ছয়টি গভীর নীল হ্রদ রয়েছে৷ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে হ্রদগুলো রক্ষায় কাজ করেছেন তিনি৷
ছবি: STEPHEN JAFFE/AFP/Getty Images
ইভা মেন্ডেস
পশু রক্ষায় নগ্ন! পশুর লোম দিয়ে পোশাক তৈরি করে অনেক কোম্পানি৷ সেটা বন্ধ করতে পেটা নামের একটি সংস্থা প্রচারণা শুরু করে৷ কিন্তু সেটা জোরালো হয় যখন বিখ্যাত অভিনেত্রীরা নগ্ন হয়ে পোজ দেন৷ এর মাধ্যমে অভিনেত্রীরা বোঝাতে চেয়েছেন যে, পশুর লোমের পোশাকের চেয়ে বরং নগ্ন থাকাই ভাল৷ মার্কিন অভিনেত্রী ইভা মেন্ডেস তাঁদেরই একজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কারেন ক্রিস্টিয়ানা ফিগেরেস ওলসেন
জাতিসংঘের প্রধান জলবায়ু বিষয়ক কর্মকর্তা থাকাকালীন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে একটা বৈশ্বিক চুক্তির জন্য কাজ করেন তিনি৷ এছাড়া কোস্টারিকার এই নারী তাঁর মহাদেশ দক্ষিণ অ্যামেরিকার বিভিন্ন দেশের জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা বিষয়ক কর্মসূচি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটানি ট্রিলফোর্ড
নিউজিল্যান্ডের এই তরুণী গত বছর রিও+২০ সম্মেলনে পরিবেশ রক্ষা বিষয়ে উৎসাহমূলক বক্তব্য দেন৷ সেসময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭৷ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আজ এই মুহূর্তে আমি একজন শিশু – আপনাদের শিশু৷ আমরা সবাই জানি যে সময় চলে যাচ্ছে, দ্রুত চলে যাচ্ছে৷’’
ছবি: REUTERS
ওয়াঙ্গারি মাথাই
কেনিয়ার নোবেলজয়ী এই নারী ৩০ বছর ধরে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করেছেন৷ এ সময় আফ্রিকা মহাদেশের অসংখ্য নারীকে দিয়ে তিনি প্রায় ৩০ মিলিয়ন গাছ লাগিয়েছেন৷ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০১১ সালে মারা যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বারবারা উনম্যুসিশ
জার্মানির বারবারা উনম্যুসিশ একাধারে লেখক, রাজনীতিক ও পরিবেশকর্মী৷ পরিবেশ রক্ষায় তিনি ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমি, ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা গড়ে তুলেছেন৷ এই সংস্থা ‘সবুজ ইউরোপ’ গড়ে তোলার পক্ষে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
ওয়াল্টার এখন ভার্জিনিয়াতে থাকেন৷ কিন্তু ফ্লিন্টে প্রায়ই যান৷ ২০১৫ সালে তাঁর অভিযোগ সত্য প্রমাণ হওয়ার পর সেখানকার লাখো পানির পাইপ লাইন বদলে ফেলা হয়৷ তার আগে পরীক্ষা করা হয় পাইপের মাধ্যমে কোন সীসা পানির সঙ্গে মিশ্রিত হচ্ছে কিনা৷
ওয়াল্টার ছাড়া অন্যান্য বিজয়ীরা হলেন কলোম্বিয়ার ফ্রান্সিয়া মার্কুয়েজ৷ যিনি কোকা এলাকায় সোনার খনি বন্ধের দাবিতে এলাকার নারীদের উদ্বুদ্ধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিলেন৷ আছেন ফ্রান্সের ক্লেয়ার ন্যুভা, যিনি গভীর সমুদ্রে জাল দিয়ে মাছ ধরার বিরুদ্ধে সফল প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ বিজয়ী হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার লিজ ম্যাকডেইড এবং মাকোমা লেকালাকালা, যারা তাদের দেশ ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের বিষয়ে চুক্তি বন্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন৷ ফিলিপাইন্সের ম্যানি কালোনসো, যিনি সীসা পেইন্ট নিষিদ্ধ করার দাবিতে কাজ করছেন৷ আর একজন বিজয়ী হলেন, ভিয়েতনামের খান গুই থি, যিনি কয়লা জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছেন৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
বন্ধু, আপনিও কি পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে চান? কী করতে চান জানান আমাদের নীচের ঘরে৷
পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
পরিবেশ নিয়ে জার্মানরা বরাবরই সচেতন৷ তা জৈব খাবার হোক, জ্বালানি সাশ্রয় কিংবা আবর্জনা আলাদা বা পুনর্ব্যবহার করা – এ সব নিয়ে জার্মানদের ভাবনার শেষ নেই৷ তবে এরপরও অনেকেরই রয়েছে নানা ভুল ধারণা৷ তারই কিছু নমুনা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দেশীয় ফল ও সবজি
দেশীয় ফল ও সবজি খাওয়ার কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়৷ কিন্তু নিজের দেশের শাক-সবজি ও ফল তখনই ভালো, যদি সেসব ফ্রিজে রাখা না হয়৷ অর্থাৎ মৌসুমি ফল আর সবজি৷ ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয়, বিদেশ থেকে জাহাজে পণ্য পরিবহণ করতে তার চেয়ে অনেক কম নিঃসরণ হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
পানির অপচয় নয়
দাঁত ব্রাশের সময় ট্যাপের পানি ছেড়ে রাখা মানেই পানির অপচয়! তাই পানির খরচ কমাতে প্রায় সকলেই এ ব্যাপারে সচেতন জার্মানিতে৷ কিন্তু পানির বড় বড় পাইপগুলোতে জলবণ্টন বা পানির ফোর্স বাড়ানোর যে বাড়তি জল দেওয়া হয়, তা নিয়ে কেউ ভাবেন না৷ এতে যে জল অপচয় হয়, তা নিয়ে প্রশ্নও করেন না কেউ!
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Büttner
বিদ্যুৎ সাশ্রয়
জার্মানিতে অনেকেই এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার সময় লাইট অফ করে যান৷ ধারণা, এতে করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে৷ কিন্তু সেটা মোটেই ঠিক নয়৷ বরং কিছুক্ষণ পর আবারো নতুন করে লাইট ‘অন’ হতে যে জ্বালানি খরচ হয়, তা কিছুক্ষণ ‘অফ’ থাকার চেয়ে অনেক বেশি৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
ওয়াশিং মেশিনের শর্ট প্রোগ্রাম বিদ্যুৎ বাঁচায়?
মেশিনে কাপড় ধোয়ার সময় ‘শর্ট প্রোগাম’ বা দ্রুত কাচার ‘অপশন’-টি বেছে নিলে কম জ্বালানি খরচ হয় বলেই বিশ্বাস করেন কেউ কেউ৷ এটাও কিন্তু সঠিক নয়৷ কারণ অনেকক্ষণ ধরে মেশিন চললে এবং ধীরে ধীরে চললে জ্বালানি খরচ তো কম হয়ই, কাপড়ও ভালো পরিষ্কার হয়৷ হালের মেশিনগুলোতে অবশ্য পরিবেশবান্ধব ‘ইকো প্রোগ্রাম’ রয়েছে, যা জ্বালানি সাশ্রয় করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/gms AEG
হাত দিয়ে বাসন ধোয়া কি পরিবেশবান্ধব?
মোটেই না৷ কারণ ট্যাপের গরম পানি ছেড়ে রেখে একটি করে বাসন ধুলে, বিদ্যুৎ এবং পানি দু’টোরই বেশি খরচ হয়৷ অন্যদিকে মেশিনে ধোয়ার সময় বিদ্যুৎ ও পানি – দু’টোই কম খরচ হয়৷ তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি ডিশওয়াশারটি বাসন দিয়ে পুরো ভরে নিয়ে তারপর চালানো হয়৷ এতে কম খরচে একসঙ্গে অনেক বাসন ধোয়া হয়ে যায়!