1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ সংরক্ষণে ‘ইকো-ইসলাম'

ফ্রানৎসিস্কা বাডেনশিয়ার / এসবি১২ এপ্রিল ২০১৫

সুস্থ পরিবেশের জন্য শুধু প্রার্থনা করলে চলবে না, সক্রিয়ভাবে তার জন্য পদক্ষেপও নিতে হবে বলে মনে করেন বিশ্বের অন্যতম প্রধান ‘ইকো-থিয়লজিয়ান' ফজলুন খালিদ৷ তাঁর মতে, ধর্ম পৃথিবীকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে৷

Beim Gebet
ছবি: CC/I am Rudy

ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পরিবেশ সংরক্ষণ ও ধর্মের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ফজলুন খালিদ৷ হিন্দুদের কুম্ভ মেলা, মুসলিমদের হজে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়৷ অনেক ধর্ম বংশবৃদ্ধির পরামর্শ দেয়৷ এই প্রেক্ষাপটে কি ধর্মের সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণের সংঘাত অনিবার্য নয়? এই প্রশ্নের উত্তরে খালিদ মনে করিয়ে দেন, আধুনিক যুগ বা শিল্পবিপ্লবের অনেক আগে থেকেই ধর্মীয় ঐতিহ্য চলে আসছে৷ পূর্বপুরুষদের দেখানো পথে তীর্থযাত্রীদের সমাগমের কারণে পরিবেশ দূষণের কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণও পাওয়া যায়নি৷ অতীতে অবশ্য আজকের মতো পরিবহণ ও যোগাযোগের এমন বিস্তীর্ণ অবকাঠামো ছিল না৷ ফলে আজ এত মানুষের সমাগম হলে পরিবেশের উপর তার প্রভাব পড়বেই৷ তবে তীর্থযাত্রার উপর কিছু নিয়ন্ত্রণ নিয়েও আলোচনা চলছে৷ অন্যদিকে মনে রাখতে হবে, বিশ্বব্যাপী পর্যটনের মাত্রা তীর্থযাত্রার তুলনায় অনেক বেশি৷ তার পরিবেশের উপর পর্যটনের প্রভাবও সেই মাত্রায় বেশি৷

ইসলাম ধর্ম যাতে পৃথিবী বাঁচানোর কাজে লাগে, সেই উদ্দেশ্যে কাজ করছেন ফজলুন খালিদ৷ কিন্তু পবিত্র কোরান কি মুসলিমদের প্রকৃতি সুরক্ষার বিধান বা তাদের পরিবেশবাদী হয়ে ওঠার নির্দেশ দেয়? এই প্রশ্নের উত্তরে খালিদ বলেন, কোরান অবশ্যই কিছু মৌলিক নীতিমালা স্থির করে দিয়েছে৷ মহানবীর আচরণে তার বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ যেমন ষষ্ঠ সুরার ১৪১ নম্বর আয়াতে লেখা রয়েছে, ‘আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না'৷ এই আয়াত আরও গুরুত্ব পেয়েছিল, যখন মহানবী তাঁর এক সঙ্গীকে একটি কাজের জন্য ভর্ৎসনা করেছিলেন৷সেই সঙ্গী গোসলের পর অবশিষ্ট পানি ফেলে দিয়েছিলেন৷ মহানবী তাঁকে বলেছিলেন, উদ্বৃত্ত পানি নদীতে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে ভাটির দিকে অন্য মানুষের চাহিদা পূরণ করা যায়৷

ফজলুন খালিদছবি: Fazlun Khalid

১৯৯৪ সালে ফজলুন খালিদ ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফর ইকোলজি অ্যান্ড এনভায়রোনমেন্টাল সায়েন্সেস' নামের একটি প্রতিষ্ঠান পত্তন করেন৷ এর আগে তিনি ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন৷ চাকরি ছেড়ে এমন উদ্যোগ নেয়ার কারণ কী ছিল? এই প্রশ্নের জবাবে খালিদ এর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন৷ ১৯৩২ সালে শ্রীলঙ্কায় তাঁর জন্ম৷ ১৯৫৩ সালে তিনি ব্রিটেনে এসে বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন৷ এরপর তিনি শ্রমিক সংগঠনের কাজে জড়িয়ে পড়েন৷ এর পরেও বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেন তিনি৷ এভাবে তিনি রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠেন এবং মানুষের সেবার কাজে মনোনিবেশ করেন৷ তৃতীয় বিশ্বের নানা সমস্যা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেন৷ এমন এক সময়ে তাঁকে পরিবেশ সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়৷ বিভিন্ন ইসলামি বিশেষজ্ঞও সেই সব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি৷ তাই তিনি নিজে আবার কর্মজীবন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে জ্ঞানচর্চা শুরু করেন৷ তারপর ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফর ইকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস'-এর যাত্রা শুরু হয়৷

তানজানিয়ার জাঞ্জিবারে এই সংগঠন এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে৷ মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে সেখানকার জেলেদের উপার্জন কমে গিয়েছিল৷ তখন তারা প্রবাল প্রাচীরে ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখান থেকে মাছ ধরতে চেয়েছিল৷ কোরান সংক্রান্ত মাত্র দুই দিনের এক ওয়ার্কশপে অংশ নেবার পর তারা মত বদলায়৷ ধর্মপ্রাণ জেলেরা সৃষ্টিকর্তার আইন অবজ্ঞা করতে চায়নি৷ অথচ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি চার বছরেও তাদের মতবদল করাতে পারেনি৷

ছবি: CC/Anjadora

ফজলুন খালিদ মনে করেন, সব ধর্মের ক্ষেত্রেই এই মনোভাব দেখা যায়৷ মাথার উপর ছাদ ভেঙে পড়লে কে ক্যাথলিক, কে হিন্দু অথবা কে মুসলিম – তাতে কিছুই এসে যায় না৷ সবাই একই পৃথিবীতে বসবাস করে, তাই সংলাপের মাধ্যমে সবাইকেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে৷ সব ধর্মই পৃথিবীর সুরক্ষার বিধান দেয়৷

৮০ বছর বয়সেও ফজলুন খালিদ ‘ইকো-ইসলাম' আরও জনপ্রিয় করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন৷ এই প্রাণশক্তির রহস্য কী? খালিদ মনে করেন, ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়ার সময় মাটিতে মাথা ঠেকাতে হয়৷ সেই মাটির সুরক্ষার তাগিদ থাকাই স্বাভাবিক৷ নাতিনাতনিদের জন্যও সুন্দর এক পৃথিবী রেখে যেতে চান তিনি৷ পবিত্র কোরানের চল্লিশতম সুরার ৫৭ নম্বর আয়াতে লেখা রয়েছে, ‘সৃষ্টির সবকিছু তোমার চেয়ে বড়'৷ আমাদের বুঝতে হবে যে, আজকের আধুনিক সমাজে কেউই বিচ্ছিন্ন নয়৷ চীনে কেউ বৃক্ষরোপণ করলে ইউরোপেও তার সুফল পাওয়া যায়৷ ইংল্যান্ডে গাছ কাটলে জার্মানিতে তার কুফল দেখা যায়৷ ফজলুন খালিদের ঝুলিতে পরিবেশ বাঁচানোর সপক্ষে এমন অসংখ্য যুক্তি রয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ