পেটের দায়ে গাছ কেটে জঙ্গল সাফ করলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, তা পূরণ করা মোটেই সহজ নয়৷ থাইল্যান্ডে এক প্রকল্পের মাধ্যমে এমন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা চলছে৷ সেই কাজে সাহায্য করছেন এক ইমাম৷
বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিমে ক্রাবি উপকূলে ম্যানগ্রোভ বন আবার ফুলেফেঁপে উঠছে৷ মাছ, কাঁকড়া ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীব শক্ত শিকড়ের আশেপাশেই বসবাস করে৷ সেখানকার মাকাক বানরগুলিও জঙ্গলে বেশ বহাল তবিয়েতে আছে বলে মনে হয়৷
কয়েক কিলোমিটার দূরেই কো ক্লাং নামের ছোট্ট দ্বীপ৷ সেখানে কিন্তু সবুজের সমারোহের কোনো চিহ্ন নেই৷ ধ্বংসলীলার ফলে প্রাণের চিহ্ন প্রায় লোপ পেয়ে গেছে৷ পুকুর খুঁড়তে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল সাফ করা হয়েছে৷ কয়েক দশক আগেই দ্বীপের অনেক অংশে চিংড়ি চাষের জন্য এমন পুকুর খোঁড়া হয়েছিল৷ সে সময়ে এই ব্যবসা বেশ লাভজনক ছিল৷
আজ থাইল্যান্ডের চিংড়ি চাষের ব্যবসা মূল ভূখণ্ডে বড় বড় ফার্মের হাতে চলে গেছে৷ দ্বীপের অনেক পুকুর তাই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে৷ ঠিক সে কারণেই পরিবেশকর্মী জারুওয়ান এনরাইট বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন৷ দ্বীপবাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি একের পর এক পুকুরকে আবার ম্যানগ্রোভ অরণ্যে রূপান্তরিত করছেন৷ এর জন্য মাটি অতি শুকনা বা অতি ভিজে থাকলে চলবে না৷ এ কাজে প্রায়ই বাইরের সাহায্য লাগে৷ জারুওয়ান বলেন, ‘‘কিছু এলাকায় জল জমে আছে৷ তাই আমরা জল বার করার চেষ্টা করি৷ এমনকি ভাটার সময়েও জল জমা হতে দেই না৷ কারণ খুব ভিজে অবস্থায় ম্যানগ্রোভ বাড়তে পারে না৷''
একেই বলে বোধহয় ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত’ করা
05:47
‘ম্যানগ্রোভ অ্যাকশন প্রজেক্ট' নামের এক এনজিও-র হয়ে জারুওয়ান এনরাইট, ৪ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন৷ পুকুর বুজিয়ে ম্যানগ্রোভ এলাকা গড়ে তোলাই তাঁর লক্ষ্য৷ অনেক জমি মালিকের কাছেই এমন প্রচেষ্টা অদ্ভুত৷ তাই তারা বিলম্ব করছেন৷ জারুয়ান বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে তিনি মৎসপালন করছেন৷ তাই অপেক্ষা করে দেখবেন, এতে তাঁর ভালো হয় কিনা৷ তারপর হয়ত সিদ্ধান্ত বিবেচনা করবেন৷''
এই উদ্যোগের সার্থকতা বোঝাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে৷ চাই অনেক ধৈর্য্য৷ কাজ মাঝে মাঝে বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে৷ সে কারণেই হাতেনাতে সাফল্য পাওয়া জরুরি৷ দ্বীপের সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের ইমাম সানে ক্লংরুয়া বহু বছর ধরে কাঁকড়া ধরে আসছেন৷
বছর দুয়েক আগেই তিনি তাঁর পুকুরটি জারুওয়ান এনরাইট-এর প্রকল্পের কাজে উৎসর্গ করেছেন৷ তাঁর পছন্দের কাঁকড়া ম্যানগ্রোভ এলাকায়ই বেশি দেখা যায়৷ সুস্বাদু খাবার হিসেবে সেগুলি ভালোই বিক্রিও হয়৷ সানে ক্লংরুয়া বলেন, ‘‘আমি বেশি কাঁকড়া ধরি না, কারণ তাদের বাঁচিয়ে রাখতে চাই৷ মাঝে মাঝে চা-কফি কেনার জন্য টাকার দরকার হলে ধরি৷ তবে দরকার ছাড়া এ কাজ করি না৷''
যে ফুল কথা বলে
প্রতিটি গাছপালারই সাধারণত একটি ল্যাটিন নাম থাকে, যদিও সেসব গাছ বা ফুলকে ভিন্ন ভিন্ন দেশে আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয়৷ কিছু ফুলের ক্ষেত্রে জার্মানদের দেয়া মজার সব নামগুলো জেনে নিন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/S. Derder
‘ম্যানারট্রয়’ বা বিশ্বস্ত পুরুষ
এই ছোট ছোট মিষ্টি নীল রঙের ফুল ফোটে শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে, জুন থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত৷ অর্থাৎ খুবই অল্প সময়ের জন্য ফুলপ্রেমীদের আনন্দ দেয় এই ফুল৷ আর সেই রসবোধ থেকেই হয়ত জার্মানিতে ফুলটির ল্যাটিন নাম ‘লোবেলিয়া’-কে পাল্টে রাখা হয়েছে ‘ম্যানারট্রয়’ বা বিশ্বস্ত পুরুষ৷
ছবি: picture-alliance/ CHROMORANGE/H. Schunk
‘ফেরগিসমাইননিষ্ট’ বা আমায় ভুলে যেও না
এই ফুলের গ্রিক নাম দিয়েছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা৷ নামটি বেশ মজার – ‘মিয়োসোটিস’, যার বাংলা অর্থ ইঁদুরের কান৷ তবে জার্মানিতে এই ফুলটির নাম ‘আমায় ভুলে যেওনা’৷ এই নামকরণের পর থেকেই ফুলগাছটিকে ভালোবাসার সম্পর্কে বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়ে আসছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pilick
‘ফ্লাইসিগেস লিশেন’ বা পরিশ্রমী লিশেন
এই ফুলটির উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের দেয়া ল্যাটিন নাম ‘ইমপেশেন্স’ বা অধৈর্য৷ ফুলটি ফোটে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত৷ শুধু তাই নয়, কোনো রকম বিরতি ছাড়াই এক নাগাড়ে এ সময় নতুন নতুন ফুল ফুটতে থাকে৷ আর সে কারণেই হয়ত জার্মানরা এই ফুলকে ‘ফ্লাইসিগেস লিশেন’ বা পরিশ্রমী লিশেন বলে ডাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Galuschka
‘স্টিফম্যুটারশেন’ বা সৎ মা
ছবিতে সৎ মা ফুলের পাপড়িগুলো দেখুন৷ নীচের ছোট ফুল বা পাপড়িগুলোকে (সৎ মেয়ে) বড় ফুলগুলো (সৎ মা) কেমন আড়াল করে ঢেকে রেখেছে৷ এ কারণেই হয়ত ‘স্টিফম্যুটারশেন’ বা সৎ মা বা সৎ মামনি নাম রাখা হয়েছে৷ এ সব নানা রঙের সুন্দর ফুলগুলোর কিন্তু খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Ralf Hirschberger/
‘টয়ফেল্সক্রালে’ বা শয়তানের নখ
গাছটির দিকে তাকিয়ে দেখুন, যেন মনে হবে ওটাতে হাত দিলেই ধারালো নখগুলো আপনাকে আচড় দেবে৷ দেখে এরকমটা মনে হলেও, বাতের ব্যথা বা হজমে সাহায্য করার মতো বিস্ময়কর অনেক গুণ রয়েছে এই গাছের৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE/HPH
‘রোটার ফিঙারহুট’ বা লাল ফিঙারহ্যাট
বাঁদিকের ফুলগুলো দেখুন, কী সুন্দর! ঠিক যেন লম্বা চিকন টুপির মতো৷ মনে হয় আঙুলে পরা যাবে, তাই না? এই ভাবনা থেকেই হয়ত ‘রোটার ফিঙারহুট’ বা আঙুলের টুপি নাম পেয়েছে ফুল গাছটা৷ তবে এই সুন্দর চেহারার আকর্ষণীয় ফুলগুলো অত্যন্ত বিষাক্ত বলে একে ছোঁয়া বা মুখে দেওয়া কিন্তু একেবারেই নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/S. Derder
6 ছবি1 | 6
পুনর্বনানিকরণের উদ্যোগ শুরু হবার পর আবার নতুন করে কিছু গাছ গজাচ্ছে৷ ঘন ম্যানগ্রোভ জঙ্গল সৃষ্টি হতে অনেক বছর লেগে যাবে৷ কিন্তু সূচনা তো হয়েছে! জারুওয়ান এনরাইট প্রায়ই পরিদর্শন করতে আসেন৷ কিন্তু এবার যা দেখলেন, তা তাঁর মোটেই ভালো লাগলো না৷ তাঁর মনে হয় ছাগল চারাগাছের গোড়া খেয়ে ফেলছে৷
কিছুক্ষণ পরেই তিনি ছাগলদের হাতেনাতে ধরে ফেললেন৷ বেড়ার একটা জায়গায় গর্ত করে তাদের প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কো ক্লা-এ পরিবেশ সংরক্ষণ তাই সহজ কাজ নয়৷ ইমাম নিজে কাঁটাতারের বেড়া ও সিমেন্ট পাঠিয়ে দেন৷ চারাগাছ বাঁচাতে বেড়া মেরামত করে ভবিষ্যতে ছাগল ঢোকা বন্ধ করার চেষ্টা চলছে৷
কারণ একমাত্র এভাবেই ম্যানগ্রোভ বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে৷ জারুওয়ান এনরাইট এই পুকুরকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরতে চান৷ বাকি দ্বীপবাসী ইমামের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একই পথে চলেন – এমনটাই তাঁর ইচ্ছা৷
বর্ষায় আরো সুন্দরী সুন্দরবন
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ বা শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ এই বনের প্রধান গাছটির নাম সুন্দরী৷ আর তার থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ৷ ঋতুতে ঋতুতে এ বনের চরিত্র বদলায়৷ তবে সুন্দরবন সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বর্ষাকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দিলাম মেপে’
বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সুন্দরবনে বর্ষা আসে মে মাসে আর সেই বর্ষাকাল চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ অবশ্য জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত এখানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়৷ সুন্দরবন অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬৪০-২০০০ মিমি৷ তবে বনের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
দিনে দু’বার জোয়ার-ভাটা
প্রতিদিন দু’বার করে জোয়ার-ভাটা হয় সুন্দরবনে, যা কিনা বাংলাদেশ ও ভারত – প্রতিবেশী এই দুই দেশের বিশাল উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত৷ এখানে সবচেয়ে বড় জোয়ার হয় পূর্ণিমা ও অমাবস্যায়৷ তবে বর্ষাকালে জোয়ারের উচ্চতা থাকে সবচেয়ে বেশি৷ এ সময় বনের বেশিরভাগ অংশই প্লাবিত হয়, ডুবে যায় সবকিছু৷
ছবি: DW/M. Mamun
খাবারের সন্ধানে হরিণসাবক
জোয়ারের পানিতে সুন্দরবন প্লাবিত হলে হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গাগুলোয় আশ্রয় নেয়৷ এরপর জোয়ারের পানি নেমে গেলে খাবারের সন্ধানে নেমে পড়ে তারা৷ আর ঠিক সেই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন বহু পর্যটক – বন্যপ্রাণী দেখবেন বলে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষার জন্য বিশেষ ‘প্যাকেজ’
বর্ষায় সুন্দরবনে পর্যটকের আনাগোনা বেশ কম৷ এ বনে পর্যটনের মৌসুম মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ৷ তবে বর্ষার সুন্দরবনকে দেখতে কিছু কিছু ভ্রমণপিয়াসী মানুষ এখানে আসেন বটে৷ আর সেই সব পর্যটকদের চাহিদার কারণেই সম্প্রতি দু-একটি বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা বর্ষাকালে সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা করছে, দিচ্ছে বিশেষ ‘প্যাকেজ’৷
ছবি: DW/M. Mamun
তারপরেও পরিত্যক্ত বহু এলাকা
বর্ষা মৌসুমে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের একটি পর্যটক ট্রেল৷ এ সময়ে পর্যটকের যাতায়াত না থাকায় এই হাঁটা পথের ওপরে জমা হয়েছে বিভিন্ন গাছের ফল৷ আসলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য হলেও, বেশ কিছু ফল গাছও আছে সুন্দরবনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরী বন সুন্দরবন
জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ভেসে আসে এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী গাছের ফল৷ ভেসে যায় আশেপাশের কোনো এলাকায়৷ তবে সুন্দরী গাছের বন সুন্দরবনে এমন একটা দৃশ্যের দেখা পাওয়া যায় কেবলমাত্র বর্ষাকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
জঙ্গলের বিস্তার, সুন্দরেরও
জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা সুন্দরী ফলের অংশ বিশেষ ভাটার সময় জঙ্গলে থেকে যায়৷ তারপর সেখান থেকেই অঙ্কুর গজায়, গাছ হয়, ফুল ফোটে, ফল দরে৷ এভাবেই বিস্তার ঘটে সুন্দরী গাছ এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনের৷ প্রকৃতির এ নিয়মেই বেড়ে উঠেছে সুন্দরবনের বেশিরভাগ বনাঞ্চল৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরবনের বানর
সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা বানর৷ ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় এই বনে বেড়াতে গেলে তাই এদের চোখে পড়বেই৷ কখনও একা একা, আবার কখনও দঙ্গল বেধে ঘুরে বেড়ায় এরা৷ তবে বৃষ্টির সময় এদের গাছের ডালেই আশ্রয় নিতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
চলে লুকোচুরির খেলা...
বর্ষাকালে সুন্দরবনে চলে রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি৷ ঝকঝকে রোদের মধ্যে হঠাৎ করেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যায় এখানে৷ গাড় হয়ে ওঠে নদীর জল, বনের সবুজে পড়ে ছায়া৷ কখনো কখনো মেঘের ভেতর থেকেই সূর্য উঁকি মারে, অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হয় বনজুড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘লাল-নীল-সবুজের মেলা বসেছে’
কখনও আবার তুমুল বৃষ্টিপাতের মধ্যে হঠাৎ করেই ঝকঝকে নীলাকাশ দেখা যায় সুন্দরবনে৷ বৃষ্টিধৌত বনে সূর্যের আলো তখন ভিন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করে৷ ঝলমল করে ওঠে নদী, বনের গাছ৷ বৃষ্টি একটু ধরলে আস্তে আস্তে নদীর ধারে চড়তে আসে বানর, হরিণ, এমনকি বাঘ মামাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষার এক ভিন্ন চিত্র
সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া বন্যপ্রাণী অভয়রাণ্যে বৃষ্টিস্নাত এক ‘গ্রেটার ইয়োলোনেইপ’ বা বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা৷ নানা রকম পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এই সুন্দরবন৷ প্রায় ৪০০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি রয়েছে সুন্দরী গাছের এ বনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরবনের সুন্দরী হাঁস
সুন্দরবনের কটকা বনাঞ্চলের বড় কটকার খালে চোখে পড়ে ‘মাস্কড ফিনফুট’ বা সুন্দরী হাঁস৷ এর আরেক নাম কালোমুখ প্যারা পাখি৷ বাংলাদেশের সুন্দরবন ও মিয়ানমারে এ হাঁসের বিচরণ সবচেয়ে বেশি৷ সারা পৃথিবীতে বর্তমানে এ পাখির সংখ্যা এক হাজারেরও কম৷ লাজুক স্বভাবের সুন্দরী হাঁসের বৃহত্তম আবাসস্থলও সুন্দরবন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জেলেদের জীবন
সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী জয়মনি জেলে পল্লীর পাশে পশুর নদীতে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করছেন জেলেরা৷ সুন্দরবনের পাশে গড়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ এ জেলে পল্লীর জেলেরা সুন্দরবন ও তার আশেপাশে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের পর...
সুন্দরবনের শেলা নদীতে চলছে তেলবাহী ট্যাংকার ও মালবাহী জাহাজ৷ গত ডিসেম্বরে প্রায় ৫৮ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে জাহাজ ডুবির পরও এ রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়নি৷ এছাড়া সাম্প্রতিক বাঘশুমারিতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণ হিসেবেও এই নৌ-রুটটিকে দায়ী করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
14 ছবি1 | 14
একদিন কো ক্লাং দ্বীপ উপকূলের মতে সবুজ হয়ে উঠবে – পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা এমন স্বপ্ন দেখেন৷ আজই সেখানে ঘন জঙ্গল দেখা যায়৷ অথচ কয়েক দশক আগে পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ গাছ কেটে অনেক এলাকা সাফ করে দিয়েছিল৷ এখন সেখানে আবার ম্যানগ্রোভ বন ফিরে এসেছে৷ ফলে অনেকের উপকার হচ্ছে৷ শখের মাছ শিকারি সুরাদেত নিমকাটিআইয়ং বলেন, ‘‘এখানে যখন কোনো বন ছিল না, মাছও উধাও হয়ে গিয়েছিল৷ এখন অনেক মাঝ আর কাঁকড়া পাওয়া যায়৷ তারা ফিরে এসেছে৷ আমরাও বেশি করে ধরছি৷ আগে যেখানে দিনে তিনটি মাছ ধরতাম, আজ সেখানে ১০ কিলো পাই৷ অনেক ভালো হয়েছে৷''
অক্ষত ম্যানগ্রোভ এলাকা রাজ্যের অনেক মানুষের কাছে রুজি-রোজগারের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে৷