1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ সচেতনতা, না কি ভাবের ঘরে চুরি

৫ নভেম্বর ২০২১

গ্লাসগোয় চলছে জলবায়ু সম্মেলন৷ নরেন্দ্র মোদী ২০৭০ সালের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন৷ কিন্তু ভারতের পরিবেশবিদরা বলছেন, এ সবই কথার কথা৷

গ্লাসগো সম্মেলনে মোদীছবি: Jeff J Mitchell/Pool via REUTERS

দিনকয়েক আগে অধিকাংশ মূলস্রোতের ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন ছিল—‘আবার ইতিহাস রচনা করলেন মোদী’৷ কারণ, গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বনমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত হবে ভারত৷  সেই লক্ষ্যেই নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে শুরু করেছে সরকার৷ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাশিয়ার মতো দেশ ২০৬০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে৷ অ্যামেরিকা ২০৫০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে৷ সেখানে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ ২০৭০ সালের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করায় জলবায়ু সম্মেলনেও বেশ সাড়া পড়ে গেছে৷

আদৌ কি সম্ভব

ভারতের মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যম উচ্ছ্বসিত৷ খুশি রাজনৈতিক পরিসরের একাংশ৷ অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার মধ্যে মোদীর সাহস দেখতে পাচ্ছেন৷ কিন্তু পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, বাস্তবের সঙ্গে এই ঘোষণার কোনো সম্পর্ক নেই৷

প্রবীণ সাংবাদিক এবং পরিবেশ আন্দোলনকর্মী মিলন দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘মোদীর এই ঘোষণা অর্থহীন৷ ওই একই সম্মেলনে অরণ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ভারত তাতে সই করেনি৷ এতেই স্পষ্ট, পরিবেশ নিয়ে মোদী এবং সার্বিকভাবে ভারত সরকারের অবস্থান কী!’’ বস্তুত, গ্লাসগো সম্মেলনে অরণ্য রক্ষার একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, বিশ্বের ৮৫ শতাংশ দেশ, যেখানে জঙ্গল আছে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়েছে এবং চুক্তিপত্রে সই করেছে৷ ভারত সেই চুক্তিপত্রে সই করেনি৷ অথচ ভারতে বিপুল পরিমাণ জঙ্গল আছে৷

ওই চুক্তি অনুযায়ী, দেশের অরণ্যসম্পদ ধ্বংস করা যাবে না৷ বরং অরণ্য যাতে বাড়ানো যায়, তার চেষ্টা করতে হবে৷ অরণ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের যে আইন, তার সঙ্গে এই চুক্তি মেলে না৷ তথাকথিত নগরোন্নয়নের প্রয়োজনে ভারতে যথেচ্ছ অরণ্য ধ্বংস করা হয়েছে এবং হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক অতীতেও জঙ্গল ধ্বংসের উদাহরণ আছে৷ যা নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে বিস্তর৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকার বলে, উন্নয়নের স্বার্থে একাজ করতেই হয়৷ ফলে জঙ্গলরক্ষার যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জলবায়ু সম্মেলনে হয়েছে, ভারত তার অংশ নয়৷

গত পাঁচবছরে প্রায় প্রতিটি জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডক্টর দীপায়ন দে৷ এবছর করোনার কারণে তিনি ভিসা পাননি৷ ডয়চে ভেলেকে দীপায়ন জানিয়েছেন, নেতাদের কথায় পরিবেশের কোনো উন্নতি হয় না৷ বস্তুত, এবছর গ্রেটা থুনবার্গের এই মন্তব্যটি কার্যত ভাইরাল হয়ে গেছে৷ দীপায়নের বক্তব্য, ‘‘২০৭০ এর যে লক্ষ্যমাত্রার কথা মোদী বলেছেন, তা ভাবের ঘরে চুরি৷ মোদীও তখন থাকবেন না, এই নেতারাও তখন থাকবেন না৷ ফলে মনগড়া কিছু বলে দিলে কারও কিছু যায় আসে না৷ মোদী যদি সত্যিই পরিবেশের বিষয়ে সচেতন হতেন এবং বাস্তবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবতেন, তাহলে তিনি ২০৩০ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা আগেই স্থির হয়েছিল, সে বিষয়ে মন্তব্য করতেন৷ দূরের নয়, কাছের সময় ধরে ছোট ছোট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতেন৷’’ পরিবেশবিদদের অনেকেরই অভিযোগ, ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তই কার্যকর করা যায়নি৷ ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল তখন৷ বাস্তবে তার প্রায় কিছুই করা যায়নি৷

উন্নয়ন, না কি পরিবেশ

পরিবেশবিদেরা যতই অভিযোগ করুন, প্রশানের বক্তব্য, উন্নয়নের কাজ বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ শিল্পবিপ্লবের আমল থেকে উন্নত দেশগুলি যথেচ্ছ কার্বন ফুটপ্রিন্ট তৈরি করে শিল্প, কারখানা তৈরি করেছে৷ ভারত যখন সে রাস্তায় পা দিয়েছে, তখন পরিবেশ দেখালে মুশকিল৷ দুইয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করা দরকার৷ ভারত সে চেষ্টাই করছে৷ ইন্ডাস্ট্রি যেমন দরকার, তেমন তা পরিবেশের কথা মাথায় রেখে হচ্ছে কি না, তাও বোঝা দরকার৷ মোদী প্রশাসনের এক গুরুত্বপূ্র্ণ কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘সমালোচকরা সব বিষয় নিয়েই সমালোচনা করেন৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বোঝা দরকার৷ নতুন নতুন শিল্প গড়তেই হবে৷ তাতে কার্বন ফুটপ্রিন্টও তৈরি হবে৷ প্রয়োজন একটি ভারসাম্য তৈরি করা৷’’

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

এই ভারসাম্যের মাপকাঠি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘জলবায়ু সম্মেলন আসলে একটা প্রহসন৷ যারা সেখানে আলোচনা করেন, পরিবেশ নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই৷ ভোটের স্বার্থে তারা নানা সিদ্ধান্তের কথা জানান৷ বাস্তবে তার কোনো প্রভাব পড়ে না৷’’ সুভাষের বক্তব্য, উন্নয়নের কথা যখন বলা হয়, তখন আসলে আদানি, আম্বানিদের ভারতের কথা বলা হয়৷ পুঁজির কথা বলা হয়৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন টের পাওয়া যাচ্ছে৷ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মানুষ বেঁচেই থাকতে পারবে না৷ ফলে উন্নয়নের বুলি আউড়ে লাভ নেই৷

দীপায়নও এ বিষয়ে একমত৷ তার বক্তব্য, এখন উন্নয়নের কথাও ভাবতে হবে পরিবেশকে মাথায় রেখে৷ সাস্টেনেবল উন্নয়নের পরিকল্পনা না করলে বিপদ অনিবার্য৷ সমস্যা হলো, ভারতে বিকল্প শক্তির যে সমস্ত প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, সেগুলিও আসলে পরিবেশবান্ধব নয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ