গ্লাসগোয় চলছে জলবায়ু সম্মেলন৷ নরেন্দ্র মোদী ২০৭০ সালের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন৷ কিন্তু ভারতের পরিবেশবিদরা বলছেন, এ সবই কথার কথা৷
বিজ্ঞাপন
দিনকয়েক আগে অধিকাংশ মূলস্রোতের ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন ছিল—‘আবার ইতিহাস রচনা করলেন মোদী’৷ কারণ, গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বনমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত হবে ভারত৷ সেই লক্ষ্যেই নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে শুরু করেছে সরকার৷ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাশিয়ার মতো দেশ ২০৬০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে৷ অ্যামেরিকা ২০৫০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে৷ সেখানে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ ২০৭০ সালের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করায় জলবায়ু সম্মেলনেও বেশ সাড়া পড়ে গেছে৷
বিশ্বের অতি উষ্ণ ১০ দেশ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতিও পরিবর্তন হচ্ছে৷ শীতের দেশেও অনেক সময় নাভিশ্বাস উঠায় গরম৷ পৃথিবীর অতি গরমের ১০টি দেশের তালিকা করেছে ‘স্কাইমেট ওয়েদার’৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R.K. Singh
সুদান
আফ্রিকার দেশ সুদানে বছরজুড়েই গরম থাকে৷ এমনকি, বৃষ্টির মধ্যে সেখানে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে৷ মরুর দেশ সুদানে গড় তাপমাত্রা থাকে ৫২ ডিগ্রি৷ একেবারে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় গরমে বেশি নাভিশ্বাস উঠে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/U. Doering
ওমান
আরবের ধনী দেশ ওমান৷ অতি উষ্ণ দেশ হিসাবেও এটি আছে প্রথম সারিতে৷ বছরের পাঁচ থেকে ছয় মাস এখানে তাপমাত্রা ৫০-৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে৷ দেশটির বেশির ভাগ জায়গাই এয়ার-কন্ডিশনড৷
ছবি: MHC
ইরাক
যুদ্ধের বাইরে অন্য অনেক সমস্যা মোকাবেলা করে ইরাক৷ এর মধ্যে একটি বড় সমস্যা অধিক তাপমাত্রা৷ গরমের দিনে এখানকার তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি থেকে শুরু করে ৫৪ ডিগ্রিতে ছাড়িয়ে যায়৷ উত্তরের পর্বত এলাকায় বরফ পড়লেও পুরো দেশে তাপমাত্রা থাকে অসহনীয়৷
ছবি: Reuters/Rasheed
ভারত
বহু রকম আবহাওয়া প্রত্যক্ষ করা হয় ভারতে৷ দেশটির হিমালয় এলাকায় তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামে৷ আর রাজস্থানের মতো মরু এলাকায় তাপমাত্রা উঠে ৪৮ ডিগ্রি পর্যন্ত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R.K. Singh
মেক্সিকো
গ্রীষ্মে মধ্য অ্যামেরিকার দেশ মেক্সিকোতে গড় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে থাকে৷ এমন তাপমাত্রার মধ্যও মেক্সিকোর কয়েকটি সমুদ্র সৈকত পৃথিবী অন্যতম শীর্ষ পর্যটক গন্তব্য৷
১৩টি রাজ্য ও তিনটি প্রজাতান্ত্রিক এলাকা নিয়ে গঠিত পূর্ব-এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া৷ দেশটির তাপমাত্রায় নানাবিধ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ সারাবছর এখানে তাপমাত্রা থাকে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে৷ আর কোনো কোনো সময় এটা ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে৷
ছবি: Reuters/T. Sylvester
আলজেরিয়া
উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার আবহাওয়া বিচিত্র রকম৷ এখানে যেমন ভয়াবহ উষ্ণ দিন হয়, তেমনি সবচেয়ে ঠাণ্ডা রাত পাওয়া যায়৷ মৃদু বৃষ্টিপাতের দেশটিতে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে৷ শীতকালে আলজেরিয়ায় গড় তাপমাত্রা থাকে ২৫ ডিগ্রি৷ আর গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা থাকে অনেক শুষ্ক এবং আর্দ্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Messara
সৌদি আরব
বেশির ভাগ অঞ্চল মরুভূমি হওয়ায় সৌদি আরবের তাপমাত্রা বেশি৷ বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশটির তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে৷ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় তাপমাত্রা পরিবেশকে অসহনীয় করে তোলে৷ দিনের বেলা গরমের মাত্রা ৫২ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠা সেখানে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Timberlake
ইথিপিওয়া
পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণ দেশ ইথিপিওয়া৷ দেশটির ‘দানাকিল ডিপ্রেসন’ মরুভূমির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের একশ‘ মিটার নিচে অবস্থিত৷ এখানে হরহামেশা লু হাওয়া বয়ে যায় এবং ভূমিকম্প হয়৷ দিনের বেলা তাপমাত্রা ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছার রেকর্ডও আসে দেশটিতে৷
ছবি: Imago/photothek
লিবিয়া
লিবিয়ায় গরমের কারণে গ্রীষ্মে চামড়া পুড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হয়ে থাকে৷ লিবিয়ান মরুভূমির দখলের দেশটির বড় অংশ৷ এখানকার শুষ্ক আবহাওয়া তাপমাত্রা প্রায় ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠায়৷ ১৯২২ সালে রেকর্ড ৫৭ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠে লিবিয়ায়৷
ছবি: Reuters/H. Amara
10 ছবি1 | 10
আদৌ কি সম্ভব
ভারতের মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যম উচ্ছ্বসিত৷ খুশি রাজনৈতিক পরিসরের একাংশ৷ অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার মধ্যে মোদীর সাহস দেখতে পাচ্ছেন৷ কিন্তু পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, বাস্তবের সঙ্গে এই ঘোষণার কোনো সম্পর্ক নেই৷
প্রবীণ সাংবাদিক এবং পরিবেশ আন্দোলনকর্মী মিলন দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘মোদীর এই ঘোষণা অর্থহীন৷ ওই একই সম্মেলনে অরণ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ভারত তাতে সই করেনি৷ এতেই স্পষ্ট, পরিবেশ নিয়ে মোদী এবং সার্বিকভাবে ভারত সরকারের অবস্থান কী!’’ বস্তুত, গ্লাসগো সম্মেলনে অরণ্য রক্ষার একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, বিশ্বের ৮৫ শতাংশ দেশ, যেখানে জঙ্গল আছে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়েছে এবং চুক্তিপত্রে সই করেছে৷ ভারত সেই চুক্তিপত্রে সই করেনি৷ অথচ ভারতে বিপুল পরিমাণ জঙ্গল আছে৷
ওই চুক্তি অনুযায়ী, দেশের অরণ্যসম্পদ ধ্বংস করা যাবে না৷ বরং অরণ্য যাতে বাড়ানো যায়, তার চেষ্টা করতে হবে৷ অরণ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের যে আইন, তার সঙ্গে এই চুক্তি মেলে না৷ তথাকথিত নগরোন্নয়নের প্রয়োজনে ভারতে যথেচ্ছ অরণ্য ধ্বংস করা হয়েছে এবং হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক অতীতেও জঙ্গল ধ্বংসের উদাহরণ আছে৷ যা নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে বিস্তর৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকার বলে, উন্নয়নের স্বার্থে একাজ করতেই হয়৷ ফলে জঙ্গলরক্ষার যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জলবায়ু সম্মেলনে হয়েছে, ভারত তার অংশ নয়৷
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ২১.৮৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ৷ এই পরিকল্পনা জাতিসংঘে জমা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: J. David Ake/AP/picture alliance
বাংলাদেশের পরিকল্পনা
বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখার চেষ্টায় প্রতিটি দেশ তাদের পরিকল্পনা জাতিসংঘে জমা দিয়েছে৷ বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ২১.৮৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করছে৷ বাংলাদেশ জানিয়েছে, যদি নিঃসরণ কমানোর জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০৯.৪ মিলিয়ন টন গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করবে৷ তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে নিঃসরণ ৩১৯.৯৪ মিলিয়ন টনে নামানো যাবে৷
ছবি: Laurent Cipriani/AP Photo/picture alliance
খরচ
সরকারি সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এই পরিকল্পনা তৈরি করেছে৷ এটি বাস্তবায়নে ১৫ লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
কে মেটাবে খরচ?
পুরো খরচকে দুই ভাগে ভাগ করেছে বাংলাদেশ৷ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে নিঃসরণ ৬.৭৩ শতাংশ কমাবে৷ এতে খরচ হবে প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা৷ বাকি ১৫.১২ শতাংশ উন্নত দেশ বা আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া সাপেক্ষে কমানো হবে৷
ছবি: Robert Schmiegelt/Geisler-Fotopress/picture-alliance
নিঃসরণ কমাতে যা করবে
প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া গেলে ৪,১১৪ মেগাওয়াটের নবায়নযোগ্য জালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন, কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, নতুন কমবাইন্ড সাইকেল গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণ, বর্তমান গ্যাস টার্বাইন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের দক্ষতা বাড়ানো ও প্রিপেইড মিটার বসানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদ্যুৎ বিতরণ সংক্রান্ত ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নিতে চেয়েছে বাংলাদেশ৷
ছবি: Frank Boutrup Schmidt
বিদ্যুৎচালিত বাস
বড় শহরগুলোতে বিদ্যুৎচালিত বাস সেবা চালু করা হবে৷ এছাড়া যানজট কমানোর জন্য অর্থ ব্যয় করা হবে (জ্বালানি উপযোগিতা ১৫ শতাংশ বাড়বে), রাস্তা প্রশস্ত করা (২ থেকে ৪ লেন) এবং রাস্তার গুণগত মানোয়ন্নন, অযান্ত্রিক যানবাহন তৈরি এবং বাইসাইকেলের জন্য আলাদা লেন, ইলেক্ট্রনিক রোড প্রাইসিং অথবা কনজেশন চার্জিং, রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমানো এবং ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Blanches/Imaginechina
কৃষিখাতে উদ্যোগ
কৃষি খাতে ধান খেত থেকে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে শুষ্ক মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার এবং শস্য শুকানোর বিকল্প পন্থা ব্যবহার করা হবে৷ ২১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে উন্নত ধানের জাত ব্যবহার করা হবে৷
ছবি: AP
বনায়ন খাত
বনায়ন খাতে বন ধ্বংস ঠেকানো, বনায়ন উদ্যোগ, বন রক্ষণাবেক্ষণসহ আরও অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে৷
অন্যান্য
পৌরসভাগুলোতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য ৩৬ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে৷ এতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রক্রিয়া চালু করা হবে এবং পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থারও উন্নয়ন কর হবে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/P. Rashid
পরিমাপ
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি দুই বছর পরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু বাস্তবায়িত হলো তা পরিমাপ করা হবে৷
ছবি: J. David Ake/AP/picture alliance
9 ছবি1 | 9
গত পাঁচবছরে প্রায় প্রতিটি জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডক্টর দীপায়ন দে৷ এবছর করোনার কারণে তিনি ভিসা পাননি৷ ডয়চে ভেলেকে দীপায়ন জানিয়েছেন, নেতাদের কথায় পরিবেশের কোনো উন্নতি হয় না৷ বস্তুত, এবছর গ্রেটা থুনবার্গের এই মন্তব্যটি কার্যত ভাইরাল হয়ে গেছে৷ দীপায়নের বক্তব্য, ‘‘২০৭০ এর যে লক্ষ্যমাত্রার কথা মোদী বলেছেন, তা ভাবের ঘরে চুরি৷ মোদীও তখন থাকবেন না, এই নেতারাও তখন থাকবেন না৷ ফলে মনগড়া কিছু বলে দিলে কারও কিছু যায় আসে না৷ মোদী যদি সত্যিই পরিবেশের বিষয়ে সচেতন হতেন এবং বাস্তবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবতেন, তাহলে তিনি ২০৩০ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা আগেই স্থির হয়েছিল, সে বিষয়ে মন্তব্য করতেন৷ দূরের নয়, কাছের সময় ধরে ছোট ছোট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতেন৷’’ পরিবেশবিদদের অনেকেরই অভিযোগ, ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তই কার্যকর করা যায়নি৷ ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল তখন৷ বাস্তবে তার প্রায় কিছুই করা যায়নি৷
উন্নয়ন, না কি পরিবেশ
পরিবেশবিদেরা যতই অভিযোগ করুন, প্রশানের বক্তব্য, উন্নয়নের কাজ বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ শিল্পবিপ্লবের আমল থেকে উন্নত দেশগুলি যথেচ্ছ কার্বন ফুটপ্রিন্ট তৈরি করে শিল্প, কারখানা তৈরি করেছে৷ ভারত যখন সে রাস্তায় পা দিয়েছে, তখন পরিবেশ দেখালে মুশকিল৷ দুইয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করা দরকার৷ ভারত সে চেষ্টাই করছে৷ ইন্ডাস্ট্রি যেমন দরকার, তেমন তা পরিবেশের কথা মাথায় রেখে হচ্ছে কি না, তাও বোঝা দরকার৷ মোদী প্রশাসনের এক গুরুত্বপূ্র্ণ কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘সমালোচকরা সব বিষয় নিয়েই সমালোচনা করেন৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বোঝা দরকার৷ নতুন নতুন শিল্প গড়তেই হবে৷ তাতে কার্বন ফুটপ্রিন্টও তৈরি হবে৷ প্রয়োজন একটি ভারসাম্য তৈরি করা৷’’
এই ভারসাম্যের মাপকাঠি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘জলবায়ু সম্মেলন আসলে একটা প্রহসন৷ যারা সেখানে আলোচনা করেন, পরিবেশ নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই৷ ভোটের স্বার্থে তারা নানা সিদ্ধান্তের কথা জানান৷ বাস্তবে তার কোনো প্রভাব পড়ে না৷’’ সুভাষের বক্তব্য, উন্নয়নের কথা যখন বলা হয়, তখন আসলে আদানি, আম্বানিদের ভারতের কথা বলা হয়৷ পুঁজির কথা বলা হয়৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন টের পাওয়া যাচ্ছে৷ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মানুষ বেঁচেই থাকতে পারবে না৷ ফলে উন্নয়নের বুলি আউড়ে লাভ নেই৷
দীপায়নও এ বিষয়ে একমত৷ তার বক্তব্য, এখন উন্নয়নের কথাও ভাবতে হবে পরিবেশকে মাথায় রেখে৷ সাস্টেনেবল উন্নয়নের পরিকল্পনা না করলে বিপদ অনিবার্য৷ সমস্যা হলো, ভারতে বিকল্প শক্তির যে সমস্ত প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, সেগুলিও আসলে পরিবেশবান্ধব নয়৷