এক ধরনের পরিযায়ী রাজহাঁসকে বলা হয় ‘বার হেডেড গুজ’ বা দাগি রাজহাঁস৷ এই হাঁসগুলিকে ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও মধ্য এশিয়ার নানা দেশে দেখা যায়৷ এইগুলিকে রীতিমত দক্ষ অ্যাথলিট বলা যায়৷
বিজ্ঞাপন
শীতের সময় এই পাখিগুলি মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরিযায়ী হয়ে আসে৷ বসন্তকালে আবার মধ্য এশিয়ায় চলে যায়৷ সেখানকার পার্বত্যাঞ্চলে ও জলাশয়ে বিচরণ ও প্রজনন করে৷ এ জন্য তাদের ৭০০০ মিটার উঁচু হিমালয় অতিক্রম করতে হয়৷ আট ঘণ্টায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত হিমালয় পার হতে পারে তারা অনায়াসে৷
উঁচুতে ওঠা কোনো সমস্যাই নয়
এত উঁচুতে বাতাসও বেশ পাতলা৷ অর্ধেক অক্সিজেনে কাজ চালিয়ে নিতে হয় তাদের৷ এটা অবশ্য পাখিগুলির জন্য কোনো সমস্যাই নয়৷ এই পাখিগুলি কেমন করে এই পরিস্থিতি কাটাতে পারে, সেটা জানার চেষ্টা করছেন গবেষকরা৷ এ জন্য স্বচ্ছ একটি প্লাস্টিকের বাক্সে রানিং ব্যান্ডে দৌড়াতে দেন হাঁসগুলিকে৷ অক্সিজেনের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে দেন৷ অনেকটা হিমালয়ের আবহাওয়ার মতো৷ হাঁসগুলি তাদের গতি ১৫ মিনিট ধরে রাখতে পারে৷ ‘‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্বাতারোহীদের জন্যও এটা অসম্ভব৷'' বলেন পর্বতারোহী শ্টেফান নেশ্টলার৷ ৭২০০ মিটার উঁচু মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন তিনি৷ তাই উঁচুতে ওঠার সমস্যাটা ভালভাবে জানেন৷ মানুষের শরীর ধীরে ধীরে কম অক্সিজেনে অভ্যস্ত হয়৷ অনেক দিন বা সপ্তাহও লেগে যায়৷ পর্বাতারোহীদের মাঝে মাঝে ঘুমের জন্য বিরতি দিতে হয়৷ এছাড়া এক স্থান থেকে আরেক স্থান পর্যন্ত একটানা ৩০০ মিটারের বেশি ওপরে ওঠা উচিত নয়৷ ‘‘৭,০০০ মিটার উঁচুতে পাঁচ পা যাওয়ার পরই তো আমার হাঁপ ধরে যায়৷'' বলেন নেস্টলার৷
কৌশলটা কী?
প্রশ্ন জাগতে পারে, পরিযায়ী হাঁসগুলি কোন কৌশলে কোনো রকম অসুবিধা ছাড়াই এই পথ অতিক্রম করতে পারে?
হুমকির মুখে যেসব প্রাণী
হুমকির মুখে থাকা কিছু প্রজাতির প্রাণী লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে আফ্রিকার ওকাপিসহ আরো ২০০ পাখি রয়েছে৷ তবে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷
ছবি: Reuters
ওকাপি’র সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে
জিরাফের মতো দেখতে এই ওকাপি’র বাস কঙ্গোতে৷ আফ্রিকার ঐ অঞ্চলে কত প্রাণীর বাস তার হিসাব রাখে ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন)৷ সংস্থাটি সম্প্রতি হুমকির তালিকায় থাকা প্রাণীদের নাম প্রকাশ করেছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে থাকা এই ওকাপির সংখ্যা নব্বইয়ের দশকে ছিল ৪,৪০০৷ দশ বছর পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৫০০ তে৷ কঙ্গোর সহিংসতা এবং খনি ব্যবসাকে এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Raul654
বিলুপ্তির পথে
আইইউসিএন জানিয়েছে, ওকাপি এখন হুমকির মুখে৷ তাদের তৈরি তালিকার একেবারে তলানিতে আছে ওকাপির নাম৷ অর্থাৎ এরাই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে৷ এমন অনেক প্রাণী আছে, আজ থেকে ২০০ বছর আগেও যাদের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যেমন বালি টাইগার৷ বাঘের প্রায় সব প্রজাতিই আজ হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুইশ প্রজাতির পাখি হুমকির মুখে
নতুন রেড লিস্টে দুইশ প্রজাতির পাখিও রয়েছে৷ এদের মধ্যে অনেক শকুন আছে, যাদের বাস ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়৷ আইইউসিএন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, চীন ও মালয়েশিয়ার অনেক শকুন এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে৷ ইথিওপিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা অনেক শকুন এখন হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এশিয়ার হাতি দ্রুত কমছে
বিশ্বে এখনও এশিয়ান এলিফেন্টের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার৷ কিন্তু এরাও হুমকির মুখে রয়েছে৷ গত তিন প্রজন্ম ধরে এই প্রজাতির হাতির সংখ্যা কমছে৷ আইইউসিএন বলছে, তিন প্রজন্মে হাতির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতি দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/Horst Galuschka
পাচার ও দাঁত বিক্রির কারণে বিপদ
কেবল এশিয়া নয়, আফ্রিকার হাতিরাও হুমকির মুখে৷ বন উজাড় এবং দাঁতের জন্য শিকারীদের উৎপাতও হাতিদের সংখ্যা কমানোর জন্য দায়ী৷ সেইসাথে অবৈধভাবে শিকার এবং চুরি করে পাচার করাও দিন দিন বাড়ছে৷ হাতি পাচার রোধে এ মাসের ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর বতসোয়ানায় ‘আফ্রিকান এলিফেন্ট সম্মেলন’-এর আয়োজন করে আইইউসিএন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিলুপ্তির পথে মাছ
ডলফিনের মত দেখতে এই পরপয়েসদের সচরাচর দেখা যায় ক্যালিফোর্নিয়ায়৷ মাছ ধরার জালে আটকে প্রায়ই মারা যায় এরা৷ কখনো কখনো জেলেরা এদের ধরে নিয়ে যায়৷ ফলে হুমকির মুখে রয়েছে এই প্রজাতিটি৷ বিশ্বে এখন মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ পরপয়েস রয়েছে৷
ছবি: WDC
কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে আশার আলো
কিছু কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে অবশ্য উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন লেদারব্যাক কচ্ছপ৷ অথচ এক দশক আগে এই প্রজাতির কচ্ছপটি ছিল রেড লিস্টে, অর্থাৎ হুমকির মুখে৷ দুই মিটার লম্বা এবং আধা টন ওজনের এই কচ্ছপগুলো আকারে সবচেয়ে বড় হয়৷ এদের হুমকির মুখে পড়ার কারণ সাগরের দূষণ৷
ছবি: gemeinfrei
প্রাণী কল্যাণ সংস্থার অবস্থা
এছাড়া ব্ল্যাকব্রোও অ্যালবাট্রসের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ নতুন লাল তালিকায় এই প্রজাতির পাখির আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে৷ আইইউসিএন এর পরিচালক ইয়ান স্মার্ট জানান, অনেক প্রজাতির উন্নতি হলেও এখনও ২১,০০০ প্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেষবার দেখার সুযোগ: পান্ডা, গন্ডার, লিঙ্কস
হুমকির মুখে থাকা প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম জায়ান্ট পান্ডা৷ বিশ্বে এদের সংখ্যা মাত্র ১০০০ থেকে ২০০০৷ আর আছে সুমাত্রার গন্ডার, যাদের মোট সংখ্যা মাত্র ২২০৷ এছাড়া লাইবেরিয়ার লিঙ্কসও আছে এই তালিকায়৷ এদের সংখ্যা মাত্র ৮০ থেকে ১৫০টি৷ ১৯৬৩ সাল থেকে এই রেড লিস্ট প্রকাশ করে আসছে আইইউসিএন৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
পেশির কাজের জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন৷ এটি রক্তের লোহিতকণিকার মাধ্যমে বাহিত হয়৷ দেহের সেল বা কোষে অক্সিজেন থেকে শক্তি সৃষ্টি হয়৷ পরিযায়ী হাঁসগুলির সুবিধা হলো তাদের পেশিতে বহু রক্ত-ধমনী রয়েছে৷ এজন্য ভালভাবে রক্ত সরবরাহ হয়৷ মনে করেন গবেষকরা৷ এছাড়া তাদের রক্তের লোহিতকণিকা কিছুটা ভিন্ন ধরনের৷ এটা অক্সিজেন শক্ত করে ধরে রাখতে পারে৷ এই কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পেশিতে আসতে পারে৷
প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে
আর একটা কৌশল হলো: এই পাখিদের মাইটোকন্ড্রিয়া রক্তের ধমনী সংলগ্ন থাকে৷ তাই তারা দ্রুত অক্সিজেন গ্রহণ করে শক্তি হিসাবে ব্যবহার করতে পারে৷
এইভাবে শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে বলেই হাঁসগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে উঁচু পথ অতিক্রম করতে পারে৷ এই রকম হলে পর্বতারোহীদের হয়তো উঁচুতে উঠতে বাধ্যতামূলক বিশ্রাম নিতে হতো না৷