আগের অবস্থা আর নেই। পশ্চিমবঙ্গের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতি ম্যাচে এখন অবজার্ভার থাকেন।
ছবি: Manjunath Kiran/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
মতি নন্দীর একটি অসাধারণ উপন্যাস আছে ক্রিকেট নিয়ে, 'ননীদা নট আউট'। সেখানে জেতার জন্য ননীদার হরেক রকম স্ট্র্যাটেজি ছিল। তার একটা হলো ননিট্রিকস। তার মধ্যে আম্পায়ারকে ম্যানেজ করাও একটা ট্রিকস। যেমন মাঠে নেমেই ননীদা আম্পায়ারকে জিজ্ঞাসা করলেন ''বাতের ব্যথাটা কেমন আছে।'' আম্পায়ার জানালেন, বেশ বেগ দিচ্ছে। ননীদা বললেন, ''ভাববেন না, খেলার শেষে অব্যর্থ কবিরাজি মালিশের তেল পাঠিয়ে দেবো। আমার পিসির তো সেই তেল মালিশ করে বাত উধাও।'' সেখানেই শেষ নয়। একবার বল করতে এসে এলবিডাব্লিউর আবেদন করার মাঝপথে থেমে বললেন, ''না, না হয়নি।'' আর একবার বললেন, ''আম্পায়ার, আপনি আউট না দিয়ে ভালো করেছেন। আমার অ্যাপিল করাই উচিত হয়নি। শিওর না হয়ে আবেদন করা উচিত নয়।'' তারপর 'শিওর' হয়ে আবেদনের ফল, চারটে এলবি, দুটো রান আউট।
তবে এসব হলো ছোটখাট ট্রিকস। ক্লাব ক্রিকেটে কত যে ট্রিকস চলতো, গড়ের মাঠের সেই সব গল্প অনেকদিন ধরে ছিল হট টপিক। ম্যাচ ছাড়া, ম্যাচ ধরা ইত্যাদির গল্প। তবে এখন আর ওইসবের কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সিএবি-র সভাপতি হওয়ার পর যে নিয়ম চালু করেছেন, তারপর তো সেসবের কোনো প্রশ্নই নেই।
সৌরভ দায়িত্ব নেয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের ঘরোয়া ক্রিকেট ম্যাচে অবজার্ভার চালু করে দিয়েছেন। একজন সাবেক ক্রিকেটার অবজার্ভার থাকবেন। সিএবি-র গাড়িতে করে তিনি ম্যাচের আধঘণ্টা আগে পৌঁছে যাবেন। থাকবেন পুরো সময়। তার জন্য লাঞ্চ আসবে সিএবি থেকে। পুরো খেলা দেখে তিনি রিপোর্ট দেবেন। তার জন্য চার হাজার টাকা পাবেন। অবজার্ভারদের এই দাপটে আর কোনো ট্রিকস চলে না। ক্রিকেটারদেরও গোলমাল করা, আম্পায়ারদের সঙ্গে অসভ্যতা করা একেবারে বন্ধ। করলেই রিপোর্ট জম পড়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা। তা হলে রাজ্যের হয়ে খেলার সম্ভাবনা কমবে। আর ঘরোয়া ক্রিকেটেও তো এখন ভালো টাকা। কেই বা সেটা হারাতে চায়।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে পক্ষপাতিত্বের মহামারি
আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন যুগে যুগে সব দেশেই উঠেছে৷ এ থেকে যেসব দেশ ঘরোয়া ক্রিকেটকে বেশি মুক্ত করেছে, ক্রিকেটে তারা তত এগিয়েছে৷ ছবিঘরে ক্রিকেট পরাশক্তিদের অতীত এবং বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘কলুষিত’ বর্তমানের তুলনা...
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/S. Belcher
ডেনিস লিলির ভারত ‘বর্জন’ এবং পাকিস্তান থেকে ‘শিক্ষা’
এক সময় ভারতের বোলিং মানেই ছিল স্পিন, স্পিন আর স্পিন৷ সেই ভারতে পেস বোলার তৈরিতে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তী ডেনিস লিলির অ্যাকাডেমির ভূমিকার কথা কে না জানে! সেই লিলি কিন্তু একবারও ভারত সফরে আসেননি৷ পাকিস্তানে টেস্ট খেলেছেন মাত্র একবার৷ তার উপমহাদেশে খেলতে না আসার দুটো কারণ ছিল, এক, মরা উইকেট, দুই, অতিথি ফাস্টবোলারদের আরো ‘মেরে ফেলার’ উপযোগী আম্পায়ারিং!
ছবি: Colorsport/imago images
নিউজিল্যান্ডে মাইকেল হোল্ডিংয়ের লাথি
সাকিব আল হাসান ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘লাথিকাণ্ড’ ঘটিয়ে সদ্য আলোচনায় এলেও এমন ঘটনা টেস্ট ক্রিকেটে ঘটেছে ৪১ বছর আগে৷ ১৯৮০ সালে নিউজিল্যান্ডে আম্পায়াররা এত পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন যে উইন্ডিজ ফাস্ট বোলার মাইকেল হোল্ডিং শেষ পর্যন্ত মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি৷ ডানেডিন টেস্টে জন পার্কারকে আম্পায়ার জন হ্যাস্টি এলবিডাব্লিউ না দেয়ায় রেগেমেগে স্ট্রাইকিং এন্ডের স্টাম্প এক লাথিতে ছত্রখান করেছিলেন হোল্ডিং৷
ছবি: Mike Egerton/empics/picture alliance
অস্ট্রেলিয়ায় সুনিল গাভাস্কারের ‘ওয়াক আউট’
১৯৮১ সাল৷ মেলবোর্ন টেস্টে ডেনিস লিলির ইনকাটার গাভাস্কারের ব্যাট ছুঁয়ে লাগলো প্যাডে৷ ব্যাক ফুটে চলে যাওয়ায় গাভাস্কার তখন স্টাম্পের সামনেই দাঁড়িয়ে৷ তা দেখে আঙুল তুলে দিলেন রেক্স হোয়াইটহেড৷ গাভাস্কার সেদিন ওপেনিং পার্টনার চেতন চৌহানকে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য মাঠ ছেড়েছিলেন৷ সম্প্রতি গাভাস্কার অবশ্য জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ানরা তাকে ‘ভাগো’ না বললে সেদিন হয়ত আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে একাই মাঠ ছাড়তেন৷
ছবি: AP
দু’বার হিট উইকেট, তবু নট আউট!
১৯৮৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্রিসবেন টেস্টে জেফ লসনকে আম্পায়ার আরএ ফ্রেঞ্চ এবং এমডাব্লিউ জনসন অপরাজিত রাখার পণ করেছিলেন কিনা কে জানে! লেগ গ্ল্যান্স করতে গিয়ে লসন গোড়ালি লাগিয়ে স্টাম্প থেকে বেলস ফেলে দিলেন৷ পরের ওভারে মাইকেল হোল্ডিংয়ের ঝড়ো গতির বল সামলাতে গিয়ে আবার একই কাণ্ড৷ অথচ দুবারের একবারও নাকি আম্পায়াররা তা চোখেই দেখেননি৷ সেবার অবশ্য বেশি রাগেননি, স্টাম্পে লাথিও মারেননি হোল্ডিং!
ছবি: Getty Images
নিরপেক্ষ আম্পায়ার: ইমরান খানের ‘উপহার’
আজ যে সব আন্তর্জাতিক ম্যাচে ‘নিরপেক্ষ আম্পায়ার’-এর চল তার শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হাত ধরে, ১৯৮৬ সালে৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি টেস্ট পরিচালনার দায়িত্ব সেবার ভারতের ভিকে রামস্বামী আর পিলু রিপোর্টারকে দিয়েছিলেন ইমরান৷ ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ পরিচালনার দায়িত্বও ইংল্যান্ডের জন হ্যাম্পশায়ার আর জন হোল্ডারকে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক৷
ছবি: AP
তবুও মুরালিধরনের ‘চাকিং বিতর্ক’
১৯৯৯ সালে চার্লটন অ্যান্ড ইউনাইটেড ত্রিদেশীয় সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ার রস এমারসনের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যে ক্রিকেট ইতিহাসে বার বার আলোচনায় ফিরবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ টেস্ট ক্রিকেটে ৮০০ উইকেট পাওয়া একমাত্র বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরনের ওভারের চতুর্থ বলটা স্কয়ার লেগ থেকে এমারসন কেন যে বল ‘ছোঁড়ার’ অভিযোগে নো ডেকেছিলেন তা আজও অজানা৷ আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদেরও অবাক করেছিল৷
ছবি: AP
ইনজামামের প্রতিবাদ
২০০৬ সালে ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের ওই টেস্ট ম্যাচ আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণেই চিরস্মরণীয়৷ চতুর্থ দিন চা বিরতির আগে বল বিকৃত করার অভিযোগ তুলে আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার পাকিস্তানকে নতুন বল নিতে বলায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন ইনজি৷ দল নিয়ে পাকিস্তানের অধিনায়ক মাঠ ছাড়ায় ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করে দেন আম্পায়াররা৷ পরে আইসিসি অবশ্য ম্যাচটাকে ড্র ঘোষণা করে৷
ছবি: Picture-Alliance / Photoshot
এলবিডাব্লিউ না, এসবিডাব্লিউ!
১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া-ভারত অ্যাডিলেড টেস্ট৷ গ্লেন ম্যাকগ্রার শর্ট পিচ ডেলিভারি কী করে এত নীচু হলো, ‘ডাক’ করতে গিয়ে একেবারে বসে পড়া টেন্ডুলকারের কাঁধে লাগলো তা এতদিনেও বলা মুশকিল৷ আম্পায়ার ড্যারিল হার্পারের দেয়া সেই এলবিডাব্লিউ ইতিহাসে স্থান পেয়েছে ‘শোল্ডার বিফোর উইকেট’ নামে৷ টিভি রিপ্লে দেখে আজও অনেকেই বলেন, বল কখনোই স্টাম্পে লাগতো না৷
ছবি: AP
বেন স্টোকসকে আম্পায়ারের ‘উপহার’
২০১৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজের সেই ম্যাচটা সবাই বেন স্টোকসের হার না মানা ১৩৫ রানের ইনিংস আর সেই সুবাদে ৩৫৯ রান তাড়া করে ইংল্যান্ডের জিতে যাওয়ার জন্যই মনে রাখবে৷ অথচ জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের যখন দুই রান দরকার, ঠিক তখন নাথান লায়নের বলে ‘নিশ্চিত’ এলবিডাব্লি্উ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার৷ অস্ট্রেলীয়দের জোরালো আবেদন প্রত্যাখ্যান করে দেন আম্পায়ার জোয়েল উইলসন, ইংল্যান্ডও পেয়ে যায় ঐতিহাসিক জয়৷
ছবি: Getty Images/S. Forster
ইতিহাসের নিকৃষ্টতম আম্পায়ারিংয়ের সিরিজ
২০০৫-এর অ্যাশেজেও ছিল বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ছড়াছড়ি৷ ২০২০ সালে ক্রিকেট পাকিস্তান ডটকম-এর এক প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান ড্যামিয়েন মার্টিনের রিটুইট করা ভিডিও এমবেড করা হয়েছে৷ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সাইমন ক্যাটিচকে লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে এলবিডাব্লিউ দিচ্ছেন পাকিস্তানের আম্পায়ার আলিম দার৷ ড্যামিয়েন মার্টিনের মতে, সেই সিরিজ ইতিহাসের নিকৃষ্টতম আম্পায়ারিংয়ের জন্য কুখ্যাত৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
রোহিত শর্মাকে আম্পায়ারের ‘দান’
২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে রোহিত শর্মা ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন রুবেল হোসেনের বলে৷ ইমরুল কায়েস ধরেওছিলেন ক্যাচটা৷ কিন্তু আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ‘নো’ ডাকায় বেঁচে যান রোহিত৷ সিদ্ধান্তটা ধারাভাষ্যকার শেন ওয়ার্নের কাছেও অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল৷ ওয়ার্ন বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘এটা নো বল ছিল না, খুবই বাজে সিদ্ধান্ত৷’’
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
ইংলিশ আর অস্ট্রেলীয়দের এক করে দেয়া সিদ্ধান্ত
২০১৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজের ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাজাকে এমন এক কট বিহাইন্ড দেয়া হলো যে প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন সবাই৷ রিভিউয়েও ভুল সিদ্ধান্ত খারিজ না হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড বলেছিলেন, ‘‘এটি ক্রিকেটে আমার দেখা সবচেয়ে জঘন্য সিদ্ধান্ত৷’’ ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন আরো ক্ষেপে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘এমন আউট দিলে (প্যাভিলিয়নে) ফিরে আসা অন্যায়৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Griffith
বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে ৪ বলে ৯২ রান
২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে এক্সিওম ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ৪ বলে ৯২ রান দিয়ে খবরের শিরোনামে আসেন বোলার সুজন মাহমুদ৷ জয়ের জন্য এক্সিওমের দরকার ছিল ৮৯ রান৷ কিন্তু ওয়াইড আর নো বল দিয়ে দিয়ে মাত্র চার বলেই ৯২ রান দিয়ে দেন সুজন। লালমাটিয়া ক্লাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে সুজন এমন করেছেন।পরে সুজনকে ১০ বছরের জন্য এবং লালমাটিয়া ক্লাবকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি৷
ছবি: Sikander Ali
বল করার আগেই নো বল!
২০১৭ সালের আরেক ম্যাচে ১.১ ওভারে ৬৯ রান দিয়েছিলেন তাসনিম হাসান। তাকেও ১০ বছরের জন্য আর তার ক্লাব ফিয়ার ফাইটার্সকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। তাসনিমও নাকি পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদেই এমন বোলিং করেছিলেন৷ ক্লাবটির আরো দাবি ছিল, বোলার বল করার আগেই আম্পায়ার নো বল দিয়েছেন এমন ঘটনাও সেবার ঘটেছে৷ লালমাটিয়া এবং ফিয়ার ফাইটার্স ক্লাব দুটির ম্যাচের আম্পায়ারদের মাত্র ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/I. Hitchcock
বিসিবির ‘অন্ধ’ চোখ খুলবে কবে?
২০২০ সালে উইসডেনের এক পডকাস্টে নিল ডায়ার নামের একজন ইংল্যান্ডের কোনো এক স্থানীয় লিগে কাভারে ক্যাচ আউট হয়েও এক ব্যাটসম্যানের বেঁচে যাওয়ার গল্প শুনিয়েছিলেন৷ আম্পায়ারের নাকি মনে হয়েছিল বল প্যাডে লেগে কাভারে গিয়েছে৷ ইংল্যান্ডে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই চেষ্টাতেই প্রাণাতিপাত করে বোর্ড৷ অথচ সাকিবের সাকিবসুলভ লাথিকাণ্ডের পরে বিসিবি সভাপতি জানিয়ে দিলেন, ‘‘আম্পায়ারদের কোনো ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি৷’’
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/S. Belcher
15 ছবি1 | 15
এখন ভারতীয় বোর্ডের চাল-চরিত্র-চেহারা সব বদলেছে। একসময় বোর্ডে ছিল মুম্বই-লবির দাপট। সেখানকার প্লেয়াররা, কর্তারা ভারতীয় ক্রিকেট শাসন করতেন। দীর্ঘদিনের ক্রীড়া সাংবাদিক ও সম্পাদক মানস চক্রবর্তীর মতে, ''সেসময় চালু কথাই ছিল, আমচি মুম্বই, তুমচি মুম্বই। মানে আমিও মুম্বই, তুমিও মুম্বই। কিন্তু এখন আর সেসব নেই। আগে ক্রিকেট টিম হলে, খবর লেখা হতো, কোন ভালো প্লেয়ারকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন আর সেসব কপি লেখার কোনো সুযোগই থাকে না।''
ঠিকই জগমোহন ডালমিয়া, আইএস বিন্দ্রার মতো অনেকেই সেই মুম্বই-শাসন ভেঙেছেন। আর এখন তো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বোর্ড। সৌরভ এবং অমিত শাহ-পুত্র জয় শাহই বোর্ড চালাচ্ছেন। সেখানে দলবাজি, কোনো একটি অঞ্চলের প্লেয়ারদের টিমে ঢুকিয়ে দেয়া এসব হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন সমস্যা হলো, সমমানের এত প্লেয়ার প্রতিটি পজিশনে এসে গেছে যে, কাকে ছেড়ে কাকে রাখা হবে, সেটাই সমস্যা।
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলেছবি: privat
আর বোর্ড যেমন ক্রিকেটারদের ঢালাও সুবিধা ও অর্থ দেয়, তেমনি ক্রিকেট মাঠে তাদের অসভ্যতা বরদাস্ত করে না। আবেগের বশে একটু-আধটু ভুলচুকক হয়ে গেল, সেটা অন্য কথা, না হলে সাকিবের মতো ঘটনা ঘটলে কঠোরতম শাস্তি হবেই। ক্রিকেটাররাও পেশাদার। তারা জানেন, ভারতীয় টিমে কেউ অপরিহার্য নয়। ফলে খামোখা শাস্তির মুখে কে-ই বা পড়তে চাইবেন। অস্ট্রেলিয়ায় বিরাট কোহলি এবং প্রথম টিমের বেশ কিছু বোলার না থাকা সত্ত্বেও অসাধারণ জয় পেয়েছে ভারত। তার উপর খেলার জগতে ভারতীয় মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমের একটা প্রভাব আছে। তার উপরে রয়েছে আদালত। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি এখন অনেকটা ভালো।
তারপরেও কি আম্পায়ারের সিদ্ধন্ত নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয় না? হয়। এই অসমাপ্ত আইপিএলেও হয়েছে। রোহিত শর্মা একবার আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখিয়েছেন। গত মার্চে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সূর্যকুমার যাদবের আউট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কোহলি। তার দাবি, রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে বল মাটি ছুঁয়েছিল। কিন্তু আম্পায়ার ও থার্ড আম্পায়ার আউট দিয়েছিলেন। তবে ওইটুকই। কোনোভাবেই সীমার বাইরে যাওয়া নয়।
আবেগের ক্রিকেটে ওইটুকু হতে পারে। তার বেশি হলে তো কড়া শাস্তি। চরম পেশাদার ক্রিকেটাররা এটা জানেন। তাই তারা সীমা ছাড়ান না। এক আধটা ব্যতিক্রম থাকতে পারে। না হলে মেজাজকে সংযত রাখার শিক্ষাটাও ক্রিকেট এবং পরিস্থিতিই তাদের দিয়ে দেয়।