1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরীমনিদের বিরুদ্ধে হঠাৎ অভিযানের কারণ কী?

৭ আগস্ট ২০২১

সম্প্রতি বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মডেল, অভিনেত্রী, প্রযোজকসহ বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন৷ তাদের নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য ও অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞদের৷

পরীমনিসহ চারজনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদক আইনে দুইটি এবং পর্নগ্রাফি আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়৷ছবি: bdnews24.com

বাংলাদেশে বিনোদন জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের বাসায় সাম্প্রতিক সময়ে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধার, বাসায় পার্টি করাসহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তার মধ্যে গত জুনে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করা জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনিও রয়েছেন৷ গত কয়েকদিনের এসব অভিযান, পুলিশের সরবরাহ করা তথ্য ও বক্তব্য মূল ধারার গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷

হঠাৎ বিনোদন জগত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন তৎপরতার তিনটি কারণ দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল৷ সেগুলো হলো, ‘‘এক, যারা ক্ষমতাশালী মহল আছে, যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এরা এসব করে, তাদের কোন কোন পক্ষের মধ্যে বিরোধ হতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাবান কেউ হয়তো ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন, তিনি আবার প্রকাশ্যে আসতে চান না৷ তার মুখের অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান হতে পারে৷ আর তৃতীয়ত, অনেকেই যেটা মনে করেন, করোনাতে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে এটা করা হচ্ছে৷ বাস্তবিক অর্থেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষার চেতনা থেকে এই অভিযানগুলো করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে আমার প্রচণ্ড সন্দেহ আছে৷’’

‘এই অভিযানগুলো নিয়ে আমার প্রচন্ড সন্দেহ আছে’

This browser does not support the audio element.

এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাও করেছিল৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ সালে চালানো এসব অভিযানে ‘৪৬৬ জন বিচারবহির্ভূত’ হত্যার শিকার হয়েছিলেন৷ এ নিয়ে তখন দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার৷ প্রভাবশালী বা গডফাদার হিসেবে পরিচিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় মাদক দূর করতে সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে৷

বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার যেটা মনে হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যদি সত্যি সত্যি সদিচ্ছা থাকে মদ-মাদকমুক্ত একটা সমাজ তৈরি করবে তাহলে রাঘববোয়ালদের ধরা হচ্ছে না কেন? এখানে তো কোন নিম্নবিত্ত না, মধ্যবিত্তও যাওয়ার সুযোগ পায় না৷ কারা সেখানে যায়, যাদের অবৈধ অঢেল টাকা আছে৷ দুর্নীতি করে যারা টাকা কামিয়েছে বা এই ধরনের খারাপ কাজের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক আছে৷ যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে নামগুলো তো পাওয়া গেছে, কারা তাদের কাছে যায়৷ তাহলে তাদের কেন ধরে আনা হচ্ছে না?’’

গ্রেফতারের পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া বিশেষণ

মডেল, অভিনেত্রীদের গ্রেফতারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নামের আগে-পরে বিভিন্ন উপাধি বা বিশেষণ জুড়ে দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে৷ এমনকি দুইজন মডেলকে গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে ‘রাতের রানি’ হিসেবে উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বক্তব্য দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে ৷ আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী ও পুলিশের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের অনেকেই এর সমালোচনা করছেন৷  

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কাউকে গ্রেফতারের পর নামের আগে-পরে কোন পদবি বা উপাধি ব্যবহার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করতে পারে না৷ পাশাপাশি সম্প্রতি যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতে শেষ পর্যন্ত বিচারে তারাই সুবিধা পাবে৷ এই ধরনের মিডিয়া ট্রায়াল সব সময় আসামীদের পক্ষে যায়৷’’

ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামও মনে করেন কাউকে গ্রেফতারের পর এমন বিশেষণ দেয়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ারে পড়ে না৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা এটা করেছে তারা অর্বাচীনের মতো এটা বলেছে৷ তদন্তকালীন কারো নামের আগে পিছনে কোন বিশেষ কিছু জুড়ে দেয়ার এখতিয়ার পুলিশের নাই৷’’ তিনি দাবি করেন, যখন যার বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তখন তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেয়৷ প্রতিদিন ডিএমপিতে ন্যুনতম ৩০ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়৷ এখন যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তারা কোনো অপরাধ করেছেন কিনা তদন্তকারীরা সেটি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান তিনি৷

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সম্প্রতি যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের যে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করা হচ্ছে এটা একেবারেই অনৈতিক৷’’ তার মতে, ‘‘এই নারীদের গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যতটা উৎসাহ আমরা লক্ষ্য করছি, তার চেয়ে সামান্যতম উৎসাহও আমরা দেখছি না, এদের যারা এখানে এনেছে তাদের ধরার ব্যাপারে৷ বা এদের সঙ্গে যাদের মাদকের সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের আটকে কোন তৎপরতা আমরা দেখছি না৷ ফলে এই ধরনের অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে নানা ধরনের প্রশ্ন আছে৷ এই অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত নৈতিক অবস্থান ঠিক রেখে অভিযানগুলো পরিচালনা করা৷’’

শফিকুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

পৃষ্ঠপোষকদের নাম কখনই জানা যাবে না উল্লেখ করে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘তারা যদি কোন সুনির্দিষ্ট অপরাধ করে থাকে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগটা মিডিয়াকে জানাতে পারে৷ রাতের রানি হিসেবে অভিহিত করা এবং স্টেটমেন্ট আকারে বলা ওরা এই এই করেছে৷ অভিযোগ আকারে না, রায়ের মতো করে বলে দেওয়া হচ্ছে৷ এটা পুলিশ, পত্রিকা বা সামাজিক গণমাধ্যম কেউ করতে পারে না৷ দ্বিতীয়ত, পুলিশ বলছে, রাতের রানি৷ তাহলে তো রাতের রাজাও থাকবে৷ রাজারা কোথায়, তারা গ্রেফতার হচ্ছে না কেন? আর পুলিশ যে বলছে, ব্লাকমেইলিংয়ের অভিযোগ আছে৷ তো অভিযোগটা কে দিয়েছে? এটা তো আমরা জানতে চাই? মুখের কথায় অভিযোগ শুনে পুলিশ গ্রেফতার করতে যাবে, দেশ তো এখন ওই জায়গায় নেই৷ লিখিত অভিযোগ কেউ দিয়েছে? দিয়ে থাকলে পুলিশকে  সেটা জানাতে হবে৷ তৃতীয়ত, মদ বা মাদক যদি পরীমনির বাসায় পাওয়া যায়, এই মদ তো হেঁটে হেঁটে তার বাসায় আসেনি৷ এটা নিশ্চয় কোথাও থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে৷ তাহলে মদ বিতরণ কেন্দ্র বা সংগ্রহ কেন্দ্রের সঙ্গে কারা জড়িত আমরা কখনই সেটা জানতে পারি না৷ আমার আশঙ্কা পরীমনি বা পিয়াসার ঘটনায় যারা পৃষ্ঠপোষক, বেনিফিশিয়ারি, যারা রাতের রাজা তাদের পরিচয় আমরা জানতে পারব না৷’’

গত বছরের ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ