তিন নারীর সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে
১৬ জুন ২০২১তাদের মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই তিন নারীকে গ্রেফতা রের পর পুলিশ দাবি করেছে, তারা নাসির ও অমির ‘রক্ষিতা'।
আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, একজন নামকরা অভিনেত্রীকে ন্যায় বিচার দিতে গিয়ে অন্য তিন নারীর সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে না-তো? সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "পুলিশ যা পারে না, তার সবগুলোই করে। পুলিশ কী পারে, আর কী পারে না তার অনেক আইন আছে। অনেকে সেই আইন জানে না। জানলেও তোয়াক্কা করে না। আমরা এগুলো মেনে নিতে নিতে তারা যা ইচ্ছে তাই করছে। আমাদের সংবিধানে বলা আছে, কারো সঙ্গে অমানবিক আচরণ ও ব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের রায়ও আছে। এখন কাউকে গ্রেফতারের পর এই ধরনের ‘উপাধি' দেওয়া তো মানবিক আচরণের পর্যায়ে পড়ে না।”
গত বুধবার রাতে ঢাকার আশুলিয়ায় বোট ক্লাবে হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিনেত্রী পরীমনি ফেসবুকে ও সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন৷ গত সোমবার দুপুরে সাভার থানায় পরীমনি মামলা করেন। এর দুই ঘন্টার মধ্যে পুলিশ উত্তরায় অমি'র বাসায় অভিযান চালিয়ে নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমি ও তিন নারীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের সামনে অভিযানের বর্ণণা দিতে গিয়ে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, "যে তিন নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা নাসির ও অমির রক্ষিতা। তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হচ্ছে।”
পুলিশ কাউকে গ্রেফতারের পরই ‘রক্ষিতা' বলতে পারে কি-না? জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এরা তো কেউ নাসির বা অমির স্ত্রী না। তাহলে এদের পরিচয় কী? এই মামলার তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে।” নাসির উদ্দিনের একজন প্রতিবেশী দাবি করেছেন, এই নারীদের একজন অমির দ্বিতীয় স্ত্রী। আর একজন তাদের বাড়িতে কাজ করেন। আপনারা কী জেনেছেন? জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, "অমি আমাদের কাছে বলেছে, এর মধ্যে কেউ তার স্ত্রী না। কাজের লোকের কথাও বলেনি। ফলে অন্য কে কী বলল, সেটা দিয়ে তো হবে না।”
এই তিন নারী গ্রেফতারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রশ্ন তুলে পোস্ট দেন নাসির উদ্দিন মাহমুদের প্রতিবেশী নারী উদ্যোক্তা দেবী গাফফার। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "গ্রেফতারের পর আমি নাসির উদ্দিনের ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। সে আমাকে বলেছে, এই তিন নারীর একজন অমির দ্বিতীয় স্ত্রী। আরেকজন বাড়ির কাজের মানুষ। অন্যজনকে তারা চেনে না। এখন তাদের পরিচয় যাই হোক না কেন, পুলিশ গ্রেফতারের পরপরই কোন তদন্ত না করে তাদের কী রক্ষিতা বলতে পারে? পরীমনির ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কী? পরীমনি কী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন? ঘটনার সময় কী তারা সেখানে ছিলেন? কেনই বা তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
সুপ্রীমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী মনসুর হাবিব ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ওই তিন নারীকে গ্রেফতারের পর পুলিশ তাদের নিয়ে যা বলেছে, সেটা দুভার্গ্যজনক। পুলিশ এটা বলার এখতিয়ার রাখে না। আইনগতভাবে এটা বলার সুযোগ নেই।”
গ্রেফতার হওয়া এই তিন নারীর পুরো পরিচয় জানা যায়নি। এমনকি তাদের গ্রেফতারের পরও পরিবারের কোন সদস্য আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেনি। নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির আইনজীবী ঢাকা বারের সভাপতি আব্দুল বাতেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নাসির উদ্দিন ও অমির পরিবারের লোকজন আমার সঙ্গে কথা বলে তাদের পক্ষে দাঁড়াতে বলেছেন। তবে ওই তিন নারীর পরিবারের কোন সদস্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।”
সোমবার রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসায় অভিযানের পর ওই দিন রাতে বিমানবন্দর থানায় পুলিশ যে মাদক আইনে মামলা করেছে, সেখানেও এই তিন নারীর পুরো পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তাদের নাম লেখা রয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপ্রধান অ্যাডভোকেট সালমা আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোনো নারীকে গ্রেফতারের পর এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করা খুবই অন্যায়। আইনজীবী হিসেবে আমি বলতে পারি, একজন নারীকে গ্রেফতারের পর পুলিশ কোনভাবেই এই ধরনের মন্তব্য করতে পারে না। আমি মনে করি এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী ও নারীনেত্রী খুশি কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সহযোগী আর রক্ষিতার মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য আছে। রক্ষিতা বলা কিন্তু অত্যন্ত আপত্তিকর। পরীমনিকেও তো নানাভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে। তার মামলা তো পুলিশ প্রথমে নিতে চায়নি। এখন এই তিন নারীর বিষয়টি আপনারা যেভাবে ভাবছেন, ওভাবে হয়ত কেউ ভাবেনি। তাদের তো কোন দোষ নেই। ফলে এই তিন নারীর বিষয়ে নারী সংগঠনগুলোকে ভূমিকা নিতে হবে।”