পর্তুগালের উত্তরের শহর ব্রাগার প্রায় দুই হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে৷ এছাড়া সেখানে আছে প্রায় ১০০টির মতো গির্জা৷ শহরের কাছেই আছে সাগর আর পাহাড়৷ আরও আছে জাতীয় উদ্যান৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় কমিশনের জরিপ বলছে, ব্রাগায় পর্তুগালের সবচেয়ে সুখি মানুষেরা থাকেন৷ অনলাইন পোর্টাল ‘বেস্ট ডেস্টিনেশনস ইন ইউরোপ’ ব্রাগাকে ২০২১ সালের সেরা ট্রাভেল গন্তব্যের খেতাব দিয়েছিল৷ ব্রাগার বাসিন্দাদের গড় বয়সও কম, যা ইউরোপের মধ্যে অন্যতম৷
২০১৩ সাল থেকে ব্রাগার মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন রিকার্ডো রিও৷ ব্রাগাকে সবুজ বানাতে ভূমিকা রাখায় ২০২১ সালের ‘ওয়ার্ল্ড মেয়র অ্যাওয়ার্ডস’ পুরস্কার পান তিনি৷ রিকার্ডো জানান, ‘‘ব্রাগা খুব প্রাণবন্ত ও কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর একটি শহর৷ এখানে যেমন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংমিশ্রন ঘটেছে, তেমনি এখানকার ৪০ ভাগ বাসিন্দার বয়স ৩০-এর নীচে৷ এখানে দারুণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে৷ আছে অনেক স্টার্টআপ৷ একটা শহরে বাস করে সুখি হতে আপনার যা চাই, সেটা আমরা আপনাকে দেয়ার চেষ্টা করি৷’’
শহরের এমন বৈশিষ্ট্যের কারণে ক্যাটারিনা ডোস সান্তোস ও তার পার্টনার ২০১৭ সালে লন্ডন থেকে ব্রাগায় ফিরে গেছেন৷ সেখানে তারা শহরের প্রথম আধুনিক কফি শপ চালু করেন, যেটা এখন ট্রেন্ডি হয়ে উঠেছে৷ ক্যটারিনা বলেন, ‘‘যখন আমরা বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে আসতাম তখন দেখতাম অনেক তরুণ আর পর্যটকরা আসছেন৷ শহরটা কেমন যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠছিল৷ তখন আমাদের মনে হলো, ওয়াও এখানে অনেক কিছু ঘটছে, হয়ত এটা একটা সুযোগ হতে পারে৷ আমি বলতে চাই না যে আবার কখনও ফিরে যাব না, তবে এই মুহূর্তে বলতে পারি আমরা খুব ভালো আছি৷’’
পর্তুগালের নতুন আকর্ষণ ব্রাগা
04:14
ব্রাগার টানে অনেক তরুণ আর্টিস্টও সেখানে ছুটে যাচ্ছেন৷ নিয়মিত সেখানে ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়৷ শহরের অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র জেনারেশন৷ ডিজিটাল আর্ট নিয়ে কাজ হয় সেখানে৷ জেনারেশনের আর্টিস্টিক ডাইরেক্টর লুইস ফার্নান্দেজ বলেন, ‘‘আমার কাছে ব্রাগা একটি বিশেষ শহর, কারণ আপনি এখানে অনেক কিছু পাবেন৷ একদিকে এটা নীরব একটা শহর, আবার সাগর, জাতীয় উদ্যান, পাহাড় থেকে বেশি দূরেও নয়৷ এছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও বাড়ছে৷’’
আর ফটোগ্রাফার মার্তা মাচাদো বলেন, ‘‘ব্রাগা একটা কোজি শহর৷ শহরটা বড়, কিন্তু একইসঙ্গে আপনার পাড়ায় যারা থাকেন, তাদের আপনি চেনেন৷ ফলে শহরে থেকে গ্রামের একটা আবেশ পাওয়া যায়৷’’
ব্রাগার সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানটি পাহাড়ে অবস্থিত - বম জেসুস ডো মন্তে গির্জা৷ সিঁড়ি বেয়ে সেখানে যাওয়া যায়৷ সেটা না চাইলে প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ফার্নিকুলারও আছে৷ চারদিকে বন আর জাতীয় উদ্যান দিয়ে ঘেরা ঐ জায়গায় কৃত্রিম গুহাও আছে৷ স্থানীয়রাও সেখানে যেতে পছন্দ করেন, যেমন ৩৩ বছর বয়সি সংগীত শিল্পী মারিয়া হুয়াও বোরেত্তো৷ লেখাপড়া শেষে আবার নিজ শহরে ফিরে গেছেন তিনি৷
মারিয়া জানান, ‘‘আমি ব্রাগাকে ভালোবাসি৷ আমি এখানে জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি৷ এখানকার জীবনযাত্রার মান ভালো, প্রকৃতিও বেশ সুন্দর৷ এমনকি এই বৃষ্টিও৷’’
ব্রাগা - একটি ছোট্ট শহর যেখানে অনেক কিছু ঘটে৷ আছে আধুনিক অবকাঠামো, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, অনেক স্টার্টআপ৷ ভাড়াও কম৷ আরও আছে আনন্দের অনেক আয়োজন৷
নাদিন ওসিনস্কি/জেডএইচ
যে ১০ কারণে পর্তুগাল যাওয়া উচিত
ব্রাজিলীয়রা দেশটা ভালোবাসে, প্রতিবেশি স্প্যানীয়দেরও পছন্দ৷ বলছি পর্তুগালের কথা৷ প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করেন৷ চলুন পর্তুগালের আকর্ষণীয় কিছু দিক জেনে নেই৷
ছবি: Reuters/R. Marchante
লিসবনে দিন-রাত
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে দিন-রাত সবসময়ই পর্যটকদের দেখা মেলে৷ এই শহরের অলিগলিতে ঐতিহাসিক ট্রাম চলতে দেখা যায়৷ আর সেই ট্রামে চড়ে শহর দেখার মজাই আলাদা৷ পুরো শহরটি বিশ্বমানের মিউজিয়াম, গির্জা আর রাজপ্রাসাদে ঠাসা৷ ইউরোপের সবচেয়ে বড় অ্যাকুরিয়ামটির অবস্থানও সেখানে৷ আর শহরটির নৈশজীবনও আকর্ষণীয়৷
ছবি: DW/C. Deicke
সার্ফিংয়ের উপযোগী ঢেউ
দেশটির ৮৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল গড়ে দিয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর৷ অনেক পর্যটক এবং সমুদ্র সৈকতপ্রেমীরা দেশটির দক্ষিণের আলগারভে অঞ্চলে যেতে ভালোবাসেন৷ তবে, সার্ফারদের পছন্দ উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের রুক্ষ সমুদ্র সৈকত৷ দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্ফ স্পটের অবস্থান নাজারে শহরের উত্তরে৷ সেখানে বিশ মিটার অবধি উঁচু সমুদ্রের ঢেউয়ের দেখা মেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/360-berlin/Jens Knappe
কোয়েমব্রোতে লেখাপড়া
একসময় কোয়েমব্রো ছিল পর্তুগালের রাজধানী৷ ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বিবদ্যালয়টি এখনো এই শহরের প্রাণকেন্দ্র৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য৷ দুর্লভ অনেক বই রয়েছে সেখানে৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে লাইব্রেরিটিতে অনেক বাদুড় রয়েছে যেগুলো পোকামাকড় মেরে বইয়ের সংগ্রহ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে৷ লাইব্রেরির পড়ার টেবিলগুলো রাতের বেলা ঢেকে রাখা হয়৷
ছবি: Imago Images/L. Scipioni
সিনত্রায় ঘোরাঘুরি
এটা দেখতে অনেকটা ডিজনিল্যান্ডের মতো হলেও আসলে তা নয়৷ সিনত্রা শহরে অবস্থিত একটি দুর্গ এটি৷ এখানে একইসঙ্গে গথিক, মিশরীয়, ইসলামী এবং রেনেসাঁর প্রভাব দেখতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Brandl
ভালো ওয়াইন পানের সুযোগ
যদিও গোটা বিশ্বের ওয়াইন উৎপাদকদের মধ্যে পর্তুগালের অবস্থান দ্বাদশ, রসিকদের বিবেচনায় বৈচিত্রময় আঙুরের কারণে সেখানে নানা স্বাদের ভালোমানের ওয়াইনের সন্ধান মেলে৷ পর্তুগালে কয়েক শত বছর ধরে ওয়াইন উৎপাদন করা হচ্ছে আর আঙুরের এমন কিছু জাত আছে যা শুধু সেদেশেই পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gumm
পোরতো ওয়াইন যেখানে রাখা হয়
ডউরো নদীর তীরে অবস্থিত পোরতো শহরে পর্তুগালের ঐহিত্যবাহী পোর্ট ওয়াইন সংরক্ষণ খরা হয়৷ শহরটিতে অনেকগুলো ওয়াইন সংরক্ষণের ভুগর্ভস্থ ভাণ্ডার রয়েছে৷ শুধু তাই নয় শহরটিতে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর একটি বইয়ের দোকানও রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Brandl
ফাটিমার উদ্দেশ্য তীর্থযাত্রা
শুধু ওয়াইন আর শিল্প সংস্কৃতিই পোরতোতে পর্যটকদের নিয়ে যায় না, বরং ধার্মিকদের কাছে পবিত্র এক স্থানের অবস্থানও সেখানে৷ প্রতিবছর অসংখ্য ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী ফাটিমায় জড়ো হন৷ ১৯১৭ সালে সেখানে কুমারী মেরি তিন রাখাল বালকের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন বলে কথিত রয়েছে৷ আর সেই ঘটনার সাক্ষ্য দিতে সূর্যের এক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল যা কয়েক হাজার মানুষ দেখেছেন বলে বিশ্বাস করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U.Poss
পর্তুগালের ভেনিসে নৌকায় ঘোরাঘুরি
পোরতো থেকে সত্তর কিলোমিটার দক্ষিণে আভেইরো শহর পর্তুগালের ভেনিস হিসেবে পরিচিত৷ শহরটিতে অসংখ্য খাল রয়েছে যেগুলোতে গন্ডোলায় চড়ে ঘোরা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/GTW
পর্তুগালের মন বুঝতে ফাদো শুনুন
আপনি যদি পর্তুগালের মন বুঝতে চান, তাহলে একটি ফাদো রেস্তরাঁয় যেতে হবে৷ ভালোবাসা, আকুলতা আর বিশ্ব ক্লান্তি হচ্ছে ফাদো সংগীতের বিষয়বস্তু৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gumm
ইউরোপের শেষপ্রান্তে
পর্তুগীজরা একসময় বিশ্বাস করতেন যে ছবিতে দেখা এই প্রান্তটিতে দুনিয়ার শেষ৷ আসলে কাবো দা হরকা হচ্ছে ইউরোপের পশ্চিমাংশের মূলভূমির শেষপ্রাপ্ত৷ লিসবন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে এই অঞ্চলের অবস্থান৷ হাইকিংয়ের জন্য জায়গাটি চমৎকার৷