পর্দা না করায় ইরানের নারীদের ওপর 'দই হামলা'
২ এপ্রিল ২০২৩ইরানের উত্তর-পূর্বের শহর মাশাদের পাশে একটি দোকানে এক ব্যক্তি পর্দা না করা দুই নারীর ওপর দই ঢেলে দেন। এরপরই এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে।
শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট রাইসি বলেন, "যদি কেউ বলে যে তারা এটাতে (হিজাব পরায়) বিশ্বাস করে না, তাহলে তাদের বোঝানো উচিত। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে যে এটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। হিজাব পরা এখন আইনি বিষয়।"
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওতে দেখা যায় বাজার করতে আসা দুই নারী (মা এবং মেয়ে) হিজাব বা অন্য কোনো মাথা ঢাকার স্কার্ফ পরে ছিলেন না। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাজারে আসা এক পুরুষের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে সেই ব্যক্তি তার সঙ্গে থাকা দই সেই নারীদের ওপর ঢেলে দেন। পরে অবশ্য দোকানদার সেই ব্যক্তিকে আটকাতে এগিয়ে আসেন।
সবার জন্যই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
যে ব্যক্তি দই নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একই পরোয়ানা জারি হয়েছে যে দুই নারী আক্রমণের শিকার হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও।
পাশাপাশি যে দোকানদার আক্রমণকারীকে ঠেকাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন, তাকেও সতর্ক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা ছবি-ভিডিওতে দেখা গেছে সেই দোকানটি বন্ধ রয়েছে। তবে স্থানীয় গণমাধ্যম দোকানের মালিককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, তাকে দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরান জুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামিক পোশাক না পরায় এই ২২ বছরের নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর আন্দোলনে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হন।
শাস্তির হুঁশিয়ারি প্রধান বিচারপতির
যেসব ব্যক্তি জনসম্মুখে পোশাকের কঠোর নিয়ম মেনে চলবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রধান বিচারপতি।
গোলাম-হোসেইন মোহসেনি-এজেই বলেন, যেসব নারী প্রকাশ্য়ে হিজাব পরছেন না বা খুলে ফেলছেন, তারা ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের মূল্যবোধ, শরিয়া নিয়ম এবং রাষ্ট্রের আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। বিদেশে ইরানের শত্রুরা এই কাজে উসকানি দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন ইরানের প্রধান বিচারপতি।
প্রতিবাদ চলছে
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে শরিয়া আইন চালু করা হয়। এই আইন অনুযায়ী নারীরা তাদের চুল ঢেকে রাখতে এবং লম্বা ঢিলেঢালা পোশাক পরতে বাধ্য। আইন লঙ্ঘনকারীদের জরিমানা, গ্রেপ্তার সহ নানা শাস্তির বিধান রয়েছে।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় আন্দোলন শুরু হয় ইরানে। অনেক নারী, বিশেষ করে রাজধানী তেহরানসহ বড় শহরগুলোতে মাথা ঢাকা কাপড় পরতে অস্বীকৃতি জানান।
ইরানের অনেক জায়াগায় নারীরা মাথা ঢেকেছেন কিনা সেটা তদারকি করতে ভিডিও নজরদারিও করা হয়। তবে ইরানের সরকার প্রায়ই হিজাম সংক্রান্ত আইনের কড়াকড়ি বাস্তবায়ন করে না। এ নিয়েও সরকারপন্থি ধর্মীয় নেতা এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
এডিকে/আরকেসি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)