পর্নহাব ডট কম ওয়েবসাইটে কোনো নারী বা কিশোরীর অনুমতি ছাড়া রেকর্ড করা ভিডিও আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত করছে মাস্টারকার্ড৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পর্নহাব ডট কম ওয়েবসাইটে রয়েছে এমন কিছু ভিডিও যা আসলে শিশুদের ওপর যৌন হয়রানির ও ধর্ষণের প্রচার করছে৷ এসব ভিডিওতে দেখানো নারী ও কিশোরীদের রেকর্ডিংয়ের সময়ে কোনো হুঁশ ছিল না, সুতরাং ভিডিও করার বিষয়ে তাদের সম্মতির বিষয়টি স্পষ্ট নয় বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে৷
প্রতিবেদক নিকোলাস ক্রিস্টফ বলেন, ‘‘এখানে বিষয় আসলে পর্নোগ্রাফি নয়৷ এখানে আসল বিষয় ধর্ষণের প্রশ্ন৷ আমাদের বোঝা উচিত যে, কোনো একটি শিশু বা অন্য কারো সাথে ঘটা হয়রানিকে তাদের অমতে প্রচার করা আসলে অনৈতিক৷’’
এই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে পর্নহাব সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে একটি ইমেলে জানায়, ‘‘আমরা যে শিশুদের ওপর যৌন হয়রানির কোনো ধরনের ভিডিও প্রচার করি, তা বলা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন ও সম্পূর্ণ মিথ্যা৷’’
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
পর্নদুনিয়াওক্রেডিটকার্ডসংস্থা
বিশ্বের পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটের ব্যবসার সাথে তাবড় ক্রেডিটকার্ড সংস্থা ও ব্যাংকেও যোগসূত্র রয়েছে৷ ফলে, এই ইস্যুতে উঠছে তাদের নামও৷
ক্রেডিটকার্ড সংস্থা মাস্টারকার্ড রয়টার্সকে জানিয়েছে যে, তারা পর্নহাবের মালিক ‘মাইন্ডগিক’ সংস্থার ব্যাংকিং গতিবিধির ওপর তদন্ত চালাচ্ছে৷ একটি বিবৃতিতে তারা জানান, ‘‘যদি এই অভিযোগগুলি প্রমাণিত হয়, তাহলে আমরা অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবো৷’’
বিখ্যাত হেজফান্ড ইনভেস্টর ও ধনকুবের বিল অ্যাকমান মাস্টারকার্ড ও ভিসার মতো ক্রেডিটকার্ড সংস্থাকে আপাতত পর্নহাবের সাথে সবরকমের লেনদেন বন্ধ রাখতে বলেছেন৷ তিনি অ্যামেরিকান এক্সপ্রেসকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেন, যদিও অ্যামেরিকান এক্সপ্রেসের বক্তব্য, তারা কখনোই কোনো ধরনের পর্নসাইটের সাথে ব্যবসায় যায় না৷
অ্যাকমানের প্রস্তাব, কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়া এই ধরনের ভিডিও কোনো পর্নসাইটে তুলে দেওয়াকে নিষিদ্ধ করা হোক৷ সাথে, ভিডিওতে উপস্থিত সবার বয়স ও ভিডিওতে সম্মতি নিশ্চিত করে তবেই যাতে ছাড়া হয় এই ধরনের ভিডিও, তাতে জোর দেন বিল অ্যাকমান৷
পর্নহাবের দাবি, তারা প্রতিটি ভিডিও আপলোড করার সময় যাচাই করে থাকে৷
রাজনীতিতেওপর্নহাবেরপ্রভাব
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন রাজনীতির ময়দানেও আলোচনার সৃষ্টি করেছে৷ ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন যে, তার সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর জশ হলি জানান, তিনি নতুন আইন প্রণয়নের চেষ্টা করবেন যাতে করে পর্নহাবের মতো সাইটগুলির মাধ্যমে হয়রানি বা পাচারের ঘটনাগুলিকে রাষ্ট্রীয় বিচারের আওতায় আনা যায়৷
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)
আমাদের অনলাইন বোকামি
বর্তমান যুগে কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে প্রতিনিয়ত৷ ইন্টারনেট আসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে৷ সঙ্গে বাড়ছে বোকামিগুলো৷ অনলাইনে আমাদের একটু বিচক্ষণ হতে হবে বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa
ফোনে লক নেই?
ধরুন ফোনে লক দিতে ভুলে গেছেন, বা নিজেই পছন্দ করেন না লক সিস্টেম৷ তাই যেখানে সেখানে ফোন ফেলে আসাটা আপনার জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনবে৷ কারণ যেহেতু স্মার্ট ফোনে আপনার ফেসবুক, জিমেইল, কোথাও কোথাও ব্যাংক ডিটেইলও সেভ করা থাকে সেখানে আরেকজনের পক্ষে কপি করা বিষয়ই নয়৷ নিজের ব্যক্তিগত ছবিগুলোর নিরাপত্তা স্বার্থে হলেও ফোন লক করুন৷
ছবি: Reuters/T. Siu
ফ্রি ওয়াফাইয়ে বিপদ!
ফ্রি ওয়াইফাই দেখে ঝাঁপিয়ে পড়লেই বিপদ৷ যদিও ফ্রি ওয়াইফাইয়ের প্রলোভন উপেক্ষা করা কঠিন, তবু বিপদ বুঝে ব্যবহার করতে হবে৷ যেহেতু আপনার মোবাইলের ডাটা অ্যাকসেস পাবে ওয়াফাই সংযোগটি সেহেতু সাবধান৷ এক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করে ওয়াই ফাই সংযোগ গ্রহণ করা উচিত৷ ভিপিএন অর্থ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটোয়ার্ক৷ এটি একটি টানেল তৈরি করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখবে ফ্রি ওয়াফাইয়ে ওঁৎ পেতে থাকা চোরদের থেকে৷
ছবি: picture alliance / dpa
চ্যাটরুমে ভরসা নেই
চ্যাটরুম সময় কাটানোর জন্য খুব ভালো মাধ্যম হলেও বিশ্বাস করা যাবে না এখানকার মানুষদের৷ কারণ চ্যাটরুমের পরিচয় থেকে আবেগী হয়ে ভিডিওচ্যাট করে ভীষণ বিপদে পড়েছেন অনেকে৷ বিশেষ করে মেয়েদের হয়রানি করার ঘটনাগুলোর সূত্রপাত চ্যাটরুম থেকে৷ এখানেই ছড়ায় ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিওসহ নিজস্ব অনেক তথ্য৷ সুতরাং চ্যাট করতে পারেন কিন্তু তথ্য শেয়ার নয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
কঠিন পাসওয়ার্ড
মনে থাকবে না এই অজুহাতে পাসওয়ার্ডটাকে একেবারে সহজ কিছু বা ধারণা করা যায় এমন করবেন না৷ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, মেইল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক অ্যাকাউন্টসহ প্রতিটা বস্তুর জন্য আলাদা আলাদা ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড রাখুন৷ আর মনে রাখার সুবিধায় পাসওয়ার্ড কোনো ইনবক্সে সেভ করবেন না, কিংবা পাসওয়ার্ড লেখা খাতাটা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Skolimowska
ক্রেডিট কার্ডের সেলফি?
নতুন ক্রেডিটকার্ড পেয়ে খুশিতে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ফেলবেন না৷ প্রয়োজনে ক্রেডিট কার্ডের ছবি তুলে রাখতে পারেন৷ তবে সেটি একেবারেই গোপন স্থানে রাখবেন৷ ইদানিং ইন্টারনেটে এ ধরনের বোকামি বেশ চোখে পড়ছে৷ আইটি বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের ঘটনাকে মানবজাতির বুদ্ধিমত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলেই মনে করছেন৷