শিশুদের পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে নতুন আইন পাস করেছে জাপান সরকার৷ এই আইনে শিশুদের দিয়ে তৈরি করা অশ্লীল ভিডিও বা ছবি নিজের কাছে রাখলেও জেল জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জাপানি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ গত বুধবার সর্বসম্মতভাবে এই আইন পাস করে৷ আগের আইনে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলেও সঙ্গে রাখার বিষয়ে কোনো বিধি নিষেধ ছিল না৷
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ চলতি মাসের শুরুতেই এই সংশোধিত আইনের অনুমোদন দেয়৷ আইনে বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তিগত কামনা চরিতার্থ' করার জন্য কেউ শিশু পর্নোগ্রাফি শুধুমাত্র সঙ্গে রাখলেও তাঁকে এক বছরের জেল অথবা এক মিলিয়ন ইয়েন (সাত হাজার ইউরো) পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে৷
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সিদের এ আইনে শিশু বিবেচনা করা হয়েছে৷ তবে ম্যাঙ্গা কমিকস, এনাইম ভিডিও বা কম্পিউটারে তৈরি গ্রাফিকস এ আইনের আওতায় পড়ছে না৷
প্রসঙ্গত জাপানের জনপ্রিয় হাস্যরসাত্মক নাট্য ধারা মাঙ্গা৷ তবে মাঙ্গা শুধু নাটকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি৷ এটা বিকশিত হয়েছে নানা গল্প, কৌতুক, উপন্যাস এবং ছবির ধারাতে৷ কিন্তু জনপ্রিয় এই কমিকস এবং অ্যানিমেটেড ছবিগুলোর বিরুদ্ধে বরাবরই অভিযোগ কড়া মাত্রার অশালীন ও যৌন চিত্র তুলে ধরার৷
জাপানের শিল্পী ও প্রকাশকরা অবশ্য ফটোগ্রাফ বা ভিডিও নয় – এমন ছবির ওপর কড়াকড়ি আরোপের বিরোধিতা করে আসছিলেন৷ তাঁদের মতে, ম্যাঙ্গা কমিকস বা অ্যানিমেটেড ভিডিওকে পর্নোগ্রাফি আইনের আওতায় আনা হলে শেষ পর্যন্ত তা শিল্পীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথ রূদ্ধ করবে৷ আর সরকারও এ আইনের অপব্যবহারের সুযোগ পাবে৷
যথাযথ আইন না থাকায় জাপানে শিশু পর্নোগ্রাফির বাজার এতটাই রমরমা হয়ে উঠেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে জাপানকে আখ্যায়িত করা হয় এ ধরনের পর্নো তৈরি ও পাচারের আন্তর্জাতিক বন্দর হিসাবে৷
জার্মানিতে বিদেশি বংশোদ্ভূত শিশুরা
ফটোগ্রাফার মার্টিনা হেন্সকে ও লেখক টাটিয়ানা লাইশারিং জার্মানির বিভিন্ন জায়গা স্কুল ঘুরে বিদেশি বংশোদ্ভূত শিশুদের ছবি তুলেছেন৷ এই ছবিঘরে সেই শিশুরাই জানাচ্ছে ওরা কিভাবে জার্মানির জীবনধারার সাথে একাত্ম বোধ করে৷
ছবি: Martina Henschke
আমার দেশ খুবই সুন্দর!
লাউরা ওর নিজের দেশ পর্তুগালকে নিয়ে খুব গর্ব বোধ করে৷ ‘‘টেলিভিশনে পর্তুগালের ছবি দেখে আমার সেখানে যেতে ইচ্ছে করে৷’’ লাউরার জন্ম জার্মানিতে হলেও ও পর্তুগালে গিয়ে পর্তুগিজ ভাষা শিখেছে৷ তবে ওর বাবা ওকে পর্তুগিজে প্রশ্ন করলে লাউরা জার্মানে উত্তর দেয়৷ জার্মানিতে জন্ম নেওয়া বেশিরভাগ বাচ্চার ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য৷ ঠিক এ বিষয়টিই হিল্ডেসহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে৷
ছবি: Martina Henschke
‘সোমালিয়া আমার জীবনের অঙ্গ’
দিকার ভাষায়, ‘‘আমি সোমালীয়, ইংরেজি, জার্মান ভাষা জানি, জানি কিছুটা ফ্রেঞ্চ, আরবী এবং অল্প কিছুটা তুর্কি ভাষাও৷’’ দিকার মতে, ভাষগুলোর মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে৷ তাছাড়া ও এটাও লক্ষ্য করছে যে, ওর পরিবারের মানুষজন আফ্রিকান এবং আরবী – এই দুই ভাষা মিলিয়ে কথা বলে৷
ছবি: Martina Henschke
মাঝে মাঝে অসুবিধা হয়
বিভিন্ন ভাষা জানার যে বিশেষ সুবিধা রয়েছে, সে কথাই বোঝানো হয়েছে হিল্ডেসহাইম বিশ্ববিদ্যলয়ের এই প্রদর্শনীটিতে৷ ফেরিদে অনেকগুলো ভাষা শোনার মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠছে৷ ওর ভাষায়,‘‘জার্মান এবং তুর্কি ভাষা আমি জানি আর ইংরেজি জানি সামান্য, স্কুলে শিখছি৷’’ মায়ের সাথে ফেরিদে খুব কমই তুর্কি ভাষায় কথা বলে৷ ভাই-বোনদের সাথে তুর্কি/জার্মান দুটোই আর তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান বন্ধুদের সাথে শুধু জার্মান ভাষায় কথা বলে সে৷
ছবি: Martina Henschke
খেলার মাঠে ভাষা চর্চা
বাড়ির কাছেই খেলার মাঠে বিভিন্ন দেশের মানুষ একসাথে হলে তাদের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হয়৷ ইব্রাহিমের কিন্তু এভাবেই ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে৷ ইব্রাহিম বসনীয় এবং জার্মান – এই দুই ভাষার মধ্য দিয়েই বড় হচ্ছে৷ তবে ইটালিয়ান ভাষা শিখতে ইব্রাহিম খুবই আগ্রহী, কারণ ওর বেশিরভাগ বন্ধুই যে এই ভাষায় কথা বলে!
ছবি: Martina Henschke
‘আমি কিন্তু সুপারম্যান হতে চাই’
রামসেস বাড়িতে ওর মায়ের সাথে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে৷ তবে ওর দুটো পাসপোর্ট – জার্মান এবং কলোম্বিয়ান৷ রামসেস-এর ভাষায়, ‘‘আমার জন্ম যেখানেই হোক না কেন, আমি মনে করি আমি জার্মানিতেই জন্মেছি, ভাষা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই৷’’ তবে ওর সমস্ত ভাবনা জুড়ে রয়েছে শুধু একটাই, রামসেস-এর ভাষায়, ‘‘আমি সুপারম্যান হয়ে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখি৷’’
ছবি: Martina Henschke
স্বপ্ন দুই ভাষায়ই দেখি
এরমালের জন্ম জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে৷ ও এখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে৷ এরমানের সবচেয়ে ভালো লাগে বই পড়তে আর অঙ্ক করতে৷ ‘‘আমার নিজের কোনো বই নেই, তবে আমি প্রতি সপ্তাহেই লাইব্রেরি থেকে একসাথে অনেকগুলো ডাইনোসরাসের বই নিয়ে আসি৷’’ এরমাল ওর বাবা-মায়ের সাথে বেশিরভাগ সময় আলবেনীয় ভাষায় কথা বললেও ও স্বপ্ন দেখে জার্মান এবং আলবেনীয় ভাষাতে৷ ‘‘আমি তো এর চেয়ে বেশি ভাষা জানি না’’, বলে এরমাল৷
ছবি: Martina Henschke
‘‘আমি কিন্তু কিছুটা জার্মান’’
হাজার নামের এই মেয়েটির স্বপ্ন যে, ও বড় হয়ে ডাক্তার অথবা উকিল হবে৷ হাজার ওর ভাই-বোন এবং স্কুলের বন্ধুদের সাথে জার্মান ভাষায় কথা বলেলেও বাবা-মায়ের সাথে সে কথা বলে বার্বার ভাষায়৷ স্কুলে অবশ্য ইংরেজি শিখছে হাজার৷ ওর জন্ম জার্মানিতে, তবে বাবা-মা এসেছেন মরক্কো থেকে৷ হাজার নিজের সম্পর্কে বলে, ‘‘আমি মরোক্কান হলেও এখন অবশ্যই কিছুটা জার্মান৷’’
ছবি: Martina Henschke
‘আমার বন্ধুরা টিউনিশিয়ায়’
ইহেব্স-এর বাবা এসেছে টিউনিশিয়ায় থেকে আর মা ও নানা জার্ডান থেকে৷ ইহেব্স-এর আরবী ভাষা জানা থাকায় টিউনেশিয়ায় অনেকের সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়েছে৷ ওর ভাষায়, ‘‘আমি আসলে টিউনেশিয়ান, জার্মান নই৷’’ ওর ধারণা ও যেহেতু সবসময় জার্মান ভাষায় কথা বলে না, তাই সে জার্মান নয়৷ ভাষার মাধ্যমেই নিজের পরিচয় দিতে পছন্দ করে ইহেব্স৷ তবে ও সারা জীবন পরিবারের সাথে জার্মানিতেই কাটাতে চায়৷
ছবি: Martina Henschke
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
ইওয়ানে-র প্রিয় বিষয় জার্মান ভাষা আর সাঁতার কাটা৷ ওর মতে, জার্মান ভাষাটাই ও ভালো জানে৷ এর কারণ, ইওয়ানে-র জন্ম জার্মানিতে৷’’ ও কখনো থাইল্যান্ডে না গেলেও মায়ের সাথে থাই ভাষাতেই কথা বলে৷ তবে ওদের পরিবারের লোকজন বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে৷ ফলে সবার সাথে যোগাযোগ রাখাটা প্রায় সম্ভবই হয়ে ওঠে না৷ ‘‘আমার ‘কাজিন’ থাকে লন্ডনে, আর আমি জার্মানিতে৷ কাজেই আমরা একে অপরের সাথে নিয়মিত কথা বলতে পারি না৷
ছবি: Martina Henschke
জায়গা পরিবর্তন
ক্রিস্টিয়ান প্রথমে নাস্তা করে, তারপর দাঁত ব্রাশ করে তার দিন শুরু করে৷ পরে আবারো বিছানায় শুয়ে আরাম করে একটু গড়িয়ে নেয়৷ আচ্ছা, ‘‘জার্মান বলতে আসলে কাদের বোঝায়? যাঁদের জন্ম জার্মনিতে আর যাঁদের বাবা-মা জার্মান, তাঁদের?’’ প্রশ্ন তার৷ এর ব্যাতিক্রমও রয়েছে কিন্তু বলে সে৷ ক্রিস্টিয়ান লক্ষ্য করেছে, অনেকেই অন্যান্য দেশ থেকে জার্মানিতে আসেন, টাকা-পয়সা রোজগার করে ভালোভাবে জীবন কাটাতে৷
ছবি: Martina Henschke
10 ছবি1 | 10
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে শিশু পর্নোগ্রাফির উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করে ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো আইন করে জাপান৷ ওই আইন ভঙ্গের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান করা হয়৷ কিন্তু এ ধরনের পণ্য নিজের কাছে রাখা অবৈধ না হওয়ায় পর্নোগ্রাফিতে শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছিল না৷
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাপানে গত বছর শিশু পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত ১ হাজার ৬৪৪টি অপরাধ ঘটে, যা এক দশক আগের তুলনায় প্রায় দশগুণ বেশি৷ এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ঘটনা ছিল ইন্টারনেটে শিশু পর্নোগ্রাফি বিক্রি বা শেয়ার করার মতো অপরাধ৷
নতুন আইনের অন্যতম প্রস্তাবক ও জাপানের নিউ কোমেইতো পার্টির সদস্য কিয়োহিকো তোয়ামা বলেন, ‘‘শিশু অধিকার নিয়ে আমাদের বোঝাপড়া যথেষ্ট ভালো না হওয়ার কারণেই একটি আইন করতে আমাদের এতদিন লাগল৷ নতুন আইন কার্যকর হলে পর্নোগ্রাফি তৈরিতে শিশুদের ব্যবহার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে৷''
বর্তমানে ৭০টির বেশি দেশে পর্নোগ্রাফিতে শিশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ৷ ওইসিডি এবং জি সেভেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কেবল জাপানেই এতদিন শিশু পর্নোগ্রাফি রাখার ব্যাপারে কঠোর আইন ছিল না৷