ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ একটি পর্নোগ্রাফি মামলায় রিজিক শিহাব নামে এক ইসলামি মৌলবাদি গোষ্ঠীর নেতার নাম সন্দেহভাজনের তালিকায় রেখেছে৷ সাবেক জাকার্তা গভর্নরের বিরুদ্ধে তিনি বেশ কয়েকবার বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
জাকার্তা পুলিশের মুখপাত্র আর্গো ইয়ুভনো এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷ এক নারীকে গ্রাফিক বার্তা ও নগ্ন ছবি পাঠিয়ে শিহাব পর্নোগ্রাফি-বিরোধী আইন ভেঙেছেন বলে জানিয়েছেন ইয়ুভনো৷ এখন তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে ও তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হবে বলেও মঙ্গলবার জানান পুলিশের ঐ মুখপাত্র৷
তবে মানহানির অপর এক মামলায় অভিযুক্ত শিহাব দেশের বাইরে আছেন৷ কয়েকদিন আগে সৌদি আরব গিয়ে তিনি এখনও দেশে ফেরেননি৷ মানহানির মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ কয়েকবার তাঁর বিরুদ্ধে সমন জারি করলেও তিনি হাজিরা দেননি৷
অভিযোগ প্রমাণিত হলে শিহাবের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল হতে পারে৷
তবে শিহাবের আইনজীবী সুগিতো আমতো প্রাউইরো ইসলামি ঐ নেতার বিরুদ্ধে আনা পর্নোগ্রাফিবিরোধী আইন ভঙ্গের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
শিহাব যে নারীকে বার্তা পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁর নামও সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখা হয়েছে৷
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ প্রদেশে শরিয়া আইন চালু আছে৷ শাস্তি হিসেবে সেখানে বেত্রাঘাত করার পাশাপাশি মাথার চুলও কেটে নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
যেভাবে শুরু
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে অবস্থিত আচেহ প্রদেশে এখনো শরিয়া আইন চালু আছে৷ ঐ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন থামানোর লক্ষ্যে সরকার ২০০১ সালে ঐ প্রদেশের জন্য ‘বিশেষ স্বায়ত্তশাসন’এর ব্যবস্থা করার পরই ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়৷ এরপর ২০০৫ সালে শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর আইনের প্রয়োগ আরও জোরালো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
যেসব অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়
জুয়া খেলা, অ্যালকোহল পান করা, সমকামিতা, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি নানা কারণে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে৷ শাস্তি হিসেবে সাধারণত বেত্রাঘাত করা হয়৷ অপরাধের ধরণ বিবেচনায় নিয়ে বেত্রাঘাতের পরিমাণ ঠিক করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Simanjuntak
অবিবাহিতদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
সোমবার (১৩ অক্টোবর) আচেহ প্রদেশের রাজধানী বান্দা আচেহ’র একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে শরিয়া আইন না মানার কারণে ১৩ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ এর মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সি ছয় জোড়া তরুণ-তরুণীও ছিল৷ তাঁদের অপরাধ, বিয়ে না করেই ঘনিষ্ঠ হয়েছেন৷ শরিয়া আইন বলছে, বিয়ে না করে ছেলে-মেয়েদের একে অপরকে ছোঁয়া, চুমু দেয়া, জড়িয়ে ধরা অপরাধ৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
নিভৃত স্থানে একসঙ্গে সময় কাটানো
ছয় জোড়া যুগল ছাড়াও সোমবার আরেক ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার কারণ, তাকে গোপন স্থানে বিপরীত লিঙ্গের একজনের সঙ্গে এমনভাবে সময় কাটাতে দেখা গেছে যা হয়ত ব্যভিচার পর্যন্তও গড়াতে পারত৷
ছবি: picture alliance/dpa/H.Simanjuntak
হাসিঠাট্টায় মগ্ন দর্শক
বেতের আঘাতে ব্যথা পেয়ে একজন তরুণী যখন চিৎকার করে কাঁদছিল তখন চারদিকে দাঁড়িয়ে জনতা সেটি উপভোগ করছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
ডেপুটি মেয়রের আশা
আচেহ’র ডেপুটি মেয়র জয়নাল আরিফিনের আশা, এই ধরণের শাস্তির ব্যবস্থা করার কারণে ভবিষ্যতে নাগরিকরা শরিয়া আইন ভাঙার মতো কাজে জড়াবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/F.Reza
নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি
সাম্প্রতিক সময়ে আচেহ’তে শাস্তি দেয়া বেড়েছে৷ আগের চেয়ে এখন বেশি সংখ্যক নারীকে এই আইনের আওতায় শাস্তি দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Simanjuntak
মানবাধিকার কর্মীদের প্রশংসা
না, শরিয়া আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রশংসা নয়, বরং বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে আচেহ প্রদেশ কর্তৃপক্ষ৷ তবে সম্প্রতি এক সিদ্ধান্তের কারণে মানবাধিকার কর্মীরা আচেহর প্রশংসা করেছে৷ সেটি হচ্ছে, চাকরিরত নারী কর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস করা হয়েছে৷ ইন্দোনেশিয়ার যে-কোনো প্রদেশের চেয়ে এটি বেশি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Simanjuntak
জুয়া খেলার শাস্তি
২০১২ সালের ৫ অক্টোবরের এই ছবিতে জুয়া খেলার দায়ে এক ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে দেখা যাচ্ছে৷ সেদিন মোট তিনজনকে এই অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/H. Simanjuntak
যে কারণে এই শাস্তি
২০১১ সালের ডিসেম্বরে ‘পাংক’ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ তারপর তাদের এই শাস্তি দেয়া হয়৷ এরপর তাদের জন্য ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়৷ সেখানে তাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
ইন্দোনেশিয়ার মৌলবাদি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক ডিফেন্ডার্স ফ্রন্ট' বা এফপিআই-এর নেতা হলেন শিহাব৷ এই গোষ্ঠীটির চরমপন্থা মতবাদে বিশ্বাসী নন ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ মানুষ৷ রোজার সময় বারগুলোতে অভিযান চালানোর জন্য পরিচিত এফপিআই৷ তবে গত বছর জাকার্তার তৎকালীন গভর্নর বাসুকি তিজাহাজা পুর্নামার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আয়োজন করে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠে তারা৷ পুর্নামা জাকার্তার প্রথম খ্রিষ্টান গভর্নর ছিলেন৷ নির্বাচনি প্রচারণার সময় তিনি কোরান অবমাননা করেছেন, এই অভিযোগ এনে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল৷ এর প্রতিক্রিয়ায় পুর্নামা পুনরায় গভর্নর হওয়ার ভোটে হেরে যান এবং চলতি মাসে তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ পুর্নামা ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জকো উইডোডোর ঘনিষ্ঠ ছিলেন৷ গভর্নরের ঘটনায় দেশে উগ্র মৌলবাদিদের প্রভাব বাড়ছে– এই আশংকায় সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে৷