যদিও মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক পাতায় তারানা হালিম জানিয়েছেন এমন কোন কথা ভাবছে না সরকার৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘পর্নোসাইটের প্রবেশকারীদের নামের তালিকা করার প্রশ্নই আসে না৷ ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ৷'' তিনি পর্নোসাইটের প্রবেশকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করার ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি বলে জানান৷ এও জানান এটা কখনো হবে না৷ কেননা টেকনিক্যালিও সম্ভব নয়৷ তারানা বলেন, ‘‘মানুষের পরিচয় তথা ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা দিতে আমরা বাধ্য ও বদ্ধপরিকর৷ কিন্তু দুঃখ এটিই যে, এমন তালিকা করা হবে, এ ধরনের ভিত্তিহীন রটনা পড়ে সত্যাসত্য যাচাই না করেই নিজ নিজ ফেসবুক আইডিতে কিছু কিছু ব্যক্তি নেতিবাচক পোস্ট দিতে শুরু করলেন – ট্রল করা শুরু করলেন৷ সভ্যতা, ভব্যতার মাত্রাও অতিক্রম করলেন অনেকেই৷''
তিনি বলেছেন, ‘‘কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে কাউকে অপমান করার অধিকার কারো নেই৷'' তবে দেশের ভেতরের পর্নোসাইট বন্ধের উদ্দেশ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারানা৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘দেশের জনগোষ্ঠীর একটা অংশ পর্ন-আসক্তির কারণে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে৷'' তাই তিনি সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন কাউকে ছোট করে কিছু লেখার আগে যাতে মানুষ শতবার সেটা নিয়ে ভাবে৷
কিন্তু তাঁর এই পোস্টের আগে ও পরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনা অব্যাহত আছে৷ কেউ তাঁর এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছেন৷ আবারও কেউ জানিয়েছেন সাধুবাদ৷
পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘তারানা হালিম বলতে চাচ্ছেন পর্নোসাইটে যারা প্রবেশ করবে, তাদের পরিচয় প্রকাশের কথা তিনি বলেননি৷'' পিনাকী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার শিরোনামগুলো দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস-এর খবরের সূত্র দিয়ে বাংলা ট্রিবিউন, কালের কণ্ঠসহ নানা গণ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হয়েছে৷ আর বাসস লিখেছে, তাদের সাথে আলাপকালে তারানা হালিম বলেছেন, ‘‘ইন্টারনেট সেবা দানকারীদেরকে দেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত পর্নোসাইটগুলো বন্ধ করতে হবে৷ আন্তর্জাতিক সাইটগুলোর ক্ষেত্রে আমরা এমন একটি কৌশল গ্রহণের উপর গুরুত্ব দিচ্ছি যাতে ওইসব সাইটে প্রবেশকারীদের পরিচয় আমাদের কাছে প্রকাশ পাবে৷ তাই পরিচয় প্রকাশ হওয়ার ভয়ে পর্নোসাইটে প্রবেশে বিরত থাকবে৷''
পিনাকী লিখেছেন, তারানা হালিম স্ট্যাটাস না দিয়ে কালের কণ্ঠ, বাসস আর বাংলা ট্রিবিউনে একটা প্রতিবাদলিপি দিচ্ছেন না কেন? তারানা হালিম চাইলে প্রেস কাউন্সিলে মামলাও করতে পারেন৷
মোবাশ্বের হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বাঙলার ঘরে ঘরে আজ হাহাকার৷ যুবক-যুবতীর মনে অজানা ভয় যদি ধরা পড়ে যাই৷ আপা কাজটা ঠিক করলেন না৷''
প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি সংবাদ, ‘বেলজিয়ামে মন্ত্রণালয়ে বসে পর্নো ছবি দেখার কারণে এক নারী বরখাস্ত৷' এটি শেয়ার করে সুমন আল মাহমুদ লিখেছেন, ‘‘শ্রদ্ধেয় ম্যাডাম তারানা হালিম, এইবার আপনি সত্যি সত্যি পর্নোসাইটে প্রবেশকারীদের তালিকাটা পুরো দেশের সামনে প্রকাশ করেন৷ দেশের জনগণ অনেক অনেক বেশি এক্সসাইটেড হয়ে গেছে এখন৷''
মো. আশরাফ অবশ্য পর্নোসাইট বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করায় মাননীয় মন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ সালেহউদ্দীন তাজ লিখেছেন, ‘‘তারানা হালিম চাইলে সকল পর্নোসাইট বন্ধ করা সম্ভব৷ কিন্তু সকল পর্নোসাইট বন্ধ না করে হাস্যকর পদ্ধতি নেওয়ার দরকার কী? এই উদ্যোগ অনেক ভালো তবে বন্ধ করতে হবে শতভাগ৷''
হাসান মেহেদি পর্নোসাইট বন্ধ করার পক্ষে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘সার্চ ইঞ্জিন ডিসপ্লেতে পর্নোগ্রাফির লিঙ্ক দেখায় – কেবল মাত্র এই অজুহাতেই চীন দেশে গুগল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ক'বছর আগে৷ এতে চীন জাতির অগ্রগতির চাকা থেমে যায়নি বা ‘যৌন শিক্ষা' মুখ থুবড়ে পড়ে নাই৷'' পর্নোসাইটগুলো বন্ধ হলে বিকৃত যৌনাচার, যৌনপ্রতিবন্ধিতা কমবে বলে মনে করেন তিনি৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
প্রিয় পাঠক, আপনার কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷
পাঠ্যপুস্তকে যৌন স্বাস্থ্যের বিষয়টি ইতিমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার৷ কিন্তু যৌন শিক্ষা পড়ানো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে৷ শিক্ষকরা এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি, ছাত্র-ছাত্রীরাও বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছে না৷ কী বলছে আজকের তরুণ সমাজ?
ছবি: DW/K. Andradeঅ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী ফারজানা৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হচ্ছে যা থেকে যৌনতা সম্পর্কে জানা যায়৷ এ শিক্ষা প্রত্যেকের জীবনে প্রয়োজন৷ বাচ্চাদের পরিবার এবং শিক্ষকরা এটা শিখাতে পারেন৷ এছাড়া যৌনতা সম্পর্কে তাদের জানার উৎস হতে পারে পরিবার অথবা বন্ধু-বান্ধব৷ তাছাড়া ইন্টারনেট থেকেও যৌনতা সম্পর্কে জানা যায়, জানান ফারজানা৷
ছবি: DWঅ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্রী নাফিসা হক অর্পা৷ নারী-পুরুষের শারীরিক মিলন সম্পর্কে জ্ঞানকেই যৌন শিক্ষা৷ নাফিসার কথায়, ‘‘আমাদের সময়ে ইন্টারনেট এত সহজলভ্য ছিল না৷ তখন বন্ধু, সহপাঠী, আত্মীয়স্বজনরাই ছিলেন মূল ভরসা৷’’ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষাটাকে ট্যাবু হিসেবে না দেখে একে শিক্ষার অংশ করা উচিত৷ এতে করে যৌন বিষয়ক অপরাধ কমবে৷
ছবি: DWনাফিসার মতোই মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস কনক, তবে তিনি পড়ছেন পঞ্চম সেমিস্টারে৷ তাঁর মতে, যৌনতা হচ্ছে বয়সের পরিবর্তনে শারীরিক এক ধরণের চাহিদা৷ আগে এ নিয়ে সীমাবধ্যতা থাকলেও, এখন ছেলে-ছেলে কিংবা মেয়ে-মেয়ের যৌন সম্পর্কও বেশ জনপ্রিয়৷ ‘‘বন্ধুদের আড্ডায় এটাই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়’’, জানান কনক৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার দরকার না থাকলেও এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি৷
ছবি: DWঅ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ইমরান খান৷ তিনি যৌন শিক্ষা বলতে যৌনতা সম্পর্কে সব ধরণের ধারণাকে বোঝেন৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা সবার জন্য একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়৷ আর এ কথাটা শিশুদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য৷ তবে ইমরানের কথায়, ‘‘সঠিক যৌন শিক্ষা স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, পরিবার থেকেই গড়ে উঠতে পারে৷’’
ছবি: DWবেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাফিসা আর কনকের মতো মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়ছেন সাকিব, পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হলো যৌন মিলনের উপর জ্ঞান৷ তবে শিক্ষকদের কাছ থেকে নয়, বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই বন্ধুদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জেনেছেন তিনি৷ সাকিবের মতে, পর্যাপ্ত যৌন শিক্ষা অবশ্যই দরকার৷ যৌনতা সম্পর্কে তাঁর জানার মূল উৎস বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ এবং এ সম্বন্ধে লিখা বিভিন্ন বই৷
ছবি: DWনাফিসা, কনক, সাকিব আর ফারজানার মতোই মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন মাহবুব টিপু৷ অবশ্য তিনি এখনও দ্বিতীয় সেমিস্টারে৷ যৌন শিক্ষা তাঁর কাছে যৌনতা সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষাটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে৷ এ বিষয়ে জানার সবচেয়ে বড় জায়গা বন্ধু-বান্ধব৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো সবারই কম-বেশি জানা থাকে৷ তারপরও এ বিষয়ে শেখার সবচেয়ে বড় মাধ্যম বিভিন্ন ওয়েবসাইট৷
ছবি: DWসামিয়া রহমানও মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী৷ যৌন শিক্ষা বলতে তিনি বোঝেন নারী ও পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক বিষয়ে জ্ঞান৷ তাঁর কথায়, ‘‘যৌন শিক্ষা আমাদের দেশে নিষিদ্ধ একটি বিষয়ের মতো৷ তাই এ বিষয়ে আমি শিক্ষা পায়নি৷’’ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা খুবই জরুরি৷ এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেকেই ভুল পথে চলে যায়৷ তাই বাবা-মায়েরও এ বিষয়ে সন্তানদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা উচিত৷
ছবি: DWটিপু আর সামিয়ার মতো অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মাস কমিউনিকেশন বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাফিউল৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা জীবনের জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে জানা এবং যৌনতার সঠিক প্রয়োগ ও সতর্কতাকে বোঝায়৷ তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু শেখেননি৷ তবে এই শিক্ষাটা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার জন্য বড় কেউ কিংবা সহপাঠীরাই বড় মাধ্যম৷
ছবি: DWমালিহা রহমানও ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হলো শারীরিক সম্পর্কের হাতে কলমে শিক্ষা৷ অবশ্য তাঁর কথায়, যৌন শিক্ষা একটা স্বাভাবিক বিষয় যেটা মানুষ থেকে শুরু করে সব প্রাণীই প্রাকৃতিকভাবে জানে৷ তাঁর মতে, এ বিষয়ে আগে থেকে জানার কিছু নেই, নেই ভালো কোনো দিক৷ যখন এ বিষয়ে জানার প্রয়োজন হবে তখন এমনিতেই তা জানা যাবে৷
ছবি: DW