1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দরকার যৌন শিক্ষা

দেবারতি গুহ৯ আগস্ট ২০১৫

‘পর্নোগ্রাফি’ ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না! হ্যাঁ, এ কথা বলেই ৮৫৭টি পর্নো সাইট নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার৷ পরে সোশ্যাল মিডিয়াসহ, সমাজের নানা স্তর থেকে প্রতিরোধ, প্রতিবাদে নাজেহাল হয়ে সেই নিষেধাজ্ঞা পরিবর্তনে বাধ্য হন মোদী৷

Symbolbild Online Konsum von Pornographie im Internet
ছবি: Fotolia/morrbyte

পর্নো সাইটগুলি জোর করে বন্ধ করা নিয়ে বলিউড-এর প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা রামগোপাল ভার্মা লিখেছিলেন, ‘‘প্রাপ্তবয়স্কদের একটা নির্দোষ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা আর তালেবান বা আইএস যেভাবে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে সে দুটো একই জিনিস৷''

না, আমি সাংবাদিক৷ তাই জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান অথবা ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে ‘পর্নোগ্রাফি' বন্ধ করাকে আমি এক করে দেখবো না৷ তবে আইন করে ইন্টারনেটের মুক্ত জগত থেকে কোনো কিছু নিষিদ্ধ করাকে আমি অবশ্যই ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরবো৷ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য – এ সবের দোহাই দিয়ে আজ পর্নোগ্রাফি, কাল ফেসবুক, পরশু ইউটিউব, আর একদিন হয়ত মোবাইল ফোন বা টেলিভিশন নিষিদ্ধ করতে উদ্যত হবে সরকার৷ বিশ্বাস হচ্ছে না? কেন গত বছরেই তো ‘ভিমেও', ‘ডেলিমোশন' সহ অন্তত ৩২টি সাইট ‘ব্যান' করেছিল সরকার৷ এর মধ্যে বেশ কিছু সাইটের ওপর থেকে পরবর্তীতে নিষিধাজ্ঞা তুলে নিলেও সরকারের মেজাজ-মর্জির ওপর আমাদের যদি সব সময় নির্ভর করতে হয়, তাহলে আর স্বাধীনতার মানে কী?

এখানেই শেষ নয়, ভারতে আরো কত কিছুই তো নিষিদ্ধ করেছে সরকার৷ কয়েকটি রাজ্যে পার্কে-পথে ঘাটে হাত ধরে হাঁটা যাবে না, গরুর মাংস খাওয়া যাবে না৷ এছাড়া সাহিত্য বা সিনেমায় – যেখানেই ‘রামরাজ্য', থুড়ি মোদীর ভারতবর্ষকে এতটুকু খাটো করে দেখানো হয়েছে, অথবা দেব-দেবীর শরীর তুলে ধরা হয়ছে, সেখানেই বিপদ৷ এই যেমন অ্যামেরিকান লেখক ওয়েন্ডি ডনিগার-এর লেখা ‘দ্য হিন্দুস: অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি'-কে হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আখ্যায়িত করে আদালতে মামলা করা হয়েছিল৷ মৌলবাদী হিন্দুদের দাবির মুখে বইটি প্রত্যাহার করতেও শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছিল পেঙ্গুইন৷

তারপর ধরুন বিবিসি-র ‘ইন্ডিয়াস ডটার' নিয়ে যা হলো৷ ২০১২ সালে নতুন দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে নির্মিত এই তথ্যচিত্রটির প্রচার নিষিদ্ধ করলো ভারত৷ এমনকি ইউটিউব থেকেও তুলে নেওয়া হলো ‘ইন্ডিয়াস ডটার'৷ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হলো, হিন্দি সিনেমার তারকারা বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলেন, অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে সরকারের ‘উটপাখি মনোভাব' হিসেবে চিহ্নিতও করলেন৷ তাতে কী এসে গেল? মোদী সরকারের টনক তাতে নড়লো কি? এর মধ্যে বিবিসি তথ্যচিত্রটি প্রচার করায় আমার-আপনার মতো কয়েকজন, মানে যাঁরা সত্যিই আগ্রহী, তাঁরা ছবিটা ঠিকই দেখে নিলেন৷ সেভাবেই পর্নোগ্রাফি দেখতে চাইলে, তার যে বহু পথ আছে – সেটা নিশ্চয় আমাকে আর খুলে বলতে হবে না?

আমি পর্নোগ্রাফির ঘোর বিরোধী৷ কিন্তু একটি কথা ভেবে দেখুন৷ ভারতীয় সংস্কৃতিতে যৌনতা নিয়ে আলোচনা, তার চর্চা কি একেবারে নতুন? কামসূত্রের কথা না হয় ছেড়েই দিচ্ছি, কিন্তু খাজুরাহো অথবা কোনার্কের সূর্য মন্দিরের বেলা? সেখানকার শিল্প-স্থাপত্যে যৌনতা, কাম, সম্ভোগ – এই বিষয়গুলি কি আসেনি? এসেছে, তাহলে?

আসলে ‘পর্নোগ্রাফি' শব্দটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ ‘পর্ন' ও ‘গ্রাফোস' থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ – বারাঙ্গণাদের সম্পর্কে লেখালেখি৷ পর্ন শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘বেশ্যা'৷ আরো পরিষ্কারভাবে বললে, সবচেয়ে নীচুজাতের ’গণিকা’, আমার ভাষায় যৌনকর্মী৷ তাই পর্নোগ্রাফির মানে কোনোভাবেই ‘যৌনকর্মের বিবরণ', ‘কামোদ্দীপক বর্ণনা' অথবা ‘নগ্নতার চিত্রায়ন' – এ সব নয়৷ পর্নোগ্রাফির অর্থ – জঘন্য, সস্তা, ‘বেশ্যা' রূপে নারীর চিত্রায়ন৷ আর আমি নারীর এমন চিত্রায়নের বিরোধী৷ বিরোধী নারীকে যৌন সম্ভোগের সামগ্রী হিসেবে, বেশ্যা হিসেবে দেখতে৷ অথচ দেখুন, আমাদের সংস্কৃতিতে, মহাকাব্যগুলোতে এমন অসংখ্য নারী আমরা পেয়েছি৷ ইন্দ্রের সভায় অপ্সরাদের মনে নেই?

দেবারতি গুহ, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সম্পাদকছবি: DW

আবার ধরুন, মানুষ কে সৃষ্টি করেছে? ঈশ্বর৷ তা ঈশ্বর কে? হ্যাঁ, একজন পুরুষ৷ অর্থাৎ, পুরুষের যৌন আধিপত্যের বাস্তব কাঠামোর মধ্যেই একজন ‘বেশ্যা' টিকে থাকে৷ ঐ কাঠামোয় একজন নারী শুধুমাত্র যৌনবস্তু, তার অন্য কোনো সত্তা নেই৷ তাই পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহৃত নারীর যৌনতারও একইভাবে মূল্যায়ন হয়৷ তাদের আলাদা কোনো জীবন নেই, সুখ-দুঃখের কথা তো ছেড়েই দিলাম৷ শুধু তাই নয়, পর্নোগ্রাফিতে পুরুষ যেভাবে নারীর ওপর বলপ্রয়োগ করে, সেটাও কি বাস্তব নয়? আমি তো বলবো, একেবারে বাস্তব, বস্তুনিষ্ঠ৷ কারণ আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজেও যে এহেন বলপ্রয়োগ নারীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে, প্রতিনিয়ত৷ হচ্ছে না? ঘটছে না ধর্ষণ, দাম্পত্য ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, নির্যাতন অথবা হত্যার ঘটনা?

তাই শুধু পর্নো সাইট বন্ধ করে যৌন অপরাধ কমানো যাবে না, যাবে না ভারতীয় সংস্কৃতিকে গঙ্গাস্নান করানোও৷ এর জন্য যে দেশের প্রতিটি শিশুর ছোট থেকেই যৌন শিক্ষা দরকার, প্রয়োজন নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা, সম অধিকার আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ