সোমবার একটি ভিডিও বিবৃতি প্রকাশ করেছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ১ নভেম্বর থেকে ১০টি কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য থাইল্যান্ডের দরজা খুলে দেওয়া হচ্ছে। ওই সমস্ত দেশ থেকে পর্যটকরা থাইল্যান্ডে এসে কোয়ারিন্টিনে না থেকেই বেড়াতে পারবেন। তবে তাদের ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
কোভিড নেগেটিভ
শুধু ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট নয়, ১০টি কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের পর্যটকদের সঙ্গে রাখতে হবে কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেটও। বিমানবন্দরে ফের তাদের করোনা পরীক্ষা হবে। সেই পরীক্ষার রিপোর্টও নেগেটিভ এলে থাই নাগরিকদের মতোই তারা দেশে ঘুরে বেড়াতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
থাইল্যান্ডে যাঁরা বেড়াতে যান, তাঁদের অবশ্যদ্রষ্টব্যের তালিকায় পড়ে ব্যাংককের কেন্দ্রস্থলে বিরাট জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রাসাদটি৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থাপত্যরীতিরও এ এক চমৎকার নিদর্শন, যা সত্যিই প্রশংসা আর সমীহের দাবিদার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayপ্রথম দেখাতেই তাক লাগিয়ে দেয় প্রাচীন সিয়াম, বর্তমান থাইল্যান্ডের রাজ পরিবারের এই প্রাসাদ, যা ১৯২৫ সাল পর্যন্ত বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে৷ অনবদ্য স্থাপত্যশৈলী এবং অসাধারণ কারুকাজমণ্ডিত এই প্রাসাদ এখন বিশেষ সরকারি অনুষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayঐতিহ্যবাহী থাই শিল্পরীতির সুষমা এই প্রাসাদের সর্বত্র৷ দৃশ্যশোভন ইমারতের পাশাপাশি নজর কাড়ে আপাদমস্তক সেরামিকের কারুকাজ করা অতিকায় দ্বাররক্ষীমূর্তি, যা আধুনিক থাইল্যান্ডেরও অন্যতম প্রতীক৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayশুধু পর্যটকেরা নন, অনেক স্থানীয় মানুষও আসেন এই প্রাসাদ ঘুরে দেখতে৷ স্মৃতি হিসেবে নিয়ে যান সপরিবারে তোলা সেলফি ছবি৷ এই সেলফি তোলার অভ্যাস, বলা বাহুল্য ভিনদেশী পর্যটকদেরও৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayবিশালাকার ইমারত, আর উচ্চতায় তাদের থেকেও বড় বৌদ্ধ স্তূপ৷ দর্শকরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন সেই উচ্চতার দিকে, অপরূপ সৌন্দর্যে অভিভূত হন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayরঙিন কাচ, বহুবর্ণের চিনেমাটির টুকরো দিয়ে কী চমৎকার অলঙ্করণ হতে পারে প্রাসাদের দেওয়াল এবং অন্যান্য অংশে, না দেখলে বিশ্বাস হওয়া কঠিন৷ একটু দূর থেকে এই অলঙ্করণ রত্নখচিত বলে ভুল হতে পারে, এমনই তার ঔজ্জ্বল্য৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayপ্রাসাদের অনেক অংশে, বিশেষত স্তূপের গায়ে দেখা যায় এরকম মূর্তি, যা আসলে ভারবহনকারী স্তম্ভ৷ দর্শনার্থীদের বিপুল উৎসাহ সেই সব মূর্তির ভঙ্গিমা নকল করে ছবি তুলতে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayথাই সংস্কৃতির সঙ্গে খুব গভীরভাবে সংযুক্ত ভারতীয় হিন্দু পুরাণ৷ তারই প্রতিফলন প্রাসাদের অন্দরমহলে দেওয়ালচিত্রে থাই শৈলীতে আঁকা রামায়ণের ছবি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayবুদ্ধদেবের মন্দির আছে রাজপ্রসাদের মধ্যেই৷ সেখানে অন্তরের শ্রদ্ধা জানাবার সুযোগ পান দর্শনার্থীরা৷ সুগন্ধি ধূপ, দীপকাঠি এবং পদ্মফুল রাখা থাকে সেজন্য৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayমূল রাজপ্রাসাদ থেকে আলাদা, কিন্তু একই চত্বরে আছে ইওরোপীয় স্থাপত্যরীতির প্রশাসনিক ভবন, যা এখনও সামরিক দপ্তর হিসেবে সক্রিয়৷ এগুলি পর্যটকদের আওতার বাইরে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayরাজশাসন সে অর্থে আর নেই থাইল্যান্ডে, কিন্তু রাজকীয়তা আর আভিজাত্য থেকে গেছে রাজপ্রাসাদের প্রতিটি কোণে৷ নিজেদের ঐতিহ্যের এতটুকু অযত্ন করেন না থাই নাগরিকরা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay ১০টি দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, চীন এবং অ্যামেরিকা আছে। তবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্রমশ পর্যটনের বিষয়টি আরো সহজ করে দেওয়া হবে। ১ ডিসেম্বর থেকে আরো বেশি দেশের জন্য পর্যটনের দরজা খুলে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন এন্টারটেনমেন্ট পার্কও খুলে দেওয়া হবে ১ ডিসেম্বর থেকে। অ্যালকোহল বিক্রির দোকানও খোলা হবে তখন।
এদিনের বার্তায় প্রধানমন্ত্রী আরো একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। পর্যটন শুরু হওয়ার পরে যদি দেখা যায় যে তাতে দেশের কোভিড সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে, তাহলে ফের পর্যটকদের জন্য দেশের দরজার বন্ধ করে দেওয়া হবে। পরীক্ষামূলকভাবেই ১ নভেম্বর থেকে পর্যটন শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
থাই অর্থনীতি
থাইল্যান্ডের অর্থনীতি বিপুলভাবে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। গত দেড় বছরে দেশের অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড সরকারের সরকারি হিসেব বলছে, গত এক বছরে পর্যটন শিল্প মার খাওয়ায় দেশের ক্ষতি হয়েছে অন্ততপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
হিসেব বলছে, ২০২১ সালের প্রথম আট মাসে থাইল্যান্ডে মোট বিদেশি গিয়েছে ৭০ হাজার। সকলকেই থাইল্যান্ডে নেমে ১৪ দিন কোয়ারিন্টিনে থাকতে হয়েছে। অথচ ২০১৯ সালে এক বছরে চার কোটি পর্যটক গিয়েছিলেন। এ থেকেই পরিষ্কার, থাইল্যান্ডের পর্যটন ব্যবসা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। দ্রুত পর্যটন শিল্পের উন্নতি করতে চাইছে দেশের সরকার।
গত কয়েকদিনে থাইল্যান্ডে করোনার দৈনিক সংক্রমণ হয়েছে ১০ হাজারের আশপাশে। প্রধানমন্ত্রীর ধারণা, আগামী কিছুদিনে সংক্রমণের হার আরো কমবে। বিদেশি পর্যটকরা এলেও সংক্রমণ বাড়বে না বলেই তার অভিমত।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, বিবিসি)