এককালে যা গরিব মানুষের সম্বল ছিল, আজ তা শিল্পকর্মের উপাদান৷ জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট অঞ্চলে নিপুণ হাতে তৈরি কাঠের কাজের অসংখ্য নমুনা দেখা যায়৷ পর্যটকদের কাছেও এই ঐতিহ্য এক বড় আকর্ষণ৷
বিজ্ঞাপন
পিতামহের কাছ থেকেই কাঠ খোদাইয়ের কাজের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ইয়োহানেস ক্যোপফার৷ কাঁচামাল তো বাড়ির সামনেই পাওয়া যায়৷ সব কাজেই কাঠের ব্যবহার হয়৷ ঘর গরম রাখতে, ঘর তৈরি করতে এবং শিল্পকলার কাজে৷ ক্যোপফার বলেন, ‘‘এর একটা ঐতিহ্য রয়েছে৷ আসলে অতীতে ব্ল্যাক ফরেস্ট অঞ্চলের মানুষ খুব গরিব ছিল৷ প্রায় প্রতিটি পরিবারই চাষবাসের উপর নির্ভর করতো৷ বাড়ির চারিদিকে কাঠের টালি লাগাতে হতো৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্রও তৈরি হতো কাঠ দিয়ে৷''
একটি প্রদর্শনীতে এই শিল্পী তাঁর সৃষ্টিকর্মের বৈচিত্র্য তুলে ধরেছেন৷ আছে সুন্দর মূর্তি, বাইবেলের দৃশ্য এবং উৎসবের মুখোশ৷ ব্যার্নাউ উপত্যকার এক প্রান্তে রয়েছে কাঠের কাজের অপূর্ব নিদর্শন৷ সেখানে স্থানীয় উপকথার উপর ভিত্তি করে একটি কাঠের মূর্তি খোদাই করেছেন শিল্পী৷ রূপকথারজঙ্গলের দ্বারপ্রান্তও সেখানেই৷ ইয়োহানেস ক্যোপফার বলেন, ‘‘ব্যার্নাউ-এর রূপকথার জঙ্গল সত্যি জাদুময় এক জগত৷ ছোট ছোট নদী বয়ে যাচ্ছে, অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য৷ সব বয়সের মানুষই সেখানে স্বচ্ছন্দে হেঁটে বেড়াতে পারেন, আবিষ্কারে মেতে উঠতে পারেন৷''
জার্মানির বন-জঙ্গল
জার্মানরা বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন৷ এভাবে অবসর সময় কাটাতে আর হাঁটতেও ভালোবাসেন তাঁরা৷ চলুন সে রকমই জার্মানির কিছু বনানির সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
জাতীয় পার্ক ইয়াসমুন্ড
ইয়াসমুন্ডের এই পার্কটি জার্মানির জাতীয় পার্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট পার্ক৷ বিখ্যাত ব়্যুগেন দ্বীপের একেবারে উত্তরে অবস্থিত এই পার্কের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে, করে মুগ্ধ৷ ইউনেস্কো ২০১১ সালে ইয়াসমুন্ড পার্কটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷
ছবি: Scoopshot/ac-images
এলবে নদীর নিসর্গ
প্রকৃতি সৃষ্ট নিসর্গের মধ্যে অন্যতম নদী পরিবেষ্টিত চরগুলি৷ নিয়মিত বন্যা হওয়ার কারণে এই সব চরে গাছপালা এবং পশুপাখিরা আনন্দে বেঁচে থাকে৷ যেমনটা এখানে, ব্রান্ডেনবুর্গের এলবে নদীতে৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এলবে নদীর এই চরটিকে ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যর অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
হারৎস
জার্মানির মধ্যভাগে অবস্থিত হারৎসের পাহাড়ি অঞ্চল শুধু জার্মানির সবচেয়ে বড় বনভূমি নয়, জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় বনাঞ্চলও বটে৷ ১৮২৪ সালে অন্যতম জার্মান লেখক হাইনরিশ হাইনে তাঁর ভ্রমণ কাহিনিতে এই অঞ্চলকে তুলে ধরেন৷ যাঁরা হাঁটতে পছন্দ করেন তাঁদের কাছে জায়গাটি খুবই প্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
হাইনিশ জাতীয় পার্ক
জার্মানির ট্যুরিঙ্গেন রাজ্যে রয়েছে ‘বুখেন’ বা বীচ গাছে ঘন জঙ্গল৷ এই বনের কয়েকটা গাছ আবার গত ৮০০ বছর ধরে এইভাবে একেবারে সাড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ এর জন্যই ইউনেস্কো ২০১১ সালে এই বনভূমিকে বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ এখানে বনবিড়ালের মতো অনেক বিরল প্রাণীও দেখা যায়৷
ছবি: DW/C. Hoffmann
স্পেসার্ট
জার্মানির দক্ষিণে অবস্থিত বাভারিয়া এবং হেসেন রাজ্যের মাঝামাঝি একটি পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই বনটি৷ আগে স্পেসার্ট ছিল ধনী ও বিশপদের শিকার করার জায়গা৷ শুধু তাই নয়, ঊনিশ শতকে এই জঙ্গলেই আস্তানা গড়েছিল জার্মানির কুখ্যাত ডাকাতরা৷ ১৮২৭ সাল থেকে ‘‘দাস ভির্টহাউস ইম স্পেসার্ট’’ নামে পরিচিতি লাভ করে এই ঘন বনাঞ্চল৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
ব্ল্যাক ফরেস্ট
ব্ল্যাক ফরেস্ট বা কৃষ্ণ অরণ্য নিয়ে নানা রকম ভূতের গল্প প্রচলিত আছে জার্মানিতে৷ আছে এই জঙ্গলের নামে একটি কেক-ও৷ সে জন্যই হয়ত এই কৃষ্ণ অরণ্যের জাতীয় পার্কের মর্যাদা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকে৷ আবার অন্যদের আশঙ্কা, জাতীয় পার্ক হলে এখান থেকে আর ফল সংগ্রহ বা গাছ কাটা যাবে না – জার্মানিতে পরিবেশ রক্ষা সত্যিই যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়!
ছবি: picture-alliance/Ronald Wittek
বাভারিয়ার জাতীয় পার্ক
রাখেল লেক বাভারিয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ হ্রদের মধ্যে একটি৷ লেকটি ঘিরে প্রায় ১০৭০ মিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই বন, যেখানে গত কয়েক দশকে একটি গাছও কাটা হয়নি৷ খুবই নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ এখানে৷ তাই হাঁটার জন্যও খুব উপযোগী এই অঞ্চল৷ ১৯৭০ সালে এই পার্কটিকে জার্মানির প্রথম জাতীয় পার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় পার্ক ব্যার্শটেসগাডেন
এটা আলপস পর্বতমালায় অবস্থিত জার্মানির একমাত্র জাতীয় পার্ক৷ পার্কটি উচ্চ পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থানের কারণে পর্যটকরা এখানে এলে বিরল প্রাণীর দেখা পান৷ তাই তো পক্ষীপ্রেমী আর বন্যপ্রাণী গবেষকদের জন্য এটা দারুণ একটা জায়গা৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
8 ছবি1 | 8
ব্ল্যাক ফরেস্টের এই অংশে সংরক্ষিত এলাকায় পথনির্দেশিকাও আসলে শিল্পকর্ম৷ প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথের প্রায় প্রতিটি বাঁকেই অপেক্ষা করে রয়েছে বিস্ময়৷ তারপর ব্যার্নাউ-এ ফেরার পথ৷ শিল্পের অনুরাগীদের জন্য গ্রামে রয়েছে বিশেষ মিউজিয়াম৷ ক্যোপফার বলেন, ‘‘হান্স টোমা ব্যার্নাউ-এরই সন্তান৷ তিনি এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ ১৯২০ সালে তিনি জার্মানির সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ছিলেন৷ নিসর্গ, পোর্ট্রেট খুবই বাস্তব ভঙ্গিতে আঁকতেন৷ তাঁর ছবি দেখলেই বোঝা যায়, ব্যার্নাউ কত বদলে গেছে৷''
নিজের সময়ের ধারাকে অগ্রাহ্য করে হান্স টোমা বাস্তববাদী চিত্রশৈলীকেই বেছে নেন৷ গ্রামাঞ্চল ছিল তাঁর মোটিভ৷ সেই পথে অবিচল থেকে তিনি কার্লসরুয়ে শিল্পকলা অ্যাকাডেমির অধ্যাপক হয়েছিলেন৷
ব্যার্নাউ-এর পাহাড়ের উপরে রয়েছে আরেক আকর্ষণ৷ ঘণ্টাখানেক হেঁটে সেখানে পৌঁছাতে হয়৷ আবহাওয়া ভালো থাকলে সেখান থেকে ফ্রান্সের আল্পস পর্বতের মঁ ব্লঁ শৃঙ্গও দেখা যায়৷
পথিকদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য অনেক জায়গা রয়েছে৷ অল্পস্বল্প খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা আছে সেখানে৷ যেমন পাউরুটির সঙ্গে ব্ল্যাক ফরেস্টের বিখ্যাত মাংসের টুকরা৷ খেয়ে-দেয়ে নতুন উদ্যম নিয়ে আবার পথে নামতে হবে৷ ব্ল্যাক ফরেস্ট যে অপেক্ষা করে রয়েছে৷