জার্মানিতে বেড়ানোর জায়গা হিসেবে মিউনিখ বা বাভেরিয়া যতটা পরিচিত, ড্রেসডেন ততটা পরিচিত নয়৷ অথচ সেই শহর ও সংলগ্ন এলাকায় পর্যটকরা অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
লোনলি প্ল্যানেট নামের ভ্রমণের বইয়ের প্রকাশক ২০২৩ সালে ড্রেসডেন শহরকে অন্যতম সেরা ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরছে৷ ড্রেসডেন শহরের আকর্ষণ চিরকালই জানা ছিল৷ এর ছয়টা কারণ তুলে ধরা যাক৷
উঁচু জায়গা থেকে ড্রেসডেন শহরের দৃশ্য সত্যি মুগ্ধ করার মতো৷ যেমন এলবে নদীর এক প্রান্ত থেকে বারোক যুগের বিখ্যাত ওল্ড টাউন খুব সুন্দর লাগে৷ অষ্টাদশ শতাব্দীর ইটালীয় শিল্পী কানালেতোর আঁকা ছবির সুবাদে সেই দৃশ্যকে ‘কানালেতো ভিউ' বলা হয়৷
‘চার্ট অফ আওয়ার লেডি' দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরনের পর গোটা বিশ্ব থেকে চাঁদার অর্থ ব্যয় করে সেই গির্জা পুনর্গঠন করা হয়৷ আজ এই উপাসনালয়টি পুনর্মিলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে৷ সোম থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ গির্জার অরগ্যানের সুন্দর সুর শোনা যায়৷ তারপর সেই ভবন ঘুরে দেখতে বিনামূল্যের গাইডেড ট্যুর তো আছেই৷
বেশ কয়েকটি চমকপ্রদ ভবন ও সবুজ বাগানভরা সুইঙার প্রাসাদের কমপ্লেক্স ঘুরে দেখার জন্য অবশ্যই হাতে সময় রাখা উচিত, যা বারোক যুগের অসাধারণ শিল্পকীর্তি হিসেবে পরিচিত৷ সেটি ড্রেসডেন শহরের অন্যতম বিখ্যাত দ্রষ্টব্য৷
সেখানেই ‘ওল্ড মাস্টার্স' চিত্রশিল্পীদের গ্যালারি রয়েছে৷ কয়েকশো বছরের পুরানো প্রায় ৭০০ পেন্টিং সেখানে শোভা পাচ্ছে৷ সেগুলির মধ্যে কানালেতোর বিখ্যাত ড্রেসডেন স্কাইলাইনের ছবিও রয়েছে৷ রাফায়েলের সিস্টিন ম্যাডোনাও সেই সংগ্রহের অংশ৷ সেখানকার দুই দেবদূতকে গোটা বিশ্বের অসংখ্য পোস্টার ও পোস্টকার্ডে দেখা যায়৷
জার্মানির আরেক সুন্দর শহর ড্রেসডেন
04:07
রয়েল প্যালেস ও সেখানকার ‘গ্রিন ভল্ট'-ও আবশ্যক গন্তব্যের মধ্যে পড়ে৷ স্যাক্সনির রাজাদের চেম্বার হিসেবে সেই ভল্টের মধ্যে দুর্লভ অলংকারের অসাধারণ সংগ্রহ রয়েছে৷ ২০১৯ সালে অভাবনীয় ডাকাতির সময় কিছু সামগ্রী চুরি হয়েছিল৷ সৌভাগ্যবশত, চোরাই মালের অংশবিশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷
নিউ টাউন এলাকা না দেখলে ড্রেসডেন ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, যদিও জায়গাটির নাম কিছুটা বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে৷ বিশাল এক অগ্নিকাণ্ডের পর অষ্টাদশ শতাব্দীতে সেই এলাকা তৈরি করা হয়েছিল৷ আজ অনেক তরুণ-তরুণী সেখানে বাস করেন৷ অসংখ্য দোকান, ক্যাফে ও শিল্পীদের সমারোহ জায়গাটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে৷ ড্রেসডেন শহরের বহুমুখী আকর্ষণের কারণ স্পষ্ট৷
অবশেষে স্যাক্সনির সুইজারল্যান্ডের উল্লেখ না করলেই নয়৷ ড্রেসডেনে এলে এলবে নদীর উপর স্টিমবোট ক্রুজে ঘোরার মজাই আলাদা৷ নৌকায় বসেই ঊনবিংশ শতাব্দীর লশভিৎস সেতু পেরিয়ে যাওয়া যায়, যা ‘ব্লু ওয়ান্ডার' নামে পরিচিত৷ কয়েক কিলোমিটার পরেই স্যাক্সনির সুইজারল্যান্ড বলে পরিচিত অঞ্চল চোখে পড়বে৷ চুনাপাথরের সেই পাহাড় হাইকার ও ক্লাইম্বারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়৷
এত কিছু করার আছে, যে একঘেয়েমীর কোনো অবকাশই নেই৷
লোনলি প্ল্যানেটের তালিকায় জার্মানির ড্রেসডেন
২০২৩ সালে ভ্রমণ করা যেতে পারে এমন ৩০টি শহর ও দেশের নাম প্রস্তাব করেছে লোনলি প্ল্যানেট৷ এর মধ্যে জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের রাজধানী ড্রেসডেন আছে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কানালেত্তোর চোখে
ইটালীয় শিল্পী কানালেত্তো ১৭৪৮ সালে যে স্থানে দাঁড়িয়ে ড্রেসডেন শহরের ছবি এঁকেছিলেন উপরের ছবিটি মোটামুটি সেখান থেকে তোলা৷ ছবিতে আউগুসটুস ব্রিজসহ ফ্রাউয়েনকির্শে গির্জা, ড্রেসডেন ক্যাসল ও ড্রেসডেন ক্যাথিড্রাল দেখা যাচ্ছে৷ এই ছবি বলে দিচ্ছে ড্রেসডেনকে কেন এলবে নদীর তীরে অবস্থিত ফ্লোরেন্স বলা হয়৷
ছবি: picture-alliance/A. Franke
ফ্রাউয়েনকির্শে গির্জা
১৯৪৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মিত্রশক্তির চালানো বিমান হামলায় ড্রেসডেনের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছিল৷ শহরকেন্দ্রে অবস্থিত প্রায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ এর মধ্যে ফ্রাউয়েনকির্শে গির্জাটিও ছিল৷ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর সারা বিশ্ব থেকে পাওয়া দানের টাকায় গির্জাটি বর্তমান রূপ পায়৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images
সুইঙ্গার প্যালেস
বারোক যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভবন এটি৷ স্যাক্সোনির ইলেক্টর আউগুসটুস দ্য স্ট্রং ১৮ শতকের শুরুতে এটি নির্মাণ করেছিলেন৷ উনিশ শতকে একে জাদুঘর পরিণত করা হয়৷ সেখানে পেইন্টিং ছাড়াও আছে মাইসনার পোর্সেলিন ও ঐতিহাসিক কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/R. Hirschberger
দ্য গ্র্যান্ড গার্ডেন
শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ড্রেসডেনের সবচেয়ে বড় পার্ক এটি৷ স্যাক্সোনির শাসকেরা গ্রীষ্মের সময়টা সেখানে কাটাতেন৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images
ড্রেসডেন ক্যাসল
শহরের অন্যতম পুরনো এই ক্যাসল রেঁনেসা যুগে তৈরি৷ স্যাক্সোনির ইলেক্টর ও রাজাদের বাসভবন হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়েছে৷ বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এটিও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ ১৯৮৫ সালে এর সংস্কার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB/A. Burgi
গ্রিন ভল্ট
ড্রেসডেন ক্যাসলে প্রায় চার হাজার দর্শনীয় বস্তু আছে৷ এর মধ্যে অনেকগুলো বেশ মূল্যবান৷ ইউরোপের অন্যতম অলঙ্কার সংগ্রহশালা এটি৷ ঐতিহাসিক গ্রিন ভল্ট ও নতুন গ্রিন ভল্টে এসব রাখা আছে৷ ছবিতে গোল্ডেন কফি সার্ভিস দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/M. Hiekel
দ্য ফ্যুয়রস্টেনসুগ
ড্রেসডেন ক্যাসলের এক প্রাচীরে এর অবস্থান৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোর্সেলিন শিল্পকর্ম এটি৷ সেখানে স্যাক্সোনির ৩৫ জন ইলেক্টর, ডিউক, রাজা ও অভিজাত শ্রেণির মানুষের পোর্ট্রেট আছে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images GmbH
জেম্পারঅপেয়া
ইউরোপের অন্যতম অভিজাত অপেরা এটি৷ ১৮৭৮ সালে স্থপতি গটফ্রিড জেম্পার এটি তৈরি করেন৷ সারা বিশ্বে এর অ্যাকুস্টিকের পরিচিতি রয়েছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ ১৯৮৫ সালে এটি পুনরায় চালু করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images
এলবে নদীর পাড়ে
নদীর পাড় থেকে শহরের একটা সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়ে৷ গ্রীষ্মে সেখানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়৷ প্রতি গ্রীষ্মে ‘ড্রেসডেন ক্যাসল নাইট’ আয়োজন করা হয়৷ সেদিন শহরের বিভিন্ন প্রাসাদে কনসার্ট ও আতশবাজির আয়োজন করা হয়৷ এবছর ১৫ জুলাই এই আয়োজন করা হবে৷
ছবি: picture-alliance/A. Franke
এলবে নদীতে স্টিমার ভ্রমণ
ড্রেসডেনে এখনও নয়টি প্যাডেল স্টিমার চালু আছে৷ বিশ্বের আর কোনো শহরে এতগুলো প্যাডেল স্টিমার নেই৷ নয়টির মধ্যে কয়েকটি উনিশ শতকের শেষে নির্মিত৷ শহরের কোলাহোল থেকে মুক্তি পেতে এসব স্টিমারে করে এলবেতে ঘুরে আসা যেতে পারে৷