নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরের আকর্ষণ কম নয়৷ গোটা বিশ্বের পর্যটকরা সেখানে ঢুঁ মারেন৷ মাত্রাতিরিক্ত পর্যটনের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অসুবিধা দূর করতে পৌর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
আমস্টারডামে পর্যটকরা মূলত খালে ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন, ফুলের বাজার ঘোরেন, সুন্দর ছবি তোলেন এবং অবশ্যই কফি শপ ও লাল বাতি এলাকায় ঢুঁ মারেন৷ পর্যটনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার প্রশ্নে মতানৈক্য রয়েছে৷
শহরের পথচারিদের মধ্যও এ বিষয়ে নানা মত শোনা গেল৷ একজন বলেন, ‘‘আমার মতে পর্যটন আমস্টারডাম এবং নেদারল্যান্ডসের জন্য ভালো৷ আমি জানি, বার্সেলোনা এমন কিছু করার চেষ্টা করছে৷ এয়ারবিএনবি-র মাধ্যমে মানুষকে সহজে ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে দেওয়া হচ্ছে না৷ তাদের লাইসেন্স নিতে হচ্ছে৷ আমার ধারণা, আরো বেশি হোটেল ঘরবাড়া বাড়িয়ে পর্যটকদের আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে৷ শেষ পর্যন্ত দেশটির আরো ক্ষতি হবে৷''
অন্য এক পথচারী মনে করেন, স্থানীয় মানুষ যে পর্যটকদের ঢলে নিয়ন্ত্রণ চাইছে, আমরা সেটা তিনি পুরোপুরি বুঝতে পারছেন৷ আরেকজনের মতে, পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসছে৷ ভ্রমণ অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ ফলে সুন্দর জায়গাগুলিতে খুব বেশি ভিড় হচ্ছে৷
ডিনখেমান কোমো ‘এনাফ ইজ এনাফ' নামের নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি৷ তিনি চান, পৌর কর্তৃপক্ষ মাত্রাতিরিক্ত পর্যটনে রাশ টানতে আরো উদ্যোগ নিক৷ তিনি বলেন, ‘‘বিদেশ থেকে মানুষ আসে৷ তারা টিকটকে দেখে, এখানে বিশেষ এক ধরনের কুকি পাওয়া যায়৷ তাই এই সব মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছে৷ এখানে অনেক যানের ভিড়৷ ফলে পথচারীরা নীরবে রাস্তার উপর হাঁটতে পারছে না৷''
মাত্রাতিরিক্ত পর্যটনের মোকাবিলা করতে পৌর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে৷ বর্তমানে ছুটি কাটানোর জন্য স্বল্পমেয়াদী বাসাভাড়া অনেক বেড়ে গেছে৷ ইউরোপে প্রায় অন্য কোথাও রাত কাটানোর জন্য এত চড়া মূল্যের কর দিতে হয়না৷ শহরের কেন্দ্রস্থলে বিশাল টুরিস্ট বাসের প্রবেশ নিষিদ্ধ৷ রেড লাইট এলাকায় বার ও নাইটক্লাব আজকাল আগেই বন্ধ করে দিতে হয়৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষ আরো পদক্ষেপ নিতে চায়৷
এলাকার মেয়র হিসেবে আমেলি স্টেন্স আমস্টারডাম পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি৷ তিনি জানান, ‘‘যেমন আমরা হোটেল নির্মাণ বন্ধ করছি৷ শহরের কেন্দ্রস্থলে কোনো নতুন হোটেল নেই৷ ফলে আরো কম পর্যটক সেখানে থাকতে পারছেন৷ ২০৩০ সালের মধ্যে নদীতে ক্রুজের সংখ্যা অর্ধেকে কমানোর বিষয়ে আমরা ভাবনাচিন্তা করছি৷ এর ফলেও চাপ কিছুটা কমবে৷ তা সত্ত্বেও পর্যটকদের সংখ্যা কমাতে শহরে আর কী করা যেতে পারে, সেটা স্থির করা কঠিন৷''
পৌর কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রস্থলের বাইরে কয়েকটি ভবন অধিগ্রহণ করেছে৷ আমস্টারডামের যে সব বাসিন্দা কেন্দ্রস্থলে ভিড়ে ভরা এলাকায় আর যেতে চায় না, এর ফলে তাদের সুবিধা হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
চঞ্চল, আধুনিক, ঐতিহ্যবাহী আমস্টারডাম
ইউরোপের যে ক’টি শহর সত্যিই দর্শনীয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহরগুলির মধ্যে নিশ্চয় করে পড়বে আমস্টারডাম৷ এ শহরে স্ফূর্তি-আমোদের কোনো অভাব নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/K. Van Weel
আমস্টারডামের খাল
আমস্টারডাম শহরটিকেও বলা হয় ‘উত্তরের ভেনিস’৷ শহরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার খাল আছে, ওলন্দাজ ভাষায় যাকে বলা হয় ‘গ্রাখটেন’৷ এগুলি তৈরি হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীতে, প্রধানত মালপত্র বহনের জন্য৷ আজ এই খালগুলি একটি বড় টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
সাইকেল, সাইকেল
আমস্টারডামকে বলে সাইকেলের শহর৷ এখানে মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যাই বেশি, প্রায় আট লক্ষ৷ সাইকেলে চড়ে জলের শহর আমস্টারডাম দেখার মজাই আলাদা!
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
আমস্টারডামের স্থাপত্য
তেকোনা ‘গেবল’ বা চুড়ো দিয়ে সাজানো বাড়িগুলোকে আমস্টারডামের ট্রেডমার্ক বলা চলে৷ বিভিন্ন ধরনের চুড়ো দেখে বাড়ি তৈরির ইতিহাসের একটা আন্দাজ করা যায়৷ খালের ধারের বাড়িগুলোর প্রতিটিই যেন এক টুকরো ইতিহাস৷
ছবি: picture-alliance/RIA Novosti/A. Kudenko
অঙ্কণশিল্প
আমস্টারডামে শিল্পকলা দেখতে গেলে বেশ কয়েক দিন সময় হাতে করে যেতে হয়: রেমব্রান্ট, হাল্স, ভেরমিয়ার, স্টেন প্রভৃতি ডাচ মাস্টার্স বা ওস্তাদ ওলন্দাজ চিত্রকরেরা তো আছেনই – ফান গখকে (বানানভেদে ভ্যান গগ) ভুললেও চলবে না৷ তবে প্যারিসে মোনালিসা যা, আমস্টারডামে রেমব্রান্ট-এর ‘দ্য নাইট ওয়াচ’ বা ‘নৈশ প্রহরা’ ছবিটিও তা৷ দেখতে পাওয়া যাবে রাইখ্স-মিউজিয়ামে৷
ছবি: picture-alliance/RIA Novosti/A. Kudenko
অ্যান ফ্র্যাঙ্ক
আমস্টারডামের প্রিন্সেনগ্রাখ্ট খালের ধারের একটি বাড়িতেই আনে ফ্রাঙ্ক ও আরো সাতজন দু’বছর ধরে লুকিয়ে ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন৷ ইহুদি কিশোরীর ডায়েরিটি অনুদিত হয়েছে বিশ্বের ষাটটি ভাষায়৷ মূল বাড়িটি আজ একটি মিউজিয়াম; এমনকি সিক্রেট অ্যানেক্সটিও বজায় আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Vrijdag
সূর্যমুখী
ভিনসেন্ট ফান গখ একাধিকবার সূর্যমুখী ফুলের ছবি এঁকেছিলেন৷ আজ সেগুলিকে অমূল্য বললেও কম বলা হবে৷ আমস্টারডামের ফান গখ মিউজিয়ামে শুধু তাঁর সাতশো ছবি আর ড্রয়িংই নয়, সেই সঙ্গে শিল্পীর বহু চিঠি ও তাঁর সমসাময়িক শিল্পীদের আঁকা নানান ছবি রাখা রয়েছে৷ ২০১৫ সালে মিউজিয়ামটি যখন আবার খোলা হয়, তখন তার চারপাশে সূর্যমুখী ফুলের মেলা বসেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.de Waal
নিষিদ্ধ পল্লী
যৌনতার সঙ্গে আমস্টারডামের সম্পর্ক শুধু তার রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টেই প্রতিফলিত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সেক্স মিউজিয়াম এখানেই, তার নাম ভেনাস টেম্পল৷ এই মিউজিয়ামে যৌনতার ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পাওয়া যায়৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম গণিকাবৃত্তির মিউজিয়াম৷ নাম: রেড লাইট সিক্রেটস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Utrecht
কফি শপ
মারিজুয়ানা, অর্থাৎ গঞ্জিকাসেবনের প্রতি আমস্টারডামের নীতি যে খুব উদার, তা বিশ্ববাসী জানে৷ শহরের বিভিন্ন কফি শপে কফির সঙ্গে সঙ্গে ‘জয়েন্ট’ স্মোক করা চলে, যা বহু টুরিস্টদের টানে৷ তার একটি ফলশ্রুতি: আমস্টারডামে ড্রাগ টুরিজম নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache
ভবিষ্যতের আমস্টারডাম
প্রথাগত রেনেসাঁস স্থাপত্যের পাশাপাশি গজিয়ে উঠছে অত্যাধুনিক নানা বাড়ি ও সেতু, যেমন জনপ্রিয় লেক্স ফান ডেল্ডেন ব্রিজ৷ রেনজো পিয়ানোর সৃষ্ট নেমো বিজ্ঞান সংগ্রহশালা (ছবি) আমস্টারডাম বন্দরের নৌ-ঐতিহ্যের কথা জানাচ্ছে, আবার ভবিষ্যতের আভাস দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache
9 ছবি1 | 9
রেড লাইট এলাকার কণ্ঠ তুলে ধরার জন্য এক রেডিও স্টেশন এমনই এক সৃজনশীল কনসেপ্ট৷ রেড লাইট জ্যাজ রেডিও-র মার্টেন ব্রুওয়ের বলেন, ‘‘পাড়ার সবাই যাতে নিজেদের কথা বলতে পারে, এটা মূলত তারই এক মঞ্চ৷ সে কারণে স্টেশনের জায়গাটিকে ট্যাবু বলা হয়৷ অর্থাৎ এখানে বাছবিচার না করে সব কিছু বলা যায়৷''
‘‘আই লিভ হিয়ার' নামের এক সৃজনশীল অভিযানের আওতায় রেড লাইট এলাকার বাসিন্দাদের ছবি জানালায় রাখা হয়, যাতে সবাই সেগুলি দেখতে পারে৷ পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবেশ সৃষ্টি করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷
রেড লাইট এলাকায় পর্যটকদের পার্টির পরিবেশকে গুরুত্ব না দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ সেই পাড়ার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে চায়৷ বর্তমানে বোট ট্যুরে স্থানীয় বাসিন্দারাই গাইড হিসেবে পর্যটকদের জায়গাটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন৷
আমস্টারডাম চিরকাল পর্যটকদের আকর্ষণ করবে৷ তবে পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা শহরের কেন্দ্রস্থলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন বলে পৌর কর্তৃপক্ষ আশা করছে৷ সেইসঙ্গে আরো কম পর্যটক মদ্যপ অবস্থায় বাসায় ফিরবেন বলেও মনে করা হচ্ছে৷
আমস্টারডামের জাদুঘরটিতে অন্য সময় শোভা পায় বিখ্যাত শিল্পীদের শিল্পকর্ম৷ তবে এখন সেখানে দেখা যাবে পিঁপড়ারূপী ৭০০ মানুষ৷ আরো চমক থাকবে আগামী কয়েক মাসে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Piroschka van de Wouw/REUTERS
এত বড় পিঁপড়া!
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের রিকসমিউজিয়ামে কয়েকদিন পরে গেলে দেয়ালে দেখবেন শুধু পিঁপড়া আর পিঁপড়া৷ সাধারণ কোনো পিঁপড়া যে সেগুলো নয়, তা এই ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন৷ এত বড় পিঁপড়া আগে কখনো স্বপ্নেও মনে হয় দেখেননি, তাই না?
ছবি: Piroschka van de Wouw/REUTERS
জাদুঘরে পিঁপড়া কেন
রিকসমিউজিয়াম ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ডটের ‘নাইটওয়াচ’ বা এমন বিখ্যাত শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য বিখ্যাত৷ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানে চলবে ‘ক্রলি ক্রিয়েচার্স’ অর্থাৎ যেসব প্রাণি হামাগুড়ি দিয়ে চলে, তাদের প্রদর্শনী৷ সুতরাং এসব দানবাকৃতির পিঁপড়া তো বটেই, এমনকি ব্যাঙ, সাপ, মাকড়শা ইত্যাদিরও দেখা মিলবে সেখানে৷
ছবি: Piroschka van de Wouw/REUTERS
দানবীয় পিঁপড়ারা যার সৃষ্টি
এমন ৭০০ দানবীয় পিঁপড়া নিয়ে রিকসমিউজিয়ামে এসেছেন রাফায়েল গোমেজ বারোস৷ কলম্বিয়ার এই শিল্পী জানালেন, পিঁপড়াগুলোর মাধ্যমে আসলে তিনি অভিবাসীদের জীবন তুলে ধরছেন৷ সরকার এবং গেরিলা গ্রুপগুলোর যুদ্ধের কারণে বহু মানুষ কলম্বিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ তাই পিঁপড়ার মাধ্যমে ঘরছাড়া, দেশছাড়া মানুষদের জীবনসংগ্রাম ফুটিয়ে তুলছেন তিনি৷
ছবি: Piroschka van de Wouw/REUTERS
পিঁপড়ার মাথা পিঁপড়ার নয়
এই পিঁপড়াগুলোর মাথা আসলে মানুষের মাথার খুলির অংশ৷ রাফায়েল গোমেজ বারোস মনে করেন, যাদের জন্য মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় তাদের নৃশংসতা বুঝাতে এবং যারা ভিন দেশে বেঁচে থাকার পণ নিয়ে আজীবন লড়ে যান তাদের লড়াকু মানসিকতা বোঝাতে মানুষের মাথাই দরকার, তাই পিঁপড়ার দেহে বসানো হয়েছে মানুষের খুলি৷
ছবি: Piroschka van de Wouw/REUTERS
জেসমিনের ডাল দিয়ে পিঁপড়ার পা
কলম্বিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় বিভিন্ন স্থানে মৃতদেহ পড়ে থাকতো৷ পচে যেতো দেহ৷ পচা দেহ দুর্গন্ধ ছড়াতো৷ দুর্গন্ধ আড়াল করতে জেসমিন গাছের ডালপালা ছড়িয়ে দেয়া হতো মৃতদেহের ওপর৷ রাফায়েল গোমেজ বারোস তাই তার পিঁপড়ার পা বানিয়েছেন জেসমিন গাছের ডাল দিয়ে৷
ছবি: Piroschka van de Wouw/REUTERS
দেশে দেশে পিঁপড়া প্রদর্শনী
রাফায়েল গোমেজ বারোস এই পিঁপড়া প্রদর্শনীর নাম দিয়েছেন ‘হাউস টেকেন’৷ কলম্বিয়া, বলিভিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আর সুইডেনের পর এবার নেদারল্যান্ডসের রিকসমিউজিয়ামে দেখাতে এসেছেন তার ৭০০ পিঁপড়ারূপী অভিবাসী মানুষকে৷