1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পর্যটন মানচিত্রে  বিভূতিভূষণের পানিতর

৩১ অক্টোবর ২০১৯

ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি৷ সেই পানিতর গ্রামে অবস্থিত ভগ্নপ্রায় বাড়িটির সংস্কারের কাজ চলছে৷ এই এলাকাকে পর্যটনের মানচিত্রে জুড়তে চায় প্রশাসন৷

Bangladesch Bibhutibhushan Bandyopadhyay in Panitar
ছবি: DW/P. Samanta

বিস্মৃতি বাঙালির মজ্জাগত৷ অতীতের অনেক কিছু চোখের সামনে হারিয়ে যেতে বসলেও বাঙালি হাত গুটিয়ে থাকে৷ এই দুর্নাম ঘোচানোর চেষ্টা করছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার পানিতর গ্রাম৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একদিকে পানিতর, অন্যদিকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা৷ এই গ্রামেই ছিল বিভূতিভূষণের শ্বশুরবাড়ি৷ ১৯১৭ সালে এই গ্রামের বাসিন্দা কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের মেজ মেয়ে গৌরীদেবীকে বিয়ে করেন তিনি৷ মুখোপাধ্যায় পরিবারের উত্তরসূরীরা কয়েক বছর আগে এই বাড়িটি ছেড়ে চলে গিয়েছেন৷ তারপর থেকে তিনতলা বাড়ি ও ঠাকুরদালান পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল৷ বাড়ি ঘিরে ধরেছিল আগাছা৷ ঢেকে গিয়েছিল জঙ্গলে৷ সেই বাড়ি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে৷ সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া অর্থে ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাড়িটি সংস্কারের কাজ চলছে৷

সৌরভ মিত্র

This browser does not support the audio element.

বসিরহাট ১নং ব্লকের সাবেক বিডিও সৌরভ মিত্র প্রত্যক্ষভাবে এই কাজের তদারকি করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গৌরীদেবীর পরিবার ঘরবাড়ি রক্ষা করতে পারছিলেন না৷ তারা সরকারের কাছে এই বাড়ি সংস্কারের আবেদন করেন৷ তার ভিত্তিতে দু'টি ভাগে কাজ চলছে৷ এক, বাড়ির মূল কাঠমো অক্ষুণ্ণ রেখে সংস্কার৷ দুই, এই বাড়ির লাগোয়া জমিতে কমিউনিটি হল ও যাত্রীনিবাস নির্মাণ৷''  পানিতর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, নির্মাণকর্মীরা ভগ্নপ্রায় বাড়িটিতে সিমেন্টের প্রলেপ দিচ্ছেন৷ মূল ভবনের বাইরের অংশে এই কাজ অনেকটাই সারা৷ ঠাকুরদালানের কাজ এখনো শুরু হয়নি৷ আগাছা জঙ্গল কেটে সাফ করে দেওয়া হয়েছে৷ বাড়ির চারপাশে পাঁচিল তুলেছে ইটিন্ডা-পানিতর গ্রাম পঞ্চায়েত৷ তারাই বাড়ির লাগোয়া পুকুরটিরও সংস্কার করেছে৷ ইতিমধ্যেই, তৈরি হয়েছে কমিউনিটি হল৷ এর দ্বিতল যাত্রীনিবাস গড়ে তোলা হবে৷ সৌরভ মিত্র জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে দুই দফায় ২০ লক্ষ টাকা করে ৪০ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে৷ শুধু বাড়ি সংস্কারের জন্য আরও ১৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তবর্তী পানিতরে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে৷ এর কেন্দ্রে রয়েছেন বিভূতিভূষণ৷ সে জন্যই যাত্রীনিবাসের পরিকল্পনা৷ হোম স্টে-র ব্যবস্থাও হবে৷ ইছামতীতে নৌবিহার বাড়তি আকর্ষণ হতে পারে৷''

মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

১০০ বছর আগের বিভূতিভূষণের সেই পানিতরকে এখন খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়৷ তবু গাছপালায় ঢাকা মেঠো পথ, নিবিড় বাঁশবন, শ্যাওলা জমে থাকা ডোবা এখনও রয়েছে৷ প্রকৃতিপ্রেমিক বিভূতিভূষণ এই জায়গার টানে বারবার তাঁর শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন৷ তাঁর লেখায় ফিরে ফিরে এসেছে পানিতর৷ যদিও মাত্র বছরখানেক বেঁচে ছিলেন তার স্ত্রী গৌরী দেবী৷ শুধু শ্বশুরবাড়ি নয়, সাহিত্যিকের পূর্বপুরুষদের বাস ছিল এই গ্রামেই৷ গৌরী দেবীর মৃত্যুর ২০ বছর পর ১৯৪০ সালে সাহিত্যিক দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ দ্বিতীয় স্ত্রী রমাদেবীর সন্তান তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রয়াত৷

১ নভেম্বর বিভূতিভূষণের প্রয়াণবার্ষিকী৷ ১৯৫০ সালে এই দিনেই তাঁর জীবনাবসান হয়৷ শ্বশুরমশাইয়ের পানিতরকে নিয়ে আবেগ ও টান অনুভব করেন তারাদাসের স্ত্রী মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথম স্ত্রীকে খুব ভালবাসতেন আমার শ্বশুরমশাই৷ স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি খুব ভেঙে পড়েছিলেন৷ মৃত্যুর পর আত্মা কোথায় যায়, সেটা জানতে তিনি উদগ্রীব হয়ে পড়েছিলেন৷ পানিতর তাদের এই গভীর সম্পর্কের প্রেক্ষাপট৷'' পানিতরের বাড়ির তিনতলায় বিয়ের দিন যে ঘরে বিভূতিভূষণ রাত কাটিয়েছিলেন, সেটিরও সংস্কারের কাজ চলছে৷ সেই বাড়ির ভগ্নদশায় ব্যথা পেতেন মিত্রা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার শ্বশুরমশাইয়ের প্রিয় ছিল চাঁপাফুল৷ ওই ঘরের শয্যায় আমি চাঁপাফুল ছড়িয়ে এসেছিলাম৷ পানিতরের বাড়ির সংস্কার খুবই দরকার ছিল৷'' 

মিত্রার আক্ষেপ, ব্যাপারকপুরে বিভূতিভূষণের স্মৃতি বিজড়িত ভূতনাথ কুটির হারিয়ে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই বাড়িতে পথের পাঁচালির জন্য সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে রমাদেবীর চুক্তি হয়েছিল৷ সেই বাড়ি ভেঙে বহুতল হচ্ছে৷ আমি পুরসভাকে বলেছি, কিন্তু কিছু হয়নি৷ এটা খুবই দুর্ভাগ্যের৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ