1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পশ্চিম' বাদ, এবার শুধুই বাংলা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা৩ আগস্ট ২০১৬

পূর্ববঙ্গ, বা ইস্ট পাকিস্তান যদি সগৌরবে বাংলাদেশ হতে পারে, তা হলে স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা হবে না কেন? প্রশ্ন উঠেছিল৷ এবার ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উদ্যোগী হয়েছেন, রাজ্যটির নাম বদলাতে৷

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

ক্যালকাটা থেকে কলকাতা হয়েছিল আগেই, এবার ওয়েস্ট বেঙ্গল থেকে বাদ যেতে বসেছে ‘ওয়েস্ট'৷ ভবিষ্যতে শুধুই বেঙ্গল হিসেবে পরিচিত হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ৷ বাংলাতেও রাজ্যের নাম হবে ‘বাংলা', অথবা ‘বঙ্গ'৷ এই মর্মে একটি সিদ্ধান্ত পাস হয়ে গেল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে৷ সিদ্ধান্তটি এরপর রাজ্য বিধানসভার একটি বিশেষ অধিবেশনে অনুমোদিত হবে৷ এবং তারও পরে পরিবর্তিত নামটি যাবে সংসদের অনুমোদনের জন্য৷

ওয়েস্ট বেঙ্গল থেকে ‘ওয়েস্ট' শব্দটি বাদ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল অনেক আগেই, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে৷ সেটাও কোনো আবেগতাড়িত ভাবনা থেকে নয়, সম্পূর্ণ ব্যবহারিক কারণে৷ বিষয়টা প্রথম উত্থাপন করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত৷ বলেছিলেন, যখনই জাতীয় স্তরে রাজ্যগুলির কোনো সভা হয়, প্রতিনিধিদের ডাক পড়ে রাজ্যের নামের আদ্যক্ষর ধরে৷ সেই হিসেবে ওয়েস্ট বেঙ্গলের ডাক পড়ে সবার শেষে, যখন সবার বক্তব্য শেষ হয়ে যায় এবং সভা প্রায় ভাঙার মুখে৷ অনেকসময়ই এরকম হয় যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় আলোচনার জন্যে থাকে, কিন্তু সেই আলোচনায় যোগ দেওয়ার লোক পাওয়া যায় না৷

সেই বাম সরকারের আমলেই ব্রিটিশদের দেওয়া ক্যালকাটা নাম বদলে করা হয়েছিল কলকাতা, বাংলাভাষীরা ঠিক যেভাবে শহরটার নাম উচ্চারণ করেন৷ এর আগে একইভাবে এবং একই যুক্তিতে বম্বে হয়েছিল মুম্বই, ম্যাড্রাস বা মাদ্রাজ হয়েছিল চেন্নাই এবং ব্যাঙ্গালোর হয়েছিল বেঙ্গালুরু৷ একেবারে হালে ভারের রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে গুরগাঁওয়ের নাম বদলে হয়েছে গুরুগ্রাম৷ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটির নামও বদলে ফেলার কথা হয়েছিল তখন, যা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি৷ কিন্তু জন-মানসিকতার একটা আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল তখনই যে পশ্চিমবঙ্গ নামের মধ্যে দেশভাগের, বাংলা দ্বিখণ্ডিত হওয়ার একটা অপ্রিয় ইতিহাস জড়িয়ে আছে, যা এবার বিস্মৃতির বাক্সে ভরে দেওয়ার সময় হয়েছে৷ বলা হয়েছিল, একসময়ে ইস্ট পাকিস্তান, বা পূর্ববঙ্গ যদি স্বাধীনতার পর সগৌরবে বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ কেন বঙ্গ, বা বাংলা হবে না!

বিপুল ভোটে জিতে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরই উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা৷ আইন অনুযায়ী রাজ্যের নাম বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ বাংলার কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা সবাই সোৎসাহে এই নাম-বদলকে স্বাগত জানাচ্ছেন৷ বর্ষীয়ান সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যদিও এটাকে নাম বদল বলতে রাজি নন৷ তিনি এটাকে বলেছেন উৎসে ফেরা, ইতিহাসের কাছে ফেরা৷ একসময় পূর্ব ভারতের গোটা অঞ্চলটাই পরিচিত ছিল বঙ্গ, বা বঙ্গদেশ নামে৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে'-তে দ্রাবিড়, উৎকলের পর সেই বঙ্গেরই উল্লেখ পাওয়া যায়৷ কাজেই শীর্ষেন্দুবাবুর কাছে এ আদতে সেই ঐতিহাসিক সত্যেরই পুনরুদ্ধার৷

একা শীর্ষেন্দু নন, কবি শঙ্খ ঘোষ, সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, নবনীতা দেব সেন, বাণী বসু, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নাট্য নির্দেশক বিভাস চক্রবর্তীর মতো অনেকেই এই নাম বদলের সিদ্ধান্তে সহমত৷ আবার কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বা গায়ক-নির্দেশক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় মনে করছেন, যা হবে, তা যেন সবার মতামত যাচাই করে তবেই হয়৷ নীরেন্দ্রনাথ বলেছেন বিশিষ্টজনের মত নিতে, অনিন্দ্য প্রস্তাব দিয়েছেন গণভোটের৷ আবার সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী স্পষ্টই জানিয়েছেন, তিনি এই নাম বদলের বিপক্ষে৷ কারণ পশ্চিমবঙ্গ নামের সঙ্গে যে দেশভাগের স্মৃতি, ঐতিহাসিক কারণেই তা বাঁচিয়ে রাখা দরকার বলে তাঁর অভিমত৷

তবে নামের আদ্যক্ষরের হিসেবে সভায় ডাক পড়লে, ওয়েস্ট বেঙ্গলের থেকে বেঙ্গলের সুবিধে যে অনেক বেশি, সে ব্যাপারে সবাই একমত৷

রাজনৈতিকভাবে অবশ্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা হচ্ছে৷ সমালোচনায় সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরি, কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইঞা, প্রাক্তন সি পি এম সাংসদ, দৌড়বীর জ্যোতির্ময়ী শিকদার এবং বিজেপির জর্জ বেকার৷ এঁদের সবার যুক্তি অবশ্য একটাই৷ এতদিন ধরে যা চলছে চলতেই পারত৷ খামোকা নাম বদলের কোনো দরকার আছে কি?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ