1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে আরো কেন্দ্রীয় বাহিনী চায় কমিশন

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিপুল সংখ্যায় আধাসেনা চাইল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। অন্যান্য রাজ্যের থেকে অনেক বেশি।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। হরিয়ানার নুহ-তে তোলা ছবি।
পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চায় নির্বাচন কমিশন। ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW

ভারতের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মাস তিনেকের মধ্যে। আগামী মার্চে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। দেশজুড়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। বাহিনীর ব্যবস্থা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাদের কাছে নিয়মমাফিক বাহিনী চেয়ে আবেদন জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

বাহিনীর জন্য আবেদন

গোটা দেশের জন্য তিন হাজার চারশ কোম্পানি বাহিনী প্রয়োজন বলে কমিশন জানিয়েছে কেন্দ্রকে। প্রতি কোম্পানিতে গড়ে একশ জন জওয়ান থাকেন। সেই হিসেবে মোট জওয়ানের সংখ্যা তিন লক্ষ ৪০ হাজার। কোন রাজ্যের জন্য কত কোম্পানি বাহিনী প্রয়োজন, তা চিঠিতে উল্লেখ করেছে কমিশন। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

কমিশনের আর্জি, চলতি বছরে লোকসভা নির্বাচনের জন্য এই রাজ্যে প্রায় ৯২০ কোম্পানি আধাসেনা লাগবে। গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এর থেকে ১৭৭ কোম্পানি কম বাহিনী নিয়ে ভোট পরিচালনা করেছিল কমিশন। সেবার রাজ্যে ৭৪৩ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গের জন্য যত কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হয়েছে, তা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতা থাকলেও সেখানে ৬৩৫ কোম্পানি আধাসেনা কেন্দ্রের কাছ থেকে চেয়েছে কমিশন। পশ্চিমবঙ্গের থেকে এই সংখ্যা ২৮৫ কোম্পানি কম। তবে জম্মু ও কাশ্মীরে ইতিমধ্য়েই প্রচুর সংখ্যক আধা সেনা ও সেনা মোতায়েন আছে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় সমান। এই রাজ্যে ৪২টি আসন, বিহারে ৪০টি। অথচ বিহারের জন্য মাত্র ২৫৫ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হয়েছে। আবার উত্তরপ্রদেশের আসন সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দ্বিগুণ। সেখানে লোকসভা কেন্দ্র ৮০টি। যোগী আদিত্যনাথের এই রাজ্যে ২৫২ কোম্পানি আধাসেনা লাগবে বলে আবেদন জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

সহিংসতার নিদর্শন

ভারতে রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতার ঐতিহ্য আছে। ২০১৯-এর লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ও পরে বহু অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত চালাচ্ছে। 

সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে হাড় হিম করা যত অভিযোগ

04:26

This browser does not support the video element.

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন সারা দেশে ১৪ জন রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সাতজন মারা যান পশ্চিমবঙ্গে৷ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গে ৬৯৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে ১১ জন নিহত হন।

নির্বাচন ছাড়াও বীরভূমের বগটুই থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর, বিভিন্ন জায়গায় বারবার ভয়াবহ হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির চলতি ঘটনাক্রম ইঙ্গিত দিচ্ছে নির্বাচন কতটা অগ্নিগর্ভ হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে ভোটের আগে বিভিন্ন এলাকায় রুট মার্চ, নির্বাচনের দিনে বুথে পাহারা ও ভোট মিটে গেলেও শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুরুত্ব আছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। ইভিএম মেশিন যে স্ট্রং 

রুমে রাখা হয়, তার পাহারা থেকে ভোট গণনার দিন সহিংসতা রুখতে আধাসেনা দরকার বলে তাদের মত।

কমিশনের বেশি সংখ্যায় বাহিনী চাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "যে হিংসার ছবি বাংলায় প্রতিনিয়ত দেখা যায়, তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব নয়। বাংলার মানুষের নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগকে নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে।"

তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, "বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে যেভাবে ব্যবহার করছে বিজেপি সরকার, সেভাবে তারা নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থাকেও বিরোধীদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। বিজেপি জানে না, বাংলার মানুষের হৃদয়ে তৃণমূলের জায়গা কতটা গভীরে। আগামী ভোটেও তা বোঝা যাবে।"

প্রশ্নে বাহিনী মোতায়েন

শুধু বাহিনীর দাবি মঞ্জুর হওয়া নয়, বিরোধীরা জোর দিচ্ছেন আধাসেনা মোতায়েনের উপর। 

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বক্তব্য, "জওয়ানদের মোতায়নের দায়িত্বে থাকে রাজ্য পুলিশ। তারা যদি ঠিকঠাক বাহিনী মোতাযেন না করে, তা হলে সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ হবে না।"

‘বাহিনী ৯২০ না ২০২০ কোম্পানি, সেটা বিষয় নয়‘

This browser does not support the audio element.

কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, "বাহিনী ৯২০ না ২০২০ কোম্পানি, সেটা বিষয় নয়। আসল ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিটি বুথে জওয়ানদের মোতায়ন করতে হবে। ভোটার কার্ড দেখে বুথে ঢোকার অনুমতি দিতে হবে। ১০০ মিটার নয়, বুথ থেকে ৩০০ মিটার দূর পর্যন্ত এলাকায় কোনো জমায়েত চলবে না।"

পশ্চিমবঙ্গের ভোটকর্মীরা অতীতে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এবার তারা আগে থেকেই তৎপর। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, "আমরা গত নভেম্বরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে কয়েক দফা দাবি জানিয়েছি। জাতীয় নির্বাচন কমিশনকেও তা বলেছি। বেশি সংখ্যায় বাহিনী এলে সেটা আনন্দের খবর। তবে সঠিক জায়গায়, প্রতি বুথে বাহিনীর মোতায়েন করা না হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।"

শাসক শিবিরের বক্তব্য, মানুষ নির্বাচনে ভোট দেবে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা নয়। ফলে যতই বাহিনী আসুক, তাতে তৃণমূল ঘাবড়াচ্ছে না। তাদের প্রশ্ন, কেন বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ বা বিহারে এত কম সংখ্যায় বাহিনী চাইল নির্বাচন কমিশন?

মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, ভোট সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সদিচ্ছা জরুরি। শাসক দল চাইবে না ভোট নির্বিঘ্নে হোক। ভোট লুট হবেই। ১০০ বুথেই লুট হবে, না কিছু শতাংশ ভোটকেন্দ্রে মানুষ নিজের ভোট দিতে পারবে, সেটাই দেখার।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ