1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে এড়ানো গেল না মৃত্যু

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ এপ্রিল ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গের প্রথম তিন দফার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে৷ বিক্ষিপ্ত অশান্তি সত্ত্বেও ভোটে অনিয়মের বড়সড় অভিযোগ জানায়নি বিরোধীরা৷ যদিও একজন রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন ভোটকেন্দ্রের কাছেই৷

ছবি: DW/Payel Samanta

ভারতের সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে সাত দফায়৷ প্রতি পর্যায়েই ভোট নেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে৷ ইতিমধ্যে ১১, ১৮ ও ২৩ এপ্রিল ১০টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হয়েছে৷ সারা দেশের নজর থাকে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের দিকে৷ কারণ অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে হিংসার ছবি দেখা গেছে এখানে৷ ভোটে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে বারবার৷ তাই ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে, বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে৷ একটি ঘটনা ছাড়া মোটের উপর নির্বিঘ্নেই মিটেছে নির্বাচন৷ কিন্তু, তৃতীয় দফার ভোটে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় কংগ্রেস কর্মী টিয়ারুল শেখের নৃশংস হত্যা কমিশনের কৃতিত্ব ম্লান করে দিয়েছে৷ ভগবানগোলার বালিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮৮ নম্বর বুথে তৃণমূল ও কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়৷ বুথ থেকে কিছুটা দূরে টিয়ারুলের পেটে হাঁসুয়ার কোপ মারা হয়৷ 

‘মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে কিনা সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন’

This browser does not support the audio element.

মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনার অভিযোগ, ‘‘ছাপ্পাভোটের বিরোধিতা করেছিলেন টিয়ারুল৷ তাই তাঁকে তৃণমূল খুন করেছে৷ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেননি তিনি৷ সেই আক্রোশেই খুন হতে হলো৷''

তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে পারিবারিক বিবাদের জেরে খুন হয়েছেন তিনি৷ রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহা্দ হাকিমের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগ নেই, পারিবারিক বিবাদেই এই হত্যা৷

নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাস পশ্চিমবঙ্গে কোনো নতুন ব্যাপার নয়৷ ১৯৯৬ সালে রাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ১৯৭৭ থেকে দুই দশকে রাজ্যে ২৮ হাজার রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন৷ মেইন স্ট্রিম পত্রিকার এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছিল, ১৯৭৭ থেকে ২০০৯ এর মধ্যে ৫৫ হাজার মানুষ রাজনৈতিক কারণে খুন হয়েছিলেন৷ কেন রাজনীতি ঘিরে এই সন্ত্রাস? 

মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিয়ে গবেষণা করেছেন, বই লিখঘেছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘সংসদীয় পথে যারা রাজনীতি করে, তারা হিংসায় বিশ্বাস করে না৷ তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে বিশ্বাসী৷ কিন্তু সব রাজনৈতিক দলই ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য হিংসাকে প্রশয় দেয়৷ শুধু নির্বাচনের সময় অপরাধ সংগঠিত করা হয়, তাই নয়, সারা বছর গুণ্ডাদের লালন পালন করে রাজনৈতিক দলগুলি৷''

আরেকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদে৷ ইসলামপুরের গৃহবধূ আনসুরা বিবি কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ায় তাঁর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামী তৃণমূল সমর্থক তাহাসান শেখের বিরুদ্ধে৷ এতে শ্বাসনালী পুড়ে গিয়েছে আনসুরার৷ সুতরাং পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যেও তিক্ততা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক পরিচিতিকে কেন্দ্র করে৷

হিংসার নিন্দা করেও রাজ্যের মন্ত্রী, তৃণমূল নেতা ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ রাজনীতি সচেতন৷ তাদের মধ্যে রাজনীতিগতভাবে তীব্র বিভাজন রয়েছে৷ জাতপাত বা সাম্প্রদায়িক বিভাজন নেই৷ সে কারণেই বহুকাল ধরে এ রাজ্যের রাজনীতিতে হিংসার ছায়া রয়েছে৷''

কীভাবে হিংসার এই বাতাবরণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তার পথ খুঁজছে পশ্চিমবঙ্গ৷

তবে হিংসার বিরুদ্ধে মানুষের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের ছবিও দেখা গিয়েছে প্রাথমিক পর্বে, যা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ লক্ষণ৷ দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের অধীন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল৷ ভোটারদের ভয় দেখানো, মারধর, জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, বোমা-গুলিতে কয়েক ঘণ্টা সরগরম ছিল এই এলাকা৷ টিভির পর্দায় সরাসরি এই অস্থিরতার ছবি উঠে এসেছিল৷ প্রতিবাদে গ্রামবাসীরা ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে৷ ভোটের নিরাপত্তায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘কুইক রেসপন্স টিম' ঘটনাস্থলে আসে, আসেন পুলিশ আধিকারিকরাও৷ পুলিশি নিরাপত্তায় দলবেঁধে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যান৷ হিংসার মুখে এই সম্মিলিত প্রতিরোধ নতুন দিশা বলে মত রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের৷ 

‘সংসদীয় পথে যারা রাজনীতি করে, তারা হিংসায় বিশ্বাস করে না’

This browser does not support the audio element.

নির্বাচনের প্রথম তিন দফার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো এক ভোটকর্মীর অন্তর্ধান৷ নদিয়ার কৃষ্ণনগরের আধিকারিক অর্ণব রায় ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের দায়িত্বে ছিলেন৷ ১৭ এপ্রিল তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী প্রথমে থানায় ডায়েরি করেন, পরে অপহরণের অভিযোগও জানান৷ অবশেষে তাঁর হদিশ পাওয়া যায় ২৫ এপ্রিল৷ তাঁর অন্তর্ধান নিয়ে রাজনৈতিক তরজার পরিস্থিতি তৈরি হলেও প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে ব্যক্তিগত কারণে গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি৷ 

২৯ এপ্রিল এবং ৬, ১২ এবং ১৯ মে চতুর্থ থেকে সপ্তম দফার ভোট নেওয়া হবে পশ্চিমবঙ্গে৷ বাকি ৩২ টি কেন্দ্রে নির্বাচন হিংসামুক্ত করতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করছে কমিশন৷ আগামী সোমবারের ভোটে ১০০ শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ বিরোধীদের দাবিও ছিল এমনটাই৷ বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে কিনা সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন৷ পশ্চিমবঙ্গে যে কোনো জায়গায় যান, আপনি এ কথাটাই শুনতে পাবেন৷ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো এত বড় রাজ্যে কোনো খুনোখুনি নেই ভোটে৷ খুন শুধু পশ্চিমবঙ্গেই৷ গত পঞ্চায়েতে ৩৪ শতাংশ আসনে বিরোধীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতেই পারেনি৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী অবাধ ভোট নিশ্চিত করলে গণতন্ত্রের মঙ্গল৷'' 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ