পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার
২২ জুলাই ২০২২
সরকারি স্কুলে নিয়োগ কেলেঙ্কারির ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সেক্রেটারি জেনারেল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ২০ কোটি রুপি উদ্ধার করা হয়েছে৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তারের আগে২৬ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শুক্রবার রাজ্যের ১৩টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে ইডি। ইডি তল্লাশি চালাচ্ছে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেখলিগঞ্জের বাড়িতেও। এছাড়াও এসএসসি-র সাবেক উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহার বাড়িতেও তারা অভিযান চালিয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানা গেছে।
রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দুজনেই মুখোমুখি সিবিআইয়ের। হাইকোর্টের কড়া নির্দেশে বিপাকে রাজ্য প্রশাসন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাইকোর্টের নির্দেশ
দুর্নীতি করে মেয়েকে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ শিক্ষা-প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে। এবিষয়ে তাকে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পরেশ যদিও উত্তরবঙ্গে চলে যান। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বিকেলের মধ্যে পরেশকে সিবিআই দপ্তরে যেতে হবে। এবিষয়ে কড়া মন্তব্য করেন বিচারপতি। অন্যদিকে হাইকোর্টের নির্দেশের জেরেই সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল আরেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পরেশের দিনপঞ্জি
সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হবে শুনেই কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে চলে গেছিলেন পরেশ। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে কড়া নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বাধ্য হয়ে বিকেলের বিমানে বাগডোগরা থেকে কলকাতায় আসেন পরেশ। বিমানবন্দরে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেখান থেকে সরাসরি সিবিআই দপ্তর নিজাম প্যালেসে রওনা হন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পরেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ
নম্বর কম পাওয়া সত্ত্বেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের তালিকায় এক নম্বরে ছিল পরেশের মেয়ে অঙ্কিতার নাম। ওই তালিকাতেই ছিলেন ববিতা, লিখিত পরীক্ষায় অঙ্কিতার থেকে বেশি নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও তার নাম নীচে ছিল। তার অভিযোগের ভিত্তিতেই হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এসএসকেএমে অনুব্রত
গরুপাচার মামলায় দীর্ঘদিন ধরে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করার চেষ্টা করছে সিবিআই। এর আগে কলকাতায় এসে সিবিআই দপ্তরে না গিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অনুব্রত। বৃহস্পতিবার সিবিআই দপ্তরে যান অনুব্রত। কিন্তু শরীর খারাপ লাগছে বলে তিনি বেশিক্ষণ থাকেননি। আবার হাসপাতাল চলে যান। পরে তিনি নিজের বাড়ি ফিরে যান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআইয়ের বক্তব্য
সিবিআই জানিয়েছে, আগামী বুধবার অনুব্রতকে সিবিআই দপ্তরে হাজির থাকতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সুপ্রিম কোর্টে পার্থ
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় তাকে 'পক্ষ' হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি, অথচ, এখন তাকে সিবিআই ডেকে পাঠাচ্ছে। তাই রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেলেন রাজ্যের সাবেক শিক্ষা ও বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হতে পারে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআইয়ের জেরা
কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে পার্থকে সিবিআই দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পার্থ ডিভিশন বেঞ্চে গেলেও লাভ হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জেরা করে সিবিআই। পার্থের আশঙ্কা, ফের তাকে ডাকা হতে পারে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এসএসসি দপ্তরের চেহারা
আদালতের নির্দেশে এসএসসি দপ্তর কার্যত ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তারই মধ্যে দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে এদিন ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়। বুধবার এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ইস্তফা দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার জানা যায়, তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। এসএসসি মামলায় সিদ্ধার্থের বয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
8 ছবি1 | 8
প্রায় ওই একই সময়ে পরেশ অধিকারীর মেখলিগঞ্জের বাড়িতে যায় ইডি।
২১ জুলাইয়ের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। বিজেপি রাজনৈতিক কারণে ওই সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। বলেছিলেন, ইডি, সিবিআই বাড়িতে এলে তাদের মুড়ি খাওয়াতে। সেই কথার রেশ ধরেই এদিন পরেশের এই মন্তব্য।
কিছুদিন আগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজাম প্যালেসে ডেকে জেরা করেছিল সিবিআই। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় তাকে তলব করা হয়েছিল। এরপর পার্থের বাড়িতে ইডির তল্লাশি তাৎপর্যপূর্ণ।
পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। বেআইনিভাবে তিনি তার মেয়েকে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। বস্তুত, আদালতের নির্দেশে তার মেয়েকে কাজ থেকে সরে যেতে হয়েছে। চাকরিকালীন অর্থও ফেরত দিতে হচ্ছে। এদিন পরেশের বাড়িতে ইডি-র তল্লাশি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতার রাজপথে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই তারা দুর্নীতির অভিযোগ করছিল। সম্প্রতি আদালতের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।