১৬ নভেম্বর থেকে কীভাবে ক্লাস হবে স্কুলে, তার নির্দেশিকা জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
বিজ্ঞাপন
কালীপুজোর একসপ্তাহ পরেই পশ্চিমবঙ্গে খুলে যাচ্ছে স্কুল-কলেজ। কীভাবে ক্লাস হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করেছে শিক্ষা দফতর। যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছাত্র-শিক্ষক মহলে।
১৬ তারিখ পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত স্কুল-কলেজ খুলে যাচ্ছে। কিন্তু কীভাবে ক্লাস হবে, সামাজিক দূরত্বের বিধি কীভাবে রক্ষিত হবে, এসব নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শিক্ষা দফতর এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। কিন্তু তারপরেও বিভ্রান্তিপুরোপুরি কাটেনি বলেই মনে করছেন ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশ।
ভারতে কোন রাজ্যে স্কুল খুলল, কোথায় এখনো বন্ধ
সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের কোনো রাজ্যে স্কুল খুলেছে। তবে বহু রাজ্যে এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ছবি: Rifat Fareed/DW
দিল্লি
গত কয়েকমাসে দিল্লিতে করোনার দাপট অনেকটাই কমেছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খোলা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস এখনো বাড়িতে বসেই হবে। স্কুল খুললেও পঞ্চাশ শতাংশ ছাত্র নিয়ে ক্লাস করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। প্রয়োজনে দুইটি শিফটে ক্লাস নিতে হবে।
ছবি: Reuters/A. Abidi
উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশেও ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খোলার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কোনো কোনো এলাকায় স্কুল খুললেও বহু জায়গায় ডেঙ্গুর কারণে ফের স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার।
ছবি: DW/S. Mishra
পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গে এখনই স্কুল খুলছে না। বাড়িতে বসেই ক্লাস করছে ছাত্রছাত্রীরা। পুজোর পরে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হবে হবে বলে জানিয়েছে সরকার। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গে এখনো করোনার দৈনিক সংক্রমণ অন্য অনেক রাজ্যের চেয়ে বেশি।
ছবি: DW/Prabhakar Mani Tewari
তামিলনাড়ু
তামিলনাড়ুতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। যদিও প্রথম দিনের ক্লাস হয়েছে পঞ্চাশ শতাংশ ছাত্রছাত্রী নিয়ে। বাকিরা বাড়ি থেকে ক্লাস করেছেন। বহু ছাত্রই স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস এখনো বাড়ি থেকেই হচ্ছে।
ছবি: Arun Sankar/AFP/Getty Images
রাজস্থান
সেপ্টেম্বর থেকে রাজস্থানেও বেশ কিছু স্কুল খোলার কথা। তবে ১ সেপ্টেম্বর সকলে খোলেনি। রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে, সময় ভাগ করে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ডাকতে হবে। একই সময়ে সকলকে স্কুলে আনা যাবে না। ছোট ক্লাসের পড়াশোনা বাড়িতে বসেই হবে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে শেষ স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করেছিল রাজস্থানের ছাত্রছাত্রীরা। বস্তুত, গোটা ভারতেই মার্চ-এপ্রিল থেকে স্কুল বন্ধ।
ছবি: picture-alliance/Design Pics/C. Caldicott
মধ্যপ্রদেশ
গত ২৬ জুলাই স্কুল খুলে গেছে মধ্যপ্রদেশে। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা তখন থেকেই ক্লাস করতে শুরু করেছে। অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে নবম এবং দশম শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস সেপ্টেম্বরে শুরু হতে পারে।
ছবি: Usha Dubey/Privat
মেঘালয়
উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ে সেপ্টেম্বরে স্কুল চালু হতে পারে। তবে ১ সেপ্টেম্বর হয়নি। সরকারি নির্দেশ, শহরাঞ্চলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস স্কুলে চালু করা যেতে পারে। গ্রামীণ অঞ্চলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস চালু হতে পারে।
ছবি: NESFAS
গুজরাত
২৬ জুলাই থেকে গুজরাতে উঁচু ক্লাসের পড়াশোনা ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে কোনো কোনো স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা শুরু হওয়ার কথা।
ছবি: UNI
8 ছবি1 | 8
শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, সামাজিক দূরত্বের নীতি মানতেই হবে। এক বেঞ্চে অতিরিক্ত ছাত্র যাতে না বসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফলে প্রয়োজনে ক্লাস দুই ভাগে ভেঙে দিতে হবে। অর্ধেক ছাত্র সকালে এবং অর্ধেক ছাত্র দুপুরে ক্লাসে আসতে পারে। তবে এই সিদ্ধান্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ছাত্র সংখ্যার উপর নির্ভর করবে ক্লাস আদৌ ভাঙা হবে কি না।
শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, স্কুল খুললেও মিড ডে মিল এখনই দেওয়া হবে না। বাড়ি থেকে ছাত্রদের টিফিন নিয়ে আসতে হবে। শুধু তাই নয়, নিয়ে আসতে হবে জলের বোতল। স্কুলে সকলে এক জায়গা থেকে জল খেতে পারবে না। এমনকী, একে অপরের কলম, খাতা-বইও ব্যবহার করতে পারবে না।
স্কুলে ঢোকার সময় যাতে হুড়োহুড়ি না হয়, তার জন্য স্কুল শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে মূল দরজা খুলে দিতে হবে। ক্লাস শুরুর ১০ মিনিট আগে শিক্ষকদের করোনা বিষয়ে সচেতন করতে হবে। এছাড়াও স্কুলে করোনা সংক্রান্ত পোস্টার লাগাতে হবে।
সরকার জানিয়েছে, আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসই কেবল স্কুলে হবে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস এখনো অনলাইনেই নিতে হবে।
স্কুলের ক্ষেত্রে অনলাইন-অফলাইনের বিভাজন থাকলেও কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারি হয়নি। ফলে অধিকাংশ কলেজ কর্তৃপক্ষ মনে করছে, সমস্ত ছাত্রকেই ১৬ তারিখ থেকে কলেজে আসতে হবে।
বহু ছাত্র এবং শিক্ষক মফসসল থেকে কলকাতায় আসেন। অনেকে কলকাতা থেকে গ্রাম-মফস্বলে যান। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় কীভাবে তারা যাতায়াত করবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরকার জানিয়েছে, ছাত্র এবং শিক্ষকদের জন্য স্পেশাল পারমিটের ব্যবস্থা করা হবে। যা দেখিয়ে তারা স্টাফ ট্রেনে উঠতে পারবেন। সরকার জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রাঙ্গনগুলি ১ নভেম্বর থেকেই খুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রয়োজনীয় অফিসের কাজ তখন থেকেই শুরু করে দেওয়া যাবে।