1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশের অভিযোগ: মমতা থেকে শুভেন্দু

১১ জুন ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গে আবার ‘বাংলাদেশি’ নিয়ে বিতর্ক৷ বাংলাদেশির নামে ভারতীয় ভোটার কার্ড, কার্ডধারী নিউটন নাকি কোটা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের অভিযোগ এবং সরকারি দলের অস্বীকার - এ অবশ্য ২০ বছর ধরে চলমান৷

নিউটন দাস।
নিউটন দাসকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে অনুপ্রবেশ বিতর্ক।ছবি: Srijit Roy

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার নামখানা এলাকার নিউটন দাসকে নিয়ে, নিউটনের ভোটার কার্ড নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। সুন্দরবনের তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সখ্য থাকায় টাকার বিনিময়ে নিউটন ভারতের ভোটার কার্ড পেয়েছেন - এমন অভিযোগ করেছে বিজেপি ৷ নিউটনের সঙ্গে তৃণমূল নেতা ও বিধায়কের ছবি এবং ভিডিও-ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তারা ৷

নিউটনে বিতর্কের সূচনা

সম্প্রতি বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিউটনের একটি ছবি পোস্ট করে। সেখানে দেখা গিয়েছে, গত বছর বাংলাদেশের সরকারবিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়েছেন নিউটন দাস। এর পাশাপাশি, নিউটনের সঙ্গে সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি দেবাশিস দাসের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে তারা। সেখানে জন্মদিনে নিউটনকে কেক খাইয়ে দিচ্ছেন দেবাশিস। তৃণমূল নেতা মন্টুরাম পাখিরার জন্মদিনের ছবিতেও তাকে দেখা গিয়েছে ৷

 এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন নিউটন (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ডিডাব্লিউ)৷ ভিডিও পোস্ট করে তিনি দাবি করেন, তার ভোটার কার্ড তৈরিতে সাহায্য করেছেন কাকদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা। নিউটনের আরো দাবি- তিনি ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় ভোটার। তবে ২০১৬ সালে কার্ড হারিয়ে যায়। তাই ২০১৮ সালে বিধায়কের সাহায্যে নতুন ভোটার কার্ড বের করেন।

বিজেপির অভিযোগ, বাংলাদেশের নাগরিক নিউটন তৃণমূল নেতাদের মদতে কাকদ্বীপে ভোটার তালিকায় নাম তুলিয়েছেন। তিনি স্বামী বিবেকানন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের দাসপাড়ায় থাকতেন। সেখানে তার দাদা তপন দাসের বাড়ি ৷ বিজেপির আরো দাবি- নিউটন দাসের পুরো পরিবারই বাংলাদেশের নাগরিক।

জানা গেছে, নিউটন নামখানার একটি স্কুলে পড়াশোনা করতেন হস্টেলে থেকে৷ প্রশ্ন উঠেছে, বারবার কীভাবে দুটি দেশের মধ্যে অবাধে যাতায়াত ও বসবাস করতে পারলেন নিউটন? 

তবে নিউটন দাবি করছেন তিনি ভারতীয়, "আমি বাংলাদেশি নই, আমার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশে ছিলেন। সেখানে আমার পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে। সেই কারণে আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম গত বছরে। সেই সময়ে কোটা আন্দোলনে আটকে পড়েছিলাম।"

তবে বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক সঞ্জয় দাস নিউটনের এ বক্তব্য মানছেন না৷ তার দাবি, "নিউটন আটকে পড়েননি, কোটা আন্দোলনে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আবার ভারতেএসে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।  কী উদ্দেশ্যে এদেশে আসা, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।"

 পশ্চিমবঙ্গে এমন দৃষ্টান্ত অনেক

পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকের ভোটার কার্ড এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট জোগাড় করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত খুব কম নয়৷ 

মালদহের রসিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন লাভলি খাতুনের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক সদস্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তারা অভিযোগ করেন, অবৈধভাবে লাভলি বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছিলেন। তার আসল নাম নাসিয়া শেখ। তিনি বাংলাদেশের রাজশাহির বাসিন্দা। 

অভিযোগ সেই একই, এপারে ঢুকে ভুয়ো নথি তৈরি করেছিলেন নাসিয়া। সেই নথি দিয়ে এদেশে ভোটার কার্ডই শুধু না, নির্বাচনেও দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। ভারতে নিজের ভুয়ো পিতৃপরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। লাভলিকে পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

ভোটে লড়া দূরের কথা, কোনো বাংলাদেশি ভারতীয় নির্বাচনের প্রচারেও অংশ নিতে পারেন না। অতীতে বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌস ভোটের প্রচারে অংশ নেয়ায় বিতর্কিত হয়েছেন। 

কী উপায়ে ভুয়ো কার্ড?

লাভলি, নিউটনের মতো অসংখ্য মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে এসে এদেশের পরিচয়পত্র তৈরি করাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকা খরচ করলে সহজেই পাওয়া যায় আধার কার্ড। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বিভিন্ন চক্র এই অবৈধ কাজ করছে। 

কোচবিহারের গীতালদহ, দিনহাটা থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা কিংবা মালদহের বামনগোলা, হরিশ্চন্দ্রপুরের মতো জায়গায় তৈরি হচ্ছে ভুয়া ভোটার কার্ড। ভুয়ো কার্ড তৈরি করার খরচ ভালোই। এক একটি কার্ড তৈরিতে কিছু ক্ষেত্রে ৪০ হাজার লাগছে। 

অভিযেোগ, মূলত তিনটি পদ্ধতিতে এই কাজ হয়। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় আত্মীয় বা পরিচিতদের বাড়িতে এসে থেকে যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এই সুবাদে পেয়ে যাচ্ছেন পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট। দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে, বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন।পশ্চিমবঙ্গের কাউকে বিয়ে করে তার বাবা-মায়ের পরিচয় কাজে লাগিয়ে সার্টিফিকেট জোগাড় করা হচ্ছে। অনেকে আবার সরাসরি অসাধু চক্রের দ্বারস্থ হচ্ছেন ভুয়ো কার্ডের জন্য।

স্থানীয় প্রশাসনের প্যাডে লেখা এ সার্টিফিকেট বহুবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যাচাই না করে সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই জাল চক্র তৈরি করছে ভুয়ো প্যাড। তাতে নকল স্ট্যাম্প মেরে সার্টিফিকেট ইস্যু করছে, যা কাজে লাগছে ভোটার কার্ড তৈরিতে। 

প্রশাসনের একাংশের এই অসাধু চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগও দীর্ঘদিনের।এর অনেক প্রমানও আছে৷ সম্প্রতি কাকদ্বীপ মহকুমার এক নির্বাচনি আধিকারিকের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা থেকে ন্যায্য ভোটারদের নাম বাদ দেয়া ও ভুয়ো ভোটারদের নাম নথিভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের পরে তাকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। সেই কাকদ্বীপেই বাংলাদেশির নাম ভোটার তালিকায় থাকার অভিযোগ উঠেছে।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিকের দপ্তরে জমা পড়া রিপোর্ট অনুযায়ী, পাসপোর্ট বাংলাদেশের হলেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটার, এমন অন্তত ৫০ জনের নাম মিলেছে তালিকায়। এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই ভুতুড়ে ভোটাররা বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছেন ভোটার তালিকায়। এনিয়ে শাসক-বিরোধী সংঘাত মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দেয়।

নির্বাচন কমিশনের ভোটার লিস্ট তৈরির প্রক্রিয়াতেই গলদ রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, বুথ, ব্লক ও জেলার ভোটার তালিকা নিয়ে যাদের কাজ, তাদের কাজের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, "নিউটনের দাদাও বলছেন যে তিনি বাংলাদেশে থাকেন। তার বাংলাদেশে জন্ম, সেখানকার নাগরিক, সেখানেই ভোটার কার্ড, সেখানেই সব। বুথ থেকে ব্লক এবং জেলা স্তরে যারা নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটার লিস্টে নাম তোলেন এবং নাম বাদ দেন, তাদের অসততা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। বুথ, ব্লক ও জেলায় যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, তাহলে যদি এটা কমে।"

‘তৃণমূল করলে এপার বাংলার ভাত খেয়ে ওপারে গিয়ে আন্দোলনও করা যায়’

নিউটন দাসের ভারতের ভোটার কার্ড করানোর খবর সামনে আসায় ফের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, "সে গর্ব করে বলেছে যে তৃণমূলের জন্য সে ভোট দিয়েছে। তৃণমূল করলে যেমন বেআইনি নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়, তেমনি তৃণমূল করলে এপার বাংলার ভাত খেয়ে ওপারে গিয়ে আন্দোলনও করা যায়। ওপার বাংলার ভাত খেয়ে এপার বাংলায় ভোটও দেওয়া যায়।"

২০ বছর আগে এভাবে বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভোটার হবার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তখন মমতা ছিলেন এনডিএ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ছিল বামফ্রন্ট সরকার৷ সংসদে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত অগ্নিবর্ষী ভাষণ দিয়ে অধ্যক্ষের দিকে কাগজ ছুঁড়ে মেরেছিলেন মমতা৷ এখন রাজ্যে তিনি ক্ষমতায়, তার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠছে। এ বিষয়ে সবচেয়ে প্রবল বিরোধিতা আসছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবং বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীর দিক থেকে৷

বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশিদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে বলেন, "এতদিন ধরে যেটা বলে এসেছিলাম সেটা এবার খাতায়-কলমে প্রমাণ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলছেন না। তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাদেশি জনতাকে নিয়ে এসে এটা পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বানানোর যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তা প্রমাণিত হয়ে গেল।"

বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, "হিন্দু হোক মুসলমান হোক, আমরা চাই না যে এ দেশের মানুষের অধিকার বাংলাদেশের নাগরিকরা এসে নিয়ে নিক। আমরা চাই না, রোহিঙ্গা মুসলমানরা এসে অধিকার ছিনিয়ে নিক। ভোট ব্যাংকের জন্য পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল বিএসএফকে জমি দিচ্ছে না। উল্টে জনপ্রতিনিধির দ্বারা ভোটার, আধার, রেশন এবং প্যান কার্ড বানিয়ে দিচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের। সবই হচ্ছে নবান্নর আশীর্বাদে।"

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অবশ্য সকল দায় চাপাতে চান কেন্দ্রীয় সরকার আর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ঘাড়ে, "গোড়ায় তো গলদ! বাংলাদেশ থেকে ঢুকছে কী করে? ঢোকার পরে তো কার্ডের বিষয়টি আসবে! বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ যদি বিএসএফ না আটকায়, সমালোচনাটা তো বিএসএফের হবে, সীমান্তরক্ষীর হবে। ত্রিপুরায় ঢুকছে কী করে? ত্রিপুরা থেকে ট্রেন ধরে বাংলায় আসছে। বহিরাগত বাংলাদেশি যদি ফ্লাইটে আসে, যদি আকাশ পথে আসে, জলপথে আসে, স্থলপথে আসে, তার সবটা দায় কেন্দ্রীয় সরকারের। রাজ্য পুলিশ তো সীমান্ত সামলায় না।"

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "বাংলাদেশ থেকে যারা আসছেন, তারা নিজেদের তাগিদেই আসছেন। সেখানে তারা টিকতে পারছেন না বলেই এখানে চলে আসছেন। যারা এতে মদত জোগাচ্ছেন, তারা যদি শাসক পক্ষের লোক না হয়, তাহলে বাংলাদেশিদের পক্ষে এখানে টিকে থাকা মুশকিল। কোনো না কোনোভাবে তারা শাসক পক্ষের মদতে আইনি বৈধতা লাভ করছেন। শাসক দল ভোটের স্বার্থে তাদের ব্যবহার করেন। নিউটন দাস প্রমাণ করলেন যে, এখানে কোনো সাম্প্রদায়িক বাধা নেই। অর্থাৎ, হিন্দু-মুসলমান উভয়ই বাংলাদেশ থেকে আসার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ, বিজেপি যে অভিযোগ করছে, শুধু সংখ্যালঘু অর্থাৎ মুসলিমদের শাসক দল এখানে এনে বসাচ্ছে, ব্যাপারটা তা নয়। সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু, দুই সম্প্রদায় ওখান থেকে চলে আসছে। এখানে এসে শাসক দলের ভোটার হচ্ছেন যারা, তাদের অবশ্যই শাসক দল বৈধতা দিচ্ছে। এই প্রবণতা দশকের পর দশক রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীরা শাসক দলের হয়েই প্রচার করছে, ভোটে দাঁড়াচ্ছে।"

তিনি বলেন, "বিজেপি বোঝানোর চেষ্টা করছে শুধু মুসলমানদেরই শাসক দল নিয়ে আসছে। কিন্তু এক্ষেত্রে নিউটন দাসের ক্ষেত্রে বিজেপি কোন কেস ফাইল করেনি। " তার বক্তব্য, "এটা ঘটনা যে, যখন যে ক্ষমতায় থাকছে তার মদত অনুপ্রবেশকারীরা পাচ্ছে। এখানে দেশের থেকে অনেক বেশি বড় স্বার্থ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভোট বাক্সের স্বার্থ। যারা ভোটার নয় তাদেরকে ভোটার করে দেয়া হচ্ছে। এই জায়গায় তৃণমূল বা সিপিএমের আলাদা করে বিচার করা যাবে না। ভবিষ্যতে বিজেপি এলে আলাদা করার একটা জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে, সেখানে সিএএর কথা বলা হয়েছে।"

সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী মনে করেন, "নিউটন দাস হিন্দু না মুসলমান সেটা এত সহজে নির্ধারণ করা যাবে না। এরকম বহু ঘটনা ঘটে, যেখানে মুসলিমরা এসে হিন্দু নাম নিয়ে নেয়। এটা ৫০-৬০ বছর ধরে হয়ে চলেছে। দেখা যাবে তার বাবা হিন্দু, ঠাকুরদা হিন্দু, অথচ তার আগে মুসলিম ছিলেন। 

তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনতার পরবর্তীতে ৮০ শতাংশ হিন্দু ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর হিন্দুদের উপর ভরসা ছিল না। সেজন্য দলে দলে মুসলিম ঢোকানো হয়েছে। এদের ভোটটা পাওয়ার জন্যই অর্থাৎ, এদের ভোটটা ব্যবহার করে ভোট ব্যাংক বানিয়েছে। অসমে এই কাজটা করেছে কংগ্রেস। এক সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুপ্রবেশ নিয়ে বিরাট সরব ছিলেন। এই অনুপ্রবেশকারীদের জন্য তিনি ভোটে জিততে পারছিলেন না। এরা তখন সিপিএমকে ভোট দিতো। এখন তিনি বলেন, সবাই ভোটার, যারাই ভোটার তারাই দেশের নাগরিক। অথচ দেশে সংবিধান আছে, একটা নাগরিকত্ব আইন আছে।"

তিনি মনে করেন, "সেকুলার রাজনৈতিক দলের কাছে অনুপ্রবেশ একটা রাজনৈতিক হাতিয়ার। অনুপ্রবেশকারী যারা আসেন, তারা অনেকেই হয়তো কাজের সন্ধানে আসেন। কিন্তু তাদের আটকানোটা কেন দেখা হবে না? কেন্দ্রীয় সরকারই বা এত বছর ধরে কী করেছে? ছ'বছর বাজপেয়ী সরকার ছিল, এখন ১১ বছর মোদীর সরকার। এতদিনে মনে পড়েছে, তাই সীমান্তে এখন কাঁটাতার, বেড়া দেওয়া হচ্ছে। আগে অনুপ্রবেশ ঘটাবে এবং সেটাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করবে উল্টো দিক থেকে, সেই চেষ্টা বিজেপি করে গিয়েছে। অর্থাৎ, সমস্ত দলই দুটো বিপরীত মেরু থেকে একই কাজই করে যাচ্ছে।"

সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেন, "প্রশাসনিক অপদার্থতা রাজ্য এবং কেন্দ্র দু'তরফেই আছে। যারা সীমান্ত পেরিয়ে আসছে, তাদের সীমান্তে আটকানোর মতো ব্যবস্থা জোরদার নয়। এটা কেন্দ্রীয় সরকারেরই দায়িত্ব। আবার আধার কার্ড দেয় কেন্দ্রীয় সরকার, আধার কার্ড পেতে গেলে যে সমস্ত বিষয় দরকার, সেগুলো লোকাল নেতৃত্ব দিচ্ছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথভাবে যদি না দেখে, তাহলে কখনোই এটা আটকানো যাবে না। কেন্দ্র ও রাজ্যের পারস্পরিক দোষারোপ যেটা হয়,  সেটা একটা সস্তার রাজনীতি। "

তিনি বলেন, "সামান্য পটকা ফাটলে এনআইএ ছোটাছুটি করে। অথচ এই অনুপ্রবেশ নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক নয় তারা। অনুপ্রবেশ নিয়ে একটা সিস্টেম কাজ করছে। শুধু এই রাজ্য নয়, অন্য রাজ্যেও। অনুপ্রবেশ শুধু ভারতের সমস্যা নয়, আমেরিকারও সমস্যা। এটা একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। এটাকে সস্তার দলীয় রাজনীতিতে নামিয়ে আনার কোনো কারণ নেই। রাজনৈতিক দলগুলির সেই সিরিয়াসনেস নেই, দুই দেশের মধ্যে কথা বলে কীভাবে সমস্যাটা মেটানো যায়।"

তিনি বলেন, "অতীতে বিচ্ছিন্নভাবে এই সমস্যাগুলোর কথা উঠে আসতো। বিজেপি আসার পর এটাকে একটা বড় ইস্যু তৈরি করেছে, কিন্তু এটার সমাধান নিয়ে খুব একটা ভাবছে না কেউ। রাজনৈতিক লাভ নেওয়ার চেষ্টা যতটা আছে, ততটা সমাধানের নয়।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ