করোনা ও আমফান বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গে সভা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে ব্রিগেডে বা অন্য কোনও খোলা মাঠে নয়। অমিত শাহের সভা হবে ভার্চুয়াল।
বিজ্ঞাপন
করোনা পরবর্তী সময়ে প্রচারের পদ্ধতিটাই পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে। এখন আর বড় বা ছোট মাঠে জমায়েত করে জনসভা নয়। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ভার্চুয়াল সভা। যেমন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ করবেন আগামী মঙ্গলবার, পশ্চিমবঙ্গে। অমিত শাহ অবশ্য থাকবেন দিল্লিতে দলের সদর দফতরে। তাঁর ভাষণ লাইভ দেখা যাবে ফেসবুক এবং ইউটিউবে। বিজেপির রাজ্য নেতারাও সেখানে বলবেন।
প্রকাশ্য জনসভা হলে যেমন অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোককে মাঠে আনার ব্যবস্থা করতে হয়, ভার্চুয়াল জনসভায় তেমনই লোককে দেখানোর ব্যবস্থা করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। সে জন্য শুরু হয়েছে প্রচার। একেবারে বুথ পর্যায়ের কর্মী থেকে রাজ্যের ওপরতলার নেতা পর্যন্ত সকলে এই ব্যবস্থাপনায় আছেন। ভার্চুয়াল সভায়সুবিধা বা অসুবিধা হলো, লাইভ একসঙ্গে কতজন দেখছেন তা দেখা যায়। লাইভ শেষ হওয়ার পর সবমিলিয়ে কতজন দেখলেন, সেটা জানাও কষ্টকর নয়। তাই দর্শক টানতে প্রাণপাত করছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যে ৬৫ হাজার বুথ আছে। প্রতিটি বুথে অন্তত ১০০ জন যাতে এই ভার্চুয়াল সভায় থাকেন, তার জন্য বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া অন্য রাজ্য ও বিদেশে বসবাসকারী বাঙালিদের কাছেও পৌঁছতে চাাইছেন তাঁরা। তাঁদের টার্গেট, অন্তত এক কোটি লোক যাতে অমিত শাহর সভা দেখেন, তার ব্যবস্থা করা। বিজেপি নেতা সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আমরা বুথ পর্যায় থেকে কর্মীদের বলেছি, সকলে যেন সভা লাইভ দেখেন।''
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে পানির নীচে কলকাতার রাস্তাঘাট, ক্ষতচিহ্ন সর্বত্র
01:25
করোনার কারণে দেশ জুড়ে রাজনৈতিক সহ যে কোনও ধরনের জমায়েত বন্ধ। আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে আনলক ১ বা লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া। তাতেও সামাজিক দূরত্ব পালন করাটা বাধ্যতামূলক। এই অবস্থায় ভার্চুয়াল জনসভাতেই যেতে হবে। বিজেপি সেই কাজটা শুরু করে দিলো। এখন কেন্দ্রীয় সরকার, দিল্লিতে রাজনৈতিক দলগুলি সবাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিক সম্মেলন করে। সনিয়া গান্ধী কিছুদিন আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করলেন। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকও হচ্ছে ভার্চুয়াল। এমনকী অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোদী ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকও সেরে ফেলেছেন। বোঝা যাচ্ছে, রাজনীতি ও সংবাদের দুনিয়ায় ভার্চুয়াল সভা, বৈঠক সম্মেলনই এখন ভবিতব্য।
তৃণমূলের রাজ্যসভার চিফ হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, করোনার পর দেখা যাচ্ছে, গোটা বিশ্বই আরো বেশি করে প্রযুক্তি-নির্ভর হয়ে পড়েছে। সাবেকি প্রচারের যে ধরণ ছিলো, তা থেকে এ বার অনেকটা সরে আসতে হতে পারে। তবে আপাতত আমরা ঠিক করেছি, আগে করোনা ও আমফানের ফলে দুর্গত লোকেদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শাসক দল হিসাবে আমাদের রাজনৈতিক প্রচারও করতে হবে, তবে করোনার সঙ্গে আপস করে হবে না।
অবশ্য অমিত শাহের এই ভার্চুয়াল সভা নিয়েও জোরদার বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃমমূল প্রশ্ন তুলেছে, করোনার সময়ে আমফানে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক প্রচার কেন শুরু করা হচ্ছে? রাজ্য অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তখন আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এখনই প্রচার শুরু করাটা কি খুব জরুরি? সুখেন্দু শেখর রায়ের বক্তব্য, ''এটা অমানবিক কাজ। সারা দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কাজ বন্ধ। অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা। পশ্চিমবঙ্গে করোনা ছাড়া আমফানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের অবস্থা ভালো জায়গায় নেই। তখন রাজনৈতিক প্রচার একেবারেই কাম্য নয়।''
ভিডিও গেম: পিক্সেল থেকে ভার্চুয়াল বাস্তবতা
প্রযুক্তির প্রসারের ফলে ভিডিও গেমও বদলেছে সময়ের সাথে৷ ডট, পিক্সেল, টুডি, থ্রিডি, মোশন কন্ট্রোলের যুগ পেরিয়ে গেমিং এখন এসে পৌছেছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
ডটের সাহায্যে মহাকাশে লড়াই
তখনও ভিডিও গেইম সহজলভ্য হয়নি, শিশুদের বেডরুমেতো নয়ই৷ সেসময় কম্পিউটার থাকতো বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ শিক্ষার্থীরা সেখানে এই যন্ত্রের কর্মদক্ষতার পরিচয় পেতো৷ বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন কম্পিউটার গেমের একটি দ্য গেম স্পেসওয়ার৷ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞানী স্টিভ রাসেল ১৯৬২ সালে এটি তৈরি করেন৷ তার সাথে ছিলেন মার্টিন গ্রায়েৎজ এবং ওয়েন উইটানেন৷
ছবি: Computer Recreations, Inc./Steve Russel
কম্পিউটার যখন ঘরে
সময় যত গড়ালো কম্পিউটারও আকারে তত ছোট হতে থাকলো৷ ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে হোম কম্পিউটার আর গেম কনসোল চলে এলো হাতের নাগালে, শুধু পয়সা খরচ করলেই চলে৷ আজকের বিবেচনায় সেগুলোর গ্রাফিক্স কিংবা খেলার সুযোগ ছিল খুবই সীমিত৷ তখন কম্পিউটারে কল্পনার চিত্রায়নের চেয়েও ডেভেলপারদের কাছে যন্ত্রটির শক্তিমত্তার বিকাশ ঘটানোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীনির্ভর ‘এলিট’ ১৯৮৪ সালে কম্পিউটার গেমিংয়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে৷ মহাকাশযানের ককপিটে বসে গ্যালাক্সি থেকে শুরু করে হাজারো গ্রহ দেখা; ঠিক যেন বাস্তবেই ঘটছে, খেলোয়াড়দের এমন অনুভূতি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এই গেমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Staedele
সেভ! সেই সুযোগ নেই
শুরুর দিকের গেমিং কনসোলগুলোতে মেমোরির কোনো কাজকারবার ছিল না৷ অর্থাৎ, একবার খেলা শুরু করলে মাঝখান থেকে আর বন্ধ করে রাখা বা পরে সেখান থেকে শুরুর কোনো উপায় ছিল না৷ কনসোল বন্ধ করে দিলে পুরো গেমটিই শেষ হয়ে যেতো, পরে আবার শুরু করতে হতো নতুন করে৷ আজকের যুগের কনসোলের মেমোরির সঙ্গে তুলনা করলে হয়তো অবিশ্বাস্যই শোনাবে৷
ছবি: Nintendo EAD
দ্বিমাত্রিক থেকে ত্রিমাত্রিকতায়
১৯৯৩ সালে ডুম আর ১৯৯৬ সালে কোয়াকের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় জনপ্রিয় ফাস্ট পার্সন শুটারধর্মী গেমের৷ ধ্বংসাত্মক এই গেম দুইটি সারা বিশ্বেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ তবে অনেক জায়গায় এটি নিষিদ্ধও করা হয়৷ গেম দুটিতে প্রথমবারের মতো সফটওয়্যার ডেভেলাপাররা ত্রিমাত্রিক দুনিয়া তৈরি করতে সক্ষম হন৷ সেখানে স্বাধীনভাবে চরিত্রকে নড়াচড়া করানোর সুযোগ পান খেলোয়াড়রা৷
ছবি: id Software
বাস্তবানুগ ছবি আর সংগীত
সিডি রমের উদ্ভাবনের সাথে ডিজিটাল গেমেরও প্রসার ঘটে৷ তখন ফ্লপি ডিস্কে বড়জোর এক দশমিক চার মেগাবাইট জায়গা ছিল, কনসোলে তার চেয়ে কিছুটা বেশি৷ অন্যদিকে সিডি নিয়ে এলো ৭০০ মেগাবাইটের ‘বিশাল’ এক জায়গা৷ তার ফলে গেমেও চলচ্চিত্রের মতো দৃশ্যধারণ, সম্পাদনা, বাস্তবানুগ গ্রাফিক্স এবং উচ্চ মানের শব্দ সংযোজনের সুযোগ মিলল৷
ছবি: Cyan Worlds
চোখ ধাঁধানো গ্রাফিক্স
অতীতের অনেক থ্রিডি গেমই তার আবেদন ধরে রাখতে পারেনি৷ আজকের গেমারদের কাছে সেগুলো অনেকটা হাস্যকরই মনে হবে৷ গ্রাফিক্স কার্ড যত শক্তিশালী হতে থাকলো, তত বাস্তবানুগ হতে থাকলো গেমিংয়ের দৃশ্য, বদলে গেল গেমারদের রুচিও৷ ২০০১ সালের ‘হ্যালো’ গেমটি গ্রাফিক্সের দিক থেকে বেশ সাড়া ফেলেছিল৷ তবে এখনকার গেমারদের কাছে সেটি সেকেলে মনে হবে৷
ছবি: Bungie
গেমিংয়ে মোশন কন্ট্রোল
জাপানি প্রতিষ্ঠান নিনতেনদো ওয়াইফাই কনসোলোর মাধ্যমে গেমিংয়ে আরেকটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে৷ শুধু তরুণ নয়, বয়স্করাও এর মধ্য দিয়ে ভিডিও গেমিংয়ে আকৃষ্ট হন৷ ফিটনেস আর ড্যান্সধর্মী গেমের বিকাশ ঘটে এর মধ্য দিয়ে৷ নিনতেনদোর দেখানো পথে মোশন কন্ট্রোল গেম বাজারে আনতে শুরু করে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/B. Fava
হাতের মুঠোয় গেম
ইন্টারনেট প্রসারের হাত ধরে আসে ব্রাউজার গেম, যা পরে স্মার্টফোনে অ্যাপধর্মী গেমে রূপ নেয়৷ সাধারণ মানের এই গেমগুলো নতুন করে আবার বাজার মাত করে৷ তার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে বড় বড় প্রতিষ্ঠান৷ সাধারণ মানে গ্রাফিক্স আর সরল প্রকৃতির কারণে সত্যিকারের গেমারদের কাছে অবশ্য সেগুলো আকর্ষণীয় নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
গেমিংয়ে বাস্তবতা
গেম নির্মাতা পোকেমন ২০১৬ সালে বাজারে ছাড়ে ‘পোকেমন গো’৷ বাস্তব আর ভার্চুয়াল দুনিয়ার এক মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে এতে৷ মোবাইলের মাধ্যমে আপনার চারপাশের এলাকাতে ক্ষুদ্রাকৃতির ডিজিটাল দানব খুঁজে তাকে হত্যা করা এই গেমের মিশন৷
ছবি: picture-alliance/ANN
ভার্চুয়াল বাস্তবতা
গেমিংয়ে সবশেষ সংযোজন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি৷ এর মধ্য দিয়ে খেলোয়াড় নিজেকে খুঁজে পাবে ঠিক গেমের দুনিয়াতে৷ বিভিন্ন ‘কনসেপ্ট’ নিয়ে এরই মধ্যে বাজারে এসেছে নতুন এই প্রযুক্তি৷ তবে এর কিছু শারীরিক কুফলও রয়েছে৷ ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে কিছুক্ষণ কাটানোর পর অনেকেই অসুস্থ্ বোধ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
11 ছবি1 | 11
রাজ্য বিজেপি-র সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''তৃণমূলের সমালোচনা অর্থহীন। এটা রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। করোনা ও আমফান নিয়ে সাধারণ কর্মীরা যাতে আরও উদ্বুদ্ধ হতে পারেন, তার জন্য এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। আর রাজনীতি তো তৃণমূল করছে। ওরা বিজেপির কর্মীদের রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না। বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় নামলে হয় গুন্ডা দিয়ে পেটানো হচ্ছে বা প্রশাসন গ্রেপ্তার করছে।''
বিজেপি সূত্রে খবর, অমিত শাহের পুরো ভাষণই হবে পশ্চিমবঙ্গকেন্দ্রিক। রাজ্যে জনসভায় তিনি যে ভাবে ভাষণ দিতেন, সেভাবেই রাজ্যের বিষয় নিয়ে বলবেন।
কংগ্রেসের বক্তব্য, একটা রাজনৈতিক দলের এক শীর্ষনেতার সভা মানে তো সেখানে রাজনীতির কথা আসবেই। বিরোধী ও শাসক দলের সমালোচনা করা হবে। লোকের কাছে একটা বার্তা দেওয়ার জন্যই এটা করা হচ্ছে। আর বিজেপি করোনাকালেও রাজনীতি থামায়নি। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের সরকার ফেলা হয়েছে। গতকালই গুজরাটে দুই জন কংগ্রেস বিধায়ককে ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, রাজ্যসভা নির্বাচন আসছে। সেখানে তাঁদের সমর্থনে বিজেপি-কে জিততে হবে। সনিয়া গান্ধীর দলের অভিযোগ, এই সঙ্কটসময়েও সমানে রাজনীতি করছে বিজেপি।