পশ্চিমবঙ্গে আট দফায় বিধানসভা ভোট হবে। শুরু ২৭ মার্চ, শেষ ২৯ এপ্রিল। ফলাফল প্রকাশ ২ মে।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন আট দফায় হবে। ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে এক মাসের বেশি সময় ধরে আট পর্বের বিধানসভা নির্বাচন হবে। গতবার হয়েছিল সাত পর্বে। প্রথম পর্বের ভোট হবে ২৭ মার্চ। তারপর ১ এপ্রিল, ৬ এপ্রিল, ১০ এপ্রিল, ১৭ এপ্রিল, ২২ এপ্রিল, ২৬ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিল ভোটগ্রহণ হবে। ফলাফল প্রকাশ করা হবে ২ মে। কলকাতার ভোট হবে দুই দফায়। ২৬ এপ্রিল দক্ষিণ কলকাতার ভোট। ২৯ এপ্রিল উত্তর কলকাতার ভোট। পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষক ছাড়াও দুই জন পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে কমিশন।
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কেরালা, আসাম, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কেরালা, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতে একদফায় ৬ এপ্রিল ভোট হবে। অসমে ২৭ মার্চ থেকে তিন দফায় ভোটগ্রহণ হবে। ফলাফল সকলের জন্যই প্রকাশিত হবে ২ মে।
করোনাকালের কথা মাথায় রেখে একগুচ্ছ ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করার সময় প্রার্থী সহ পাঁচজন যেতে পারবেন। পথসভার ক্ষেত্রে পাঁচটির বেশি গাড়ি থাকবে না। প্রার্থীরা অনলাইন ফর্ম ভরতে পারবেন। যদি প্রার্থী নিজে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে চান, তা হলে তাঁর সঙ্গে দুই জনের বেশি সঙ্গী থাকতে পারবেন না। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সব কর্মীকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। বুথের সংখ্যা ৩৪ শতাংশ বাড়ানো হবে। ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে কে কোথায় দাঁড়িয়ে
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসন্ন। হাই-ভোল্টেজ লড়াইয়ে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপি। বাম-কংগ্রেস কি কিছু করতে পারবে?
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
ভোটের দামামা
এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা পশ্চিমবঙ্গে। সব দলই প্রচারে নেমে গেছে। প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি। তবে যত দিন যাচ্ছে, শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বাম এবং কংগ্রেস।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
তৃণমূলের জোর
২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। সেই থেকে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নির্বাচনে ৪০ শতাংশের উপরে ভোট পেয়েছে তারা। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ আসন পেয়েছিল তৃণমূল।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
বিজেপির শক্তি
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠে। তারাও ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। এবারের নির্বাচন ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। রাজ্য জুড়ে চলছে রথযাত্রা।
ছবি: Payel Samanta/DW
ধর্মীয় মেরুকরণের নির্বাচন
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে এবার ধর্মীয় মেরুকরণের নির্বাচন হবে। বিজেপি ধর্মীয় তাস খেলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার উত্তর দিতে গিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ বৃদ্ধি করছেন।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
শাহ-মোদীর লক্ষ্য
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গের রণনীতি তৈরি করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। ৪০টিরও বেশি সভা করেছিলেন তাঁরা। এবারের ভোটেও একই ভাবে প্রচারের পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের এনে প্রচারের ঝাঁজ বাড়াতে চাইছে তারা। সঙ্গে চলছে তৃণমূলের নেতাদের বিজেপিতে নিয়ে আসার কাজ।
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
বারবার আসছেন শাহ
অমিত শাহ এখন বারবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। ভোটের দিন ঘোষণার আগে তিনি প্রচারের জমি তৈরি করছেন। পরে মোদী প্রচারের ঝড় তুলবেন। আসছেন নাড্ডাও। তাছাড়া অন্য রাজ্যের নেতাদেরও নিয়ে আসা হবে পশ্চিমবঙ্গে।
ছবি: Payel Samanta/DW
রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি ও বাঙালিয়ানা
মোদী, শাহ, নাড্ডার মুখে বারবার শোনা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির নাম। উঠে আসছে বাংলা ও বাঙালিয়ানার প্রশংসা। তৃণমূল লড়াইটাকে বাঙালি বনাম অ-বাঙালিতে পরিণত করার চেষ্টা করছিল। তার জবাবে, বাঙালি-প্রেম দেখাতে চাইছেন মোদী-শাহরা।
ছবি: DW/P. Samanta
মমতার পাল্টা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই একশ। রাজ্য জুড়ে সভা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর সময় সময় পরামর্শ দিচ্ছেন মমতাকে। গত কয়েক মাসে দুয়ারে সরকার এবং সকলের জন্য স্বাস্থ্যবীমা জনমনে সাড়া ফেলেছে।
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বাম-কংগ্রেস জোট
কংগ্রেস এবং বামের ভোট গত ১০ বছরে চোখে পড়ার মতো কমেছে। ২০১৬ সালে তাদের জোট বিশেষ কাজে আসেনি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২১ সালে তাদের জোট আগের চেয়ে ভালো ফল করবে। বিজেপি এবং তৃণমূলের ভোট বাম-কংগ্রেস জোট সমান ভাবে কাটতে পারলে ফলাফলে তার যথেষ্ট প্রভাব পড়বে।
ছবি: Zumapress/Imago Images
সমীক্ষার ফলাফল
এখনো পর্যন্ত যতগুলি ভোটের আগের সমীক্ষা হয়েছে, তাতে অল্প হলেও এগিয়ে আছে তৃণমূল। তবে বিজেপি ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। প্রশান্ত কিশোরের স্ট্র্যাটেজি কি তৃণমূলের ভোট-মার্জিন বাড়াতে পাড়বে?
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
আসরে ফুরফুরা শরিফ
এরই মধ্যে ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নিজের দল তৈরি করেছেন। তিনি বিজেপি এবং তৃণমূল কাউকেই সমর্থন করছেন না। বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের আলোচনা চলছে।
ছবি: Naushad Bhai
11 ছবি1 | 11
মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার জানিয়েছেন, স্পর্শকাতর নির্বাচনী কেন্দ্রগুলিতে প্রচুর নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থাও থাকবে। উপযুক্ত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। যাঁরা ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত, তাঁরা প্রার্থী হতে চাইলে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে মামলার কথা জানাতে হবে।
আট দফায় ভোট হওয়ায় তৃণমূল খুশি নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ''আট পর্বের নির্বাচন কাকে সুবিধা করে দেয়ার জন্য? আমি বিজেপি সূত্রে যা জেনেছি, তা হলো, বিজেপি যা ঠিক করে দিয়েছে, সেই ভাবেই ভোট হচ্ছে। বিহারে যদি কম পর্বে ভোট করা হয়, কেরালা, তামিলনাড়ুতে যদি এক পর্বে ভোট করা হয় তো পশ্চিমবঙ্গে কেন আট পর্বে।'' মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ''যে সব জেলায় তৃণমূলের প্রভাব বেশি, সেই সব জেলায় দুই থেকে তিন পর্বে ভোট করা হচ্ছে। আমি বাংলার মেয়ে। বাংলাকে ভালো করে চিনি। বিজেপি যা খুশি করতে পারে, সব চক্রান্ত ভেঙে দেব। বাংলার মানুষ বাংলা শাসন করবে। নির্বাচন কমিশনকে বলব, বিজেপি-র চোখ দিয়ে বাংলাকে দেখবেন না।'' এমনকী বিবেক দুবেকে পর্যবেক্ষক করাতেও মুখ্যমন্ত্রী অখুশি।
কিন্তু বিজেপি-র মত হলো, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এতগুলি পর্ব জরুরি ছিল।